somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাখাওয়াত হোসেন  বাবন
ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে "আমার কবিতা নামে" আমি ব্লগিং করি মূলত নিজের ভেতরে জেগে উঠা ব্যর্থতা গুলোকে ঢেকে রাখার জন্য । দুনীতিবাজ, হারামখোর ও ধর্ম ব্যবসায়িদের অপছন্দ করি ।

মাহিমা ( ছোট গল্প) প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



"মাহিমার মতো একদিন আপনিও হয়তো মুখোমুখি হতে পারেন ভয়াবহ এক পরিস্থিতির, তাই লাশ হবার আগে সর্তক থাকুন"
মা জননী,আপনি কোথায় যাবেন ?
বাসের আশায় ফুটপাত ধরে হাটতে হাটতে হঠাৎ অত্যন্ত মোলায়েম কণ্ঠে “মা জননী” সম্বোধন দিয়ে প্রশ্ন শুনে চমকে ডানে রাস্তার দিকে তাকাল মাহিমা ।

রাত আনুমানিক পৌনে ১১টা বাজে । রাস্তাঘাট ইতিমধ্যে অনেকটাই ফাকা হয়ে গেছে । অফিসের কাজ শেষ করে,হিসাব নিকাশ বুঝিয়ে দিয়ে বের হতে হতে দেরি হয়ে গেছে। অন্য সবদিন ৮ টা মধ্যেই ছুটি হয়ে যায় । আজ একটু বেশিই দেরী হয়ে গেছে । কিভাবে বাসায় পৌছবে সেই চিন্তায় ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠেছে ও । তার উপর রাস্তায় গাড়ি ঘোড়া কিচ্ছু নেই ।

সাধারণত ছুটির সময় তামান্না, মল্লিকা কেউ না কেউ সাথে থাকলেও আজ ও সম্পূর্ণ একা । রাত্রি বেলা ঢাকা শহর এখন আর কারো জন্যই নিরাপদ নয় । তারপরেও কোন উপায়ন্তর নেই দেখে দুরুদুরু বুকে একাই সে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে।

মাহিমার অফিস মহাখালীতে । ওরা থাকে যাত্রাবাড়ী । মহাখালী থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটারেরও বেশি পথ । বাসে গেলে ঘণ্টা খানেকের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায় । রাত্রি হয়ে যাওয়ায় প্রায় আধা ঘণ্টা দাড়িয়ে থাকার পরেও যাত্রাবাড়ী যাবে এমন একটা বাস আসেনি ।

সিএনজি কিংবা রিকশায় করে যাওয়া যায় কিন্তু তাতে কম করে হলেও ২শ টাকা খরচ হয়ে যাবে । দ্রব্যমূল্যের এই বাজারে দু'শ টাকা মানে অনেক টাকা । তার চেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে, এতো টাকা ওর কাছে নেই । ব্যাগ হাতরে বড় জোর ১শ টাকা পাওয়া যেতে পারে । তাই বাসের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া অন্যকোন পথ খোলা নেই। গরীব পরিবারের মেয়েদের অনেক হিসাব করে চলতে হয় । তারা চাইলেই হাত খুলে খরচ করতে পারে না ।

বাসগুলো যেন রাতারাতি শহর ছেড়ে পালিয়েছে । আরো আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরেও বাসের কোন দেখা পাওয়া গেল না । এতোরাতে এভাবে একটি মেয়ের একা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ভাল দেখায় না । তাতে অন্যকিছু বোঝায় । নানাজন নানা কিছু ভাবে । ভালোটা কেউ চিন্তা করে না । খারাপটাই দ্রুত ভেবে নেয় । কিন্তু বাসের অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিবা করার আছে । বাসায় যে যেতেই হবে ।

