somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী.
আমি সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী জন্ম চট্টগ্রামে। জীবিকার প্রয়োজনে একসময় প্রবাসী ছিলাম।প্রবাসের সেই কঠিন সময়ে লেখেলেখির হাতেখড়ি। গল্প, কবিতা, সাহিত্যের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলা পত্রিকায়ও নিয়মিত কলামও লিখেছি। shakawatarticle.blogspot.com/

"টিপ " নিয়ে মাতামাতি

০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :







গরমের নাভিশ্বাস, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, রমজানের সাওম , সবকিছুকে পেছনে ফেলে গত কয়েকদিন ধরে যে বিষয়টা টক অব দ্যা কান্ট্রি তা হলো "টিপ "। টিপ দেওয়াকে কেন্দ্র করে একজন শিক্ষিকার সাথে যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে গেলো তা খুবই দুঃখজনক। এই ঘটনা আজ আমাদের মানবিকতা, ধার্মিকতা এবং অসম্প্রদায়িক চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।





টিপ পরাকে কেন্দ্র করে যে মৌলবাদী সুড়সুড়ি সারা দেশকে উসকে দিচ্ছে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা এই টিপ আজ দেশকে দুই ভাগে ভাগ করে দিয়েছে। তাই টিপ পরা এবং না পরা নিয়ে কোথায় কার কী সম্মতি এবং আপত্তি আছে তা আমাদের সকলের দৃষ্টিগোচর হওয়া উচিত।


শুরুতেই বলতে হচ্ছে, শ্রদ্ধেয় শিক্ষিকার সাথে যা ঘটেছে তার জন্য জাতি হিসাবে আমরা লজ্জ্বিত। তিনি একজন মা এবং একজন শিক্ষাগুরু। তাঁর সাথে এমন আচরণ কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। কেননা ঐ পুলিশ যে দৃষ্টিকোণ থেকে ঐ শিক্ষিকার সাথে এমন আচরণ করেছেন, সেই আচরণের অধিকার কেউ তাকে দেয়নি। আমাদের রাষ্ট্র কিংবা ধর্ম কোনো অবস্থান থেকেই কোনো সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগুরু কারো সাথেই এভাবে লাঞ্চিত করার কোনো অনুমতি নেই।



অভিযুক্ত পুলিশ যে দৃষ্টিভঙ্গিতে এই আচরণ করেছে, সেই একই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের মুসলিম সমাজের অনেকেই পোষণ করে। যা আপাত ধর্মীয় দৃষ্টিতে অপরাধ না হলেও অযৌক্তিক জায়গায় প্রয়োগে ধর্মীয় যথেষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কেননা ইসলাম কাউকেই (হোক মুসলিম বা বিধর্মী) সরাসরি হেনস্তা করার অধিকার কাউকে দেয়নি। সুতরাং টিপ নিয়ে যা ঘটেছে তা অবশ্যই অযৌক্তিক এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।



আমরা জাতিগতভাবে বাঙ্গালী। তাই আমাদের সংস্কৃতিতে বাঙ্গালীয়ানা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। এই সংস্কৃতির উপর কোনো বাঁধাই আমরা মেনে নিতে পারি না। যে নিজেকে বাঙ্গালী বলে পরিচয় দিতে চায় তাকে কেউই তার সংস্কৃতি থেকে আলাদা করতে পারবে না। এমনকি ইসলামও তাকে বাঁধা দেওয়ার কথা বলে না। তাহলে এই অধিকাংশ মৌলবাদীদের সমস্যা কোথায়?


যেসব মুসলিম নিজেদের বাঙ্গালি পরিচয়ের চাইতে মুসলিম পরিচয়কে বড় করতে চায়, তাদের জন্য তখন সংস্কৃতির চাইতে ধর্মটাই প্রধান বিবেচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আর তখনি মুসলিম জাতীয়তাবাদের সাথে অসম্প্রদায়িক চেতনায় সংঘর্ষ বাঁধে। কেননা ইসলাম বিজাতীয় সংস্কৃতি ধারণ কারার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট আয়াতে আল্লাহ্ বলেন,


“তোমরা কাফির ও মুনাফিকদের অনুসরণ করবে না।” ( সূরা আহযাব: ৪৮)



