somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেম প্রেম বিয়ে

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সালাউদ্দিন শাহরিয়া

পর্ব- ০৩
রাতে ফোন করলো আবির। নিশি ফোন ধরে বললো কেমন আছো ? আবির বললো তুমি যখন অপারেশন করছিলা তখন আমার শেষ হইছে ক্লাস।
আবিরঃ আচ্ছা কি অপারেশন শিখছো ক্লাসে।
নিশিঃ আমি শিখছি কিভাবে মানুষের হাত কাটলে বেন্ডিজ দিতে হয়।
আবিরঃ হুম, ভালো হইছে আমার হাত কাটলে তুমি অপারেশন করলে বেন্ডিজ দিবা।
আলাপ চলতেই থাকলো।
প্রকৃতির নিয়মেই তাদের জাস্ট ফ্রেন্ড থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড আর বেস্ট ফ্রেন্ড থেকে বয়ফ্রেন্ড হলো আবির।
নিশি একটি বাসায় কাজ করে। ৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়লেও যে বাসায় কাজ করে সেখানে সবাই শিক্ষিত থাকায় অনেক কিছু শিকার চেষ্টা করে। সে ডাক্তারি পড়া নিয়ে বাসার মালিকের মেয়ে রুনার কাছ থেকে জানতে চায়। লজ্জায় বলে না যে, সে প্রেম করেছে এবং মিথ্যা বলেছে বয়ফ্রেন্ডকে। এদিকে আবির একটি দোকানে কাজ করে। সে ৫ম শ্রেণিতে ফেল করে আর পড়েনি। তবে যাইহোক মাত্র এক ক্লাস কম নিশি থেকে।

জুন ও জুলাই একসাথে দুইমাসের বেতন পেলো ১০ হাজার টাকা আবির। বাসায় পাঠালো ৫ হাজার টাকা। পাঠিয়ে বললো সে নাকি অনেক ঋণ টাকা পাঠাতে পারবে না বাসায়। মা বলেছেন আবির গত মাসেও টাকা পাঠাসনি। এই মাসে তো ৫ হাজার টাকা দিয়ে চলবেনারে পরিবার। তাছাড়া ঐ ছলিমের দোকানে খরচপাতির আড়াই হাজার টাকা বাকি। এই বাকির টাকা দিয়ে দিলে কিভাবে চলবো আড়াই হাজার টাকা দিয়ে। তাছাড়া আমি অসুস্থ। তর ছোট বোন ও স্কুলে যাবে। এগুলোর তো খরচ পাতি আছেনা। আবির বললো আমি এসব বুঝিনা। আর আবির তো যে দোকানে কাজ করে সেখানে থাকা খাওয়া মালিকের। তাই সে যা বেতন পেতো তা বাড়িতে পাঠিয়ে দিতো। কিন্তু নিশির প্রেমে পড়ায় তার আর আগের মতো পরিবারের প্রতি দায়িত্ব কমে গেলো।
বাকি ৫ হাজার টাকা দিয়ে আবির হকার মার্কেটে গিয়ে সু, কোর্ট ইত্যাদি মার্কেট করলো আর নিশির জন্য গিফট কিনলো। তারপর বললো নিশিকে আগামী শনিবার ভার্সিটির হেড মাস্টার বন্ধ দিয়েছে তাই সেইদিন সে দেখা করতে চায়। এদিকে নিশি হতো পেরেশানির মধ্যে পড়ে গেলো এখন কি হবে। যদি বুঝে যায়। সে বললো আমার আমার না একটা সমস্যা আছে। আবির বললো কি সমস্যা? নিশি বললো আগামী শনিবার আমাদের ভার্সিটিতে একটা অপারেশন আছে। এই ক্লাস মিস করলে আমাকে বের করে দেবে। ছলে-বলে-কলে কৌশলে বুঝিয়ে দিলো আবিরকে। আবিরও বললো আচ্ছা পরের দিন তুমিও একটা ক্লাস মিস দেও আর আমিও একটা ক্লাস মিস দেই। আর দেখা করে ফেলি। এখন কি করবে। অসহায় অবস্থায় রাজি হলো নিশি।