কথায় আছে যেদিন বিপদ হয় সেদিন সবদিক থেকেই হয় । সন্ধ্যা থেকে থেমে থেমে তলপেট ব্যথা করছে । এখন পিরিয়ড হবার সময় না । তবুও শরীর ব্যথায় একবারে কুঁকড়ে যাচ্ছে । অফিস থেকে রওনা হবার কিছু সময় পর মাহিমা টের পেয়েছে পিরিয়ড হয়ে গেছে । উরু গড়িয়ে রক্তের ধারা নামছে । অসহ্য ব্যথা হচ্ছে তলপেটে । মনে হচ্ছে, ছুরি নিয়ে কেউ পেটের ভেতরটা ফালাফালা করে ফেলছে । কি করবে বুঝতে পারছে না ।

স্রষ্টার উপর রাগ হচ্ছে । কার অভিশাপে তিনি এমন একটা যন্ত্রণা মেয়েদের গলায় ঝুলিয়ে দিলেন, সেটা বুঝে আসে না। প্রতিমাসের এ জন্য তাকে আতংকের মধ্যে থাকতে হয় । পাছে কেউ জেনে ফেলে সেই লজ্জায় বাসা থেকে বের হতে ইচ্ছে করে না । কিন্তু তবুও জীবন ও জীবিকার জন্য বের হতে হয় । বাসে বাদুড় ঝুলা হয়ে অফিসে যেতে হয় । বাসায় ফিরতে হয় ।

অনর্থক কতোক্ষণ আর দাঁড়িয়ে থাকা যায় ? লোকজন কৌতুহলী হয়ে ওর দিকে তাকাচ্ছে । রাস্তার পাশের দোকান হতে পান চিবোতে চিবোতে কেউ কেউ গলা উচিয়ে তাকিয়ে আছে । যেন ভিন গ্রহের কোন প্রাণী হুট করে নেমে এসেছে রাস্তায় । অগত্যা একসময় ও হাটতে শুরু করলো । সামনেই মহাখালী বাস স্টেশন। সেখানে গেলে হয়তো বাস পাওয়া যেতে পারে। বাস পাওয়া না গেলেও লোকজন আছে । তাই কোন রকম ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। বলা যায় না ভাগ্য ভালো হলে বাসায় যাবার একটা ব্যবস্থাও হয়ে যেতে পারে ।

কিছুদূর হাটার পরে মাহিমা খেয়াল করলো কতোগুলো ছ্যাঁচড়া,লাফাঙ্গা মাস্তান ওর পিছু পিছু হাঁটছে । ও থেমে গেলে ছেলেগুলোও থেমে যাচ্ছে । এদের মধ্যে দু’জনের চেহারা মাহিমা’র পরিচিত । প্রায়ই এরা ওদের অফিস বিল্ডিং এর নিচে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেয় । হাসি তামাশা করে । মেয়েদের দেখলে টিটকারি মারে। বাজে অঙ্গভঙ্গি করে । গান গায় । জোড়ে জোড়ে হাসে । ওরা দেখেও না দেখার ভান করে, এড়িয়ে যায় ।

আজ ও'কে একা পেয়ে সাহসের চুড়ান্তু দেখাচ্ছে । একেবারে পিছু পিছু আসছে । চিকন, লম্বা দাঁত বের করা সবচেয়ে বাজে ছেলেটা পেছন থেকে জোড়ে জোড়ে গান গাইছে … সুন্দরী চলেছে একা পথে / সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে ….

গান শুনে মাহিমার কান জ্বালা পালা করছে । শুনেও না শোনার ভান করে, দেখেও না দেখার ভান করে মাথা নিচু কেরে হাটছে । ভয়ে জবুথবু হয়ে মনে মনে ঈশ্বরের নাম জপছে ।

ঠিক সে সময় হঠাৎ পাশ থেকে "মা জননী" সম্বোধনে চমকে উঠে পাশ ফিরে রাস্তার দিকে তাকিয়েছে মাহিমা।
পা জামা, পাঞ্জাবী পরিহিত মধ্যবয়স্ক এক লোক মোটর সাইকেল নিয়ে ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে । মোটর সাইকেল থেকে ভটভট করে শব্দ হচ্ছে । ওকে তাকাতে দেখে লোকটা আবারো প্রশ্ন করলো,“মা জননী, আপনি কোথায় যাবেন?”

