somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাক্ষাৎকার : ভূমেন্দ্র গুহ ~~~~~ ‘এখনো জীবনানন্দের অনেক কবিতা আছে, যা কোথাও ছাপা হয়নি’

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফয়জুল লতিফ চৌধুরী: দেখেই বোঝা যাচ্ছে, আপনি যথেষ্ট সুস্থ নন। এখনো কি জীবনানন্দ দাশের প্রকাশিত-অপ্রকাশিত লেখার খাতা নিয়ে কাজ করছেন? এখনো কি জীবনানন্দের এমন কবিতা আছে, যা রয়েছে প্রথম প্রকাশের অপেক্ষায়?

ভূমেন্দ্র গুহ: জীবনানন্দের পাণ্ডুলিপির কাজটা যে খুব উদ্যোগী হয়ে করেছিলাম তা নয়, দায়িত্বটা কাঁধে এসে পড়েছিল—বিধিলিপির মতো। তাঁর অপ্রকাশিত কোনো কবিতা বা গল্প আদৌ নেই তা বলা যাবে না, আছে—এখনো জীবনানন্দের অপ্রকাশিত কবিতা আছে; এমন অনেক কবিতা রয়েছে যা কোথাও ছাপা হয়নি। এখন আমি কাজ করছি তাঁর ‘লিটেরারি নোটস’ নিয়ে; আর প্রুফ দেখছি—জীবনানন্দ দাশের নির্বাচিত কবিতা বইয়ের প্রুফ, বাংলাদেশ থেকে বেরুবে বইটি।

ফয়জুল: জীবনানন্দের লেখার যে খাতাগুলো নিয়ে এখন কাজ করছেন, এতকাল সেগুলো কোথায় ছিল?

ভূমেন্দ্র: এগুলো ধরতে গেলে হারিয়েই গিয়েছিল। জীবনানন্দের ভাইপো অমিতানন্দ তাঁর বাড়িতে আমাকে ডেকে নিয়ে গেল। সেটা ১৯৯৭ কি ’৯৮ হবে—ঠিক মনে নেই। দেখলাম, একটা বিছানার চাদর দিয়ে একগাদা লেখার খাতা মুড়ে রাখা। এগুলোও দেওয়া হয়েছিল ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে—তারা রাখেনি। তারপর থেকে অনেককাল এগুলো ছিল জীবনানন্দের মেয়ে মঞ্জুশ্রী দাশের কাছে। এর মধ্যে অনেকগুলোই ‘লিটেরারি নোটস’ অর্থাৎ জীবনানন্দের লেখার খাতা। খাতার ওপর ১ থেকে ৫৭ পর্যন্ত নম্বর দেওয়া। মাঝখান থেকে কয়েকটি হারিয়েও গেছে। আর গল্প-উপন্যাসের খাতা, নানা কাগজপত্র, চিঠি, এক্সারসাইজ খাতায় প্রতিদিনের বাজারের হিসাবের পাশেই কখনো এক-দুটো কবিতার খসড়া। এ ছাড়া ‘স্টোরি থিমস’ নামের মোটাসোটা একটা খাতায় অনেক গল্পের প্লট ভেবে রাখা। এখন বিশেষ করে ‘লিটেরারি নোটস’ উদ্ধারের কাজটা চলছে, ঢিমেতালে। আমি অসুস্থ, অশক্ত, চোখও আর সাহায্য করে না; তবু করে যাচ্ছি। আর কোনো কাজ তো আমার নেই, বাতিও নিবু নিবু। হাতের লেখা তো পরিচিত হয়ে গেছে। ইংরেজিতে তিনি অনেক কিছু লিখেছিলেন ইউরোপ-আমেরিকার কবি-সাহিত্যিকদের সম্পর্কে— জন কিটস, টমাস হার্ডি, ম্যাথু আর্নল্ড—সব কবি-সাহিত্যিক; তাঁদের নিয়ে যখন যা মনে এসেছে, ভেবেছেন—লিখে ফেলেছেন। বর্তমানে সেই সব কপি করছি।

ফয়জুল: কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে জীবনানন্দ দাশের ৪৮টি লেখার খাতা ‘রেয়ার বুকস কালেকশনে’ রাখা আছে। সেগুলো পাঠোদ্ধার করে প্রকাশের ব্যবস্থা করেছেন আপনি। প্রতিক্ষণ প্রকাশনী ১৩ খণ্ডে পাণ্ডুলিপির কবিতাগুলো প্রকাশ করেছে। পাণ্ডুলিপির কবিতা প্রকাশের কাজ কি শেষ?

