somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধন্যবাদ! মিস কল্পনা....

২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শোবার ঘরে সাড়ে পাঁচ বাইসাত এর বেডে একা একা শুয়ে আছি।কিছুক্ষণ পরপর শুধুূ এপাশ থেকে ওপাশ ফিরছি।খুব অস্বস্থি লাগছে।শুতে আসলেই রাজ্যের সব ভাবনাচিন্তা এসে ঘিরে ধরে।

এইসব বস্তাপঁচা ভাবনাচিন্তা থেকে রেহাই পেতে এক বন্ধুর পরামর্শে মেডিটেশন
কোর্সে ভর্তি হয়েছি।আজকেরটা নিয়ে তিন নাম্বার সেশন করলাম। ইন্সট্রাকটার কি সব ছাইপাশ বলে,সব মাথার উপর দিয়ে যায়,মাথায় ঢুকে না।
আপাতত মাথার উপর শূন্য ওয়াটের নীল ডিম লাইট জ্বলছে। বেহায়া ঘড়িটা সমানে টিকটিক করে বেজে যাচ্ছে।
আমার রক্তচক্ষু,তীর্যক চক্ষু কোন কিছুকেই সে তোয়াক্কা করছে না।অগত্যা আর অক্ষিদ্বয়কে কষ্ট না দেয়াটা
সুবিবেচকের কাজ বলে ধরে নিলাম।পরপর দুইটা ঘুমের বড়ি খেলাম।কোন কাজ হল না।কখনই হয় না।
জোরপূর্বক চোখ বুঁজে ঘুমের রাজ্যে প্রবেশের চেষ্টা চালাচ্ছি। ঘুমের রাজ্যের রাস্তা বন্ধ।প্রধান ফটকে বড় বড় অক্ষরে টানানো :
"রাজ্য আপডেটের কাজ চলছে,অনুগ্রহ পূর্বক কিছুটা সময় অপেক্ষা করুন।আপনার সাময়িক অসুবিধার জন্যে আমরা আন্তরিকভাবে দূঃখিত।"
অগত্যা সোজা পথ ধরলাম।খানিকটা পথ এগিয়ে ইউ টার্ন নিলেই কল্পনার রাজ্য। আমার জন্যে এখানের ফটক সব সময়ই খোলা।
আহা! শিশিরে ভেজা কচি কচি সবুজ ঘাসে পা দিতেই মনটা ভালো হয়ে গেল।বুক ভরে একটা গভীর শ্বাস নিলাম।
আহ্! বাতাসে জেসমিনের সৌরভ! এত দেখছি একেবারে সোনায় সোহাগা!
আলো-অন্ধকারের মাঝে একদল জোনাকি পোকা মিটমিট করতে করতে এসে আমাকে ঘিরে ধরল।মনে হল আমাকে ওদের সাথে কোথাও নিতে চাইছে।
তাই আমিও দেরি না করে ওদের অনুসরণ করতে করতে কচি ঘাসের গালিচা দেয়া পথে হাঁটা শুরু করলাম।
অদূরেই একটা চার দোয়ালের সুউচ্চ সাদা ঝা-চকচকে কক্ষ দেখতে পেলাম।
কক্ষে ঢুকতেই রাজ্যের ইনচার্জ মিস্ কল্পনা অতি মধুর স্বরে আমাকে স্বাগত জানাল।

আমি মৃদু হেসে তার অভ্যর্থনার জবাব দিলাম।
না দিলেও অবশ্যি কিছু যেত-আসত না।
(২)
বিশাল কক্ষ।ঈষৎ আলোয় আলোকিত। কক্ষের ঠিক মাঝখানে একটা সাদা আরাম কেদারা।
মিস্ কল্পনা আমাকে সেই সুন্দর আরাম কেদারায় বসার অনুরোধ জনাল।
আমিও দেরী না করে আরাম করে হেলে পড়লাম।
আহা!কি আশ্চর্য সুন্দর মোলায়েম কেদারা!
মিস্ কল্পনা শুধাল,
স্যার আপনাকে কিভাবে সহায়তা করতে পারি?
