somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই পর্যালোচনাঃ অভ্যাসের শক্তিঃ পর্ব ১

০৭ ই মে, ২০২০ রাত ৮:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বই ঃ অভ্যাসের শক্তি (power of habit), রচনা: চার্লস দুহিগ (Charles Duhigg)

নিউ ইয়র্ক টাইমস এর বিজনেস রিপোর্টার চার্লস দুহিগ এর লিখা একটি অসাধারন বই অভ্যাসের শক্তি। মানুষের দৈনন্দিন জীবন নির্ভর করে তার অভ্যাসের উপর। একবার অভ্যস্ত হয়ে গেলে মানুষ বেশিরভাগ সময় এটা নিয়ে আর চিন্তা করে না। ভাবে এটা হয়ত প্রাকৃতিক ভাবে আবশ্যম্ভাবি কিম্বা ধরে নেয় যে এটা আর বাদ দেয়া সম্ভব না (আমাদের দেশেও কিন্ত একটা কথা প্রচলিত আছেঃ মানুষ অভ্যাসে দাস)। বিজ্ঞানীদের কাছে এটা একটা আকর্ষনীয় বিষয়। অভ্যাস কিভাবে কাজ করে, এর স্নায়তান্ত্রিক ব্যখা কি? একবার একটা অভ্যাস হয়ে গেলে তা কি বদলানো যায়? নতুন অভ্যাস কি তৈরি করা যায়? নিউরোলজিস্টরা এই বিষয়গুলি জানতে অনেক রকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন। লেখক বইতে এরকম অনেক কেস স্টাডির বিস্তারিত বর্ণ্না দিয়েছেন। বিভিন্ন পরীক্ষা এবং গবেষনার কল্যাণে এখন বিজ্ঞানীরা অভ্যাস সমন্ধে অনেক কিছুই জানেন। ব্যক্তি পর্যায়ে অভ্যাস কিভাবে কাজ করে, কিভাবে নতুন অভ্যাস তৈরি করা যায়, কিভাবে কোন অভ্যাস বদলানো যায় এই বিষয়গুলি বিস্তারিত বৈজ্ঞানিক ব্যাখা এবং বিভিন্ন কেস স্টাডি বইতে দেয়া আছে। শুধু ব্যক্তি পর্যায়েই নয়, প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের ক্ষেত্রেও অভ্যাস একটা বড় চালিকা শক্তি। একটা প্রতিষ্ঠানের অভ্যাস বদলিয়ে প্রতিষ্ঠানকে আমুল বদলে ফেলা যায়। সমাজের প্রোথিত অভ্যাসে নাড়া দিয়ে সমাজ বিপ্লব ঘটানো যায়, বড় নেতারা এটা সফল ভাবে করেছেন বিভিন্ন সময়।
বইটি তিনটি অংশে বিভক্ত।
প্রথম ভাগে আছে তিনটি অধ্যায়। যেখানে ব্যক্তিপর্যায়ের অভ্যাস নিয়ে বলা হয়েছে।
প্রথম অধ্যায়ে বলা হয়েছে অভ্যাসের স্নায়ুতান্ত্রিক ব্যখা। মস্তিষ্ক একটা কাজ সহজ করবার জন্য অভ্যাস তৈরি করে, তার মানে যে কাজটা তাকে বারবার করতে হয় সেটার প্রোগ্রাম করে মস্তিষ্কের গভীরে সংরক্ষিত করে রাখে। পরে যখন এটা করার সময় হয়, মস্তিষ্ক সেই অভ্যাসের প্রোগ্রামটা চালু করে দেয়। তাতে খুব বেশী চিন্তা না করে মস্তিষ্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুব সহজেই কাজটা করে ফেলতে পারে। মানুষের অভ্যাস মুলত ইঙ্গিত-কাজ-পুরস্কারের (Cue-routine-reward) একটা চক্র। মস্তিষ্ক একটা ইংগিত পায় এবং পুরস্কার পাবার আশায় সে একটা কাজ সম্পন্ন করে। তার এই কাজটাকেই আমরা অভ্যাস হিসাবে দেখে থাকি।
দ্বীতিয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে কিভাবে নতুন অভ্যাস তৈরি করা যায়। মস্তিষ্কের জন্য একটি পুরস্কার তৈরি করতে পারলে সে তার জন্য কাজ করতে রাজী। কখন সে কাজটি করবে তার জন্য একটা ইংগিত দরকার। ইঙ্গিত পেলে সে কাজটি করে এবং তাতে মস্তিষ্কে আনন্দ তৈরি হয়। এই আনন্দ পাবার আশায় মস্তিষ্ক এই কাজটা বার বার করে এবং এটাকে অভ্যাসে পরিণত করে। একটা নতুন অভ্যাসকে স্থায়ী করতে হলে মস্তিষ্কে ঐ পুরস্কারের জন্য ক্ষুধা (craving of brain) তৈরি করতে হবে অর্থাৎ কাজের আগেই যেন সে প্রুস্কারের জন্য উদ্গ্রীব হয়। তাহলেই একটা নতুন অভ্যাস সফল্ভাবে তৈরি করা সম্ভব।