ভূমেন্দ্র: শেষ হয়নি, শেষ হয়নি। ১৩ খণ্ডের পর এ বছর বইমেলায় ১৪ নম্বর খণ্ড বেরিয়েছে। আর বেরুবে কি না বলতে পারছি না। প্রতিক্ষণের আর আগ্রহ নেই। হয়তো অন্য কেউ করবে, হয়তো বাংলাদেশ থেকে বের করা হবে। তবে প্রকাশক পেলে পাণ্ডুলিপির সব কবিতা অনেকগুলো খণ্ডে নয়, মাত্র দুটি বড় বড় খণ্ডেই বের করা যেত।

ফয়জুল: সব মিলিয়ে তাহলে জীবনানন্দের কবিতার সংখ্যা কত দাঁড়াল? বেঁচে থাকতে পাঁচটি বইয়ে গ্রন্থিত হয়েছিল মাত্র ১৬২টি কবিতা। নানা পত্রপত্রিকা মিলিয়ে জীবদ্দশায় কম-বেশি ২৭০টি কবিতা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রকাশিত-অপ্রকাশিত কবিতার সংগ্রহ-এ কবিতার সংখ্যা ৬৫৮টি। এ বছর প্রকাশিত পাণ্ডুলিপির কবিতার ১৪ নম্বর খণ্ডটি আমার দেখা হয়নি। তবে মনে আছে, ১৩ নম্বর খণ্ড পর্যন্ত ১৪৩২টি কবিতা আপনি কপি করে প্রকাশ করেছিলেন।

