somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অন্ধ্রপ্রদেশের দিনগুলি- ৩য় ও শেষ পর্ব

২৬ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেরার পথে আমরা TTD SV Zoological Zoo পরিদর্শন করি। এই চিড়িখানার তত্ত্বাবধানও করে থাকে তিরুমালা তিরুপাতি দেবস্থানম (টিটিডি) ট্রাস্ট। রাস্তায় চলতে চলতে কিছুক্ষণ পর পর দেখি চিড়িয়াখানার চটকদার বিজ্ঞাপন। দীর্ঘ রাস্তা ধরে কিছুক্ষণ পর পর চোখে ভাসছিলো চটকদার বিজ্ঞাপন এবং চিড়িয়াখানার পথ নির্দেশনা। এসব দেখে ভাবছিলাম না জানি কত সমৃদ্ধ হবে সেই চিড়িয়াখানা, না জানি কত জীব-জন্তুতে ভরপুর থাকবে চিড়িয়াখানা। মনে পড়ে গেলো আমাদের মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানার কথা। চিড়িয়াখানার গেইটে না গেলে কেউ বুঝতেই পারবে না এখানে চিড়িয়াখানার অবস্থান। যাই হোক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে চিড়িয়াখানায় প্রবেশ করলাম। কিন্তু ভেতরে ঢুকে তো সব উদ্দীপনা ধূলোয় মিশতে বেশিক্ষণ সময় লাগলো না। ছোট্ট একটি বাঘ, একটি জিরাফ আর কয়েকটি প্রাণী ছাড়া চিড়িয়াখানার দেখার মতো আসলে তেমন কিছুই নেই। মনে হচ্ছিলো, উপরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাটের বাস্তব প্রতিফলন বুঝি এই চিড়িয়াখাানা! কিছুক্ষণ এদিক-সেদিক ঘুরাঘুরি করে ভগ্ন মনোরথে চিড়িয়াখানা থেকে বের হয়ে পরবর্তী গন্তব্যের পথ ধরলাম।

দুপুরের খাবার সেরে আমরা পিলে শহরের বিভিন্ন মন্ডল (উপজেলা) পর্যায়ের নেতাদের সাথে মিটিং করি। সেখানে ১৩ জন মহিলা এবং ৫ জন পুরুষ মন্ডল নেতা উপস্থিত ছিলেন।



মন্ডল নেতারা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে গিয়ে বলেন, একসময় দলিত সম্প্রদায়ের অবস্থা ছিলো খুব শোচনীয়। তাদেরকে মানুষ হিসেবে গণ্য করা হতো না! প্রার্থনা করার জন্য তাদের মন্দির বা মসজিদে প্রবেশাধিকার ছিলো না, জুতো পায়ে তাদের রাস্তায় হাটার অধিকার ছিলো না, একই কাপে চা-কফি বা পানি পান করার অধিকার তাদের ছিলো না। তাদের নিজস্ব কোনো জীবন-যাপন পদ্ধতি ছিলো না, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ তাদের জীবন-যাপন পদ্ধতি কি হবে তা নির্ধারণ করে দিতেন।

সমাজপতিদের সাথে একই বাস/পরিবহনে চড়ার অধিকার তাদের ছিলো না, ছিলো না সেলুনে চুল কাটার অধিকার। এসব তথাকথিত নিয়ম ভঙ্গ করলে তাদের ওপর নেমে আসতো অত্যাচার-নির্যাতনের স্টিম রোলার। এই যখন অবস্থা তখন মানুষদের একত্রিত করে, সংঘবদ্ধ করে এবং বিভিন্ন সচেতনতামূলক উপকরণের মাধ্যমে তাদের সচেতন করে তুলা হয়। এটা করতে গিয়ে তাদের জীবন নাশ, নির্যাতন, মহিলাদের ধর্ষণ, মিথ্যা মামলার মতো জঘন্য সব নির্যাতনসহ বিভিন্ন বাঁধা ও হুমকি ধামকি আসতে থাকে। কিন্তু তাদের লক্ষ্যপানে তারা ছিলো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, ছিলো ইস্পাতকঠিন মনোবল। ১০ বছর ধরে আপসহীন এবং অনমনীয় সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে ক্রমান্বয়ে তারা তাদের অধিকার লাভ করত থাকে।

এখানে বলে রাখি, আমরা মিটিংটি করেছিলাম একটি ঈদগাহ চত্বরে। যদিও সেটি ছিলো মুসলমানদের ঈদগাহ, কিন্তু সেখানে মুসলিম-অমুসলিম কারো প্রবেশাধিকারে কোনো বাঁধা ছিলো না। যে কোনো সম্প্রদায়ের মানুষ সেখানে জড়ো হওয়ার বা সভা করার অধিকার রাখে। এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন। এখন দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ সকল প্রকার অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে। দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙ্গে তারা এখন কৃষক, দিনমজুর হিসেবে স্বাধীন জীবন-যাপন করছে।

