somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৫০ বছরের ব্যাগপ্যাক আর ৬৫ বছরের ট্রেকার!!

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খুব বিরক্ত লাগছে নিজের উপর, রাগও লাগছে, মনে হচ্ছে নিজের চুল এখন নিজেই ছিঁড়ি বসে বসে!

কেন এমন অদ্ভুত ইচ্ছা হচ্ছে?

কেন হবেনা?

বই ছাপা হয়ে গেছে, বাইন্ডিং চলছে আর এখন মনে পড়লো সান্দাকুফু ট্রেক এর এতো দুর্লভ একটা গল্প লিখতে দিব্বি ভুলে গেলাম? কিভাবে এটা সম্ভব হল জানিনা, যেখানে প্রতিটি ট্যুরের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়েও গল্প লিখি!

তবুও মনের আক্ষেপ আর সান্দাকুফু ট্রেক এর সেই নেপালি বন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই এখনি গল্পটা না লিখলে পুড়তে হবে ভিতরে ভিতরে। তাই সেই আক্ষেপ থেকে নিজেকে কিছুটা মুক্ত করতে এই গল্পটা লেখা।

দার্জিলিং থেকে ভোঁর ৬ টার জীপে মানেভাঞ্জন যাবার সময় তার সাথে পরিচয়। দারুন বন্ধু বৎসল, হাসিখুসি আর মজার মানুষ। তার পিঠে বিশাল ব্যাকপ্যাক দেখে অবাক লেগেছিল খুব। সাথে আবার স্লিপিং ম্যাট, আলাদা খাবারের ব্যাগ, সবমিলে বিশাল আয়োজন ছিল তার পিঠে আর বুকের দুই ব্যাগপ্যাকে।



জীপে তেমন আর কিছু জিজ্ঞাসা করা হলনা। তবে মানেভাঞ্জন থেকে ধোত্রে হয়ে যখন মুল ট্রেক শুরু করলাম তখন তার ব্যাগপ্যাকের আকার, বাহার আর অগনিত পকেট দেখে বিস্ময় জাগলো বেশ।

আকাশী-নীল রঙের একটা বেশ অভিজাত ব্যাগপ্যাক দেখেই বোঝা যাচ্ছিল বেশ দামী আর নিশ্চই কোন ভালো ব্র্যান্ডের হবে। কিন্তু প্রথম পরিচয়েই কি আর আর ব্যাগপ্যাক নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করা যায়? তাই চুপ করে রইলাম। কিন্তু মনের মধ্যে জিজ্ঞাসারা কুটকুট করছিল, ব্যাগপ্যাকটার ব্যাপারে কিছু জানতে। আমার অবস্থা তখন মানিক দার পদ্মা নদীর মাঝির সেই উক্তির মত “ক্ষুধার্ত কুকুর অন্যের খাওয়া দেখেও সুখ পায়!”

ঠিক আমারও তেমন, নিজের কোন ব্যাগপ্যাক নাই, তাই ওই নেপালি বন্ধুর পিঠের নীল-আকাশী ব্যাগপ্যাক দেখে খুবই ভালো লাগছিল। কোথা থেকে কিনল, কোন ব্র্যান্ড, দাম কত? এসব জিজ্ঞাসা করার জন্য মনের মধ্যে আঁকুপাঁকু করতে লাগলো। তবুও খুব কষ্টে নিজেকে দমন করে রেখেছিলাম, ট্রেকের প্রথম ব্রেক পর্যন্ত।

ট্রেক এর প্রথম ব্রেক। তিনটি দল আলাদা আলাদা এসে একই যায়গায় বিশ্রাম নিতে বসলো। গ্লুকোজ-বিস্কুট-বাদাম-চকলেট আর পানির সাথে বিশ্রামের ফাঁকে ফাঁকে সবার নানা রকম গল্প শোনা হচ্ছিল। কে কোথায় কোথায় ট্রেক করেছে? কোথায় যাবার পরিকল্পনা আছে সামনে, কে কি করে? কার বাসায় কে কে আছে? এইসব স্বাভাবিক পরিচিত।

এরই মাঝে আমি খুবই অপ্রাসঙ্গিকভাবে জিজ্ঞাসা করে বসলাম, দাদা আপনার ব্যাগপ্যাকটা কোত্থেকে নিয়েছেন? আর দাম কত?

