somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সানিম মাহবীর ফাহাদ
আমি প্রচলিত অর্থে কোন লেখক নই তবে লেখালেখিটাকে অন্তর থেকে ভালোবাসি। তাই ভালোবাসার টানেই মাঝে মাঝে সমাজ, সংস্কৃতি এবং প্রযু্ক্তি নিয়ে দু’এক লাইন লেখার চেষ্টা করি।

রক্ষণশীল পরিবারে আধুনিক কন্যা সন্তান অভিশাপ নাকি আশির্বাদ?

১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কন্যা সন্তান ব্যাপারটার মাঝে একটু অন্য রকম শীতলতা এবং তারও বেশি প্রশান্তি আছে। লম্বা চুলে জোড়া বেণী করা কোন ফুটফুটে বাচ্চা মেয়েকে দেখলেই চোখ জুড়িয়ে আসে। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকেও একটি কন্যা সন্তানকে জান্নাতের দরজার সাথে তুলনা করা হয়েছে। অনেক বাবা মা আছেন যারা পুত্র সন্তানের চেয়ে কন্যা সন্তানকেই বেশি পছন্দ করেন। কিন্তু সময়ের পরিবর্তন এই পছন্দের বিষয়টাকে দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সুযোগ দেয় না। কন্যা সন্তান ছোট থাকলে বাবা মা যতোটুকু তাদের পছন্দ করেন, সেই সন্তান বড় হলে তাদের সেই পছন্দে সাময়িক ভাটা পড়ে। কারন আজকাল একটি সন্তানকে সঠিকভাবে বড় করা জ্বলন্ত কয়লার উপর দিয়ে হেটে যাওয়ার সমান। আমি এ ব্যাপারে কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরছি-

ভৌগলিক অবস্থান এবং জলবায়ুগত কারনে ভারতীয় উপমহাদেশের মেয়েরা খুব অল্প বয়সে যৌবন প্রাপ্ত হয়। মাত্র ১২-১৩ বছর বয়সের মধ্যেই মেয়েরা যৌবনের স্বাদ আস্বাদনের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। অনেক বাবা মা তাদের সন্তানকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে দেওয়ার কথাও ভাবেন, হয়তো দিয়েও দেন। যদিও মেয়েদের বিয়ের ক্ষেত্রে ১৮ বছরের একটি নুন্যতম বয়স সীমা আছে তবুও সেটাকে খুব বেশি মানা হয় না। কিন্তু সময় মনে হয় এখন একটু দ্রুতই বদলে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে পরিবেশ পরিস্থিতি বদলানোর মাত্রাটা লক্ষণীয়। প্রত্যেকটি গ্রামে গ্রামে এখন স্থানীয় প্রশাসন হয়েছে। বাল্য বিবাহ রোধ করার জন্য কঠোর আইন এবং সেগুলোর বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এতে সন্তানের বাবা মায়ের কী ধরনের উপকার হচ্ছে সে ব্যাপারে একটু আলোকপাত করছি।

কিছুদিন আগে আমাদের এলাকার এক মেয়ে বিয়ে করার জন্য অস্থির হয়ে পড়ে। বাবা মা’কে হুমকি দেয় যদি তাকে বিয়ে না দেয় তাহলে সে আত্মহত্যা করবে। এরকম পরিস্থিতিতে কী আর করার আছে? বেচারা বাবা মা অনিচ্ছা সত্ত্বেও মেয়ের পছন্দের ছেলের সাথেই তার বিয়ে ঠিক করে। কিন্তু বিয়ের দিন বাসায় পুলিশ এসে মেয়ের বাবা এবং ভাইকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। পুলিশের অভিযোগ, মেয়ের বাবা এবং ভাই অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু মেয়ের বাবা এবং ভাইয়ের অবস্থাটা একবার ভেবে দেখছেন? তাদের কি দোষ ছিলো? নাকি মেয়েকে আদর যত্ন করে বড় করাটাই এখন তাদের বড় অপরাধ?