২৬, ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর ছিলো সাউথ সাউথ এক্সচেঞ্জ ওয়ার্কশপ। ভেন্যু ছিলো চিত্তোরের এসবিআই কলোনীর মরিগানি পল্লির APVVU এর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। বাংলাদেশে দুটি সংস্থার ১২ জন, এবং ভারতের APVVU, TVVU এবং কয়েকটি বেসরকারি প্রতিনিধি ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করে। প্রথম দিনের পুরোটাই ছিলো জলবায়ু পরিবর্তন এবং জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ এবং এগুলোর প্রভাব সম্পর্কে। আলোচকের একটি বাস্তব কথা খুব মনে ধরেছিলো, ‘পৃথিবীর যে কোনেো একটি অংশ দূষিত হলে, পুরো পৃথিবী তাতে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।



দ্বিতীয় দিনের সকালের সেশনে ভারত ও বাংলাদেশের সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা বিনিময় হয়।
বিকালে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিটি সংগঠনের সাংগঠনিক পর্যালোচনা, সবলতা, দুর্বলতা, প্রতিবন্ধকতা এবং সামনে চলার বিষয় নিয়ে আলোকপাত করা হয়।

২৮ সেপ্টেম্বর ছিলো সেমিনার এবং সফরের শেষ দিন। দুপুরের খাবারের মাধ্যমে ৭ দিনের সফরের পরিসমাপ্তি ঘটে। সেমিনার এর শেষ পর্বে গ্রুপ ফটো সেশনের পূর্বে বাংলাদেশের সকল অতিথিকে একটি করে শাল উপহার দেয়া হয়।



এখানে খাবার সম্পর্কে একটু আলোকপাত করা যাক। যে কোনো সেমিনার বা ওয়ার্কশপে খাবার মানে বিশাল আয়োজন। কিন্তু এখানকার খাবার একেবারে সাদা-মাটা। সবাই লাইন ধরে খাবার নিয়ে সুবিধাজনক স্থানে বসে খাবার সারলাম। খাবার সেই ঐতিহ্যবাহী কলাপাতায় করে সম্বারের সাথে মাংস বা ডিম দিয়ে একেবারে সাধারণ খাবার। সাধারণ হলেও তাতে আন্তরিকতা ও তৃপ্তির কিন্তু কোনো কমতি ছিলো না।



বিকালে আয়োজকদের উদ্যোগে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় চিত্তোরের রিলায়েন্সে শপিং মলের আউটলেটে। রিলায়েন্সের আউটলেটে তখন চলছিলো ছাড় আর ছাড়। এটা কিনলে ওটা ফ্রি। একটা কিনলে একটা ফ্রি অফার। সবাই যে যার ইচ্ছামতো শপিং করলো। তবে চকলেট আর কসমেটিক্সের পরিমাণ ছিলো সবচেয়ে বেশি।

সন্ধ্যা ৮টার পর রাতের খাবার খেয়ে আমরা হোটেল ত্যাগ করি। হোটেল ত্যাগ করার পূর্ব থেকেই নেমেছিলো মুষলধারে বৃষ্টি। মনে হচ্ছিলো এই বুঝি কেয়ামত শুরু হলো। পুরোটা রাস্তা এমন বৃষ্টি আর বৃষ্টি। পুরো রাস্তা-ঘাট কোথাও হাটু পানি, কোথাও কোমর পানি। আমাদের তো ভয়ে সবার কলিজা ছোট হয়ে আসছিলো। একদিকে মুষলধারে বৃষ্টি, সাথে শীলাপাত ও বজ্রপাতের ভয়ংকর শব্দ। রাত ১ টায় আমাদের ফ্লাইট। এভাবে আকাশ কালো করে ঘন্টার পর ঘণ্টা ধরে চলা বৃষ্টিতে রাস্তা-ঘাটে যে হাটু সমান পানি, এই হাটু সমান পানি বেধ করে ৩ ঘণ্টার রাস্তা অতিক্রম করতে কত ঘণ্টা লাগে আল্লাহ মালুম। সবার অন্তরে উৎকন্ঠা। কিন্তু গাড়ির চালক অত্যন্ত দক্ষ এবং সব রাস্তাঘাট নখদর্পনে থাকার কারণে বিভিন্ন অলি-গলি ও বিকল্প রাস্তা দিয়ে আমরা ৪ ঘন্টায় রাত ঠিক ১২ টায় বিমানবন্দরে পৌঁছি। মুম্বাই আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ৪ ঘণ্টার যাত্রা-বিরতি শেষে পরদিন সকাল ১০ টায় ঢাকায় ঢাকায় অবতরণ করি। (সমাপ্ত)

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:৫৫
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×