somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্মৃতিসত্ত্বাকণাঃ কারাবাসনামা-১

২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
তখন প্রায় সন্ধ্যা। বসার ঘরের মাঝখানে ক্যাবলার মতো দাঁড়ায় ছিলাম। সোফায় আর ফ্লোরে প্রায় সাত-আটটা ছোট বড় ফুলের বুকে বা তোড়া। জন্মদিন গেলো তিন দিন আগে। আমি আইলসা টাইপ মানুষ। তিন দিনেও এইসব ফুলের কোনো সুরাহা করতে পারি নাই। জন্মদিনের ফুলগুলা আমার কিছু প্রিয়জনের পাঠানো, তো এখন আমি কি করি? তিন দিন আগের বাসি ফুলে হালকা পচন ধরছে। ফালায়া দেয়া ছাড়া গতি নাই, আবার ফেলতেও খারাপ লাগতেছে। খাড়ায়া খাড়ায়া এইসব সাত-পাঁচ ভাবতেছি, এমন সময় ডোর বেইল বাইজা উঠলো। এক বার, দুই বার, তিন বার।
আমি একা থাকি দুই রুমের একটা এপার্টমেন্ট-এ। রানিং কোন বান্ধবীও আপাততঃ নাই যে অভিসারে আইবো। এই অসময়ে তাই কে আসতে পারে, এইসব ভাবতে ভাবতে মেইন ডোরের পিপ হোল-এ চোখ রাখালাম। দেখি তিনটা ব্যাটা আর একটা বেটি। পোলিশ ইউনিফর্ম পড়া।
জানতাম তারা আজ কাল পরশু বা এক বছর পরে হইলেও আসবে। অচেতন বা অবচেতনে তাই একটা মানসিক প্রস্তুতি সবসময়ই ছিলো। তাই ডরানের কিছু ছিলো না। আমি একটা নৈর্ব্যক্তিক মন নিয়া নির্বিকারভাবে দরজা খুইলা দিলাম।
তারা ঢুইকাই যথাযথ তমিজের সাথে ইংরাজীতে জিগাইলো, “আপনি কি Herr অমুক?”
আমি, “হা (ইংরেজিতে)"।
পোলিশ, “এই বাসায় ভাড়া থাকেন (ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজীতে)?”
আমি, “আমার সাথে জর্মনে কথা কইতে পারেন”।
হাতে ধরা আমার এই দেশে অবস্থানের গত বারো বচ্ছরের ইতিহাস পাতিহাসের ডকুমেন্ট উল্টাইতে উল্টাইতে এক ব্যাটা এইবার জর্মন ভাষা শুরু করলো, “যাক, কমিউনিকেশানে সুবিধা হইলো তাইলে।"
কইলাম, “ভাড়া না, লিজ নিসি এই বাসা আজ চার বচ্ছর হইলো”।
- একা থাকেন?
- হা।
- (হাতের কাগজে চোখ রাইখা) তা আপনি তো বারো বচ্ছর হইলো এই দেশে আছেন। Niederlassungsbewilligung (পার্মানেন্ট রেসিডেন্স) ও ছিলো। পাসপোর্ট-ও তো নিলেন না। কোন সমস্যা?
-নো সমস্যা। ইচ্ছা করে নাই।
এই কথা শুইনা পোলিশগুলা গোল গোল চৌক্ষে আমার দিকে তাকাইলো। দৃষ্টিতে “এই হালার মাথার তার ছিড়া” টাইপ ভাব।
এই ফাঁকে বইলা রাখি, তখন (এখনকার আইন জানি না) অস্ট্রীয়াতে ভিসা সহকারে লিগ্যালী পাঁচ বচ্ছর থাকনের পর পার্মানেন্ট রেসিডেন্স-এর জন্য আবেদনের যোগ্যতা অর্জিত হইতো। আর ই ইউ পাসপোর্টের জন্য লিগ্যালী টানা দশ বচ্ছর থাকনের পর আবেদন করা যায়। পার্মানেন্ট রেসিডেন্স পারমিট তারা পাঁচ বচ্ছরের জন্য দিতো। পারমিট এক্সপায়ার করার পর আবার আবেদন করতে হইতো।
এক পোলিশ তখন গলা খাকাড়ি দিয়া ঘোষনা আকারে বয়ান ঝারলো, “আপনার পার্মানেন্ট রেসিডেন্স ২ বচ্ছর আগে এক্সপায়ার করছে। তারপর বার বার চিঠি দিবার পরও আপনি নতুন কইরা আবেদন করেন নাই। গত তিন মাস আগে শেষ চিঠিতে আপনারে চূড়ান্ত নোটিশ প্রদান করা হইছিলো। এর মানে হইলো…”
আমি তারে থামায়া দিয়া কইলাম, “সেইসব চিঠি আমি পাইছি এবং ছিইড়া ফালায়াও দিছি।“
আমার এই কথা শুইনা তাগো মুখের ভাব যেন বা প্রথমে হালকা গুলাপী, তারপর টকটকা লাল রং ধারন করলো।
এইবার যেন সাত আসমান থেইকা ঘোষনা আইলো, “গত দুই বচ্ছর ধইরা বার বার তাগাদা দিবার পরও আপনি পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি বর্ধিতকরনের আবেদনে সাড়া দেন নাই। অর্থাৎ গত দুই বচ্ছর ধইরা আপনি এই দেশে বেআইনী ভাবে বসবাস করতেছেন। অস্ট্রীয়ান আইনের অমুক ধারার তমুক উপধারা মোতাবেক আপনাকে তাই আইনের আওতায় আনা হইলো। আপনারে আমাদের লগে যাইতে হবে।“
আমি নির্বিকার ভাবে কইলাম, “ঠিক আছে। কিন্তু এই এক কাপড়েই যাবো?”
-না, আপনি কিছু কাপড়, আন্ডি, স্যান্ডেল আর টুথব্রাশ একটা ব্যাগে ভইরা নেন।
আমি বেডরুমে আইসা কাপড় গুছাইতেছি। দেখি, সাথে সাথে তাদের মধ্যে দুইজনও আমার বেড রুমে আইসা ঢুকলো।
আমি কইলাম, “আমার প্রাইভেসি নষ্ট হইতেছে”।
তারা হাইসা কইলো, “এই সমস্ত কেইসে বিদেশীরা জানালা খুইলা লাফ দিয়া ভাগার চেষ্টা করে। কিন্তু আপনি অমন করবেন না জানি। এতো বচ্ছর ধইরা এই দেশে আছেন, পড়াশুনাও এখানে শেষ করছেন, ভালো জর্মন পারেন, কিন্তু তারপরও…”
আমি তাগো একটা আস্বস্তের হাসি ছুইড়া দিয়া ব্যাগ গুছায়া বাসায় থাকা নগদ কিছু ইউরো আর হান্ডি-টা (চলতি জর্মনে তারা মোবাইলরে Handi কয়) পকেটে ঢুকাইয়া কইলাম, “আমি রেডি”।
আমার ওই সন্ধ্যার ঘটনার তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৪।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১:২৯
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×