somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প : মহামারী ও অসৎ সভাসদ

১৩ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হযরত নূহ (আঃ) মহা প্লাবনেরও প্রায় ১০০ বছর আগের কথা। সেবার রুগান্ডা নামক এক রাজ্যে ভয়াবহ এক মহামারী রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সে মহামারীতে দেদারছে মানুষ মারা যায়। কোনো গ্রামের একদিক দিয়ে মহামারী ঢুকে পুরো গ্রামকে গ্রাম ছারখার করে দিয়ে আরেক গ্রামে আঘাত হানে। সেই মহামারী অনেক দিন পর্যন্ত সেই রাজ্যে বিরাজমান ছিলো।

মহামারীতে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় এক ক্ষুদে ব্যবসায়ীর জমানো সব সম্বল কিছুদিনের মধ্যে শেষ হয়ে যায়। পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে হিমশিম খাচ্ছিলো সে। অবস্থা চরম আকার ধারণ করলে পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে ব্যর্থ হয়ে নিরূপায় হয়ে সে পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করে।

আদালতে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ প্রদান করা হয়। তাকে তার শেষ ইচ্ছার কথা জানতে চাওয়া হলে সে রাজ্যের বাদশাহ’র সাথে দেখা করতে চায়। যথারীতি তাকে বাদশহ’র কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। বাদশাহ’র কাছ নিয়ে যাওয়ার পর বাদশাহ তার কাছে জানতে চাইলেন, তুমি কেনো পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করেছ?
লোকটি উত্তর দিলো, ‘জাহাপনা, সপ্তাহখানেক ধরে খাবার না পেয়ে ক্ষুধার জ্বলা কোনোমতে সহ্য করেছিলাম, কিন্তু বউ ছেলে-মেয়ে যখন বারবার খাবারের জন্য কানের কাছে ঘ্যানর ঘ্যানর করতে লাগলো, তখন খাবার দিতে না পেরে রাগে-ক্ষোভে, অপমানে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে সবাইকে হত্যা করে ফেলি।’

বাদশাহ দয়াপরবশ হয়ে কহিলেন, ‘কেনো তোমার পরিবারের খাবার থাকবে না কেনো? আমার সরকার তো সবার জন্য খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করেছিলো। সবার ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেবার কথা!’
লোকটি কহিল, ‘তা হয়তো ঠিক জাহাপনা, কিন্তু আপনার পেয়াদারা সে খাবার সঠিকভাবে বণ্টন করেনি এবং দেশের প্রকৃত চিত্র আপনার সামনে তুলে ধরেনি।’

বাদশাহ কহিলেন, ‘যাইহোক আদালত যেহেতু মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করা হয়েছে, সেহেতু এখানে আমার কিছু করার নাই। এখন বলো, শেষ ইচ্ছা হিসেবে আমার সাথে দেখা করতে চাইলে কেনো?’
লোকটি বললো, ‘জাহাপনা, আপনার সাথে দেখা করার একটা মহৎ উদ্দেশ্য আছে। আমি গত পরশু রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পর স্বপ্নে দেখি, একজন সফেদ দাঁড়িওয়ালা দরবেশ আমার সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি আমাকে এক মুষ্টি সাদা নুড়ি দিয়ে বলেন, অমাবস্যার রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে অন্ধকার থাকতে থাকতে কেউ যদি পাহাড়ের চূড়ায় ওঠে এই নুড়িগুলো চারদিকে নিক্ষেপ করে, তবে দেশ থেকে মহামারি দূর হবে। ঘুম থেকে জেগে সত্যি সত্যি আমার হাতে এক মুষ্ঠি নুড়ি দেখতে পাই।

বাদশাহ সভাসদকে বললেন, ‘আচ্ছা এখনো যেহেতু অমাবস্যার ৯ দিন বাকি আছে, তাহলে তাকে ৯ দিন পরে দরবারে নিয়ে এসো।’
৯দিন পর লোকটিকে দরবারে হাজির করা হলে সে বললো, ‘জাহাপনা, সেই দরবেশ আমাকে নুড়ি পাথরগুলো দেয়ার সময় একটি শর্ত জুড়ে দেন। তিনি বলেন, যে কেউ এই নুড়িগুলো নিক্ষেপ করতে পারবে না। এমন একজন লোককে এই নুড়িগুলো নিক্ষেপ করতে হবে, যে সৎ, যার নামে চুরির কোনো অভিযোগ নাই বা যে রাজ্যের তহবিলের কোনো তছরুপ করেনি। তা নাহলে কিন্তু নুড়িগুলো কাজ করবে না। পরিষদে পিন-পতন নিরবতা। সবাই সবার মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে।’