শহরে ইদানীং মোটর রাইডিং শুরু হয়েছে । অল্প টাকায়, খুব দ্রুত সময় নির্দিষ্ট জায়গায় চলে যাওয়া যায় । অফিসের মল্লিকা রাইড ব্যবহার করে উত্তরা থেকে অফিসে আসে । আগে যেখানে বাসে আসতে ওর এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগতো এখন সেখানে আধ ঘণ্টা, বিশ মিনিটের মধ্যে চলে আসে। প্রায়ই মল্লিকা তাদের সে গল্প শোনায় ।

লোকটাকে দেখে মনে মনে মাহিমা আশ্বস্ত হলো। ওর কাছে মনে হলো, বিপদে সময় লোকটা যেন ঈশ্বরের আশীর্বাদ হয়ে উদয় হয়েছে । আড় চোখে পেছনের ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখে ছেলেগুলোও দাঁড়িয়ে পড়েছে। একজন অন্যজনের কাধে হাত দিয়ে কান খাড়া করে ওদের কথা শোনার চেষ্টা করছে ।

মাহিমা বলল, “চাচা,যাত্রাবাড়ি যাবো । আপনি যাবেন ওগিকে?

লোকটা কোন রকম ভনিতা না করে বলল,"উঠে বসুন মা জননী।"
"কত টাকা দিতে হবে?" মাহিমা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করলো। কেননা, লোকটা বেশি ভাড়া চাইলে ও যেতে পারবে না ।

চারপাশটা একবার দেখে নিয়ে লোকটা বলল, "সে নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না মা জননী। আপনি উঠে বসুন "

মাহিমা বলল, "না ,কত দিতে হবে, আগে সেটা বলুন । পরে ভাড়া নিয়ে ঝামেলা ভালো লাগবে না ।"
লোকটা এবার ম্লান হাসি হেসে গলা নামিয়ে বলল, "মা জননী, আমি তো ভাড়ায় মোটর সাইকেল চালাই না । এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম । ওই লাফাঙ্গাগুলোকে দেখলাম আপনার পেছনে লাগতে । তাই ছুটে এসেছি । তাছাড়া আমিও ওদিকেই যাবো । আপনি নিশ্চিন্তে উঠে বসুন । ফ্রি যেতে ইচ্ছে না করলে যা ইচ্ছে তাই দিয়েন ।"
লোকটার শেষ কথাগুলোতে মাহিমা একটু লজ্জা পেলো । আহা! কতো ভালো একজন মানুষ । রাত বিরাতে একটি মেয়ে বিপদে পরেছে দেখে ছুটে এসেছেন । দুনিয়ায় এখনো এমন মানুষ আছে? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ওর চোখে জল চলে আসে। মাহিমা খুব আবেগপ্রবণ মেয়ে । অল্পতেই কেঁদে ফেলে । মল্লিকা এ জন্য ওর নাম দিয়েছে, ফিক কাঁদুনি । মানুষ যেমন ফিক করে হাসে ও তেমন ফিক করে কাঁদে । তাই ওর নাম , ফিক কাঁদুনি।

কথা আর না বাড়িয়ে মাহিমা এমন ভাবে পা চেপে বাইকে বসলো যাতে ওর শরীর থেকে কোন দাগ বাইকে না লাগে। ওকে বাইকে বসতে দেখেই পেছন থেকে ছেলেগুলো হইহই করে চিৎকার করে উঠলো, "মামা গেলো রে গেলো । রসগোল্লাটা উইড়া গেলো ।"

