আমাদের পূর্ববর্তি প্রজন্ম পড়ালেখার সত্যিকার উদ্দেশ্য বলতে গিয়ে কিছুটা দ্বিধান্বিত অবস্থায় পড়ে যেতো। যেমন, তারা নিজেরাও জানতো পড়ালেখার মূল উদ্দেশ্য হলো একটা ভালো চাকরী করা। তারপরেও তাদের কাছে পড়ালেখার মূল উদ্দেশ্য জানতে চাইলে তারা হাসিমুখে বলতো- জ্ঞান অর্জন করার জন্যই তো পড়ালেখা করছি। তাদের তুলনায় আমাদের প্রজন্ম একটু আলাদা, পড়ালেখা যে আমরা ভালো একটা চাকরী পাওয়ার জন্যই করি এটা বলতে আমরা লজ্জাবোধ করি না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করার সময় স্যারের লেকচার শোনার পরিবর্তে চাকরীর জন্য পড়তে গিয়ে স্যারের কাছে ধরা খেলেও আমাদের অনুশোচনা হয় না। স্যাররাও এখন এগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করে না। তবে অবাক হলাম আমাদের পরবর্তি প্রজন্মের অবস্থা দেখে!
একদিন দশম শ্রেণী পড়ুয়া আমার এক ছাত্রকে প্রশ্ন করলাম, তোমার পেশাগত টার্গেট কি? উত্তরে সে বললো- স্যার, আমি পুলিশ ক্যাডার হবো। আমি বললাম, শুধু পুলিশ ক্যাডারই কেন? উত্তরে সে যা বললো তাতে আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো মনে হচ্ছিলো। তার মতে, একমাত্র পুলিশ পেশাতেই ঘুষ খেয়ে সহজে বড়লোক হওয়া যায় এবং প্রশাসনিক পদবী থাকায় কেউ পুলিশের ভয়ে কথা বলতে পারে না! চাকরী করার পর মানুষকে ঘুষ খেতে অভ্যস্ত হতে দেখেছি কিন্তু ঘুষ খাওয়ার ইচ্ছে নিয়ে চাকরীর পরিকল্পনা করতে এই প্রথম বার দেখলাম। আমাদের পরবর্তি প্রজন্মের যদি এই রকম উদ্দেশ্য হয় তাহলে জাতি তাদের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করবে?
পুলিশ কথাটা শুনলেই কেমন জানি একটা ঘুষখোর ঘুষখোর ভাব চলে আসে। ব্যক্তিগত ভাবে আমি কখনো পুলিশের সংস্পর্শে আসিনি, আমার বাপ দাদা চৌদ্দ গোষ্ঠীর মধ্যে কেউ পুলিশে চাকরী করেনি কিংবা কোন প্রয়োজনে পুলিশের কাছে যেতেও হয়নি। শুধু ট্রাফিক পুলিশদের মাঝে মাঝে ঘুষ নিতে দেখেছি এবং সিনেমা নাটকে ঘুষখোর পুলিশদের দেখে সামান্য অভ্যস্ত হয়েছি। তাও সিনেমা নাটকের পুলিশেরা কোন এক সময় নায়কের কারনে ঘুষ খাওয়া ছেড়ে দেয় যদিও বাস্তবে এমনটা হয় কিনা জানিনা। এখন প্রশ্ন হলো, প্রত্যেক পুলিশ অফিসারই কি ঘুষখোর? নাকি এসব কেবলি বাস-ট্রাক চালক কিংবা বাংলা সিনেমার অপপ্রচার? পুলিশের মতো দেশ এবং জাতির রক্ষকদের সম্পর্কে এমন ঘুষখোর খেতাব প্রচলিত থাকলে তো সামনে একদল ঘুষখোর চিন্তা ধারার প্রজন্ম তৈরী হবে। যে প্রজন্ম চিন্তাতেই ঘুষখোর তাদের তৈরী বাস্তবতার কথা ভাবার সাধ্য কি আমাদের!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:০৮