অর্থাৎ যে নিজেকে মুমিন মুসলিম দাবি করবে সে কখনোই কাফির-মুশরিক, ইহুদী-নাছারা, বৌদ্ধ-মজুসী, বেদ্বীন-বদদ্বীন ইত্যাদি বিভিন্ন কোনো ধর্মাবলম্বীদেরই অনুসরণ করতে পারবে না। তার জন্য বিজাতীয় ধর্মীয় সংস্কৃতি গ্রহণ করা হারামের অন্তর্ভুক্ত।





অনুসরণ অনুকরণ বিষয়ে হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বাণী হলো,


হযরত ইবনে উমার রাঃ হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুরূপ অবলম্বন করে,সে তাঁদেরই দলভুক্ত। (সুনানে আবূ দাঊদঃ ৪০৩১)



অর্থাৎ কেউ ইসলামের আদর্শের বাইরে গিয়ে অন্য কোনো আদর্শ বা সংস্কৃতিকে পছন্দ করে লালন করতে পারবে না। যদি কেউ এমন করে তাহলে সে ঐ দলের বা গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। উপরোক্ত কুরআন এবং হাদিসের আলোকে ইসলামে কোনো মুমিন মুসলিম এমন কোনো বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুসরণ করতে পারে না। যেসব সংস্কৃতি বিধর্মীদের ধর্মীয় আচার কিংবা তাদেরকে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের থেকে আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দেয়।




উপমহাদেশে টিপের ইতিহাস যদি আমরা জানার চেষ্টা করি, তাহলে জানতে পারবো যে, টিপ সনাতন ধর্মাবলম্বী তথা হিন্দুদের ধর্মীয় একটি আচার এবং প্রথা। যা বাঙ্গালী হিন্দুরা যুগ যুগ ধরে মেনে আসছে। টিপের সম্পর্ক হিন্দু নারীদের সিঁদুরের সাথে। যে সিঁদুর হিন্দু বিবাহিত নারীরা তাদের স্বামীদের মঙ্গল কামনায় কপালে ধারণ করেন। শুধু নারী নয় সনাতনী পুরুষরাও তাদের বিভিন্ন পূজার্চনায় টিপ বা তিলক পরিধান করে থাকেন। অনেক সনাতনী গোষ্ঠীর নারী পুরুষ উভয়ই লম্বা তিলক দিয়ে থাকেন। যা উপমহাদেশে ইসলাম আবির্ভাবের পূর্ব থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পালন করে আসছে।




ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় উপমহাদেশে ইসলাম আবির্ভাবের পরে যারা ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলামে প্রবেশ করে তারাও তাদের আগের সংস্কৃতি থেকে সরে আসেনি। সেইসাথে কুরআন হাদিসের সঠিক চর্চা এবং ধর্মীয় জ্ঞানের সংকীর্ণতার কারণেও অধিকাংশ মুসলমান জানতে পারেনি বিজাতীয় সংস্কৃতি ইসলামে ধারণ করা নিষিদ্ধ। যারফলে এখনো মুসলিম বাঙ্গালীরা জানে না- টিপসহ আরও অন্যান্য যেসব সংস্কৃতি আছে, যা সরাসরি বিধর্মীদের নিদর্শন তা ইসলামে নিষিদ্ধ।



অতএব, যারা নিজেদেরকে মুসলিম ধর্মীয় পরিচয়ে পরিচয় দিতে চায় তাদের জন্য ইসলামী সংস্কৃতির বাইরে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় সংস্কৃতি নিষিদ্ধ। আর যারা নিজেদের বাঙ্গালী পরিচয় দিয়ে চলতে চায়, তাদেরকে কেউ ধর্মের ধোঁয়া তুলে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া যাবে না। কেননা ইসলাম কখনোই কারো টুঁটি চেপে ধরার শিক্ষা দেয় না। অতএব উপরোক্ত ঘটনার মতো ইসলামকে ব্যবহার করে ধর্মকে কলঙ্কিত করা যাবে না।



