ঘটনা-১ সুপার শপের বিল কাউন্টারের মেয়েটি বিল রেডি করতে করতে এজ ইউজাল বললো যে মেম্বারশিপ কার্ড আছে কিনা, শুনে আমি মোবাইল ব্যাগ থেকে বের করে খুব নাম্বার খোঁজাখুঁজি করছি বলার জন্য, মেয়েটি খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে বলল মেম্বারশিপ কার নাম্বারে? সাধারণত সবাই নিজের নাম্বার দিয়েই মেম্বারশিপ কার্ড করে ভেবে মেয়েটির মনে হলো নিজের নাম্বার মনে নেই এটা কেমন কথা!
বললাম হাজবেন্ডের নাম্বার দিয়ে করা, বলেই ডায়াল কলে তার নাম্বার খুঁজে পেয়ে নাম্বার বলতে যাবো তখন সেই শুকনো মিষ্টি চেহারার চতুর মেয়ে ভ্রু নাঁচিয়ে হালকা খোঁচা মেরে ইশারা করে একটু নিচু গলায় চক্রান্ত করার মতন করে বললো
-স্যার জানে??
-কি?
ফিসফিস করে
- নাম্বার মনে নেই যে!!
-না
-কতদিন!?
-১৭ তারিখে পাঁচ বছর হবে!
মেয়েটা এইবার আকাশ থেকে পড়ার অভিনয় করে বলল যে পাঁচ বছর কিন্তু বেশি হয়ে গেল ম্যাডাম? বিল করা শেষ করে বাজারের ব্যাগগুলো আমার হাতে ধরিয়ে দিতে দিতে আর একবার খোঁচা দিয়ে জানালো যে স্যারের নাম্বারটা স্যার জানবার আগেই যেন মুখস্ত করে নিই,কি নিদারুন কষ্টটাই না পাবে হাজবেন্ড বেচারা।
সুপার শপে ঘটে যাওয়া এই আকস্মিক ঘটনা উনাকে জানাতেই, উনি বললেন তুমি বানিয়ে বলে দিতে যে এটা আসলে তোমার স্যারের রেগুলার নাম্বার না। আরেকটা নাম্বার আছে সেটাই মনে রাখা হয়। তার উদার যুক্তি আর নেভার মাইন্ড মনের ভাব দেখে খুশিতে ডগমগ করতে করতে বললাম ওগো তুমি কি আমার মোবাইল নাম্বার না দেখে বলতে পারবে??
উনি কাল বিলম্ব না করে সত্যি কথা বললেন যে উনি আমার নাম্বার না দেখে বলতে পারবেন না।
এইবার আমার মুচকি হাসি প্রসারিত হতে যাচ্ছিল দেখে উনি সাথে সাথেই বললেন যে ১৮১৯ সালের কোন একদিন তুমি বলেছিলে যে যত ঝড় তুফান আসে আসুক কিন্তু তোমার মোবাইল নাম্বার যেন মনে না রাখি।
ঘটনা -২
গত নভেম্বরে একটানা বেশ কিছুদিন বৃষ্টির দিনে উনি উদাস হয়ে অনেকটা থেমে থেমে বললেন, একবার আমার এক বন্ধু একটা মেয়েকে ফুল দিয়ে ভালবাসার প্রপোজ করবে বলে ঠিক করেছিল, যথারীতি সেটা নিয়ে নানা রকম প্ল্যান পরিকল্পনা, ঠিক যেদিন প্রপোজ করার কথা তার আগের দিন থেকে শুরু হলো বৃষ্টি,
একটানা সাত দিন সেই বৃষ্টি হলো; না থেমে। এই পর্যন্ত বলে সে উদাস হয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন,
আমি নেক্সট কি বলে সেটা শুনবার অপেক্ষা করতে করতে বললাম তারপর??
তারপর আর কি! প্রস্তাবই দেওয়া হলো না, বলেই চাঁপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো, আমিও তার সাথে চাঁপা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম- এই জন্যই আমি আজকে তোমার বউ।
সে হকচকিত হয়ে বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে রইলো কিছু বললো নাহ, আমিও আর কথা বাড়ালাম নাহ, একটু নিজের মত থাকুক, এত পুরানো কষ্ট, সহজে কি ভোলা যায়!!!
এই হলো আমাদের আন্ডাস্ট্যান্ডিং লেভেল। যাকে বিয়ে করেছি সে এই ব্লগে ব্লগিং করতো, ব্লগিং করার সময়টা আমি ছিলাম নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত, অনলাইনে আসতাম লেখা দিতাম, কমেন্ট রিপ্লাই দিতাম, ভালো লেখা চোখে পড়লে পড়তাম, আর নিজের জীবন, চাকরি বাকরি এটা
ওটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম।
এই ব্লগের একজনের সাথেই আমার বিয়ে হবে সে আমার জীবন সঙ্গী হবে এবং তার সাথে এতগুলো দিন কেটে যাবে কখনোই ভাবি নাই। আসলেই জীবনটা অদ্ভুতরকম বিচিত্রতায় ভরপুর। ইয়ে বলতে একটু লজ্জা লাগছে আজ আমাদের পঞ্চম বিবাহ বার্ষিকী।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৮:১৩