somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুয়ান্তানামো বে ও আমার জীবন!!

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাল ২০১২, নয় এগারোর ঠিক এক বছর পরে Guantanamo Bay-এর একজন মুসলিম Detainee-এর কিছু কথা বলবো।
তার আগে বলে রাখি, Guantanamo একটী স্পেশাল জেইল খানা, যেখানে শুধু মাত্র মুসলমানদের আটক করে রাখা হতো,
আর Detainees এর শাব্দিক অর্থ হলো এমন কেউ যাদের কে বিনা বিচারে অনির্দিষ্ট কালের জন্য আটক করে রাখা হয়।

তো গল্পটা আলি ছদ্মনামী এক ব্যাক্তির। দীর্ঘদিন বিনা বিচারে বন্দী থেকে, নানা টর্চার সহ্য করতে করতে সে এক পর্যায়ে অতিষ্ঠ হয়ে পরে, বেচে থাকার সব আশা হারিয়ে ফেলে সে।
শেষ মেস সে সিদ্ধান্ত নেয় যে, তার এই জীবন সে আর রাখবে না। যা কথা তাই কাজ, somehow একটা চাকু ম্যানেজ করে সে তার গলায় চেপে ধরে, ঠিক এই মুহুর্তে Guard এসে তাকে থামাবার চেষ্টা করে...
নানা ভাবে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে, এক পর্যায়ে নিচের কথা গুলো হয় তাদের মাঝে...

Guard: এমন কেন করছো তুমি? এদিকে তাকাও, আমার দিকে, বলো তোমার জীবন শেষ করে কি লাভ? তুমি কি তোমার বেহেসতে যেতে পারবে? শেষ করোনা এভাবে নিজের জীবনটাকে..

আলি(ছদ্মনাম): হাহা, তুমি জানতে চাচ্ছ যে আমি কেন মরতে চাচ্ছি? কিন্তু তুমি কি এটা দেখতে পাচ্ছনা যে আমি বেচে নেই, আমরা বেচে নেই! তুমি বলতেছ আমি কেন আমার জীবন শেষ করতে চাচ্ছি?
কিন্তু তুমি এটা কেন বুঝতে পারতেছনা এইটা আমার জীবন না, আমাদের জীবন এটা না, আমরা শুধু মাংসে গড়া শরীর মাত্র, যাদের সব কিছুই তোমরা তোমাদের নিজেদের ইচ্ছে মতো নিয়ন্ত্রন করতেছ।

আমরা কখন খাবো, কি খাবো, কখন ঘুমাবো, কতোক্ষন ঘুমাবো, কখন বাথরুম এ যাবো, কি পড়বো, কি করবো, কি দেখবো সব, সব কিছুই তো তোমরা নিয়ন্ত্রন করতেছ। আমরা যদি নিজ ইচ্ছেতে একটু খেতে না চাই, জোড় করে নাকে নল দিয়ে খাবার ঢুকিয়ে দাও,
পছন্দের একটা বই পড়তে দাও না, ৬ মাস ধরে একটা নিউজ পেপার ই ঘুরে ফিরে দিচ্ছ, বাথরুম টাও এমন কি তোমাদের সামনেই করা লাগে, ব্যাক্তিত্ব লজ্জা আত্মসম্মান সব কিছু তোমরা ছিনিয়ে নিয়েছ। দিন রাত ২৪ ঘন্টা লাইট জ্বালিয়ে রাখো, কখন দিন হয়, রাত হয় কিছুইবোঝা যায় না।
না আছে খেলার যায়গা, না আছে হাটার যায়গা, না আছে আপন জনের সাথে কোনো যোগাযোগ। একটা ছোট্ট কুঠুরীতে কিভাবে মানুষ এভাবে দিন পার করে। যা একটু যদি কোনো গার্ড এর সাথে একটু ভালো সম্পর্ক হয়, মুখ গুলো একটু পরিচিত হতে শুরু করে, তাও তোমরা তাদের বদলি করে দাও।

আর সব থেকে বড় কথা আমরা নিজেরা যদি প্রমানিত অপরাধী হতাম তাও একটা কথা হতো, শুধু মাত্র সন্দেহ.... আর তার পরেও বলবে এই জীবনটা আমার?

এই গল্পটি আমি আসলে কেনো বললাম? আমার মনে হয় আমাদের অধিকাংশ মানুষের জীবনও এই গুয়ান্তানামো কারাগারের মতোই। কেমন করে?

