somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফটোগ্রাফার হতে চেয়ে যেভাবে আমি “ফুটো”গ্রাফার হয়ে গেলাম – আমার ছবি ব্লগে সবাইকে নিমন্ত্রণ !

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
অনেক আগে থেকেই সন্দেহ হচ্ছিলো, নিশ্চিত হলাম ক্লাস সেভেনে উঠে ।


মেঘের ছায়া
( স্থান – পদ্মা ,কুষ্টিয়া । ক্যামেরা - নোকিয়া এন -৭২ )



জিন্স প্যান্টে একটা শার্ট গুঁজে হেভি ভাব নিয়ে একটা ছবি তুলেছিলাম , ফিল্ম ওয়াশ করার পর যাকে দেখলাম তার সাথে রোজ আয়নায় যার সাথে আমার দেখা হয় তার কোনও মিলই নেই । তখনই নিশ্চিত হলাম ক্যামেরা জিনিসটা আয়নার মতো চাটুকার নয় । আমি ছবিখানা দেখে উদাস হয়ে গেলাম , তারপর, আমার রূপ লাবণ্য ধরার মতো ক্যামেরা এখনও কেউ তৈরি করতে পারেনি এই ভেবে নিজের ছবি তোলা মোটামটি ছেড়ে দিলাম ।


গোধূলি বেলার আবছা পাখিরা
( স্থান- আমার বাড়ির ছাদ । ক্যামেরা – নোকিয়া এন -৭২ )


কিন্তু বায়স্কোপের নেশা বড় কঠিন নেশা । তাতে শুধু সঞ্জীবদা নন আরও অনেকেই আক্রান্ত, এবং সে নেশা যে ছাড়ে না তা তো বলাই বাহুল্য । তাই নিজের ছবি তোলা ছেড়ে অন্যের ছবি তোলার দায়িত্ব তুলে নিলাম আমার হাড্ডিওয়ালা কাঁধে ।


শৈশব আজকাল
( স্থান – নানির বাড়ি । সামসাং ডিজিটাল ক্যামেরা )



আমার ফিল্ম ক্যামেরা কিছুই ছিল না । তবে আমার বড় মামা ছিলেন ফটোগ্রাফার, রাজশাহী শহরে সে আমলে তার শখের ফটোগ্রাফির বেশ নাম ছিলো । ছবি তোলার নেশা যখন তুঙ্গে তখন মামার পিছনে পিছনে ঘুরে বেড়াতাম যদি একটা ছবি তোলার সুযোগ পাওয়া যায় । মামার কাছে তখন জাপানি ইয়শিকো ক্যামেরা । ফুজি ফিল্ম। গুনে গুনে ছত্রিশটা ছবি তোলা যায় , তাই প্রতিটা ফিল্মই মূল্যবান । নষ্ট করার সুযোগ নাই । কিন্তু অধ্যবসায়ের দিক থেকে আমি রবার্ট ব্রুস সাহেবকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বসলাম ।


সেইসব কৈশোর
( স্থান – রাজশাহী ইউনিভারসিটি । ক্যামেরা - সামসাং ডিজিটাল ক্যামেরা )


ছেলেবেলায় অধ্যবসায় রচনা পড়ার কারণেই হোক আর আমার প্রতি স্নেহ, একদিন আমাকে বড় মামা একটি ছবি তুলতে দিলেন । আমাকে আর পায় কে! মুহূর্তের মধ্যে একখানা ছবি তুলে ফেললাম । ছোটবেলা থেকেই ক্যামেরা নিয়ে নাড়াচাড়ার কারনে আমার হাত একেবারে খারাপ ছিলো না , আশা ছিল দারুন একটা ছবি হবে কিন্তু প্রথম ছবিটা ওয়াশ করার পর মনে হলো, পুরা নেগেটিভখানা লবন দিয়ে চিবিয়ে কুচিকুচি করি ।


কন্যা সুন্দর আলো
( স্থান – পতেঙ্গা সি বিচ, চট্টগ্রাম । ক্যামেরা – সামসাং ডিজিটাল ক্যামেরা )




আমি ভেবেছিলাম এরপরে আর আমাকে ক্যামেরা দেওয়া হবে না । কিন্তু বড় মামা দিতেন, একটা ছবি তোলার অনুমতি পেতাম আমি । সেইসব ছবি দেখে আমার মনে হতো পিকাসো, ভান গগের মতো কালজয়ী সব ছবি তুলেছি আমি ( তখন বিখ্যাত ফটোগ্রাফারদের নাম জানতাম না বলে চিত্রশিল্পীদের সাথেই তুলনীয় হতে পছন্দ করতাম) !


ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু
(স্থান – রাজশাহী । ক্যামেরা - সামসাং ডিজিটাল ক্যামেরা )


অথচ ছবি যখন ওয়াশ করে আনা হতো তখন দেখা যেতো আমার বড় মামার কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং ছবির প্রসংসায় সবাই পঞ্চমুখ , আমার কালজয়ী ছবির দিকে কেউ তাকাচ্ছেই না । এক কিশোরের মন খারাপের দিকে কেইবা খেয়াল করে , তাই নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম । এবং যথাসম্ভব উদাস হয়ে ভাবতাম , হায় এইভাবেই নষ্ট হয়ে যায় কত মানুষের দিগ্বিজয়ী প্রতিভা !