তখন তো আর এখনকার মতো এভাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ছিলো না। তখন ছিলো একজন মন্ত্রী, সেনাপতি, উজির, নাজির, পন্ডিত, চিকিৎসক, কবি ইত্যাদির সমন্বয়ে বাদশাহ’র সভাসদ।

বাদশাহ মন্ত্রীকে নির্দেশ দিলেন রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে নুড়িগুলো চারদিকে নিক্ষেপ করতে।
মন্ত্রী কাচুমাচু হয়ে বাদশাহকে বললেন, 'জাহাপনা, সারা দেশের প্রশাসনিক সকল কাজ আমাকে দেখতে হয়। এত কাজ করতে গিয়ে মাঝে-মধ্যে মনের অজান্তে একটু-আধটু এদিক-সেদিক হয়ে যেতে পারে।’

বাদশাহ এবার প্রধান সেনাপতিকে নির্দেশ দিলেন নুড়িগুলো নিক্ষেপ করতে।
প্রধান সেনাপতি কাচুমাচু হয়ে বাদশাহ’র কাছে আরজ করলেন, ‘জাহাপনা, ‘এত বড় সেনাবাহিনীকে আমার সামলাতে হয়। বিভিন্ন রাজ্যের সাথে যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে হয়। এসেব করতে গিয়ে মাঝে-মধ্যে একটু-আধটু ভুল-ভ্রান্তি হয়ে যেতে পারে।’

এবার বাদশাহ বিভিন্ন রাজ্যে দূতের দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রদূতকে কাজটি করার নির্দেশ দিলেন।
রাষ্ট্রদূত কাচুমাচু হয়ে বললেন, 'জাহাপনা, এতো রাজ্যের সাথে যোগাযোগ, বিভিন্ন বাদশাহ এবং তাদের সভাসদের সাথে বাণিজ্য-লেনদেন করতে গিয়ে মাঝে-মাঝে একটু এদিক-সেদিক হতেই পারে।'

বাদশাহ যাকেই নির্দেশ দেন সেই ইনিয়ে-বিনিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে এড়িয়ে যায়।
কাউকেই যখন পাওয়া যাচ্ছিলো না, তখন সবাই বাদশাহকে অনুরোধ করলেন, 'জাহাপনা, আপনি আমাদের অভিভাবক, আমাদের মুকুট, সবার শ্রদ্ধা ও আস্থার পাত্র। আপনিই নুড়িগুলো নিক্ষেপ করুন না।'

বাদশাহ তাৎক্ষণিক বললেন, 'তোমরা তো একেকটা বিভাগ চালাও, তাই তোমাদের দায়িত্ব কম। কিন্তু আমি তো পুরো রাজ্য চালাই, রাজ্যের সবকিছু আমি নিয়ন্ত্রণ করি। এত বড় রাজ্য চালাতে গিয়ে মনের অজান্তে আমারও তো একটু-আধটু এদিক-সেদিক হতেই পারে।’

সভায় পিনপতন নিরবতা। সবাই চুপ-চাপ। কেউ কোনো কথা বলছে না। হঠাৎ সেনাপতি বলে উঠলেন, 'জাহাপনা, এই লোক তো ক্ষুধার জ্বালা সহ্য করতে না পেরে এবং পরিবারের সদস্যদের খাবার দিতে ব্যর্থ হয়ে সকলকে হত্যা করেছে। তাহলে লোকটিকে ছেড়ে দেয়া হোক।’

তখন মন্ত্রী মহাশয় বলে উঠলেন, 'না একে ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে বলে আমার মনে হচ্ছে না। ছেড়ে দিলে সে বের হয়ে সবার কাছে আমাদের গোমর ফাস করে দেবে।'

সকলে চিন্তা করতে লাগলেন, তাহলে একে কী করা যায়। সবাই যথন ভাবনায় নিমজ্জিত তখন রাজ্যের প্রধান পণ্ডিত বললেন 'জাহাপনা, এক কাজ করা যায়। লোকটিকে আমাদের চেয়ে তুলনামূলক কোনা ছোট পদ দিয়ে আমাদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে।'

পণ্ডিতের কথা বাদশাহ ফেলে দিতে পারেননি। সেই থেকে সেই হত্যাকারী হয়ে গেলো রাজ্যসভার সদস্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০২০ বিকাল ৩:১৪
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×