লোকটা বিরক্ত হয়ে বলল, শুয়োরের বাচ্চাগুলির কান্ডটা দেখলেন মা জননী ? হারামজাদাগুলি কতোটা খারাপ । ওগো ঘরে কি, মা বইন নাই ? মাহিমা কিছু বলল না । চুপ করে বসে রইলো ।

বাইক মাহিমাকে নিয়ে মহাখালী বাস স্টেশন হয়ে ছুটতে লাগলো সাত রাস্তার দিকে । রাত হয়ে যাওয়া পথ ঘাট অনেকটাই জনশূন্য । বাইকের পেছনের হাতল ধরে মহিমা দাতে দাঁত চেপে বসে আছে । সত্যি বলতে ও কোন দিন বাইকে চড়েনি । তার উপর শরীরের এই হালতে একেবারে ঘাবড়ে গেছে ।

একটু পর পর হর্ন বাজিয়ে পাশ দিয়ে দানবের মতো চলে যাওয়া বড় বড় ট্রাকগুলোর শব্দে ওর পিলে চমকে যাচ্ছে । তার উপর উঁচু নিচু ভাঙ্গা রাস্তার ঝাঁকিতে শরীর থেকে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে । মনে হচ্ছে তলপেট থেকে কেউ নারী ভুঁড়ি টেনে বের করছে । দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে ওর ব্যথা হজম করছে আর ভাবছে কখন পথটা শেষ হবে আরও বাসায় গিয়ে পৌঁছাবে ।

সাত রাস্তায় এসে লোকটা বলল, "মা জননী আপনি সম্মতি দিলে, সামনের পেট্রোল পাম্পে একটু থেমে তেল নিবো ।"
মাহিমা কি বলবে বুঝতে পারলো না । ও এখন চোখে মুখে ঘোলা দেখছে । ব্যথাটা অসহ্য হয়ে উঠেছে । সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে । মনে হচ্ছে, বমি করতে পারলে ভালো লাগতো ।

কিছু বলার আগেই লোকটা হাতের বামে পেট্রোল পাম্পের ভেতর ঢুকে পড়লো । মাহিমা আবারো আঁতকে উঠলো । হায় খোদা ! এখন তো বাইক থেকে নামতে হবে । লাইটের আলোয় পুরো পেট্রোল পাম্প এলাকাটা জ্বলমল করছে । যদি ওকে বাইক থেকে নামতে হয় তা হলে তেল দেওয়া ছেলেটা নির্ঘাত ওর পেছনের দাগ দেখে ফেলবে । তবে আশার কথা হলো, এতো রাতে পাম্পে ভিড় নেই ।

লোকটা ওকে নিয়ে একেবারে মেশিনের সামনে নিয়ে গিয়ে দাঁড়ালো । তারপর নিজে না নেমে সামান্য পেছনে সরে বসে ওকে বলল, "মা জননী আপনাকে নামতে হবে না । একটু পিছিয়ে বসুন। তারপর তেলের ট্যাংকিতে চাবি ঘুরিয়ে সেটা খুলে দিতে দিতে পাম্পের ছেলেটার উদ্দেশ্যে বলল,"২০০ টাকার অকটেন দাও।"

তেল নিয়ে টাকা মিটিয়ে দিয়ে আবার ওরা চলতে শুরু করলো। মাহিমা ও যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো । পাম্প থেকে বের হয়ে লোকটা বলল, আপনি ভয় পাচ্ছেন কেন মা জননী ? আমার আপনার মতো একটা মেয়ে ছিলো । সে হারিয়ে গেছে । থাকলে এতোদিনে আপনার মতোই বড় হতো । তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, "ভয় পাবেন না । নিশ্চিন্তে থাকুন ।"

