জীবনের কাছে আমাদের চাওয়া কি? এই প্রশ্নের জবাব ব্যাক্তিভেদে ভিন্ন হতে বাধ্য। কেউ চায় অঢেল অর্থ। কেউবা অগাধ ক্ষমতা, প্রতিপত্তি। কেউ স্বপ্ন দেখে অসাধারণ কিছু করে দুনিয়াকে কাঁপিয়ে দিতে। কারো কাছে সাধারণ, সাদামাটা জীবনটাকেই বেশ মনে হয়। কেউ হয়ত মনের গভীরে লালন করেন স্বদেশের জন্যে কিছু করার সুগভীর তারণা। কেউ হয়ত পুরো পৃথিবীর ভালো মন্দের চিন্তায় অস্থির। শত কোটি মানুষ, শত কোটি চাহিদা - শত কোটি স্বপ্ন।
কিন্তু কিছু সাধারণ বিষয়ে বোধহয় মানুষ মাত্রই সমান চাহিদা। আমরা চাই নিরাপদ, সাফল্যমন্ডিত জীবন। চাই শান্তিপূর্ণ ভাবে বেঁচে থাকতে। সাধারণ সামাজিক, ধর্মীয় মূল্যবোধ গুলো মেনে চলে আমরা সুশৃঙ্খল ভাবে জীবন - যাপন করি এটা বোধ হয় আমাদের সবারই ঐকান্তিক চাওয়া। সবাই আমরা চাই প্রিয়জনের মুখের একটুখানি হাসি। একটু চিন্তা করে দেখুন তো, আপনার পরিবার, আপনার প্রিয়জনের জন্যই কি আপনি উদয়াস্ত কঠোর পরিশ্রম করছেন না? একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে খুব বেশী কিছুর প্রয়োজন হয় কি? শুধুমাত্র প্রিয়জনের মুখের একটু হাসির জন্যে, তাদের একটু স্বচ্ছন্দ জীবনের জন্যে আপনি আপনার মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে কখনো দ্বিধা বোধ করবেন না। এটাই সাধারণ মানব ধর্ম। কিন্তু বিনিময়ে আপনি কি চান?? একটু নিঃস্বার্থ ভালবাসা, একটু মানবীয় আশ্রয় আর অবশ্যই একটু সম্মান, যার সৃষ্টি হৃদয় নিংরানো শ্রদ্ধাবোধ থেকে। ভালোবাসা কিন্তু গভীর শ্রদ্ধারই প্রতিরূপ। যেখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নেই, সেখানে ভালোবাসা থাকতে পারে না - থাকে না।
তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো?? আমরা চাই প্রিয়জনের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা, তাদের থেকে আমাদের প্রাপ্য সম্মানের পুরোটা। কিন্তু এই চাওয়ার মূল্য কতখানি? এটা কি জীবনের থেকেও বেশী মূল্যবান?? প্রিয়জনের আস্থা এবং শ্রদ্ধা অর্জন করাটা কি জীবন থেকেও বেশী দরকারি?
এই থিমের উপরে ভিত্তি করেই বানানো হয়েছে বিখ্যাত ওয়েস্টার্ণ মুভি
3:10 to Yuma
অনেকেই হয়ত দেখে ফেলেছেন মুভিটা। যারা দেখে ফেলেছেন তারা অবশ্যই মুগ্ধ হয়েছেন, আপ্লুত হয়েছেন। তারকাখচিত এই মুভিতে অভিনয় করেছেন রাসেল ক্রো এবং ক্রিশ্চিয়ান বেল । রাসেল ক্রো অভিনয় করেছেন কুখ্যাত আউট ল' বেন ওয়েড এর ভূমিকায়। আর ক্রিশ্চিয়ান বেল অভিনয় করেছেন একজন পঙ্গু, আর্থিক ভাবে অসহায়, দারিদ্র্য পীড়িত র্যাঞ্চার ড্যান ইভান্স এর ভূমিকায়।
ইভান্স আমেরিকার গৃহযুদ্ধ ফেরত, যুদ্ধাহত একজন ব্যক্তি। দুই সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে একটি ছোট্ট র্যাঞ্চ চালিয়ে কোনমতে জীবন চলছে যার। অর্থাভাব চরমে পৌঁছেছে। পাওনাদার এসে টাকার জন্যে তাগাদা দিয়ে যায় - না দিতে পারলে ভিটে মাটি ছাড়া করবে। শুধু শুধু হুমকি যে দিচ্ছে না সেটা প্রমাণ করার জন্যে ইভান্সের গোলাঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়েও দেয়। অসহায় ইভান্স শুধু চেয়ে চেয়ে দেখে। শেষে পাওনাদারের সাথে টাকার জোরে না হোক অস্ত্রের জোরে হলেও একটা সমাধা করার মরিয়া পণ নিয়ে শহরে রওনা দেয় সে।
