অফিস থেকে ফেরার পথে অনেকদিন পর মুরগীর বাজারে গেলাম। রমজান মাস চারিদিকে যেন কেয়ামতের হইচই৷ একজনের মাথা আরেকজন খাচ্ছে । কার আগে কে কেনাকাটা শেষ করে বাড়ি যাবে তা নিয়ে বিস্তর তোড়জোড় ।
মুরগির বাজার ক্রেতা শূন্য । লোকজন নেই বললেই চলে । মুরগী ওয়ালা একরাশ বিরক্ত নিয়ে বসে আছে। ধীরেসুস্থে তার কাছে গিয়ে দাম জিজ্ঞাসা করতে, সে মুখ না তুলে বলল, ২০০ টাকা। "২০০ টাকা" এমন ভাবে উচ্চারণ করলো যেনো নিজের কলিজা টেনে ছিঁড়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। বুঝলাম ভোক্তা অধিকারের লোকজনের প্যাঁদানি খেয়ে তাদের মেজাজ-মর্জি খিচে আছে। বেচা বিক্রিতে আগ্রহ নেই।
পরিস্থিতি অনুকূলে বুঝতে পেরে একটু খোঁচাতে ইচ্ছে করলো। তাই বেশ সিরিয়াস হয়ে বললাম,১৮০ টাকা হয় না? ব্যাটা নিজের রাগ চেপে রেখে শান্ত ভাবে বলল,না হয় না। আমি আবার বললাম, তাহলে ১৯০ রাখেন। এবার আর সে আমার কথার উত্তর না দিয়ে বেচা বিক্রির খাতা চেক করতে লাগলো। বুঝলাম,আর খোঁচাখুঁচিতে লাভ হবে না। দাম কমতে থাকায় তারা এখন সকল খোঁচাখুঁচির ঊর্ধ্বে উঠে দাম বৃদ্ধির নতুন কোন প্লানে ব্যস্ত।
শেষমেশ বললাম,"দেন তিনটা মুরগী দেন।"
এবার সে আমার দিকে তাকিয়ে সগর্বে বলল, কেজি কিন্তু ২০০ টাকা। বুঝিয়ে দিলো সে তার কথায় অনড় । এতো অহমিকা এতো দম্ভ এরা কোথা থেকে পায় ? এদের হুঙ্কারে আমাদের জ্ঞান গরিমা আত্মসম্মান সব মুহূর্তে ধূলিসাৎ হয়ে যায় ।
অথচ আজও দৈনিকগুলোতে পড়েছি, বাজারে মুরগী নাকি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে । বাজারে এসে মনে হলো হলো একটা শ্রেনীকে খুশি করার জন্য আরেকটা শ্রেনী নিউজ করছে । এর পরে গিয়ে ঈদের সেলামীর জন্য লাইন দেবে ।
আর কথা বাড়াতে ইচ্ছে করলো না । সামান্য মুরগী ওয়ালা'কে খোঁচাতে গিয়ে নিজেই নিজের ছোড়া তীর বিদ্ধ হয়ে অন্তরে রক্ত ক্ষরণ অনুভব করতে লাগলাম । তাই মাথা নেড়ে বললাম,ঠিক আছে দেন। আপোষ করে ফেললাম,না করে উপায় কি? গত ১৪ বছরে এ দেশের জনগণ সবকিছুতেই আপোষ করতে শিখে গেছে। ঘরে স্ত্রী সাথে আপোষ, অফিসে দুনীতি গ্রস্ত কলিগদের সাথে আপোষ, বসের সাথে আপোষ, বাজারে সবজি ওয়ালা, মুরগী ওয়ালা,মাছ ওয়ালা,বাসে ট্রেনে বাদুড় ঝুলা হতে হতে কন্টাক্টরের সাথে আপোষ।
এতো আপোষের পরেও সন্তানের কাছে শুনতে হয়, "বাবা হয়ে তাদের জন্য নাকি কিছুই করিনি।" তখন আর জীবনের কোন মানে থাকে না । সব শূণ্য হয়ে যায় । শরীরটা অসার লাগে । মনের কোণে প্রশ্ন জাগে এতো, এতো আপোষে পাপোশ হয়ে যাওয়া জীবনে কি পেলাম আমি,আমরা মানে বাবারা ?
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০২৩ সকাল ১০:০০