লোকটার কথা শুনে মাহিমার দু:খ হলো । কারো কোন কষ্টের কথা শুনলে সমবেদনা জানিয়ে কিছু বলতে হয় । মাহিমাও কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু ও কিছু বলার আগেই লোকটা এবার ওকে প্রশ্ন করলো, "মা জননী আপনি যাত্রাবাড়ির কোথায় থাকেন?"
মাহিমা বলল, "দীঘির পড়া ।"
"দীঘির পড়া? ঐ জায়গাটা তো আমি চিনি । কাচা বাজারের সামনে দিয়ে যেতে হয় । অনেক আগে গিয়েছি । কিন্তু জায়গাটা তো ভালো না, মা জননী । বিশেষ করে এই রাত্রি বেলা ।

বাইক ততোক্ষণে কাকরাইল চলে এসেছে ।"
মাহিমা বলল, "অসুবিধা নেই চাচা। আপনি আমাকে যাত্রাবাড়ী মোড়ে নামিয়ে দিলে । আমি রিকসা নিয়ে চলে যেতে পারবো।"
"এতো রাতে রিকশা কই পাবেন? এখন প্রায় সোয়া ১২টা বাজে মা জননী ।"
মাহিমা বলল, "অসুবিধা নেই । পেয়ে যাবো । না পেলে হেটে যাবো ।"
"সেটা করতে হবে না, মা জননী । আমি আপনাকে বাড়িতে দিয়ে আসবো । আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন ।"

কাকরাইল সিগনালে দাঁড়াতে লোকটা পকেট থেকে মোবাইল বের করে কাকে যেনো ফোন দিয়ে বলল, "হ্যালো নান্টু শোন, আমার আসতে একটু দেরি হবে । একটু যাত্রাবাড়ী যাবো । তুই গেটের কাছে দাঁড়া আমি ব্যাগটা তোর কাছে দিয়ে যাই । এতোরাতে ব্যাগ নিয়ে যাত্রাবাড়ী যাওন ঠিক হইবো না । শোন বাবা, "আমি এখন কাকরাইলে আছি। তুই কষ্ট করে গেটে একটু দাঁড়া ।"

বাইকের সাইডে ঝুলিয়ে রাখা ছোট ব্যাগটা মাহিমা আগেই দেখেছে । সে চুপচাপ লোকটার কথা শুনছে আর আল্লাহ্ আল্লাহ করছে ।

ফোন রেখে লোকটা বলল, " আমার ভাতিজা নান্টুরে ফোন দিলাম । মা জননী, আমি ডিমের ব্যবসা করি । কারওয়ান বাজারে আমার দোকান আছে । সাথে বেশ কিছু টাকা আছে । এতোগুলো টাকাগুলো নিয়ে যাত্রাবাড়ী যাওন ঠিক হইবো না । তাই, আপনি অনুমতি দিলে গোপিবাগে আমার ভাতিজার কাছে ব্যাগটা দিয়ে যেতে চাই । বুঝতেই তো পারছেন ঢাকা শহরে এখন আর কাউকে বি্শ্বাস করণ যায় না । না পাবলিক, না পুলিশ ।কাউকেই বিশ্বাস করণ যায় না ।

মাহিমার অবশ্য আপত্তি করতে মন চাইলো না । কতো ভালো একজন মানুষ । একটি মেয়ে বিপদে পরেছে বুঝতে পেরে গায়ে পরে উপকার করতে এগিয়ে এসেছেন । এমন মানুষকে অবিশ্বাস করলে পাপ হবে।জাহান্নামে যেতে হবে ।
মাহিমা বলল, "অসুবিধা নেই চাচা । আপনি ব্যাগটা দিয়েই যান ।"

কাকরাইল ছেড়ে সোজা নয়া পল্টন হয়ে বিএনপি অফিসের সামনে দিয়ে নটরডেম কলেজ ওপর পাশ দিয়ে মতিঝিল থেকে সামান্য ডানে ঘুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে দিয়ে মধুমিতা সিনেমা হল থেকে একটু সামনে এসে,ইনকিলাব অফিসের সামন্য আগে হাতের ডানে না গিয়ে হাতের বামের চিপা গলি দিয়ে ওরা গোপীবাগে যাবার রাস্তায় ঢুকলো ।