জীবনানন্দ দাশ (১৭ ফেব্রুয়ারি ১৮৯৯-২২ অক্টোবর ১৯৫৪), প্রতিকৃতি: মাসুক হেলালভূমেন্দ্র: যখন প্রিয়ব্রতদেব মশাইয়ের কথায় ছায়া-আবছায়া বই​িটর প্রেসকপি তৈরি করছিলাম, তখন মনে হয়েছিল ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে রাখা ৪৮টি খাতায় দুই-আড়াই হাজার কবিতা থাকতেই পারে। গুনে দেখিনি, প্রতি খাতায় ৫০টি করে চব্বিশ শ হয়েও যেতে পারে। কোনো খাতায় ৪০, কোনো খাতায় ৭০। ত্রয়োদশ খণ্ড পর্যন্ত পাণ্ডুলিপির খাতা ১ থেকে ৩২। চতুর্দশ খণ্ডে ৩৩,৩৪—১৩৮টি কবিতা। তাহলে আর কটা থাকল? ১৪​িট পাণ্ডুলিপির খাতা; আরও ছয়-সাত শ কবিতা হয়তো হবে, হাজারও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাহলে দাঁড়াচ্ছে এই, ১৫৭০টি কবিতা ছাপা হয়ে গেছে। আরও সাত শ কি হাজার খানেক কবিতা পাওয়া যেতে পারে। তবে ১৯৩০ আর ’৩৩-এর কোনো খাতা পাওয়া যায়নি, হারিয়ে গেছে। মঞ্জুশ্রী অন্তত দু-দুবার চিরতরে হারিয়ে ফেলেছে জীবনানন্দের লেখার খাতা—বেশ কিছু খাতা। ওর নিজেরই থাকার সুব্যবস্থা ছিল না, কোথায় রাখবে ও বাবার পাণ্ডুলিপির খাতা?
ফয়জুল: আপনি বলেছেন, নিজে উদ্যোগী হয়ে জীবনানন্দের পাণ্ডুলিপি পাঠোদ্ধারে প্রবৃত্ত হননি। তাহলে দায়িত্বটা কীভাবে চেপেছিল আপনার কাঁধে?
ভূমেন্দ্র: ১৯৫৪–এর ২২ অক্টোবর রাতে জীবনানন্দ মারা গেলেন শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। পরদিন হলো শেষকৃত্য। পুরো পরিবার চলে গেল ত্রিকোণ পার্কের কাছে—মেজদা অশোকানন্দের শ্বশুরবাড়িতে। জীবনানন্দের সবকিছু পড়ে থাকল ল্যান্সডাউন রোডের বাড়িতে। তো, আমার ওপরই দায়িত্ব পড়ল জীবনানন্দের জিনিসপত্তরগুলো নিয়ে আসার। পাঁচ-ছয়টা ট্রাঙ্ক, দুটি বইয়ে ঠাসা। তিনটিতে লেখার খাতা বেশ সাজিয়ে রাখা। মেজদা অশোকানন্দের কাছে জীবনানন্দের অপ্রকাশিত লেখার তাগাদা আসে। তিনি আমাকে ডেকে পাঠান। ত্রিকোণ পার্কের বাসায় গিয়ে আমি ট্রাঙ্ক খুলে মেঝেতে বসে কপি করি, বেশ উত্তেজনা নিয়েই করি কাজটা। জীবনানন্দের লেখার ধাঁচটা চিনে ফেলার পর কাজটা আমার জন্য আর খুব কঠিন ছিল না। মেজদা, রিতাদি—(জীবনানন্দের ছোট বোন)—এঁরা আমাকে ভীষণ স্নেহ করতেন। এভাবে চলল কয়েক বছর। ১৯৫৭-তে ডাক্তারি পাস করে হাসপাতালের কাজে ভারী জড়িয়ে পড়লুম, কাজের চাপে মেজদার বাসা গিয়ে কাজ করা মুশকিল। অথচ লেখার খাতা ঘেঁটে কপি তো করতে হবে। এদিকে সম্পাদকেরা এবং প্রকাশক মশাইদের আগ্রহ বাড়ছিল। ফলে ট্রাঙ্কগুলো আমার বাসায় নিয়ে আসতে হলো। সেটা ১৯৫৮। ১৯৬৮ পর্যন্ত ওগুলো আমার কাছেই ছিল। ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৮। বেরুল ধূসর পাণ্ডুলিপির বর্ধিত সংস্করণ, বেলা অবেলা কালবেলা, কবিতার কথা ও রূপসী বাংলা। দুবার কপি করতে হয়েছিল মাল্যবান উপন্যাসটি। অনেকগুলো গল্প, উপন্যাস কপি করা হলো। ১৯৬৮-এর পর কলকাতার বাইরে যেতে হলো আমাকে। ট্রাঙ্কগুলো মেজদার বাড়িতে ফিরিয়ে দিলাম। আর যোগাযোগ থাকল না। ১৯৯৪-এ ডাক্তারির চাকরি থেকে অবসর পেলাম। তিন-চার বছর পর আমাকে খুঁজে বার করল অমিতানন্দ। আবার জড়িয়ে পড়লাম জীবনানন্দের পাণ্ডুলিপি কপি করার কাজে। এখনো সেটা চলছে।

ফয়জুল: আপনার ঘরের দেয়ালে জীবনানন্দের একটি বাঁধানো ছবি ঝুলছে। ফ্রেমের কোনায় তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত একটি ডাকটিকিট। এটা কি স্টুডিওতে তোলা জীবনানন্দের ফটো?

ভূমেন্দ্র: এই ফটোটার একটা ইতিহাস আছে। ২২ অক্টোবর মারা গেলেন জীবনানন্দ দাশ। মধ্যরাতের কাছাকাছি। ২৩ তারিখ দুপুরে শ্মশানে তাঁর দাহ হলো। তারপর শ্রাদ্ধ। শ্রাদ্ধের জন্য ফটো লাগবে। তাঁর ভাই অশোকানন্দ, মানে মেজদা আমাকে বললেন, দেখো তো ভূমেন, দাদার ট্রাঙ্ক খুলে কোনো ছবি-টবি বের করতে পারো কি না, ছবি তো লাগবে। ট্রাঙ্ক খুলে একটা ছবি পাওয়া গেল—গ্রুপ ছবি, দিল্লিতে তোলা। সেই ছবিটি নিয়ে আমি গেলাম কর্নওয়ালিশ স্ট্রিটে ‘রিপ্রোডাকশন সিন্ডিকেট’ নামের দোকানে। দোকান​িট এখনো আছে। তারাই গ্রুপ ছবি থেকে গোল করে কেটে জীবনানন্দের এই ফটোটা বানিয়ে দিল আলাদা করে। ছবির দুটি কপি করা হলো। একটা ছিল আমার কাছে। আর কবির জন্মশতবার্ষিকীতে ডাকটিকিটটি বের করেছিল বাংলাদেশের ডাক বিভাগ। পাছে হারিয়ে যায় তাই ওই ফটোর ফ্রেমের ভেতর ঢুকিয়ে রেখেছি। ভারত তো কিছু করল না, বাংলাদেশ করল।