তৃতীয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে অভ্যাস বদলানোর নিয়ম। কোন ভাবে একটা অভ্যাস তৈরি হলেই সেটা জীবনের নিয়তি, এটা থেকে বের হওয়া যাবেনা ব্যাপারটা এরকম নয়। অভ্যাস নিয়ে যেসব বিজ্ঞানি/গবেষকরা কাজ করেছেন তারা অভ্যাস বদলানোর নিয়ম খুজে বের করেছেন। অভ্যাস বদলানোর একটা স্বর্ণালী নিয়ম হচ্ছে ইঙ্গিত (Cue) এবং পুরস্কার (Reward) ঠিক রেখে কাজ (Routine) টা বদলিয়ে দেয়া। আমরা দেখি লীগের সবচে নীচের দল অভ্যাস বদলে জয়ের ধারায় ফিরতে পারে, চ্যাম্পিওনও হতে পারে। একজন এলকোহলিক নেশ্মুক্ত জীবনে ফিরে আসতে পারে। কোন একটা বিষয়ে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তা এতই স্বাভাবিকভাবে আমরা করি যে তার ইংগিত কিম্বা পুরস্কার হয়ত বুঝে উঠা আমাদের জন্য সহজ নাও হতে পারে, তবে বিশেষজ্ঞরা মানুষের কাজ বিশ্লেষন করে কোন কাজটা কোন ইঙ্গিতে করে, তাতে মস্তিষ্ক কি পুরস্কার পায় সেটা বের করে কাজটা পরিবর্তন করে মানুষের অভ্যাস বদলিয়ে দিতে পারে। এই অধায়ে লেখক বিভিন্ন সফল কেস স্টাডির উদাহরন দিয়েছেন।

দ্বীতিয় অংশে চারটি অধ্যায় আছে, এই অংশের মুল বিষয় হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের অভ্যাস।
চতুর্থ অধ্যায়ে (এই অংশের প্রথম) অধ্যায়ের মুল আলোচনা হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যাস কিভাবে কাজ করে। অভ্যাস শুধু ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তাই নয়, প্রতিষ্ঠানও অভ্যাস দ্বারা প্রভাবিত। একটি প্রতিষ্ঠান কিভাবে কাজ করে, কেমন ফলাফল করতে পারে তা নির্ভর করে প্রতিষ্ঠানের অভ্যাসের উপর। আমরা ধরে নেই একটি প্রতিষ্ঠান চিন্তা বিশ্লেষন করে যৌক্তিক ভাবে সিদ্ধান্ত নেয় কিন্তু গবেষকরা বলেন প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত আসলে সে প্রতিষ্ঠানের অভ্যাসের ফসল। একজন ভালো নেতা প্রতিষ্ঠানের ফলাফল বদলাতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের অভ্যাস বদলিয়ে দেন। গবেষকদের মতে একটি একটি মুল অভ্যাস (keystone habit) বদলিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান বদলিয়ে দেয়া যায়। পল ও’নেইল কিভাবে এলকোয়া কোম্পনিকে পতনের মুখ থেকে টেনে তুলে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলেন তার বিস্তারিত বর্ণ্না পাওয়া যায়। তিনি দ্বায়িত্ব নেবার পর পরই যখন বিনিয়োগকারী এবং শেয়ার মার্কেট বিশ্লেষকদের নিয়ে মিটিং করেন, সেদিন তিনি কোম্পানির খরচ কমানো , লাভ বাড়ানো, প্রতিষ্ঠানের সংগঠন ঢেলে সাজানো, করের বোঝা কিম্বা রেগুলেটরী সমস্যা এসব নিয়ে কোন কথা বলেননি যেটা সবাই আশা করেছিল, কিন্তু তিনি এসব নিয়ে কথা না বলে জানালেন তার মুল ফোকাস হচ্ছে কর্মীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তার