এরকম ঘটনা শুধু একটা না। প্রত্যেকটা গ্রামে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটছে। যতোবার গ্রামে যাই ততোবার মানুষের মুখে শুনি অমুকের মেয়ে তমুকের ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে। তমুকের মেয়ে অমুকের ছেলেকে ছাড়া বাঁচবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। কেউ হয়তো বলতে পারেন, শুধু গ্রামেই কি এর প্রভাবটা বেশি পড়ছে? শহরে এর প্রভাব এতোটা নয় কেন? উত্তর হলো, শহরগুলোতে প্রত্যেকটা কাজের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা আছে। এখানে প্রয়োজন অনুযায়ী বিকল্প পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যায়। কিন্তু গ্রামে এই সুযোগগুলো অনেক কম। আমাদের অবাক হতে হয় মায়ের জাতির এই অধঃপতন দেখে। এর পেছনে কারন হিসাবে কি দাড় করানো যায়?

যদি কেউ বলেন এর পেছনে ধর্মীয় শিক্ষার অভাব আছে তাহলেও আমি নারাজ। আপাদ মস্তক বোরখায় আবৃত মাদরাসার ছাত্রিকেও পালিয়ে বিয়ে করতে দেখিছি আমি। পাশের গ্রামে জামে মসজিদ এর খতিবের মেয়ে সারাদিন খাওয়া বাদ দিয়ে কোরআন শরিফ পড়ে। পরে জানা গেলো একটি ছেলের সাথে অবৈধ সম্পর্কের জের ধরে তার এই নতুন ভনীতা। সমাজ সভ্যতা আবার আদিম যুগের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এর সমাধান দুটো হতে পারে, হয় দেশটাকে ফ্রি সেক্স এর দেশ করতে হবে, না হয় বাল্য বিবাহের আবার প্রচলন করতে হবে। স্কুল কলেজে কনডম বিতরণ কোন স্থায়ী সমাধান হতে পারে না। তবে কোন কিছু না হলেও অন্তত প্রয়োজনের তাগিদে বাবা মায়ের ইজ্জত রক্ষার্থে তাদের মেয়েকে যেকোন বয়সে বিয়ে দেওয়ার অধিকারটুকু দিতে হবে।

নিজের বিয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে। হয়তো দু’এক বছরের মধ্যে কাজটা সম্পন্নও করতে হবে। কিন্তু যখন ভাবি আমার পরিবারেও একটি কন্যা সন্তান আসতে পারে। তাকে এই সমাজ ব্যবস্থা, অশ্লীলতায় পরিপূর্ণ সংস্কৃতির মাঝে বড় করতে হবে তখন ভয়ে কুঁকড়ে উঠি। এ সমাজ ব্যবস্থা আমি চাই না। এই নিয়ম নীতি আমি চাই না। আমি চাই একটি মেয়েকে সঠিক ভাবে বড় করার পরিবেশ। তাকে নৈতিকতা শিক্ষা দেওয়ার পরিবেশ। তবে ছেলে সন্তান মানেই যে রসগোল্লা এমনটা না। কিন্তু তুলনামূলক ভাবে মেয়েদের তুলনায় ছেলেদেরকে মানুষ করা একটু সহজ। কারন মেয়েরা আজকাল স্বীকারই করতে চায় না ছেলেদের সাথে তাদের কোন তফাত আছে। সন্তান হিসাবে আমরা শুধু ছেলে অথবা মেয়ে সন্তান চাই। ছেলে রূপি মেয়ে কিংবা মেয়ে রূপি ছেলেকে আমাদের কাম্য নয়।

পুনশ্চঃ আমার এই লেখাটি কোন মেয়ের মনে কষ্ট দিলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। কারন কাউকে কষ্ট দেওয়ার জন্য আমি এটা লিখিনি। আমি শুধু একটি মেয়ে সন্তানকে নিয়ে তাদের বাবা মায়ের আশা ভঙ্গের কথা উল্লেখ করেছি। আমি যাদের নিয়ে লিখেছি তারা হয়তো আমারই বোন, ভাগনি কিংবা ভাতিজি। তাদের এই অবস্থাগুলো আমাকেও ব্যথিত করে। এই অবস্থা থেকে দ্রুত পরিত্রান এবং এ বিষয়ে একমত হোন কিংবা দ্বিমত হোন আপনার সুচিন্তিত মতামত কামনা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:০২
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×