somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইকারিয়াঃ যেখানে সুস্থতার আলিঙ্গনে মৃত্যু বহুদূর!

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মৃত্যুকেই ভুলতে বসেছেন তারা!

বিস্ময়ে ভরা গ্রিসের ছোট দ্বীপ ইকারিয়া। দুশ ৫৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। সেখানে যেন মানুষের জীবনে এমন কিছু একটা ঘটেছে, যার ফলে মৃত্যুকে ভুলতে বসেছেন তারা! বা অন্যভাবে বললে বিষয়টা এমন, অমরত্বের রহস্য জেনে ফেলেছেন তারা!
ভারতের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই দ্বীপের মানুষের গড় আয়ু একশ বছর। এতো বছর বয়স মানেই চোখের সামনে ক্ষীণ দৃষ্টি, লাঠি ধরে চেয়ারে বসে থাকার যে ছবি ফুটে ওঠে, তার সঙ্গে ইকারিয়ার বাসিন্দাদের কোনো মিল পাবেন না। একশ বছরেও লাঠি-নির্ভর নন এখানকার বাসিন্দারা। পাহাড়ি সিঁড়ি ভেঙে একাই উঠে যান গির্জায়।
শয্যাশায়ী, মরতে বসা ক্যানসারের রোগীও এখানে এসে সুস্থ হয়ে ওঠতে পারেন বিনা চিকিৎসায়। তারপর হৈ হৈ করে কাটিয়ে ফেলতে পারেন অনেক বছর! এমনই জাদু রয়েছে এই দ্বীপে। যেমনটা হয়েছিল ইকারিয়ার বাসিন্দা স্ট্যামাটিস মোরাইটিসের সঙ্গে।
দীর্ঘদিন স্ট্যামাটিস ইকারিয়া ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় থাকতেন। ১৯৭৬ সালে একদিন হঠাত্ই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছেন তিনি। তার মাত্র নয় মাস আয়ু রয়েছে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়।
স্ট্যামাটিসের তখন ৬০ বছর বয়স। জীবেনর শেষ সময়টা তিনি ইকারিয়ায় ছেলেবেলার বন্ধুদের সঙ্গে কাটাতে চেয়েছিলেন। স্ত্রীয়ের সঙ্গে ইকারিয়ায় ফিরে আসেন তিনি। সেখানে আসার মাস খানেক পর থেকেই যেন তার জীবনের ঘড়ি উল্টো দিকে চলতে শুরু করে। ক্রমে সুস্থ বোধ করতে শুরু করেন তিনি। শয্যাশায়ী মানুষটা একাই হাঁটাচলা শুরু করেন। এমনকি নিজের জমিতে চাষ করে অলিভও ফলান! ৯০ বছর পর্যন্ত বেঁচেছিলেন তিনি।
এরকম অনেক উদাহরণ রয়েছে। একশ পার করা ইকারিয়ার বাসিন্দা গ্রেগরি সাহাস ৭০ বছর ধরে দিনে অন্তত ২০টা সিগারেট খেতেন। তা সত্ত্বেও এক অ্যাপেনডিসাইটিস সংক্রমণ ছাড়া আর কোনো অসুখ সারা জীবনে ছুঁতে পারেনি তাকে।
এখানকার বাসিন্দারা আজও ঘড়ির ওপর নির্ভরশীল নন। ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামতো দোকান খোলেন। লাঞ্চে নিমন্ত্রিত অতিথিরা দুপুর ১২টাতে আসতে পারেন, আবার সন্ধ্যা ৬টাতেও। এখানে সবাই নিজের মর্জির মালিক। আর তাতে কারো কোনো সমস্যাও নেই।
ছোট্ট এই দ্বীপে সকলেই একটা পরিবারের মতো বাঁচেন। টাকা-পয়সা নিয়ে কেউই মাথা ঘামান না। আর তাই ভীষণ স্ট্রেস মুক্ত জীবন এখানে। বেশি শাক-সবজি, ফল খান তারা। ফাস্ট ফুড একেবারেই চলে না। মাছ-মাংসও পরিমাণে খুব কম খান এখানকার বাসিন্দারা। মৎসজীবী, চাষি, পশুপালন এগুলোই এখানকার মানুষের মূল জীবিকা। আর পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় আলাদা করে শরীরচর্চারও প্রয়োজন হয় না। দৈনন্দিন কাজের মধ্যেই সেটা সম্পূর্ণ হয়।
ইকারিয়ানরা স্থানীয় মদ খান। কিন্তু তা কখনও দুগ্লাস অতিক্রম করে না। রাতে ঘুমনোর আগে তারা এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট হার্বাল চা খান। কোনো স্ট্রেস না থাকার কারণে তাদের ঘুমও পর্যাপ্ত হয়, যা শরীর সুস্থ রাখার অন্যতম উপায়।
ভাবতে অবাক লাগলেও বয়স তাদের যৌবনেও ছাপ ফেলতে পারে না। তাই ৮০ শতাংশ ইকারিয়ান ৬৫ থেকে ১০০ বছরেও সম্পূর্ণ সুস্থ এবং স্বাভাবিক যৌন জীবন পর্যন্ত উপভোগ করেন। ইউনিভার্সিটি অব আথেন্স-র এক গবেষণায় ওঠে এসেছে এই তথ্য। ২০০০ সালে ন্যাশনাল জিয়োগ্রাফিক এক্সপ্লোরার এবং লেখক ড্যান বুয়েটনার এই দ্বীপের জীবনযাপন নিয়ে একটি বই লিখেছিলেন, যার নাম দ্য ব্লু জোনস সলিউশন। মূলত ইকারিয়াদের দীর্ঘায়ু হওয়ার রহস্য লেখা রয়েছে ওই বইয়ে।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শতায়ুর সংখ্যা এই দ্বীপে কেন? কেন এখানে মানুষ কম অসুখে ভোগেন? বিশ্বে ভয়ানক হারে বাড়তে থাকা ক্যানসার এবং হৃদরোগ এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে দেখাই যায় না, সেটা কিভাবে সম্ভব? প্রচুর গবেষণাও হয়েছে এ নিয়ে। গবেষণায় বারবারই তাদের লাইফস্টাইলের বিষয়টি ওঠে এসেছে। তাদের চিন্তামুক্ত জীবনযাত্রা, খাদ্যাভাস এবং সর্বোপরি এই দ্বীপের জলবায়ু-এই তিনটি কারণের জন্যই মৃত্যুকে ভুলতে বসেছেন তারা, এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
সুত্রঃকালের কন্ঠ অনলাইন
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৫২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×