আমি ক্লান্ত স্বরে বললাম,
মনটা খুব খারাপ বুঝলে?মনটা ভালো করে দাও।
জ্বী অবশ্যই,বলুন স্যার কোথায় গেলে বা কী দেখলে আপনার মন ভালো হবে?

কথাটা শুনেই হঠাৎ কেন জানি প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে গেলাম।এক নিঃশ্বাসে বলতে লাগলাম,
ধর এমন যদি হয়, আমার ঐ উজবুক গর্ধব পি.এস. মফিজের পরিবর্তে,যদি কোন সুন্দর স্মার্ট নারী পি.এস.থাকে,আর ওর সাথে অন্তরঙ্গ গল্প গুজবের সময় ঐ বেলেহাজ ফাজীল শালীর বেটী অসময়ে আচমকা দরজা ঠেলে ঢুকে আমাকে ঐ মেয়ের সাথে অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখে হার্ট অ্যাটাক করে হাসপাতালে যায়,যেমনটা আমি গিয়েছিলাম।বলে নিজের অজান্তেই একটা বড়সর দীর্ঘনিশ্বাস ফেললাম।দুইটা সেকেন্ড বিরতি নিয়ে বললাম,এই দৃশ্য দেখে হয়ত মনটা ভালো হলেও হতে পারে।কি বল?
জ্বী অবশ্যই,কিন্তু স্যার আপনার কিঞ্চিৎ ভুল হচ্ছে।আমার ডেটা অনুযায়ী আপনি আপনার স্ত্রীর পরকীয়ার দৃশ্য দেখে হার্ট অ্যাটাকের কারণে হাসপাতালে গিয়েছিলেন,কোন বেলেহাজ ফাজীল শালীর বেটীর জন্যে নয়।
শুনে বুকের ভেতরটা হঠাৎ ধক্ করে উঠল।
মিস্ কল্পনা যদি নিছকই একটা সুমধুর কণ্ঠ না হয়ে, রক্ত মাংসের মানুষ হত,তাহলে বদ্জাতটাকে একহাত দেখে নিতাম।
উফ!হাতটা কেমন যেন ইসপিস করছে।
ক্ষুব্দ গলায় বললাম,
হয়ছে আম্মা!আপনার এত ড্যাটা সার্চ দিতে হবে না।আমার সব মনে আছে।
স্যার আপনি কিন্তু আবার ভুল করছেন।আমি আপনার আম্মা না।
ওরে আল্লারে!কেউ আমারে মাইরালা!
কেন স্যার?হোয়াট হ্যাপ্যান্ড?
আমি হুঙ্কার দিয়ে বললাম,
চুপ!একদম চুপ!কোন কথা না, সোজা কাজে নেমে পড়।
মিস্ কল্পনা ফিসফিসিয়ে বলল,
ওকে স্যার।
সাথে সাথেই সেই জেসমিনের সৌরভ নাকে লাগল।
আমি চোখটা বন্ধ করে বুক ভরে শ্বাস নিলাম।কেদারাটা মনে হল স্বয়ংক্রিয়ভাবে দৈর্ঘ প্রস্থে বেড়ে একটা মোলায়েম বিছনায় পরিণত হয়ে গেল।
এইবার মিস্ কল্পনা আমাকে চিৎ হয়ে শুয়ার অনুরোধ জানাল।আমিও সাথে সাথে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লাম।আমার সারা শরীর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে গেল,মনে হল আমি শূন্যে ভাসছি।আমার মনের ভেতর এখন আর কোন ভাবনাচিন্তা নেই।
আছে শুধু নামহীন একটা অনুভূতি।এইসময় নিজেকে খানিকটা আফিংখোরের মত মনে হচ্ছিল।
(৩)

ঘুটঘুটে অন্ধকার। পিনপতন নিরবতা।হঠাৎ এক বিন্দু আলো দেখতে পেলাম।সেই আলো ক্রমেই ছড়াতে ছড়াতে চারিদিক আলোকিত করে দিল।