প্রথম দিনের বক্তব্যের পর অনেক বিনিয়োগকারী এলকোয়ার শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছিলেন, তারা ধরেই নিয়েছিলেন এই সরকারী আমলার নেতৃত্বে এলকোয়াকে ডুবতে বেশি সময় লাগবে না। একবছর পর এলকোয়ার লাভ রেকর্ড পরিমান বৃদ্ধি পায়। ১৯৮৭ সালে যোগদানের পর ২০০০ সালে যখন তিনি এলকোয়া ছেড়ে দেন, তখন এলকোয়ার আয় ৫ গুন বৃদ্ধি পেয়েছিল, কোম্পানির মুল্য দাড়িয়েছিল ২৭ বিলিওন ডলার। পল ও’নেইল যেদিন কাজে যোগদান করেছিল সেদিন যদি কেউ এক মিলিওন ডলারের এলকোয়ার শেয়ার কিনত তাহলে উনার যাবার দিন পর্যন্ত সে আরো এক মিলিওন ডলার পেত ডিভিডেন্ড হিসাবে আর শেয়ারের দামেও ৫গুণ বেশী মুনাফা করতে পারত। তিনি কোম্পনির একটা মুল অভ্যাস (keystone habit) বদলিয়ে কোম্পানির ফলাফল বদলিয়ে দিয়েছিলেন।
পঞ্চম অধ্যায়ে বলা হয়েছে ব্যক্তির ইচ্ছাশক্তি (will power) কে অভ্যাসে পরিনত করার মাধ্যমে কিভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সফলতা অর্জন করতে পারে। একট কঠিন মুহুর্ত, ধরুন গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের কর্মীর সাথে খারাপ ব্যবহার করছে, তখন ঐ কর্মীর যা করতে হবে তা হচ্ছে শান্ত থাকা, আর তার জন্য প্রয়োজন প্রবল ইচ্ছাশক্তি। ইচ্ছাশক্তি যদি তার অভ্যাসে পরিণত হয় তখন তার জন্য এটি খুব সহজ হয়। এজন্য ইচ্ছাশক্তিকে বলা হয় সফলতার অভ্যাস। এখানে স্টারবাকসের উদাহরন দেয়া হয়েছে যারা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মীদের এভাবে তৈরি করে। যেটাকে স্টারবাকসের সাফল্যের অন্যতম কারন বলে গবেষকরা মনে করেন।
ষষ্ঠ অধ্যায়ে বলা হয়েছে কিভাবে একটা প্রতিষ্ঠানে ভুল অভ্যাসের কারনে দুর্যোগ তৈরি হয় এবং সেই দুর্যোগ থেকে কিভাবে প্রতিষ্ঠানে অভ্যাসের পরিবর্তন হয়। একটা প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কাজগুলো মুলত তার অভ্যাস থেকে আসে। একটা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ডিভিশিন/ডিপার্টমেন্ট থাকে এবং তাদের মধ্যে এক ধরনের রেষারেষি থাকে, ক্ষমতার দ্বন্দ থাকে, একজনের সাফল্যের ক্রেডিট আরেকজন নিয়ে নেবার প্রবণতা থাকে। এর মাঝেও এক ধরনের সমতা তৈরি হয় এবং প্রতিষ্ঠান তার কার্যক্রম সাধারনত সফলভাবে চালু রাখে। অনেক সময় বাহ্যত সাম্য প্রতিষ্ঠা হয়েছে বলে মনে হলেও সেটা হয়ত কার্যকরী সমতা নয় বরং হয়ত বাহ্যিক সমতার আড়ালে ভিতরে একটা ফাটল চাপা পড়ে থাকে যেটা যে কোন সময় এই সমতাকে ভেংগে ফেলতে পারে। চাপা পড়ে থাকা এই বিষাক্ত অভ্যাস থাকলে সেটা হয়ত কোন একসময় দুর্যোগ পর্যন্ত গড়াতে পারে। যেমন রোড আইল্যান্ড হাসপাতালের উদাহরণ দেয়া হয়েছে যেখানে ডাক্তার এবং নার্সদের মধ্যে এরকম অকার্যকর সাম্য স্থাপিত ছিল যার ফলে প্রচুর ভুল অপারেশন হতো। সেটা নিয়ে একসময় মিডিয়ায় প্রচুর লেখালেখি শুরু হয় এবং প্রতিষ্ঠান তার সুনাম এবং বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে বসে। এটা প্রতিষ্ঠানটির জন্য দুর্যোগ হিসাবে আবির্ভুত হয়। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি এটি শুধরানোর উদ্যোগ নেয়। আরেকটি উদাহরণ দেয়া হয়েছে লন্ডনের কিংস ক্রস সাবওয়ে স্টেশনের আগুন লাগবার ঘটনা। ওখানে চারটি ভিন্ন ডিপার্টমেন্ট ছিল যারা একে অন্যের সাথে সহযোগিতা করত্ না। সবাই খুব নিয়ম করে শুধু নিজের জন্য নির্ধারিত দ্বায়িত্বটুকু পালন করত। পরবর্তীতে তদন্তে বলা হয় এই প্রাতিষ্ঠানিক অভ্যাস ছিল ঐ আগুনকে শুরুতেই নিয়ন্ত্রন করতে না পারার অন্যতম কারন। সেই আগুনের ঘটনার পর সেখানকার কাজের ধারা পুনর্বিন্যাস করা হয় যেখানে যাত্রীর নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সংগঠন ও তার নিয়মকে ঢেলে সাজানো হয়।
সপ্তম অধ্যায়ে বলা হয়েছে কিভাবে একটি প্রতিষ্ঠান মানুষের অভ্যাসকে ব্যবহার করে তার দ্রব্য বিক্রির জন্য লক্ষবস্তুতে করে। আমেরিকার একটা সুপার চেইন স্টোর যার নাম “টার্গেট” এর কেস স্টাডি দেয়া হয়েছে যারা তার গ্রাহকদের কেনাকাটার তথ্য সংগ্রহ করে এবং সেটা বিশ্লেষন করে তাদের অভ্যাস সমন্ধে পুর্বানুমান করেন এবং সেই অভ্যাস অনুযায়ী টার্গেটেড মার্কেটিং করে।
তৃতীয় অংশে বলা হয়েছে সমাজের অভ্যাস কিভাবে কাজ করে। এখানে দুইট অধ্যায় আছে।
নবম অধ্যায়ে (তৃতীয় অংশের প্রথম) সমাজের অভ্যাস কিভাবে কাজ করে সেটার বর্ণনা দেয়া হয়েছে, কিভাবে একটা সমাজ বদলে যায়, কিভাবে সামাজিক বিপ্লব সাধিত হয় সেই কেস স্টাডি দেয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে একটি সামাজিক আন্দোলন তৈরী হবার জন্য সামাজিক অভ্যাসের তিনটি উপাদান একত্র কাজ করেঃ
একঃ আন্দোলন শুরু হয় বন্ধুত্বের সামাজিক অভ্যাস এবং ঘনিষ্ঠ লোকজনের মাঝের শক্তিশালী বন্ধনের (Close tie) কারনে।
দুইঃ এটা বাড়তে থাকে পারিপার্শিক কম্যুনিটি অভ্যাস তথা প্রতিবেশী এবং এলাকার একই রকমের লোকদের মাঝের দুর্বল বন্ধনের (weak ties) কারনে। যেটাকে সামাজিক চাপ (peer pressure- লোকে কি বলবে এরকম একটা অবস্থা থেকে সক্রিয় হওয়া) বলা হয়। একটা সাধারন ইস্যুতে জনমত তৈরি হলে অনেক লোকের পক্ষেই নিরপেক্ষ থাকা সম্ভব হয় না। অন্যরা কি বলবে ভেবে তারা আন্দোলনের পক্ষে চলে আসে। এটাই দুর্বল বন্ধনের সামাজিক অভ্যাস।
তিন: একটা আন্দোলন অনেক সময় লম্বা সময় ধরে চালু রাখতে হয়। অসংখ্য মানুষ যারা হয়ত সরাসরি নেতৃত্ব দানকারীদের কাছের কেউ নয় কিম্বা সরাসরি তাদের দ্বারা প্রভাবিত হবার সুযোগ হয় না তারা কেন লম্বা সময় ত্যাগ স্বীকার করে আন্দোলনে সক্রিয় থাকবে? যেমন মন্টেগোমারি বাস ধর্মঘট একবছরের বেশী সময় সফল ভাবে চলেছিল। প্রশ্ন হচ্ছে একজন সাধারণ মানুষ কেন কষ্ট স্বীকার করে ৫-১০ মাইল হেটে তার কর্মস্থলে যাবে এতটা লম্বা সময়? আবার সাধারণ মানুষ এভাবে না এগিয়ে আসলে আন্দোলন তার প্রয়োজনীয় গতি ও শক্তি অর্জন করতে পারবে না। এখানেই আসে নেতৃত্বের বিষয়টা, নেতৃবৃন্দ আন্দোলনের জন্য দরকারি কাজটাকে একটা সামাজিক অভ্যাসে পরিণত করেন, তখন মানুষ স্বয়ংক্রিয় ভাবেই এটা করতে থাকে। সফল নেতা তারাই যারা আন্দোলনের জন্য প্রয়োজনীয় কাজগুলিকে সমাজের নতুন অভ্যাস হিসাবে তৈরি করতে পারেন। এই তিনটি উপাদান যখন একত্র হয় তখন আন্দোলন নিজের গতিবেগেই চলমান হয় এবং ক্রিটিক্যাল মাস অর্জন করে।