ফয়জুল: আজকাল একটি প্রশ্ন প্রায়ই আমার মাথায় ঘুরপাক খায়, জীবনানন্দের কবিতার দুর্বোধ্যতা নিয়ে একটা অভিযোগ চল্লিশের দশক থেকেই উচ্চারিত, যদিও এর সবটা ঠিক নয়। তবে মনে হয়, ‘গোধূলি সন্ধির নৃত্য’—এই কবিতাটি কেউ সঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারেনি। আপনি কী বলবেন?

ভূমেন্দ্র: ‘গোধূলি সন্ধির নৃত্য’ নিয়ে আস্ত একখানা বই করেছিলেন আপনি—এটি আমার সংগ্রহে আছে। বরিশালে বসে জীবনানন্দ দাশ ‘গোধূলি সন্ধির নৃত্য’ লিখেছিলেন ১৯৩৭ সালে। ওই বছরই জাপান চীন আক্রমণ করেছিল। এ কথাটা কারুর মনে পড়ল না! চীনের শহরে শহরে ম্যাসাকার চালিয়েছিল জাপান; যেমন ম্যাসাকার হয়েছিল ১৯৭১-এ, আপনাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়। জাপানের আক্রমণের পর নানকিং শহরে কোনো জ্যান্ত মানুষ ছিল না।...গোধূলি সন্ধি—দিন যাচ্ছে, রাত আসছে। তখনই প্রশ্ন জেগেছিল, সন্ধি কেন? দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে, রাত আসছে। দুই পক্ষ আছে। আর দুই পক্ষ যখন নাচে তখন নাচ তো আর নাচ থাকে না, সেটা হয় যুদ্ধ। তারপর ওই কবিতাতেই আছে ‘বিনষ্ট হতেছে সাংহাই’—আসলে এই গোধূলি বরিশালের গোধূলি নয়, কলকাতার গোধূলিও নয়—তাই যদি হতো, তবে ‘সাংহাই’-এর উল্লেখ থাকত না। জীবনানন্দ বুঝে গিয়েছিলেন, চীন-জাপান যুদ্ধ মানেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নান্দীরোল, সামনে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আসছে। ১৯৩৯-এ শুরু হয়ে গেল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, চলল ১৯৪৫ পর্যন্ত। ‘গোধূলি সন্ধির নৃত্য’ রাজনৈতিক কবিতা। নারী অনুষঙ্গ এখানে আছে বটে, তবে যেকোনো চালাক কবি জানেন, নারী অনুষঙ্গ না থাকলে কবিতাটা জমবে না। কিন্তু সে নারীর মাথায় ‘নরকের মেঘ’, মনে রাখতে হবে চুলের ভেতর তাদের ‘নরকের মেঘ’। এই কবিতায় মহাসমরের ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। এখানেই জীবনানন্দ দাশ—সময় নিয়ে তিনি এতটাই সচেতন, এমনকি স্থান নিয়েও—সেই অজগাঁ বরিশালে থেকেও কিন্তু বিশ্বজোড়া সময়ের অশুভ স্পন্দন ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন। আর কলকাতার বাবুরা তখন ইলিশ মাছ ভাজা খাচ্ছেন