এই রাস্তা দিয়ে মাহিমা প্রতিদিনই যাতায়াত করে । সবকিছু দিনের তাই মতো চেনা । তাছাড়া যাত্রাবাড়ির কাছাকাছি চলে আসায় ওর এখন আর একেবারে ভয় লাগছে না। রাস্তায় গাড়ি না থাকায় বাকিটা পথটুকু ওরা সাই সাই করে চলে এসেছে । তবে গোপীবাগের গলির ভেতরের রাস্তাটা বেশি ভালো না । জায়গায় জায়গায় ভাঙ্গা চুরা হওয়ায় ঝাঁকিতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে । তবে সেটা সহ্য করার মতো । পেটের ব্যথাও অনেকটা কমে গেছে ।

লোকটাকেএখন ক্যামন আপন আপন মনে হচ্ছে । মাহিমা নিশ্চিন্ত মনে বাইকের পেছনে বসে রইলো । লোকটা ডিমের ব্যবসা করে শুনে ওর মনে পড়লো বাসায় জন্য ডিম নিয়ে যেতে হবে । বসে বসে ও ভাবতে লাগলো লোকটাকে ভাড়া হিসাবে কত টাকা দেওয়া যায় ? মনে হচ্ছে, সে ভাড়া নিবে না। ভাড়া না নিলে ও যেদিন বেতন পাবে সেদিন একটা গিফট কিনে তার দোকানে গিয়ে দিয়ে আসবে । কতো ভালো একজন মানুষ। কোন একদিন সাহায্য করেছে এমন কারো কাছ থেকে হঠাৎ গিফট পেলে তিনি নিশ্চয় খুব খুশী হবে। আসার সময় তার দোকান হতে বাসার জন্য বেশি করে ডিমও কিনে আনা যাবে । বেশি করে ডিম কিনলে নিশ্চয় সস্তায় পাওয়া যাবে।

আধা ঘণ্টা চলার পর বাইকটা একটা জনশূন্য এলাকায় চলে এলো । চারপাশে তাকিয়েও বলল, আর কতদূর চাচা ?
লোকটা বলল, এইতো মা জননী আর একটু দূরেই আমার বাড়ি । ভাতিজা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে । আমি ব্যাগটা ওর হাতে দিয়েই আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসবো । ভয় পাবেন না, মা জননী ।

মাহিমা বলল, " ভয় পাচ্ছি না চাচা । তবে অনেক রাত হয়েছে, বাসায় সবাই চিন্তা করছে ।"

তারপর একটু থেমে বলল, "আমার ছোট চাচা পুলিশে চাকরি করে। যাত্রাবাড়ী থানায় আছে। আপনি আমাকে যাত্রাবাড়ী থানাতে নামিয়ে দিলেও আমি চলে যেতে পারবো চাচা। আপনাকে কষ্ট করে আর "দীঘির পাড়" যেতে হবে না ।

চাচা পুলিশে চাকরি করে এ কথাটা ও বানিয়ে বলল নিজেকে বিপদ থেকে বাঁচাবার জন্য । বিপদের সময় ছোটখাট মিথ্যা বলাই যায় । তাতে পাপ হয় না ।

মাহিমার কথা শুনে লোকটা কি যেন একটু ভেবে নিয়ে বলল, "এ কথা আগে বলবেন না মা জননী । তাহলে আর এগিকে না এসে সোজা থানাতে চলে যেতাম। ঠিক আছে, এখন যখন চলেই এসেছি তখন আর কি করা । ব্যাগটা দিয়েই যাই । কি বলেন ?