অন্যদিকে বেন ওয়েড তার নব্যতম স্টেজকোচ ডাকাতি সুচারুভাবে সম্পন্ন করে সাঙ্গপাঙ্গ সহ শহরে গিয়েছে গলা ভেজাতে। ডাকাতি করার সময় সে ইভান্সের গরুগুলোকে ব্যবহার করেছে রোডব্লক হিসেবে। তাই গরু গুলোকে রাউন্ড আপ করতে আসা ইভান্স আর তার ছেলেরা পড়ে গিয়েছিল তার সামনে। এই ছাপোষা র্যাঞ্চার তার কোন ক্ষতি করবে না বুঝতে পেরে ওয়েড ছেড়ে দেয় তাদের - শুধু ইভান্সের ঘোড়াগুলো নিয়ে যায় নিজের সাথে যেগুলোকে আবার শহরে আসার পথে ছেড়ে আসে। তো শহরে এসে ইভান্স পড়ে যায় ওয়েড এর সামনে। আর কথায় ছলে কিছুক্ষন আটকে রাখে তাকে। ফলাফল? দুর্ধর্ষ আউট ল' বেন ওয়েড বন্দী হয়ে যায় আইনের লোকদের হাতে!!
শুধু বন্দী করলেই তো হবে না। জেলখানায় চালান দিতে হবে না বন্দীকে?? কিন্তু বন্দী চালান দেয়ার এই কাজটা যে ভয়ানক ঝুকিপূর্ণ!! কেন?? ওয়েড এর সাঙ্গপাঙ্গরা আছে না? তারা চারিদিকে ছোঁকছোঁক করছে। একটু সুযোগ পেলে হয়, ছিনিয়ে নিয়ে যাবে গুরুকে!! ছিনিয়ে নিয়ে তো যাবেই, সাথে বেঘোরে প্রাণ দিতে হতে গার্ডদের। অতএব, যারা গার্ড দিয়ে নিয়ে যাবে তাকে, তাদের প্রতিনিয়ত সামাল দিতে হবে প্রাণ হারাবার ঝুঁকি!
মারাত্মক অর্থকস্টে থাকা র্যাঞ্চার ইভান্স ২০০ ডলারের বিনিময়ে রাজি হয় গার্ড হিসাবে যেতে। ওয়েড কে গার্ড দিয়ে নিয়ে যেতে হবে
Contention City
তে, উঠিয়ে দিতে হবে বিকাল ৩:১০ এর
Yuma Territorial Prison
গামী ট্রেনের প্রিজন কারে। কিন্তু এটা কি শুধুই টাকার প্রশ্ন নাকি একজন সাদামাটা, সহজ মানুষের মাথা উঁচু করার শেষ চেষ্টা? আপাতদৃষ্টিতে টাকার অঙ্কে আর্থিক দৈন্য দূর করার এই দুঃসাহসী প্রচেস্টা কি শেষ পর্যন্ত টাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকে নাকি প্রিয়জনের হৃদয় নিংরানো শ্রদ্ধা অর্জনের প্রচেস্টায় রূপান্তরিত হবে?? জানতে হলে দেখে ফেলুন তো মুভিটা!!
অস্কার জয়ী দুই অভিনয় শিল্পী রাসেল ক্রো আর ক্রিশ্চিয়ান বেলের অভিনয় আপনাকে সম্মহিত করে রাখবে। চার্লি প্রিন্স চরিত্রে (ওয়েড এর সেকেন্ড ইন কমান্ড - মারাত্মক বিস্বস্ত!!) বেন ফস্টার তো তুলনাহীন!! জমাট স্টোরীলাইন আপনাকে পুরোটা সময় ধরে রাখবে মুভিতে। আর ক্লাসিক ওয়েস্টার্ণ মুভি সেট আপনাকে নিমিষেই নিয়ে যাবে ১৯ শতকের সেই বুনো পশ্চিমে!!
তো দেরী কেন? দেখে ফেলুন চমৎকার মুভিটা আর শিহরিত হোন বুনো পশ্চিমের অ্যাডভেঞ্চারে!!
আমার রেটিং : ৮.৫/১০
ডাউনলোড লিঙ্কঃ Torrent
নোটঃ মুভিটি ১৯৫৭ সালে নির্মিত একই নামের মুভির রিমেক। দুটি মুভিই Elmore Leonard
এর একই নামের ছোটগল্পের ভিত্তিতে নির্মিত।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১২ রাত ৯:০৩