somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অহনা (বোনাস পর্ব)

০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চারদিক হাততালিতে ভরে উঠলো।
বর্ষা আপু চিৎকার করে বলে উঠলো, "ইশান-অহনা!! অফিস কাপল অফ দ্য ইয়ার!!"
বুলবুল ভাই অহনাকে বললেন, “এখন বলো আসলেই সাগরে ঝাঁপ দিবা, না এই হ্যান্ডসাম যুবকটারে জড়িয়ে ধরবা?”
অহনার মুখে হাসি। অনেকদিন পর যেন পৃথিবীটা একটু হালকা মনে হচ্ছে।

ইতিমধ্যে অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে, ঈশান ও অহনার বাবা-মা সহ সকল আত্মীয়-স্বজন বন্ধু বান্ধব শহরের গণমান্য ব্যক্তি এবং সম্মানিত ব্লগাররা উপস্থিত হয়েছে ঈশান অহনার ওয়েডিং প্রোগ্রামে; বলতে গেলে সবাই মিলে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করছে।

ব্লগার শায়মা এই বিয়ের ইন্টেরিয়র ডিজাইন প্ল্যানিংয়ের চিফ। আশরাফ চৌধুরী পুরো ওয়েডিং ইন্টেরিয়র ডিজাইনের দায়িত্ব দিয়েছেন তাকে। এত অল্প সময়ের ভিতরে তিনি এত সুন্দর করে বিয়ের মঞ্চ সাজিয়েছেন যেন রাজকীয় কোন বিয়ে, চারদিকে অসংখ্য ফুল—গোলাপ, অর্কিড, গাঁদা, জারবেরা আর লিলি দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরোটা।

সোনালি আর আইভরি রঙের কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ব্যাকড্রপ, যার সামনে ঝুলছিল হাতের তৈরি ঝাড়বাতি, আর প্রতিটি কোণে আলো দিচ্ছিল ছোট ছোট ফেয়ারি লাইট। মঞ্চের চারপাশে ফুলের হালকা সুবাসে বাতাস মোহনীয়।

ঈশানের হাত ধরে মঞ্চের দিকে এগোচ্ছেন ব্লগার সৈয়দ কুতুব এবং ব্লগার নকল কাক, তাদের মুখে হাসি ঝিলমিল করছে, সৈয়দ কুতুবের চোখে কিছুটা জল চিকচিক করে উঠলো জমে থাকা আবেগে।

হাসতে হাসতে তিনি ঈশানের দিকে তাকিয়ে মৃদু গলায় বললেন,
— ভাই, অহনা অনেক কষ্ট করেছে আপনাদের অফিসে কাজ করতে এসে, ওর এই ছোট্ট জীবনে কত কিছু ঘটে গেল, তার যেন আগামী দিনগুলো আনন্দময় হয়।

ঈশান নীরবে মাথা নাড়লেন। তার চোখে তখন অহনার জন্য এক আকাশ মায়া। পাশে দাঁড়িয়ে আছে এইচ, এন, নার্গিস আর রুনু আপু। তারা সবাই মিলে অহনাকে খুব যত্ন করে মঞ্চে নিয়ে এসেছেন। অহনার চোখে-মুখে মিষ্টি একটা লজ্জা,

মঞ্চের মাঝখানে দুইটি সিংহাসনসদৃশ চেয়ার—একটি ঈশানের জন্য, আর একটি অহনার জন্য। তাদের সামনে ছোট্ট এক গোল টেবিল, তার ওপর রাখা কিছু গোলাপফুল।

সবার আনন্দের মধ্যে হঠাৎ ঢুকে পড়ে রহস্যজনক লেখক কাল মানব। হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে ঈশানের সাথে, ঈশান কিছু বুঝে ওঠার আগেই ব্লগার রাজীব নুর ক্যামেরায় একের পর এক ক্লিক ক্লিক শব্দে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে ছবি তুলতে থাকে প্রবল আগ্রহে।

অনুষ্ঠানের এক কোনায় দাঁড়িয়ে ছিল ওলি, বিষয়টি ব্লগার কাঁউটালের চোখে পড়তেই বদমাইশ ওলিরে ধাওয়া দিতে দিতে একদম বাউন্ডারির বাইরের পাশের একটা লেকে ফেলে দিল।

ব্লগার কাজী ফাতেমা ছবি অহনা ঈশানের পুরো বিয়ের ঘটনাটা নিয়ে কবিতা লিখে শোনায় সবাইকে—
“ফুলে ফুলে সাজে স্বপ্ন, চোখে চোখে গল্প খেলে,
ঈশান-অহনার দুটো মন আজ কবিতার ছন্দে মেলে।”

অহনা কনের সাজে ঝলমল করছে, পাশে ব্লগার কাঁউটাল আর ডার্ক ম্যান সেলফি তুলছে, DJ চালাচ্ছেন ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর, এরই মধ্যে কাজি সাহেব এসে বসলেন বিয়ের আসরে হাতে একটা পুরোনো খাতা।

কাজি সাহেব গম্ভীর গলায় শুরু করলেন:

– বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম...
ঈশান চৌধুরী সাহেব, আপনি কি অহনা আফরিনকে .. কাজী সাহেবের বিয়ের জন্য বলা পুরো বাক্য শেষ হতেই
ঈশান প্রায় সাথে সাথেই বলল
– “কবুল, কবুল, কবুল!”
একইভাবে অহনার কাছ থেকেও কাজী সাহেব সহ সকলে কবুল শুনে নিলেন।
সবাই হেসে উঠল একত্রে হাততালি দিয়ে।
কাজি সাহেব দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন
– আজকের এই মুহূর্তে, আল্লাহ্‌র নামে, এই দুজন এখন স্বামী-স্ত্রী! মাশাল্লাহ!
অহনার বাবা মা আনন্দে রুমাল দিয়ে চোখ মুছছেন, এ পথের পথিক এবং অপু তানভীর ব্যস্ত হয়ে গেল সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতে।