মাহি মাথা নেড়ে বলল, "ঠিক আছে চাচা ।"

আরো কিছুটা এগুতেই কয়েকটা বাড়িঘর চোখে পড়লো । এদিকটাতে রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ । জায়গায় জায়গায় ইট উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত হয়ে গেছে ।

মাহিমার এখন ক্যামন ভয় ভয় করছে । কি করবে বুঝতে পারছে না । এখন মনে হচ্ছে, গোপীবাগে ঢুকার আগে নেমে গেলেই ভালো হতে । এখান নেমে গেলে একা একা ফিরে যেতে পারবে না । রাস্তাটা ঘুটঘুটে অন্ধকার ।

এমন সময় মোটর সাইকেলের হেড লাইটের আলোয় সামনে একটা লোককে দেখা গেলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে । ওদের দেখে হাত নেড়ে পাশ ফিরে কাকে যেন কি বললো ।

লোকটাকে দেখে কোন কারণ ছাড়াই মাহিমা ভেতরটা ধক করে উঠলো । ওর মনে হলে নেমে দৌড়ে পালিয়ে যেতে ।

নিজেকে সামলে নিয়ে ও বসে রইলো । মোটর সাইকেলটা লোকটার সামনে পৌঁছে আচানক ডানে ইয়ূর্টাণ নিয়ে মাহিমা কিছু বুঝে উঠার আগেই একটা দোকানের ভেতর ঢুকে পড়লো । সাথে সাথে পাশে দাড়িয়ে থাকা অন্য লোকটা দোকানের সার্টার টেনে নামিয়ে দিতেই কেউ একজন দোকানের ভেতরের বাতি নিভিয়ে দিলো ।

মাহিমা বিষয়টা বুঝতে পেরে চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছিলো । কিন্তু পারলো না । এক জোড়া হাত ওর মুখ চেপে ধরে বলল, "চুপ ! এক্কেবারে চুপ । কথা বললেই মেরে ফেলবো ।

কণ্ঠস্বরটি আর কারো নয় তাকে নিয়ে আসা ব্যক্তির । যে এতক্ষণ, "মা জননী" ছাড়া একটা কথাও বলেনি। সে ই কিনা এমন আচড়ন করছে । বিস্ময়ের সব সীমা ছাড়িয়ে গেলো । মাহিমা ফিসফিস করে বলতে চাইলো, "চাচা, চাচা ……. ।"
লোকটা এবার ধমক দিয়ে বলে উঠরো, "চুপ কর কুত্তী । কে তোর চাচা ? হারামজাদি; কথা বললেই খুন করে ফেলবো ।"
অজানা আতংকে মাহিমার মুখ দিয়ে আর কোন শব্দ বের হলো না । চোখ দিয়ে পানি ঝরতে হতে লাগলো । চোখের সামনে শেষ বারের মতো বাবা,মায়ের মুখচ্ছবি ভেসে উঠলে। সে স্পষ্ট দেখতে পেলো, তার অপেক্ষায় মা দরজায় এসে দাঁড়িয়ে আছেন । বাবা অস্থির হয়ে বারান্দা,ঘরময় পায়চারি করছেন । হঠাৎ দু'টো হাত হেচকা টানে ওর শরীর থেকে জামা কাপড় টেনে ছিঁড়ে খুলে ফলতে লাগলো । মাহিমা বাঁধা দেবার চেষ্টা করেও পারলো না । মা গো; মা গো বলে চিৎকার করে উঠলো ।

এতোরাতে, ঘুমন্ত এ শহরের কার দায় এমন পরেছে যে, বিপদগ্রস্ত অসহায় একটি মেয়ের আত্ম চিৎকার শুনে এগিয়ে আসবে ?

পরিশেষ : পরের দিনে গোপীবাগ ঝিলে মাহিমার নিথর দেহটি যখন পাওয়া গেলো তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে । কম বেতনে চাকরী করা অন্য কোন এক মাহিমা ছুটি শেষে বাসায় ফেরার জন্য ছটফট করছে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:০৩
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×