এই ছবিটা যখন তুলেছিলাম তখন আব্বা আমার আশেপাশে ঘুরঘুর করছিলো খানিকটা দূরে কিছু একটা করছে এরকম বাহানায় দেখছিলেন আমি আসলে কি করি, এমনি এমনি বাড়ির উঠোনে জন্ম নেয়া এই লজ্জাবতী গাছ ও গাছ ভর্তি ফুল আমি হঠাৎই আবিষ্কার করেছিলাম কোন এক ছুটির দিন সকালে, হালকা শীত আসি আসি করছে, আব্বা গায়ে একটা সোয়েটার জড়িয়ে তখনই সবাইকে জানান দিচ্ছে শীতের কথা, আব্বার কর্মকাণ্ড কখনোই আমি পছন্দ করতাম না, বিরক্ত হতাম, এতোটাই বিরক্ত যে চোখ মুখ কুঁচকে রাখতাম।
গাছের প্রায় অর্ধেক ফুল ছেঁড়ার পর মনে হলো ফুল গুলো ছেঁড়া ঠিক হয়নাই গাছটা কষ্ট পেয়ে থাকতে পারে, অথচ কপাল কুঁচকে রাখার কারনে আব্বা যে কষ্ট পেয়ে থাকতে পারে এই রকম সঠিক বিচার বুদ্ধি করার মতন মানুষ না হয়ে ছিলাম।
অথচ আব্বাই একমাত্র কত রকম কিছু শেখাবার জন্য চেষ্টা করতো প্রকৃত মানুষ হবার জন্য, এই যেমন দাঁড়িয়ে পানি খেতে হয়না, খাবার প্রয়োজনের তুলনায় কম খেতে হয় কিংবা সমান ভাগ করে খাওয়াটাও যে সেরা আনন্দের কত ভাবে বোঝাতো, কিভাবে ভাল ব্যবহার করে কথা বলা উচিত মানুষের সাথে ধীরে কম শব্দে মৃদু হেসে, কোন মানুষকে যেমন ছোট করে দেখতে হয় না তেমনি কোন মানুষকে কোন কষ্ট ও কখনো দিতে হয়না, কিভাবে পাশে দাঁড়াতে হয় বিপদে দান করতে হয় দুই হাত ভরে নিজের যতটুকু প্রয়োজন ততটুক রেখে, আর সব থেকে খারাপ আচরন হচ্ছে মানুষের রাগ! যখন ঠিকঠাক বোঝার বুদ্ধি হয় নাই তখন তার মুখ থেকেই প্রথম শুনেছি ছন্দে ছন্দে সেই কাঠবিড়ালি ছড়া কবি জসীমউদ্দিনের কবর কবিতাটা অথবা মেঘদূত কাব্য, আব্বাই আমাকে প্রথম শিখিয়ে ছিলেন সূরা ফাতিহা, কোথায় এক আলিফ টান দিতে হয় কোথায় চার আলিফ অথবা জিম বলার সময় কিভাবে জোর দিতে হয় জিহ্বায়, আব্বার সেই ভরাট কণ্ঠ ছিল না শেষের দিকে, শেষ কণ্ঠ শুনেছি তার মৃত্যুর দুই দিন আগে হাঁপাতে হাঁপাতে ডাক্তারের কথার জবাবে ধীরে বলেছিল বাড়ি যাব।
আব্বাকে হারাতে যাচ্ছি সেই মুহূর্তটা পর্যন্ত টের পাইনি। আব্বার দেয়া প্রকৃত ভাল মানুষ হবার শিক্ষা ও ঠিকঠাক কাজে লাগেনি ।
আপনজন হারিয়ে স্বপ্নে ফিরে আসে
তাদের শব্দ ছাড়া কথাগুলো তখন শোনা হয়ে যায়।
তারা হাসে, আলো আঁধারের সাদা কালো পরিবেশে।
তারা বুঝায় তাদের ব্যবহারে
তারা আছে;
অথবা
অতীতটাকেই বর্তমান বানায়।
আব্বা এসে স্বপ্নে একটা পান চাইলো;
দ্রুত হাতে পান নিয়ে; পেছন ফিরে দেখি;
কোথাও কেউ নাই।
জীবনের সমস্ত অভিযোগ চাওয়া পাওয়া
প্রতিদিনের প্রয়োজন সহ;
আব্বা হারিয়ে গেল !
খুঁজে খুঁজে হয়রান
স্বপ্নের ভেতরও খেয়ালে আছে
আব্বা এখন আর বেঁচে নেই;
পান ও তার পছন্দ না;
অথচ পান নিয়ে অস্থির পায়চারী আমার
ভিনটেজ আলোয়।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২২