পর্ব- ০৪
তাদের দেখা হলো ক্রীন ব্রিজে। নিশি মনে মনে ভাবছে আমি আজ ধরা খেয়ে যাই যে আমি কাজের মেয়ে এর এদিকে আবির ভাবছে যদি নিশি জানতে পারে আমি আন্ডার পি.এস.সি তাইলে তো সব শেষ।
নাহ! তাদের অবশেষে মিল হয়েই গেলো। একজন মেডিকেলে ইঞ্জিয়ারিং পড়ে আর আরেকজন ভার্সিটিতে ডাক্তারি পড়ে। তাদের কথা চলতেই থাকলো। একজনের প্রতি আরেক জনের বিশ^াস জন্মাতে লাগলো। তাদের প্রেম ভালোবাসা গভীর হতে থাকলো। মজার ব্যাপার হলো তারা দুজনেই ভাবে একদিন তো সব জানাজানি হয়ে যাবে তাহলে প্রেম যত গভীর হবে ততো ভালো হবে। শেষের দিকে একটি জবাব থাকবে প্রেম মানেনা বাধা। আমি তোমাকে ভালোবাসি বলে মিথ্যা বলেছি। এই কথা ভাবছে নিশি অন্যদিকে আবির। আহ! বেশ ভালোই মিল আছে।
আবির স্বপ্ন দেখছে সে ডাক্তারের স্বামী হবে। নিশি স্বপ্ন দেখছে ইঞ্জিনিয়ারের বউ হবে। তাদের একের প্রতি আরেক জনের যে আগ্রহ তৈরী হয়েছিলো তা অকল্পনীয়। এখন একজন ছাড়া অন্যজন কিছুই ভাবতে পারেনা। নিশি ১২০০ টাকা বেতন পায়। এখন সে মাসে ৫০০ টাকার এম্বি কিনে শুধু বাংলা নাটক দেখার জন্য। বাংলা নাটকের কাব্যিক কথাগুলো শিখার জন্য। নাটকের কাব্যিক বাক্যগুলো আবার আবিরকে শুনায় নিশি।

বিয়ের জন্য বর দেখেছেন তার বাবা নিশি বললো। এখন যদি আবির বিয়ে না করে সে বিষ খাবে। আবির ছাড়া কাউকে সে বিয়ে করতে পারবেনা। আবির চিন্তিত হয়ে পড়লো। ভাবলো আমার নিজের থাকার জায়গা নাই আর নিশিকে বিয়ে করে রাখবে কোথায়। এদিকে পালিয়ে বিয়ের জন্য নিশি আবিরকে জোরদার করছে। আবির বাধ্য হয়ে বললো আচ্ছা আগামী শুক্রবার আমরা পালাবো। আবির মনে মনে খুশির পাহাড় জমে গেলো হৃদয়ে। বিয়ে হয়ে গেলে জানতে পারবে আমি কেমন। কিন্তু তখন করার কিচ্ছু থাকবে না নিশির। সে আমার স্ত্রী থাকবে। আর ভালোবাসা মানেনা বাধা।

শেষ পর্ব- ০৫
আজ শুক্রবার। আবির তার মালিকের দোকানের ক্যাশ টাকা নিয়ে পালিয়েছে নিশিকে নিয়ে। সে ঢাকায় আশ্রয় নিয়েছে। মোটামুটি ৫-৬ মাস ভালোই চলবে। দোকানের কোম্পানির টাকা ছিলো সব একসাথে লোট করেছে। তাদের প্রথম সপ্তাহ ভালোই কাটলো। নিশি গেলো ওয়াশ রুমে। আর তার মোবাইল ফোন ছিলো বিছানায়। আর বিছানায় ছিলো আবির। ফোন আসল। ফোন রিসিভ করলো আবির। তার শুনলোÑ
এই জরিনা তুই কই গেলি পালাইয়া। আমাদের কাজ কাম সব রইছে। এ সপ্তাহ থেকে তুই নিখোঁজ। এদিকে তোর মা-বাবা কাদঁতেছে। আবির ফোন কাটলো তখনই নিশি আসলো। আবির কেদেঁ কেদেঁ বললো নিশি তুমার নাম কি জরিনা। নিশি বললো হ্যাঁ। তুমি কাজের মাইয়্যা। হ্যাঁ। তখন নিশিও কাদঁতে লাগলো। আর বলছে আবির প্লিজ কিছু ভেবো। আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ভালোবেসে আমি সব মিথ্যা বলেছি। আবির বললো তুমি সত্যিই আমাকে ভালোবাসো। নিশি বললো হ্যাঁ। তাহলে শুনো আমিও কাজের ছেলে। একটি দোকানে কাজ করি। মিয়া বিবি রাজি কেয়া করেঙ্গা কাজি।

তাদের ঠিকেই গেলো ফেইসবুকের ভালোবাসা। ইঞ্জিনিয়ার ও ডাক্তার সুখে সংসার করতে লাগলো।

দুই মাস পরে তারা ঢাকা থেকে সিলেট ফিরে আসলো। নিশি তার মা-বাবার বাড়িতে গেলো দুই দিনের জন্য। এদিকে দোকানের মালিক তাকে মাফ করলোনা জেলে দিলো না বরং তাকে কয়েকজন মিলে বেধে রাখলো। এবং সেখানেই নির্মম ভাবে হত্যা করলো। বুকের শহর খালি হয়ে গেলো জরিনার (নিশির)। আবির (বশির) এর মৃত্যুতেই শেষ হয়ে গেলো আরেকটি ভালোবাসা।
সমাপ্ত
(সম্পূর্ণ কাল্পনিক)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:১১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×