somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেউ যদি আমেরিকা থেকে আপনাকে স্যোশাল মাধ্যমে অপমান করে, তাকে কিভাবে থামাবেন?

০৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেউ যদি আপনাকে নিয়মিত বা প্রকাশ্যে অপমান করে, বিশেষ করে অনলাইনে — এবং সে যদি বিদেশে (যেমন: আমেরিকায়) থাকে, আর আপনি থাকেন বাংলাদেশে, তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়াটা একটু ভিন্ন ও ধৈর্যসাপেক্ষ। নিচে ধাপে ধাপে বিষয়টি ব্যাখ্যা করলাম:

১. প্রথমে প্রমাণ সংগ্রহ করুন

কোনো আইনি পদক্ষেপের আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে স্পষ্ট ও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রাখা।

অপমানজনক লেখা, ভিডিও, পোস্ট বা মেসেজের স্ক্রিনশট ও লিংক সংরক্ষণ করুন।

তারিখ, সময় ও প্ল্যাটফর্ম উল্লেখ করে একটি আলাদা নোট রাখুন।

যদি সম্ভব হয়, Notary Public বা আইনজীবীর মাধ্যমে প্রমাণগুলো নোটারাইজ করে রাখতে পারেন, যাতে এগুলোর সত্যতা নিয়ে পরে প্রশ্ন না ওঠে।


২. বাংলাদেশে সাধারণ আইনি ব্যবস্থা

বাংলাদেশে কাউকে অপমান, মানহানি বা চরিত্র হননের জন্য Penal Code ও ICT আইন অনুযায়ী মামলা করা যায়।
বিশেষ করে —

দণ্ডবিধির ৫০০ ও ৫০১ ধারা → মানহানি (Defamation)

ICT Act 2006 / Digital Security Act 2018 → অনলাইনে অপমান, হয়রানি বা হুমকির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য

আপনি স্থানীয় থানায় জিডি বা অভিযোগ করতে পারেন, অথবা সাইবার ক্রাইম ইউনিট (CID) ও Digital Security Agency-তে লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন।


তবে যেহেতু অভিযুক্ত ব্যক্তি আমেরিকায়, তাই বাংলাদেশে সরাসরি গ্রেপ্তার সম্ভব হবে না। কিন্তু আপনার অভিযোগ রেকর্ডে গেলে, পরবর্তীতে যদি সে বাংলাদেশে আসে বা বাংলাদেশি প্ল্যাটফর্মে কিছু করে, তখন ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।


৩. যুক্তরাষ্ট্রে অভিযোগ জানানোর পথ

যদি অপমানটা সোশ্যাল মিডিয়ায় (Facebook, YouTube, X/Twitter ইত্যাদি) হয়ে থাকে —

প্রথমে প্ল্যাটফর্মে Report/Flag করুন।

যদি বারবার ঘটে, তাহলে তাদের Legal or Trust & Safety Department-এ প্রমাণসহ ইমেইল পাঠাতে পারেন।

উদাহরণ: Facebook → [email protected]


বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে “Hate speech”, “Harassment” বা “Defamation” নীতিমালা আছে — এগুলো ভাঙলে পোস্ট সরানো বা অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা যায়।


৪. যুক্তরাষ্ট্রে আইনি ব্যবস্থা (যদি আপনি যেতে চান)

আপনি চাইলে সিভিল ডিফেমেশন মামলা করতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রে, কিন্তু এর জন্য:

অভিযুক্ত ব্যক্তি কোন স্টেটে থাকে তা জানতে হবে।

ঐ স্টেটের আইনজীবীর সহায়তা নিতে হবে।

খরচ অনেক বেশি হতে পারে (প্রায় হাজার ডলারের ওপরে)।

তবে অনেক সময় একটি লিগ্যাল নোটিশ (Cease & Desist Letter) পাঠালেও তারা ভয় পেয়ে থেমে যায়।


৫. কূটনৈতিক ও বিশেষ উপায়

যদি ব্যক্তি খুবই প্রভাবশালী বা ধারা-বাহিকভাবে অপমান করে, আপনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা বাংলাদেশ দূতাবাস, ওয়াশিংটন-এর মাধ্যমে কূটনৈতিক চিঠি পাঠাতে পারেন।

বাংলাদেশে আপনার মামলা থাকলে Interpol বা Mutual Legal Assistance Treaty (MLAT)-এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার সুযোগও আছে — যদিও সময়সাপেক্ষ।


বাস্তবিক পরামর্শ

সব কিছুতেই মামলা করাই একমাত্র উপায় নয়। অনেক সময় আইনি নোটিশ ও সোশ্যাল মিডিয়া রিপোর্ট করলেই সমস্যা মিটে যায়।

প্রমাণ ছাড়া মুখে মুখে কিছু বললে মামলা টিকবে না, তাই প্রমাণ সংগ্রহই মূল চাবিকাঠি।

নিজের মানসিক শান্তির জন্য সব কিছুতে নিজে না গিয়ে একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর সহায়তা নেওয়াই উত্তম।


উদাহরণ (বাস্তব)

একজন বাংলাদেশি সাংবাদিককে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা এক ব্যক্তি নিয়মিত ইউটিউবে অপমান করছিল। সাংবাদিকটি:

প্রমাণ সংগ্রহ করে DSA আইনে বাংলাদেশে অভিযোগ করেন।

YouTube-এ রিপোর্ট করেন, ৩ সপ্তাহের মধ্যে কয়েকটি ভিডিও সরিয়ে দেওয়া হয়।

একজন মার্কিন আইনজীবীর মাধ্যমে Cease & Desist Letter পাঠানো হলে ঐ ব্যক্তি থেমে যান।

তিনি মামলা না করেও প্রমাণ ও আইনি ভাষার মাধ্যমে নিজের সুনাম রক্ষা করেছেন।


শেষ কথা
কেউ যদি বিদেশে বসে আপনাকে অপমান করে, আপনি অসহায় নন। প্রমাণ রাখুন, আইন জানুন, সঠিক পথে পদক্ষেপ নিন।
আপনি মামলা করতে পারেন, নোটিশ পাঠাতে পারেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় রিপোর্ট করতে পারেন — এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, চুপ করে থাকা কোনো বাধ্যবাধকতা নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৯
১০টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×