somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাষ্ট্রের প্রকৃত সম্পদ ভবিষ্যত প্রজন্ম

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশের প্রকৃত সম্পদ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম
একটা উন্নত দেশ বা রাষ্ট্র যে ‘উন্নত’ এই পরিমাপ প্রকৃতভাবে কিসের উপর নির্ভর করে?
রাষ্ট্রে কতজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি আছে তার উপর, নাকি দেশে কতগুলো চকচকে গ্লাস টাওয়ার, ফ্লাই ওভার, পাতাল সড়ক আছে সেই সংখ্যার উপর, নাকি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হার কত এইটা থেকে?
একটা জীবিত প্রানের সবচেয়ে বড় যন্ত্রণা হচ্ছে, খাদ্যাভাবে অভূক্তের যন্ত্রণা। এর থেকে বড় যন্ত্রণা আর কিছু হতে পারে না। বিশ্বাস না হলে, নিজেই সর্বোচ্চ অভূক্ত থেকে মিলিয়ে নিতে পারেন।

বাঙ্গালীর পরিচয় সবচেয়ে বেশি প্রকাশ পায় তার খাবার ও খাদ্যাভাসে, এবং তা প্রমানিত। যেখানেই যাই, পাতে মাছ-ভাত চাই-ই-চাই। তাই দেখে অবাঙ্গালিরা বলে, ‘বাঙ্গালি মানেই মাছʼ। আমাকেও শুনতে হয়েছে, শুনতে ভালোও লাগে। ‘মাছে-ভাতে বাঙ্গালি’ এই পরিচয় বর্তমানে ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশীদের জন্য। তা এখন রুপ নিয়েছে ‘ব্রয়লার মুরগী-ভাতে বাঙ্গালি’, সেও যেনো সাধ্যাতীত। দুঃখজনক হলেও বর্তমানে এটাই বাস্তব। মাছে-ভাতে বাঙ্গালী তোকমা যেনো ঘুচতে বসেছে।

একটা দেশের মূল বা শিকড় অথবা ভীত হচ্ছে দেশটির শিশু-সন্তানেরা। আর তাদের সুস্থভাবে শারীরিক বৃদ্ধি, মানসিক বিকাশ, সুবুদ্ধির বিকাশের জন্য মৌলিক প্রথম ও প্রধান উপাদান হচ্ছে- সুষম খাদ্য। প্রকৃতপক্ষে, পরিমিত মৌলিক সুষম খাদ্য ছোটবেলা থেকেই নিশ্চিত করতে হবে যেনো সকল শিশু শর্করার সাথে আমিষ অর্থাৎ ডিম, মাছ, মাংস, ডাল, চর্বিযুক্ত খাবার যেমনঃ দুধ, বাদাম, বিভিন্ন বীজ, ভিটামিন বা শাক-সবজি, মৌসুমী ফল ইত্যাদি পরিমিত গ্রহণ করতে পায়। এগুলোর বেশি বা কম না, পরিমিত সমন্বয়েই হয় সুষম খাদ্য। মৌলিক সুষম খাদ্য হচ্ছে সেই খাবারগুলো যেগুলো আমাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে অনিবার্য।
বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ত্বরিত গতিতে উন্নয়ন করেই চলছে। যেমনঃ যাতায়াত ব্যবস্থা, কল-কারখানা, আমদানী-রপ্তানীতে। মূলত, 'যেকোন রাষ্ট্রের প্রকৃত সম্পদ হচ্ছে, দেশের ভবিষ্যত প্রজন্ম'। সর্ব প্রথম তাদের সার্বিক বিকাশ সুস্থ ও সুন্দরভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন জনের কাজের ধরনও ভিন্ন ভিন্ন। এক শ্রেনীর মানুষ মস্তিষ্কের কাজ করে, অন্য শ্রেনীর লোক শারীরিক শ্রম দেয়, কেউ কেউ মাঝারি ধরনের কাজের উপযোগী। এই সবাই মিলেই যেকোন কাজ সুসম্পন্ন করে থাকে; কেউ যতই শক্তিশালী হোক না কেনো কারো একার পক্ষে কোন কিছু করা সম্ভব না। সেজন্য সকলেরই নিয়মিতভাবে পরিমিত মৌলিক সুষম খাদ্য গ্রহণ করা অতীব প্রয়োজন। কিন্তু সকল বিত্তের মানুষ সেই পরিমাণ পাচ্ছেনা বা যোগাড় করতে পারছে না। যেমনঃ ডিমের হালি কম হলে পঞ্চাশ টাকা, বেশি হলে এর উপরে যায়; এর কম, হয় কম। গরুর খাঁটি দুধ প্রতিদিন নিয়মিত কতজন বাচ্চার জন্য তার অভিভাবক ব্যবস্থা করতে পারছে? অভিভাবক গ্রহণ করার বাতচিত তো বাহুল্যতা। সর্বনিম্ন দাম সত্তুর টাকা কেজি প্রতি, তাও যে খাঁটি হবে এমন কোন নিশ্চয়তা নাই।

মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তের মাংস মানেই, ব্রয়লার মুরগী। খাসির মাংসের কথা বলাই বাহুল্য। গরু বা মহিষের মাংসের দামের যে বহর তাতে বেশিরভাগ লোকের বছর কেটে যায় খাওয়ার অপেক্ষায়। অগণিত পরিবার ঈদেও গরুর মাংস কিনতে পারে না।
শাক-সবজি পুরানো হলে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ টাকা, নতুন হলে এক’শ থেকে একশ আশি টাকা, এর উপরেও উঠে। কিভাবে সম্ভব একজন মধ্যবিত্তের এই দামে পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা? নিম্নবিত্তরা চাইতে পারে, মধ্যবিত্ত না পারে চাইতে, না পারে কিনতে, সবচেয়ে কষ্টের অবস্থা মধ্যবিত্তের। অন্যদিকে দেশীয় ফল ষাট থেকে এক’শ টাকা দিয়ে অনেকেই কিনে খায় না, কিন্তু বিদেশী ফল দুই’শ থেকে ছয়’শ এবং তার বেশী দরে সাবলীলভাবে কিনে খাচ্ছে। যারা প্রয়োজনীয় খাবার পায় না তাদের জন্য দেশী ফলমূল কেনাও বিলাসিতা বা এক রকম অসম্ভব।

বাজারে অজস্র মাছ কিন্তু মধ্যবিত্তরা চড়া দামের কারণে একটা আস্তো বা গোটা মাছ কেনার সামর্থ্য রাখে না। তাদের প্রয়োজনও নাই। কেটে বিক্রি করলেই তো তারা পছন্দের মাছ প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী কিনে নিতে পারে। এখানে ‘ইলিশের’ কথা বলাও অপরাধ। অন্যদিকে অনেকেই বাংলাদেশের জাতীয় ও বিশেষ মাছ ‘ইলিশʼ চড়া দামে ঝুড়ি ভর্তি করে কিনে নেয়, এটা তো চরম বৈষম্যতা।
সমাজ থেকে এই বৈষম্যতা দূর করার জন্য আমরা পারি মাছ কেঁটে যার যার প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী কিনতে!! দেড় যুগ আগেও কাঁটা মাছ যার যার প্রয়োজন মত কিনতে পারতো। সত্যি বলতে কি, ‘ইলিশ মাছ এখন উচ্চবিত্ত পরিবারের মাছ, কারো কারো জন্য স্বপ্ন ও বিলাসিতাʼ। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের মাছ মানেই পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ, তার মূল্যও কম কিছু নয়।

আমরা সাধারণ ক্রেতারা সবাই এক হয়ে, আপত্তি জানাতে পারি আস্তো বা গোটা একটা মাছ কিনতে, তখন বিক্রেতাদেরও কিছু করার থাকবে না। কিন্তু সুবিধা পাবে সকল বিত্তের মানুষ। এটাই হবে চরম সৌন্দর্য্য, সৌহার্দ্যপূর্ণ একটা পরিবেশ। এই কাজ গুটিকয়েক ভালো মানুষের পক্ষে করা সম্ভব না; সামাজিক কাজ হচ্ছে সম্মিলিত একটা প্রক্রিয়া।

বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হার যেভাবে বাড়ছে ঠিক সেই হারে বাড়ছে অসচেতনতা, অমানবিকতা, সৃষ্টির সেরা জীব হচ্ছে- আত্মকেন্দ্রিক, হচ্ছে ছন্নছড়া। মানবিক অবক্ষয় কিভাবে একটা উন্নত দেশ সৃষ্টিতে সহায়ক হতে পারে? প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ক্রমবর্ধমান এই হার আদৌ কি রাষ্ট্রের ইতিবাচক কোন প্রভাব তৈরি করছে?

