somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কেন আপনার সিভি অনেক জায়গায় পাঠানোর পরও কল আসছে না?

১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক চাকরির বাজারে অনেকেই প্রতিদিন অসংখ্য চাকরির জন্য আবেদন করেন। কয়েক ডজন, কখনও শতাধিক জায়গায় সিভি পাঠিয়েও হতাশায় ভুগেন—একটা কলও আসছে না। তখন মনে হয়, “আমার কি কোনো যোগ্যতাই নেই?” বা “কোম্পানিগুলো কি আমার সিভি দেখছেই না?”। আসলে এর পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। আপনার যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা নয়, বরং আপনার সিভির গঠন, উপস্থাপন, এমনকি আবেদন প্রক্রিয়াতেই লুকিয়ে থাকতে পারে সমস্যার মূল।

১. সিভি খুব সাধারণ বা জেনেরিক

অনেকেই একবার সিভি বানিয়ে সেটি সব জায়গায় পাঠান। কিন্তু প্রতিটি চাকরির জন্য আলাদা চাহিদা থাকে। জেনেরিক বা একরকম সিভি পাঠালে সেটি রিক্রুটারদের কাছে আকর্ষণীয় লাগে না।

বাস্তব উদাহরণ:
আহসান কম্পিউটার সায়েন্সে গ্র্যাজুয়েট হয়ে আইটি কোম্পানিতে আবেদন করছিলেন। তার সিভি ছিলো এক পাতার, সাধারণ টাইপ করা তথ্যভিত্তিক। ৩০টিরও বেশি জায়গায় আবেদন করেও তিনি কোনো কল পাননি। পরে একজন সিনিয়র তার সিভি সাজিয়ে দেন—প্রতিটি চাকরির বিজ্ঞাপনের সাথে মিল রেখে স্কিল হাইলাইট করে। এক সপ্তাহের মধ্যে তিনটি কোম্পানি থেকে ইন্টারভিউ কল আসে।

২. সিভি খুব দীর্ঘ বা অপ্রাসঙ্গিক তথ্যপূর্ণ

অনেকে ভাবেন যত বেশি তথ্য দেবেন, সিভি তত শক্তিশালী হবে। কিন্তু বাস্তবে রিক্রুটারদের হাতে সময় খুব কম। ২–৩ পাতার বেশি হলে তারা অনেক সময় পড়েনই না। অপ্রাসঙ্গিক প্রজেক্ট বা স্কুল লাইফের ছোটখাটো পুরস্কার উল্লেখ করলে সিভি অগোছালো লাগে।

৩. কিওয়ার্ড ব্যবহার না করা

বড় কোম্পানিগুলো এখন Applicant Tracking System (ATS) ব্যবহার করে। সেখানে চাকরির বিজ্ঞাপনে যে কীওয়ার্ড দেওয়া থাকে (যেমন “Digital Marketing”, “Project Management”, “Python”), সেগুলো যদি আপনার সিভিতে না থাকে, তবে স্বয়ংক্রিয় সিস্টেমেই আপনার সিভি বাদ পড়ে যায়।

বাস্তব উদাহরণ:
মেহজাবিন একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তার সিভিতে “SEO” বা “Content Strategy” শব্দগুলো উল্লেখ ছিল না। অথচ বিজ্ঞাপনে এগুলো মূল চাহিদা ছিল। ফলে তার সিভি শর্টলিস্টই হয়নি। পরে তিনি কীওয়ার্ড যোগ করে সিভি আপডেট করলে দ্রুতই ইন্টারভিউ কল পান।

৪. সিভির ডিজাইন ও ফরম্যাট সমস্যা

অতিরিক্ত রঙিন সিভি বা খুব অগোছালো ডিজাইন অনেক সময় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আবার কেউ কেউ শুধু PDF না পাঠিয়ে Word ফাইল পাঠান, যেটি অন্য কম্পিউটারে ফরম্যাট নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

৫. কভার লেটার না দেওয়া

শুধু সিভি পাঠিয়ে দিলে অনেক সময় বোঝা যায় না কেন আপনি ওই চাকরির জন্য উপযুক্ত। একটি সংক্ষিপ্ত, চাকরিভিত্তিক কভার লেটার দিলে রিক্রুটার বুঝতে পারেন আপনি সত্যিই পজিশনটি নিয়ে সিরিয়াস।

বাস্তব উদাহরণ:
শারমিন একটি ব্যাংকের চাকরির জন্য সিভি পাঠিয়েছিলেন, কিন্তু কল পাননি। পরে একই ব্যাংকে আবার আবেদন করার সময় তিনি একটি কভার লেটার লিখলেন, যেখানে ব্যাংকের কাজের ধরন ও নিজের দক্ষতা মেলালেন। এবার তিনি ইন্টারভিউ কল পেলেন।

৬. অপ্রফেশনাল ইমেইল ঠিকানা বা যোগাযোগ তথ্য

আপনার সিভিতে যদি ইমেইল ঠিকানা হয় “[email protected]
” বা ফোন নম্বর ভুল থাকে, তাহলে প্রথমেই নেতিবাচক ইমপ্রেশন তৈরি হয়।

৭. অভিজ্ঞতা বা অর্জনগুলো পরিমাপযোগ্যভাবে না লেখা

শুধু “আমি সেলস এক্সিকিউটিভ ছিলাম” লিখলে যথেষ্ট নয়। লিখতে হবে—“আমি এক বছরে কোম্পানির বিক্রি ২৫% বাড়িয়েছি”। এ ধরনের মাপযোগ্য অর্জন রিক্রুটারের চোখে আলাদা গুরুত্ব পায়।

৮. আবেদন করার সময়সীমা ও নির্দেশনা মানা

অনেকে সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও আবেদন করেন, অথবা নির্দেশনায় বলা থাকলেও পোর্টফোলিও বা নির্দিষ্ট ফাইল ফরম্যাট পাঠান না। এতে সিভি পড়ার আগেই বাদ যায়।

সমাধান কী হতে পারে?

• প্রতিটি চাকরির জন্য আলাদা সিভি তৈরি করুন।

• প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন, যেন ATS-এ বাদ না পড়ে।

• ২ পাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন, অপ্রয়োজনীয় তথ্য বাদ দিন।

• সঠিক ফরম্যাটে (PDF) পাঠান, সহজে পড়ার মতো করে সাজান।

• কভার লেটার লিখুন, যেখানে চাকরির বিজ্ঞাপনের সাথে নিজের দক্ষতা মিলিয়ে দেখান।

• অর্জনগুলো সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করুন, যেন রিক্রুটার আপনার অবদান বোঝেন।

• যোগাযোগ তথ্য হালনাগাদ রাখুন, প্রফেশনাল ইমেইল ব্যবহার করুন।


উপসংহার

চাকরির বাজারে শুধু সিভি পাঠানোই যথেষ্ট নয়; বরং কৌশলগতভাবে সিভি তৈরি ও উপস্থাপন করতে হয়। হয়তো আপনি যোগ্য, কিন্তু আপনার সিভি সেই যোগ্যতার সঠিক ছবি তুলে ধরছে না। সঠিক কিওয়ার্ড, সংক্ষিপ্ত কিন্তু শক্তিশালী উপস্থাপন, এবং প্রতিটি চাকরির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সিভি পাঠালে অবশ্যই ইন্টারভিউ কল আসবে। মনে রাখবেন—সিভি হলো আপনার প্রথম পরিচয়, আর প্রথম পরিচয়টাই অনেক সময় আপনার ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×