ফয়জুল: বাংলাদেশের কবিতা পড়া হয়? বিশেষ কারও কবিতার কথা মনে পড়ে?—শামসুর রাহমান আমাদের দেশের বড় কবি ছিলেন।
ভূমেন্দ্র: আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ নামে একজন। ওঁর কবিতা ভালো লেগেছিল। পেল্লায় চাকরি করতেন সরকারের। আরেকজন আছেন আপনাদের—আল মাহমুদ, বিখ্যাত কবি, যথার্থ বড় কবি। তিনি কী রাজনীতি করেন তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। দু-দুবার আমি বাংলাদেশে গেলাম। আমাকে আল মাহমুদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে আমাকে যাঁরা নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁরা কখনোই আমাকে বলেননি ‘ওঁর বাড়ি যাবেন না’। বলেছেন, ‘কাল নিয়ে যাব, পরশু নিয়ে যাব’—এভাবে কালক্ষেপণের কারণে আর যাওয়াই হলো না। আরেকবার গেলে দেখা তাঁর সঙ্গে করেই আসব। আমি হ‌ুমায়ূন আহমেদের বাড়ি গিয়েছি। অবসরের মালিক আওরঙ্গজেব— আসলে নাম আলমগীর—আমি আওরঙ্গজেব বলি—একই বিল্ডিংয়ে থাকতেন দুজনে। পেল্লায় লেখক ছিলেন, বছর ঘুরতেই লাখ কপি বই বিক্রি হয়ে যেত তাঁর!
ফয়জুল: নিজের সম্পর্কে বলুন। আমরা জানি, আপনি নিজে কবি, জীবনানন্দ দাশকে নিয়েই এক জীবন কাটিয়ে দিলেন। শল্য চিকিৎসক, অধ্যাপক হিসেবে ছিলেন সফল। তবে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর ডাক্তারিটা ছেড়েই দিলেন। একটু গোড়া থেকে বলুন নিজের কথা।

ভূমেন্দ্র: তেমন কিছুই বলার নেই। ময়ূখ পত্রিকাটি বের করতে গিয়েই জীবনানন্দের সঙ্গে পরিচয়। মোটে একটা কবিতা পেয়েছিলুম। বারবার কবিতা চাওয়ার সাহস ছিল না। কিন্তু ওঁর পেছনে পেছনে ঘুরতুম। অনেক সিনেমা-থিয়েটার দেখতেন। সেখানেও আমি হাজির। ময়ূখ-এর ‘জীবনানন্দ সংখ্যা’ করতে গিয়ে পত্রিকাটির আয়ুই ফুরিয়ে গেল। দাশ পরিবারের সঙ্গে আমার খুব ঘনিষ্ঠতা ছিল। জীবনের একটা বড় অংশ তাঁর লেখার সঙ্গে কাটিয়ে দিলুম। একসঙ্গে বেশি কাজ করার ধাত আমার নেই। ডাক্তারি যখন করেছি, সব ছেড়ে কেবল ডাক্তারিই করেছি। তারপর এই তো ঘণ্টা বেজে গেল, যখন-তখন চলে যাব।

ফয়জুল: কবি হিসেবেই তো আপনি জীবনানন্দের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলেন। কিন্তু সেই কবি পরিচয় ছাপিয়ে আপনার মুখ্য যে পরিচয়টি গত তিরিশ বছরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে—সেটি এই যে, আপনি জীবনানন্দ গবেষক। না, পরের মুখে ঝাল খাওয়া গবেষক নয়, গবেষণা করেছেন জীবনানন্দের পাণ্ডুলিপির একচ্ছত্র অধিকার হাতে নিয়ে। আপনার কবি সত্তাটি কি হারিয়েই গেল?

ভূমেন্দ্র: এসব নিয়ে কথা বলার কোনো মানে হয় না এখন। এখন তো এই আছি, এই নেই।

ফয়জুল: সমসাময়িককালে জীবনানন্দকে যাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্য তাঁদের অন্যতম। সঞ্জয় ভট্টাচার্যও জীবনানন্দের শ্রদ্ধা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। হয়তো জীবনানন্দের সঙ্গে যোগসূত্রের কারণেই সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে বিশেষভাবে দেখেছিলেন আপনি। আপনার সম্পাদনায় সঞ্জয় ভট্টাচার্যের কবিতা শিরোনামে ২০১৩-তে তাঁর কবিতাসমগ্রও বেরিয়েছে। এই কবির সম্পর্কে বলুন।

ভূমেন্দ্র: বইটির সম্পাদক আসলে আমি নই। আমার নাম আছে অবশ্য, কিন্তু পুরো কাজটা করেছেন গৌতম বসু। ভূমিকাটাই আমার। সঞ্জয় ভট্টাচার্য অনেক পড়াশোনা করতেন—২৪ ঘণ্টা থাকতেন লেখাপড়া নিয়ে। তাঁর প্রবন্ধগুলো আকর্ষণ নিয়ে পড়তুম। তাঁর কবিতার থিম, ছন্দ-টন্দ নিয়ে বেশ ভাবতুম। ওঁর কবিতা নিয়ে লেখালেখির প্রয়োজন আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×