
এই শহর একদিন সবুজ ছিল।
আমার বাবা বলতেন, এখানে সবাই মিলে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতো।
একসঙ্গে আম কুড়াত, পুকুরে ডুব দিত।
কেউ নামাজ পড়ত মসজিদে, কেউ পূজা করত মন্দিরে।
ধূপের ধোঁয়া আর আজানের সুর মিশে যেত বাতাসে।
কেউ জিজ্ঞেস করত না, “তুমি কে?”
শুধু বলত, “তুমি তো আমাদেরই একজন।”
কিন্তু আজ?
এই শহর বিষাক্ত।
বাতাসে ভেসে বেড়ায় ঘৃণা আর ভয়ের গন্ধ।
প্রতিবেশীর জানালা বন্ধ, কপাট শক্ত।
তাঁর নাম শুনলেই প্রশ্ন ওঠে—“সে কি আমাদের, না অন্যদের?”
মনে হয়, নদীর জলও বুঝি দুই ভাগ হয়ে গেছে।
কোনো অংশ মন্দিরের দিকে, কোনো অংশ মসজিদের দিকে।
তবুও নদী থামে না।
নদী জানে, সে সবাইকে বাঁচায়।
কেন জানি, আমরা মানুষ তা ভুলে গেছি।
গলির ফেরিওয়ালা যে হিন্দু,
আর চা-ওয়ালা যে মুসলমান—এটা কি কখনো ভাবি? ভাবি না।
কারণ ভাবার দরকার হয় না। মানুষ থাকলেই চলে।
কেউ একজন এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি হিন্দু, না মুসলমান?”
আমি হেসে বললাম, “আমি এই মাটি।
তুমি যা, আমিও তা।
তুমি ক্ষত, আমি রক্ত।
তুমি আলো, আমি ছায়া।”
এই শহরটা বড় অদ্ভুত।
দিনের বেলা ইট-কাঠের চাপে হাঁসফাঁস করে,
আর রাত নামলেই যেন গলির বাতিগুলো সব ফিসফিসিয়ে গল্প করে।
এই আলোছায়ার মধ্যে মানুষ থাকে। মানুষ, যার হাসি-কান্না-স্বপ্ন একই রকম।
ধর্ম দিয়ে তো ওগুলো মাপা যায় না, তাই না?
আমাদের শহরে একদিন আলো ফিরবে।
আমাদের বুকে আবার সম্প্রীতির ছায়া পড়বে।
যখন বুঝব, মন্দিরের ঘণ্টা আর মসজিদের মাইকে
একই ঈশ্বর হাসে।
তখনই আমরা আবার মানুষ হব।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:১৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