দিব্যি দেখতে পেলাম অফ হোয়াইট রং এর দশ ফুট বাই বার ফুট এর একটা রুম।রুমের দেয়ালে কোন এক অখ্যাত শিল্পীর আঁকা তৈলচিত্র।তার বরাবর নিচেই ওক কাঠের চেয়ার টেবিল। টেবিলের মাঝখানে কিছু অফিসিয়াল ফাইল-পত্র।এককোণায় একটা ছোট আর্টিফিসিয়াল বনসাই। আর তার পাশে একটা ছোট্ট কাঠের ফ্রেম।ফ্রেমে একজন অর্ধবয়স্ক শ্যামলা রং এর মাঝারি গড়নের পুরুষ মানুষ। তার কোলে ছোট্ট ফুটফুটে পুতুলের মত দেখতে একটা ছোট্ট মেয়ে।তার মাথায় ছোট্ট দুইটা বেণী করা।
ছবির পুরুষ মানুষটা আমি আর কোলের ছোট্ট দুই বেণী করা পুতুলটা আমার ইতু সোনা।
ছবিটা রাঙামাটিতে তোলা।তার তৃতীয় জন্মদিন উপলক্ষে সব কাজ বন্ধ রেখে দুই দিনের ট্রিপে গিয়েছিলাম সেই সবুজের সমারোহে।সেদিনও কার আমি নিজেই ড্রাইভ করেছিলাম,আমার পাশের সিটে ইতু তার মায়ের কোলে বসে ছিল।
সেখানে কাপ্তাই হ্রদ ঘুরার সময় খুবই ইন্টরেস্টিং রেস্তোরা খুঁজে পেয়েছিলাম।পেদা টিং টিং নাম।সেখানেই ছবিটা তোলা।
ছবিটা দেখেই সেই সুমধুর স্মৃতিগুলো একে একে চোখের সামনে ভাসতে লাগল।পেদা টিং টিং এ বাম্বু চিকেন,কচি বাঁশের তরকারি, আরও কি সব যেন খেয়েছিলাম।খাওয়া শেষে আমার সেই ঐতিহাসিক ঢেকুর তোলা।যেটা দেখে আমার পুতুল সোনা হাসতে হাসতে লোটুপুটি খাচ্ছিল।কি নিষ্পাপ সুন্দর ছিল সেই হাসি!
সে কি এখনও ঐভাবেই হাসে?খুব জানতে ইচ্ছে করে।
আহারে!কতদিন আমার পুচকি সোনার সাথে দেখা হয় না।আবারও মনের অজান্তে একটা দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে গেল।
বুকের ভেতরটা কেমন যেন খাঁ খাঁ করে উঠল।
মনের আবেগকে কোনমতে সামলে মিস্ কল্পনার উপর আবার নিজেকে সঁপে দিলাম।
(৪)

আরে ঐত আমি বসে আছি।আমার সামনে কি আশ্চর্য্য সুন্দর এক রমণী।স্লিভলেস ব্লাউজ আর নীল শাড়ী পড়া।হাতে সাদা স্টোনের ব্রেসলেট।
আমার কাছ থেকে ডিকটেশন নিচ্ছে।আমি চায়ে চুমুক দিতে দিতে তাকে ডিকটেশন দিচ্ছি।
হঠাৎ সেই সুন্দরি সেক্রেটারি বলে উঠল,
স্যার এই সেন্টেন্সটা বুঝতে পারছিনা।
কোন্ সেন্টেন্সটা?
এই যে স্যার এই সেন্টেন্সটা।
বলতে বলতে সে উঠে এসে একদম আমার চেয়ার ঘেঁষে দাঁড়াল।আমার সামনে ঝুঁকে সে তার ডায়েরীটা দেখাচ্ছে।একটা অনুভূতি কাজ করছে।কিন্তু সেটা মোটেও সুবিধের নয়।অনুভূতিটা অস্বস্তিকর।কোন সেক্রেটারি বসের কাছাকাছি ঘেঁষা মানে বেয়াদবির সামিিল।
আর আমি মোটেও বেয়াদবি পছন্দ করিনা।সুন্দরীকে এখন আর আশ্চর্য সুন্দরী লাগছে না বেয়াদ্দপ সুন্দরী লাগছে।
আরে এত আবার চোখে চোখ রেখে মিটিমিটি হাসছে! এত চরম বেয়াদব।
এই স্টপ।স্টপ।স্টপ! আমি চিৎকার করে কল্পনাকে ডাকতে লাগলাম।
ক-ল্প-না....আমাকে এক্ষণ বের কর এইখান থেকে।এই বেয়াদ্দব মেয়েকে এক্ষণ আমার চোখের সামনে থেকে সরাও!
