লাউয়েরা বুঝি আর কোনদিনও সিজে মোমের মত হবেনা। আর কখনও হয়তো শীতকালীন ঐ অমৃত ভোগে জুটবে না, ভোগান্তি পরিস্কার।
দিনেদিনে সকল স্বাভাবিক ব্যাপারগুলো বিলীন হয়ে যাচ্ছে, অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে স্বাভাবিক।
যেমন, যা কিছু খেতে হবে কচি সেসব কিছুই মেলে বতী; আবার যা কিছু খেতে হবে পক্ক তা সব বিক্রি হচ্ছে অজ্ঞ।
খেয়াল করি তো যেকোন বিষয়েই এই অবস্থা, তবে আজকে শুধু লাউ নিয়ে বলছি। বৃদ্ধ হচ্ছি এই দেখে এবং খেয়ে যে, শীতকালীন সবজির তরকারি একটা বাড়তি সতেজতা, স্বাদ, গন্ধ, সে সময় স্পষ্ট বোঝায় 'আমি শীতকাল চলছি'। ভোরের মিষ্টি রোদ, জলদি গড়িয়ে পড়া দুপুর তাড়া দেয় দিনের সময়কে, বিকেল বলে, পড়লাম কিন্তু ঢলে। সেইযে সন্ধ্যেয় কি সুন্দর একটা মায়া, গন্ধ, ঘ্রাণ টানে ঘরে।
লাউ দিয়ে সোল, চিংড়ি, কৈ অসাধারণ জুটি। তবে আরও আছে কত শত। লাউ তুলতুলে মোমের মত হয়ে যেতো পাতে, যেনো গাঢ় থকথকে, কিছু মিষ্টি স্বাদে, গন্ধে, চেহারায় লোভনীয়। রান্নাতে আদা, জিরে, রসুন বাটা মশলা ইকটু বাড়িয়ে দিতে হয় এই জল প্রধান সবজিতে, ষোল আনা দেশী রান্নার ধাঁচে। এবং যদি রান্নাটা মাটির চুলোয় খড়ি/লাকড়ি দিয়ে রান্না করা হয় তো আর কোন কথায় নাই, সে নিশ্চিত অমৃত হতো। কিন্তু
সেই লাউ আর নাই, আজকাল প্রেশার কুকারে দিলেও মনে হয়, ডিলে/গোটা গোটা শক্ত হয়ে থাকছে, বেশি ভাপ বা শিষ দিলে টক স্বাদ লাগে। আর কেমন মলিন হয়ে যায়, কি একটা অশান্তি! আমাদের প্রজন্ম মরে, পঁচে যেতো, তারপর নাহয় আসতো এসব ডিলে, সুরকির যুগ(হাইব্রিড)।
সবজিতে, মাছে, ভাতে যে অপূর্ব সমন্বয় ছিলো, যেকোন কিছুতে মায়া লাগা ঘ্রাণ ছিলো, সব শেষ করে দিয়েছি। প্রযুক্তির সুবাদে যা কিছু পেয়েছি আমরা, সেসব কিছুর রুপ থাকলেও মায়াময় ঘ্রাণ নাই, সাধনা করে কোনভাবে সিদ্ধ হলেও সেই স্বাদ নাই, শুধু আছে 'নাই আর নাই'।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৫৫