এখানে লেখক আমেরিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন (মন্টেগোমারীর বাস ধর্মঘট) এবং স্যাডলব্যাক চার্চের সাফল্যের কেস স্টাডি নিয়ে বিস্তারিত বলেছেন যেখানে সামাজিক অভ্যাসের উপরে বর্ণিত তিনটি উপাদানের সমাহার হয়েছিল এবং আন্দোলন সাফল্য অর্জন করেছিল।

দশম অধ্যায় বই এর শেষ অধ্যায়। লেখক তার বই এর সিদ্ধান্ত টেনেছেন। মানুষ কি তার অভ্যাসের জন্য দায়ী? এই প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করছেন। অভ্যাস যদি একটি মস্তিষ্কের প্রোগ্রাম হয় এবং কোন নির্দিষ্ট ইঙ্গিতে পেয়ে সেটা যদি স্বয়ংক্রিয় ভাবে কাজ করে (তার মানে মানুষ সেক্ষেত্রে সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নেয়না বা নেয়ার মত মস্তিষ্কের অবস্থা থাকে না) এবং সেই অভ্যাসটা যদি দোষের হয় (যেমন জুয়া খেলা), তাহলে কি তাকে দায়ী করা কি ঠিক হবে? যেমন একজন জুয়ায় আসক্ত নিজের সব সম্পদ হারিয়ে দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এটা কি তার অভ্যাসের কাছে হার মানা নাকি তার দোষ? এমনই একজন এনজি ব্যাচম্যানের বিষয়টা আমেরিকায় কোর্টে উঠেছিল এবং তার আইনজীবি এই যুক্তি দিয়েছিলেন যে উনি এমনভাবে অভ্যস্ত হয়েছিলেন যে উনি স্বেচ্ছায় জুয়া খেলতেনা না বরং অভ্যাসের গভীরতায় অনিয়ন্ত্রিত মস্তিষ্কের কারণে খেলেছেন। কিন্তু কোর্ট সেটা নাকচ করে দেয়। যদিও কিছু মানুষের ঘুমের মধ্যে ঘটানো অপরাধকে কোর্ট শাস্তি না দিয়ে খালাস দেয় কারন সেখানে আইনজীবি প্রমাণ করেন যে তিনি অপরাধ করার সময় তার মস্তিষ্ক সচেতন ছিল না।
লেখকের সিদ্ধান্ত হচ্ছে মানুষ তার অভ্যাসের জন্য দায়ী কারন মানুষ চাইলে তার অভ্যাস বদলাতে পারে এবং নতুন অভ্যাস তৈরি করতে পারে। অভ্যাসের অনেক বড় শক্তি আছে যেটার সঠিক ব্যবহার করে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সমাজকে বদলে দেয়া যায়, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সফলতা লাভ করে, সমাজে বিপ্লব সাধিত হয়।
বইটা পড়ে দেখতে পারেন, ভালো লাগবে, হয়ত আপনার জীবনে একটি ভালো অভ্যাস আপনি তৈরি করতে পারবেন, যা আপনার সাফল্যের কারন হতে পারে। হয়ত আপনি একটি প্রতিষ্ঠানকে (হতে পারে আপনার নিজের অথবা হতে পারে আপনি যেখানে চাকরি করেন) বদলিয়ে দিতে পারবেন সাফল্যের পথে, সাথে আপনিও জীবনের যুদ্ধে সফল হবেন। আপনার জন্য রইল অগ্রিম শুভকামনা।
বইটা বেশ বড়, প্রতিটা অধ্যায়ে বেশ ইন্টারেস্টিং কেস স্টাডির বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া আছে এবং সেখান থেকে গবেষকরা কি ধরনের সিদ্ধান্ত টেনেছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন। প্রতিটা অধ্যায়ের সারকথা গুলি নিয়ে অধ্যায় ভিত্তিক রিভিউ পোস্ট দিব ইনশাআল্লাহ।
(চলবে)

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০২০ রাত ৮:০৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×