চিন্তা করে দেখুন শৈশব থেকে আসলে কয়টি কাজ আপনি নিজের ইচ্ছে মতো করেছেন, জীবনের কয়টি সিদ্ধান্ত আপনি নিজে নিয়েছেন?
কি খাবেন, কি পড়বেন, কার সাথে মিশবেন, কার সাথে না, আপনি কি কাজ করবেন, কোন স্কুল এ পড়বেন, আর্টস নাকি কমার্স, ডাক্তার নাকি ইঞ্জিনিয়ার হবেন সব সব সব কিছুই অন্যের কথা মত করতে হয়

আরে আমার মত কিছু মানুষ আছে যারা বাথরুমে গেলেও হিসেব দিতে হয় কি করলাম এতোক্ষন, জীবনে নিজের চয়েজের একটা জামা কেনার সুযোগ পাই নি আমি।

না আমি বাবা মাকে মোটেও দোষ দিচ্ছি না, দোষ টা আসলে কারোরই না, তারা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে ঠিক আছে, কিন্তু সমস্যা হলো সব কিছু খেয়াল রাখতে যেয়ে তারা আসলে ব্যাক্তিসত্বাকেই ধ্বংস করে দেয়।
গার্ড দেওায়া ভালো, অবশ্যই ভালো, গাইড করা ভালো, কিন্তু কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়া ভালোনা।

যদি আসলেই চান আমরা কি চাই, আমাদের মতো মানুষেরা কি চায়, তাহলে বলবো আমাদের আগে একলা পথে ছেড়ে হাটতে দিন, হোচট খেতে দিন, ব্যাথা পেতে দিন, আপনি আমাকে বলে দিন যে বেটা তুমি এটা করতে পারো,
ঐদিকে কিন্তুক বিপদ, একটু সাবধানে, বেটা তুমি মেবি এটা ভালো পারো দেখো তো কেমন ট্রাই করে, ছায়া হয়ে থাকুন, বোঝা হয়ে নয়।

এভাবে যদি দিনের পর দিন আপনি আপনার সিদ্ধান্তকে চাপিয়ে দিতে থাকেন, এই আমরা একদিন ঐ কারাবাসীর মতো বলতে শুরু করবো, এই জীবন তো আমার না, আমি কেন এই জীবনের দায় ভার নিবো, তোমরা চালাচ্ছিলে, তোমরাই চালাও।

এক ভয়ংকর পরিস্থিতি, যেটা আমি এখন ফেস করতেছি। আমারো মনে হয় এই জীবনটা আমার না, ধুর.........

নাহ আমি কাউকে দোস দিব না, তাদের ভালোবাসায় কোনো খাদ নেই, ইচ্ছা চেষ্টা কোনো কিছুতেই খাদ নেই, খাদ শুধু পদ্ধতিতে, যেদিন তারা বুঝবে একজন বাবা মা কিংবা গার্ডিয়ান হবার থেকে ছেলে মেয়ের বন্ধু হওয়া জরুরী,
বিশ্বাস করুন সেদিন আর কিচ্ছুতে জোড় করা লাগবেনা, সব আপনা আপনিই হবে।

চিন্তা করুন তো, যে এই দুনিয়াতে এসেছে শিল্পি হবার জন্য সে ইঞ্জনিয়ার না হয়ে শিল্পিই হবে, যে এসেছে ডাক্তার হবার জন্য সে সমাজ কৃষিবিদ না হয়ে ডাক্তার ই হবে...যার জন্ম হয়েছে লেখার জন্য সে কবিই হবে... আহ কত সুন্দর ই না হবে... এটা স্বপ্ন না, খুব শিঘ্রই হবে।

কারন আমাদের বাবা মাকে হয়তো এভাবেই মানুষ করা হয়েছিল, তাই তারা এমন করতেছে, কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি আমার অনাগত ভবিষ্যতের সাথে আমি, এই ভুল আর হতে দিবোনা...

তবুও ধন্যবাদ তোমাদের, আমি বুঝি তোমাদের অবস্থা, তাই কিছু মনে করিনা, কাস সময় চলে যাবার আগে তোমরাও একটু বুঝতে......

তাহলে হয়তো এই জীবনকে আমারই মনে হতো :-)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×