ক তে কাদের মোল্লা
( স্থান – ছবির হাট , ঢাকা । ক্যামেরা – নোকিয়া এন -৭২ )


এইভাবেই চলছিলো । ক্লাস সেভেনের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ । ঠিক হলো, দাদীর বাড়ি যাওয়া হবে । আরও ঠিক হলো আমার নানি বাড়ির সবাই আমাদের সাথে যাবে , সাথে আমার চাচা ফুপুরাও আসবে , বিশাল ফ্যামিলি গেট টুগেদার । শেষ মুহূর্তে বড় মামা বললেন তিনি যেতে পারবেন না । আরও অবাক, তিনি আমাকে ক্যামেরা দিয়ে বললেন, যা ক্যামেরা তোকে দিলাম ইচ্ছে মতো ছবি তুলিস ।


আকাশ তলের ঢেউ
( স্থান – ইনানি সি বিচ । ক্যামেরা - সামসাং ডিজিটাল ক্যামেরা )


আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম । নিজের চোখ কান হাত তো দূরে থাক বড় মামার হাত মুখ জিহ্বাকেও বিশ্বাস করতে পারছি না । এটা তো আরব্য রজনীর গল্পেও সম্ভব না! হঠাৎ করেই বড় মামার কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং ছবিগুলাও আমার ভালো লাগতে শুরু করলো । মনে হলো, বড় মামা যদি আরেকটু ভালো ছবি তুলতে পারতেন তাহলে আমার মতো কালজয়ী ফটোগ্রাফার হয়ে যেতেন !


প্রকৃতি
( স্থান – রাজশাহী ইউনিভার্সিটি । ক্যামেরা - সামসাং ডিজিটাল ক্যামেরা )


অতঃপর একদিন সত্যি সত্যি বড় মামার ক্যামেরা নিয়ে দাদি বাড়িতে রওনা দিলাম । দাদি বাড়িতে আমি সবসময়েই রাজপুত্র, কিন্তু এতদিন আমার মুকুট ছিলো না । এইবার ক্যামেরাটাকেই আমার মুকুট মনে হলো, মনে হলো রাজদণ্ড । আমি গ্রামে পা দেওয়ার পর থেকেই ভাব করতে লাগলাম , ইতিহাস থেকে নেমে আসা লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি ( তখনও বিখ্যাত ফটোগ্রাফারদের নাম জানি না আমি, গুগল তখনও বিখ্যাত হয়নি কিনা) । আর কেউ যদি নিজে থেকে ফটো তোলার জন্য আমাকে একটু তেল দেয় তাহলে তো কথাই নেই, টাইটানিকের ডেক থেকে উঠে আসা লিওনার্দো ডি কাপ্রিও আমি (এখনকার উঠতি ফটোগ্রাফাররা ডিএসএলআর হাতে নিলেই কেনও রোমিও কিংবা আরব শেখের মতো ভাব নেয় তা আমি বেশ বুঝতে পারি ) ।


ফ্রেমে বন্দি জীবন
( স্থান – মাদ্রাসা স্কুল, রাজশাহী । ক্যামেরা - সামসাং ডিজিটাল ক্যামেরা )


তবে সবাইই যে আমার ক্যামেরাকে রাজদণ্ড হিসেবে নিলো তা না । কেউ কেউ ছবি তোলার আগে নানা পোজ নিয়ে বিস্তর গবেষণা জ্ঞান দিলো, কারও কারও কোনও পোজই পছন্দ হয়না বলে শেষমেশ সব দোষ ফটোগ্রাফারের উপরে ঝাড়ল । আবার কারও দিকে ক্যামেরা ধরলেই সে এমনভাবে দৌড় দিলো যেনও ক্যামেরা নয় আমি একে-৪৭ তাক করেছি তার দিকে !


প্রজাপতির ডানায় ঠিকানাবিহীন ডাকটিকেট
( স্থান – রুয়েট । ক্যামেরা - সামসাং ডিজিটাল ক্যামেরা )


বুঝলাম ফটোগ্রাফার হওয়া সহজ কথা নয় !


শূন্যতা
( স্থান – আমাদের বাড়ির ছাদ । ক্যামেরা - সামসাং ডিজিটাল ক্যামেরা )


শেষমেশ সত্যি সত্যিই আমি ৩৬টা ছবিই তুলে ফেললাম । কিন্তু ঘটনা ঘটলো ফিল্ম ওয়াস করার পর । দেখা গেলো ৩৬টা ছবিতেই কোনও না কোনও কিশোরী বা তরুণীর উপস্থিতি । বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আমার এহেন দুর্বলতা দেখে আমার মা বাবার মাথা থেকে কিছু চুল খসে গেলো আর ছবি দেখে আমি আছাড় খেলাম আকাশ থেকে । সবাইকে বোঝাতে চেষ্টা করলাম, আমি অনেক প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি তুলেছিলাম কিন্তু সবার ঠোঁট চিপা হাসি দেখে বুঝলাম কেউই বিশ্বাস করছে না ! কিন্তু আপনারা বিশ্বাস করেন আমি সত্যি তুলেছিলাম । এটাও বিশ্বাস করুন, সেই ছবিগুলো কিভাবে উধাও হলো তা পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম সেরা অমীমাংসিত রহস্য !


স্বর্গ সোপান
( স্থান – আমার চিলেকোঠা । ক্যামেরা - নোকিয়া এন -৭২ )


অনেক কিছু লিখে ফেলেছি একদিনে , আর ধৈর্যে কুলাচ্ছে না । যারা এতক্ষণ ধৈর্য ধরে এই ব্লগটি পড়লেন তাদের জন্য নিচের ফুলটি উপহার হিসেবে দিলাম ( অবশ্যই ফুলের নাম জিজ্ঞেস করে লজ্জা দিবে না !)






( এই পোষ্টটি আমার বড় মামাকে উৎসর্গ করলাম যিনি আমাকে অ, আ শিখার আগেই শাটার টিপতে শিখিয়েছিলেন )
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:৩০
৪৫টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×