দাদা এবার আমার দিকে তাকালেন আর পরে বেশ কিছুক্ষণ হাসলেন আকাশের দিকে তাকিয়ে। তারপর অন্যমনস্ক ভাবে সৃতির জানালায় তাকালেন বোঝা গেল, বেশ কয়েক সেকেন্ড পরে সে বলল, এই ব্যাগপ্যাকটা তার এক জার্মান বন্ধু তাকে উপহার দিয়ে গেছেন ৪৭ বছর আগে! ১৯৬৯ সালে!!

সেই সময়ে তিনি সান্দাকুফু ট্রেক করতে এসেছিলেন সাথে ছিলেন এই নেপালি দাদা, গাইড ও বন্ধু হিসেবে, আর ট্রেক শেষ করে চলে যাবার সময় তাকে এই আকাশী-নীল ব্যাগপ্যাকটা উপহার দিয়ে যায়। সেই থেকে হাজারো ট্রেক এ এই ব্যাগপ্যাকটা তার সব সময়ের সঙ্গী।



কি বলেন দাদা? তাহলে আপনার বয়স কত?

এবার আরও জোরে হেসে দিলেন আর জিজ্ঞাসা করলেন তোমরাই বল অনুমান করে কত হতে পারে আমার বয়স?

সবাই বেশ চিন্তায় পরে গেলাম, তার বয়স আসলে কত হবে সেটা ভেবে?

এই ব্যাগপ্যাক সেই পেয়েছে ১৯৬৯ সালে, ৪৭ বছর আগে, তার আগেও তো সেই জার্মান ট্রেকার নিশ্চই দুই একবছর ব্যাবহার করেছেন, তাহলে ধরে নেয়া যায় এটির বয়স ৫০। আর তাহলে এই দাদার তখনই তার গাইড ছিলেন, তার বয়স তবে কত হতে পারে তখন? কেউই ঠিক ঠাক বলতে পারিনি আমরা অনুমান করে।

তারপর সেই দাদা জানালেন যে তিনি আগামি মাসেই ৬৮ পা দেবেন! এখন তার বয়স ৬৭!! তখন তার বয়স ছিল ১৮। সরকারি চাকুরী থেকে অবসর নিয়ে এখন একটি বেসরকারি চাকুরী করেন আর সময় পেলেই পাহাড়ে ট্রেক করেন নিজেকে ঠিক আর ফিট রাখতে!

৩০ দিনের বেশি ট্রেক না করে, পাহাড়ে পাহাড়ে না বেড়িয়ে তিনি থাকতে পারেন না! আর সব সময়ের সঙ্গী হিসেবে থাকে তার বন্ধুর দেয়া ৫০ বছরের পুরনো এই আকাশী-নীল ব্যাগপ্যাক।



কি যে রোমাঞ্চ হয়েছিল তার নিজের বয়স আর তার ব্যাগপ্যাকের সেই দারুন গল্প জেনে, বলে বা লিখে বোঝানো যাবেনা।

পাহাড় ওনার একমাত্র আনন্দ, পাহাড় ওনার প্রেরণা আর পাহাড় নাকি ওনার বেঁচে থাকার আর জীবনকে উপভোগ করার একমাত্র হাতিয়ার!

তিনি একবার বাংলাদেশে আসতে চান, আমাদের বান্দরবানের একদম নিখাদ, রুটহীন পাহাড়ে ট্রেক করতে। সাথে নিয়ে তার সেই ৫০ বছরের পুরনো ব্যাগপ্যাক আর প্রায় ৭০ বছরের শরীর!

আফসোস আর আক্ষেপ এমন অসাধারণ একটা গল্প আসছে বইমেলার বইয়ের প্রধান আকর্ষণ সান্দাকুফু ট্রেক এর অন্যান্য গল্প গুলোর সাথে রাখতে পারলামনা!

কি আর করার, না হয় তোলা থাক এই গল্পটি পরের বইয়ের জন্য?

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৪৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×