মানুষ হয়ে মানবিকতা হারানো কোন বাহাদুরী নয় বরং লজ্জার। আমাদের একটু সচেতনতা পারে অজস্র পরিবারকে নির্মল তৃপ্তি দিতে, তাতে দারুণ কর্মক্ষম হয়ে উঠতে পারে পুরো সমাজ।

দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের দৈন্যতা থেকে সৃষ্টি হচ্ছে- অবৈধ- অনৈতিক কর্মযোজ্ঞ‌। একদিনে বা অল্পদিনে কেউ দূর্নীতিবাজ হয়ে ওঠেনা, দূর্নীতি করেও না; ঠিক তেমনি সমাজের উন্নতিমূলক কোন কাজ, ন্যায়সঙ্গতভাবে কোন ব্যক্তি একা অনেক সময় নিয়েও করতে পারবেনা। সকলের সমন্বয়ে, সমর্থনে, পারস্পারিক সহায়তার ভিত্তিতে ধীরে ধীরে হয়।

যখন স্বচ্ছল পরিবারের একটা বাচ্চা খেলছে, সুস্বাদু খাবার খাচ্ছে, স্কুলে যাচ্ছে, ঠিক তখন দরিদ্র পরিবারের বাচ্চাদের শিশুশ্রম দেয়া লাগছে, অভুক্ত বাচ্চাদের মধ্যেও ঐ সকল চাহিদাগুলো উপস্থিত এবং তাদেরও মৌলিক অধিকার, কিন্তু তারা পাচ্ছে না, এবং বিষন্নতায় ভুকছে, হতাশ হচ্ছে, অনেকেই ঐ একই সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার আকাঙ্খায় বুদ হয়ে থাকে, অনেকেই জীদ ধরে যে, ‘যেভাবেই হোক আমার সবকিছু চাই-ই-ই’। এরকম অল্প বয়সে মনের উপর এতগুলো নেতিবাচকতা থেকে চলে আসে অল্প কাজে অনেক টাকা এবং কম সময়ে ধনী হওয়ার তীব্র তাড়না, এবং জড়িয়ে যায় অবৈধ, দূর্নীতি, অনৈতিক, অমানবিক, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে। ‘দায়ী কে বা কারা?- আমরা, দেশের প্রত্যেকটা মানুষ। আবার কোন কোন পরিবারের বাচ্চারা এতো পাচ্ছে যে তারা বেয়াড়া হয়ে বেড়ে উঠছে, এইজন্যেই সমাজে কয়েক শ্রেণীর মানুষের মৌলিক অধিকারে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। সুতরাং কম বা বেশি, কোনটায় না, বরং রাষ্ট্রের সকলের জন্যে পরিমিত পরিমাণ মৌলিক সুষম খাদ্যের সহজ যোগান অত্যাবশ্যক। কিন্তু মানুষের বৈশিষ্ট্য যদি হয়, ‘আকাশ মনি গাছের’ মত তাহলে, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনভাবেই কারো-ই ভালো কিছু হচ্ছে না, সবই ক্ষতি।

পূর্বেই ছিলো তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে আমরা আরো বেশি জানতে পারছি যে, অনেক সেচ্ছাসেবক সংগঠন ও সেচ্ছাসেবক-সেবিকাকর্মী শিশু-সন্তানদের, এতিম, অসহায় মানুষদের খাবার যোগাড় করে দিচ্ছে নিয়মিতভাবে, যা প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু এই দায়িত্ব কোন গোষ্ঠী, সংগঠন বা কোন ব্যক্তির একার না, এই দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হবে, ‘প্রতিটা মানুষ যেনো জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিশ্চিন্তে- মৌলিক সুষম খাবার পায় এর কোন অন্যথায় নাই।ʼ এটাই হবে দেশ উন্নতির প্রথম ও প্রধানতম ধাপ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:২০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×