যেসব মুসলমানরা এই ঘটনায় ঐ পুলিশের ইসলামী দৃষ্টিকোণ খোঁজার চেষ্টা করছেন। তাদের জন্য সত্য হলো, দ্বীন প্রচার প্রথমে নিজ ঘর থেকেই শুরু করতে হয়। যারাই আজ টিপ বিরোধী তাদের উচিত নিজ নিজ মা বোনসহ সকল মুসলিম আত্মীয়স্বজনদের সামনে টিপের ব্যাপারে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা। সেইসাথে যারাই টিপের পক্ষপাতী তাদেরকে এড়িয়ে চলা। কেননা ইসলাম জোর করে ধর্ম পালনে বাধ্য করে না। সেইসাথে কোনো বিধর্মীকে জোর করে লাঞ্চিত অপদস্থ করার অধিকার ইসলাম কখনোই কাউকে দেয় নি




আর যারা নিজেদের মুসলিম এবং বাঙ্গালী উভয়ই দাবি করতে চান। তাদের জন্য নীতি বাক্য হলো, কখনোই দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা যায় না। আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে বাঙ্গালী বলে পরিচয় দিতে পারেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার বাঙ্গালীয়ানা আপনার ইসলামে আঘাত না আনে। যদি বাঙ্গালীয়ানার কোনো কিছু ইসলামে আঘাত আনে তাহলে তা আপনার ঈমানে আঘাত আনবে। আর আপনার ঈমান আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া মানেই আপনি ইসলাম থেকে বেরিয়ে হয়ে যাওয়া।




সুতরাং আমাদের সকলেরই উচিত সঠিক ইসলাম জানার চেষ্টা করা। অহেতুক বিচ্ছিন্ন ঘটা ঘটিয়ে ইসলামকে কলুষিত করা কখনোই কারো উচিত নয়। সবারই উচিত আগে নিজের পরিবার পরিজনে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা। তারপর সুন্দর আচরণের দ্বারা অন্যান্যদেরও ইসলামের দাওআত দেওয়া। যাতে আমরা সত্যিকারের প্রকৃত মানুষ এবং মুমিন হতে পারি।





সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী

পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।






সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাদ্রাসা শিক্ষা, বৈশ্বিক রাজনীতি, সহিংসতা ও জঙ্গিবাদ

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৫


লেখাটির শুরুতে একটি ভূমিকা দেওয়া যাক। সর্বশেষ দেশে গিয়ে কয়েকদিন গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। উত্তরবঙ্গে, নিতান্ত অনুন্নত আমাদের সেই গ্রামে এতগুলো কওমি মাদ্রাসা হয়েছে দেখে অবাক হয়েছিলাম। আগে গ্রামে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চোখের জল

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৪৬


সুদীর্ঘ ১৭ বছরের জমে থাকা
বিনম্র চোখের এক কোণে জল!
প্রকাশে এলো এই জনসমুদ্রে-
জনসমুদ্র তুলছে আনন্দাশ্রুর
ঢেউ- দেখছে নতুন ফুলের গন্ধ;
এ নৈঃশব্দের আর্তনাদ বুঝতে
হবে শুধু তোমাকে- আমাকে
গড়ে তুলতে হবে মনুষ্যের প্রণয়ে
সূর্য ভোর- যেখানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকার মানুষের জীবন

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪


ঢাকাতে মানুষ বড় বিচিত্র ভাবে বেঁচে থাকে। নিয়মিত ঢাকার রাস্তার ঘুরে বেড়ানোর কারণে এই রকম অনেক কিছু আমার চোখে পড়ে। সেগুলো দেখে মনে হয় মানুষ কত ভাবেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯

পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছর বৃষ্টিপাতের কারণ কী?



পৃথিবীর কিছু অঞ্চলে প্রায় সারা বছরই বৃষ্টিপাত হয়। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আফ্রিকার কিছু দেশ এবং দক্ষিন আমেরিকার কিছু দেশ ও অঞ্চলে বছরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ কখনো এমন করে বলতে পেরেছে কি?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


ভারতে গরু ও গোমাংস নিয়ে হত্যা বা সহিংসতার নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা কঠিন কারণ এটি রাজ্য, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং 'গরু রক্ষা' বাহিনী ইত্যাদীর কারণে একেক যায়গাতে একেক রকম। ভারত গোমাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×