কিছুক্ষন পর কু-ক-রা খেতে খেতে চিৎকার করে বললো,
- কাল মানব এক ডিশ বিরিয়ানি উল্টে ফেলেছে আমার টেবিলে, এটা কোন কথা!!
-অহনার বিয়েতে আমাদের একটু তো সংযত হওয়া উচিত যত যাই হোক আমরা তো মেয়ে পক্ষ নাকি? সৈয়দ কুতুব কাবাব খেতে খেতে বললেন কথাটা,

ব্লগার নিমো বললো,
- Relax everyone! এই বিয়ে শুধু অহনা আর ঈশানের নয়,এটা আমাদের সব পাগলামি আর বন্ধুত্বের মেলা।

একটু দূর থেকে ব্লগার জনারণ্যে একজন তখন বলে ওঠেন,
- এত চিৎকার চেঁচামেচি ভালো লাগছে না, আমার একটু নীরব জায়গা দরকার, একটু নিরিবিলি কোনায়... সঙ্গে সোনালী পানীয়র কোনো আয়োজন আছে কি?
- অবশ্যই আছে ভাই, এ পথের পথিক তাকে ইশারায় অদূরে আলো ঝলমলে সুইমিংপুলের শেষ মাথায় কর্নারের একটা ঘর দেখিয়ে দিলেন।

বিয়ের শেষ মুহূর্ত আতশবাজির আলো ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে একেরপর এক, চারপাশের হাসি-আনন্দ, অতিথিরাও একে একে বিদায় নিচ্ছে।

মঞ্চে বসে আছে অহনা আর ঈশান।

সৈয়দ কুতুব ভাই বিদায় নিতে এসে বললেন
— আজ থেকে তোমাদের দুজনের নতুন আরেকটি জীবনের শুরু; সুখে থেকো সব সময়।

অহনা চোখে পানি, ঈশানের দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল
— এই সবকিছু কি বাস্তবে হচ্ছে না শুধুই স্বপ্ন। যদি স্বপ্ন হয় তবে...
- তবে?
- তবে এই স্বপ্নটা যেন কখনো না ভাঙ্গে।

মঞ্চে এসে একে একে বিদায় নেন সমস্ত সম্মানিত ব্লগারেরা। বিদায় নিতে আসেন ব্লগার শায়মা ও, তার হাতে আঁকা একটি অসাধারণ স্কেচ, একটি নরম আইভরি রঙের ক্যানভাসে কালো কালিতে আঁকা ঈশান আর অহনা,পেছনে হালকা করে আঁকা নানা রঙের ফুল।
গোলাপ, লিলি আর অর্কিডে ঘেরা ফ্রেমের মাঝে লেখা-
"Together Forever
May your journey ahead
bloom like the most beautiful flower,
graced with love, laughter, and harmony.
Always side by side, always in love."

( সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১
১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মওসুমের প্রথম কুয়াশাভেজা প্রভাত

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৫

মওসুমের প্রথম কুয়াশাভেজা প্রভাত

ছবি আমার তোলা

আজকের সকালটা অন্যরকম। মওসুমের প্রথম কুয়াশাভেজা স্নিগ্ধতায় মুগ্ধ প্রভাত। অসাধারণ সুন্দর। চারদিকে সাজানো গোছানো। ঠিক যেন কোনো পুরনো ছবির মতো। শীতের ছোঁয়া এসে পড়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে গণভোট হবে কিনা এ বিষয়ে একটা গণভোট হওয়া অতীব জরুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে গণভোট হবে কিনা এ বিষয়ে মতভেদ দেখা গিয়েছে। এ বিষয়টি সুরাহা করার জন্য জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে গণভোট হবে কিনা এ বিষয়ে একটা গণভোট হওয়া অতীব... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুলাই সনদ ও অধরা ঐক্য: বাংলাদেশের রাজনীতির সন্ধিক্ষণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৬


জুলাই সনদ ও অধরা ঐক্য: বাংলাদেশের রাজনীতির সন্ধিক্ষণ

অন্তর্বর্তী সরকারব্যবস্থার এক বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে আমরা দেখেছি নানা কমিশন, তাদের সুপারিশ, এবং শেষ পর্যন্ত ‘ঐকমত্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন জানে

লিখেছেন সামিয়া, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:৫৪




আমার তোমাকে স্মরণ করার অবকাশ নেই প্রিয়,
তবু জীবনটা বুঝে গেছে নিঃশব্দে ঠিকই,
যতই দেখাই আমি আনন্দময় হাসি
জীবন জানে, মন এখনও উড়াউড়ি অনাদিকাল একই দিকে।

তুমি চাওনি আমার ভালো থাকা মন... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভ্যুত্থানে প্রাণহানির ঘটনায় ‘দোষ স্বীকার’ হাসিনার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে প্রাণহানির ঘটনায় ‘দোষ স্বীকার করেছেন’ পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনটি দাবি করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার। ‘রাজনৈতিক নেতৃত্বও দায়ী’, বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলনপর্বে হত্যাকাণ্ডের জন্য প্রথম বার ‘দোষ স্বীকার’... ...বাকিটুকু পড়ুন

×