মিস্ কল্পনা সদয় হয়ে উদয় হলেন।মানে তার কণ্ঠ শুনতে পেলাম। আবার,আমি আমাকে সেই চার দেয়ালের সাদা কক্ষে আবিষ্কার করলাম।
দাঁতে দাঁত কটমটিয়ে বললাম,তুমি ত আমার অশান্তুি বাড়ানো বৈ কমাতে পারছ না।
মিস্ কল্পনা সেই পরিচিত মধুর স্বরে,
স্যার আমি ত আপনার কথায়...
বাদ্ দাও ত এইসব!খুব রুচিতে বাঁধে।
কল্পনা অতিশয় শান্ত ধীর গলায় বলল,
স্যার আপনি শান্ত হন।আপনার মনে কোন অশান্তি নেই।আমি এখন বুঝতে পারছি,আপনার মন কি চাইছে!কোথায় যেতে চাইছে!আপনার সব চিন্তা, সব কষ্ট আমাকে দিয়ে দিন।দেখবেন আপনার মনটা একদম একটা পাখির পালকের মত হালকা হয়ে গেছে।নির্ভার আর দুশ্চিন্তাহীন।
এই মুহূর্তে আপনার পিঠের নিচে কোন বিছানা নেই।
আপনি শূন্যে ভাসছেন।
আমার সমস্ত শরীর আবারও ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে আসল।
আমার মনে হল আমি সত্যি সত্যিই শূন্যে ভাসছি।ভাসতে ভাসতে যেন কোথায় চলে যাচ্ছি! এইটা কি যাদু না অন্যকিছু?
কল্পনাকে শুধালাম,
কল্পনা আমি কোথায় যাচ্ছি?
যেখানে আপনার মন যেতে চাইছে।
আমার মন কোথায় যেতে চাইছে?
এইটা না হয় আপনি আপনার মনকেই জিজ্ঞেস করুন।অথবা না হয় একটু অপেক্ষা করুন। দেখেন সে আপনাকে কোথায় নিয়ে যায়।
আমার কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে না।ভাবনাচিন্তা করা,প্রশ্ন করা, হাড়গোড় সমেত রক্তমাংসের মানুষের কাজ। আমি মানুষ না।এইমুহূর্তে আমি একটা পাখির পালক।পাখির পালক কোন চিন্তা করে না।প্রশ্ন করে না।বাতাসে ভেসে বেড়ায়।বাতাস তাকে যেদিকে ভাসায় সে সেদিকেই ভেসে বেড়ায়।এইটাই স্বাভাবিক।ভাসতে ভাসতে যদি তার ইচ্ছে হয় কোথাও গিয়ে একটু থামতে,তখন সে থামে।
আমিও মনে হয় কোথাও যেন থামলাম।
চোখ বন্ধ অবস্থায়ই বাতাসের সোঁ সোঁ শব্দ শুনতে পেলাম।
সাথে টের পেলাম কোথা থেকে যেন ছোট ছোট ঢেউ এসে আমার পা ভিজিয়ে দিচ্ছে।
আমি আস্তে আস্তে আমার চোখ খুললাম।
কী সাংঘাতিক!
আমার সামনে নীল সাগরের পানি থৈ থৈ করছে!
অবাক দৃষ্টিতে চারিদিকে তাকালাম, আমি সম্পূর্ণ নির্জন এক দ্বীপে সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে।
কী সাংঘাতিক!
আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ।জ্যোৎস্নার আলোতে সবকিছু কী যে অসাধারণ লাগছে,তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না।
আমার মনে হচ্ছে সাগরকন্যা কোন এক অদৃশ্য বেহালার সুরে আমার সামনে নৃত্য করছে।আমি মুগ্ধ হয়ে তার নৃত্য দেখছি।
এই জীবনে কখনও সুযোগ হয়নি এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করার।
ভার্সিটি লাইফে একবার পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছিল কক্সবাজার ট্যুর এর।এম.বি.এ. ফাইনালের আগে।আমার বন্ধুরা সবাই গিয়েছিল।আমি যাইনি।
কারণটা দুটো মায়াবী চোখের চাহনী,ঘন কালো মেঘের মত চুল,গোলাপী রঙের ঠোঁট।
যাকে প্রথম দেখাতেই ভালবেসে ফেলেছিলাম। এখনও মনের এক কোণে ঝলমল করে সেই প্রথম দেখার স্মৃতি।
বি.বি.এ.সেকেন্ত ইয়ারে মার্কেটিং ম্যানেজমেন্ট এর ক্লাসে।সে বসেছিল ঠিক আমার পাশের সিটে।শুভ্র সাদা সালোয়ার-কামিজ এ কী অসাধারণই না লাগছিল মেয়েটাকে।মনে হচ্ছিল আকাশ থেকে কোন এক পরী নেমে এসেছে এই পৃথিবীতে।সেইত তারপর টুকটাক দেখা,হাই হ্যালো।তারপর একসাথে ক্লাস করা।ক্লাস শেষে জমিয়ে আড্ডা,নোট আদান-প্রদান।
নোট আদান-প্রদান করতে করতে একসময় মনের আদান-প্রদান।
দিন যতই গড়াচ্ছিল ততই সে আমার পুরো সত্ত্বার সাথে মিশে যাচ্ছিল।একসময় মনে হতে লাগল,আমি ওকে ছাড়া বাঁচব না।সিদ্ধান্ত নিলাম, যেভাবেই হোক ভাল রেজাল্ট করে,ভাল একটা চাকরি যোগাড় করে তার,মানে রীতুর মা-বাবার কাছে তাদের মেয়ের হাতটা চাইব।তাই রাত-দিন এক করে নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে পড়তে লাগলাম। ভালো রেজাল্টও করলাম।বি.বি.এ.,এম.বি.এ. দুটাতেই ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট।অনেক খাটাখাটুনি করে ভাল চাকরি ও যোগাড় করলাম,একটা মাল্টিনেশনাল কোম্পানিতে।
ভাল চাকরি,ভাল বেতন, ভাল নির্ভেজাল ছেলে।সবকিছুই ভাল।তাই রীতুর মা-বাবাও তেমন একটা আপত্তি করল না।
আমার মত একটা হতভাগা দরিদ্র পরিবারের ছেলের প্রতি ভাগ্য কেন এত প্রসন্ন হচ্ছিল বুঝতে পারছিলাম না।কিন্তু অন্তর থেকে কৃতজ্ঞ ছিলাম।সবকিছু কেমন সুন্দর একটা স্বপ্নের মত কাটছিল।রীতুর সাথে বিয়ে,বিয়ের দুই বছরেই ইতু সোনার আমাদের ঘর আলো করে এই পৃথিবীতে আসা।আমি ভাবতে শুরু করলাম এই পৃথিবীতে আমার চেয়ে ভাগ্যবান আর বুঝি কেউ নেই।আমার এই বোকা বোকা ভাবনাতে কেউ একজন নির্ঘাত উপহাসের হাসি হাসছিল।কেউ একজন, যে অদৃশ্য হাতে সব কলকাঠি নাড়ে।তাইত ভাগ্য তার নির্দয় রাক্ষুসে চেহারা আবারো একবার আমাকে দেখাল।আমার সমস্ত সত্তা,আমার পৃথিবী,আমার বিশ্বাস সব এক নিমেষেই চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল।কিংবা হয়ত কখনোই কিছুই আমার ছিল না।আমি মিথ্যা ভ্রমে সাতটা বছর কাটিয়ে দিয়েছিলাম এক বিশ্বাসঘাতক রমণীর সাথে।সেদিন যদি দুপরবেলায় হঠাৎ করে বাসায় না যেতাম তাহলে সারাটা জীবনই হয়ত সেই মিথ্যা ভ্রমেই কাটিয়ে দিতাম।এবং আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু আমার সমস্ত সত্তা জুড়ে থাকা আমার সহধর্মিনী আমাকে সারাটা জীবনই ঐভাবে ধোঁকা দিয়ে যেত।
উফ্! এখনও সেই কুৎসিৎ বেহায়াপনার দৃশ্য মনে পড়লে বুকের ভেতর এক অসহ্য যন্ত্রননাদায়ক ব্যথা শুরু হয়।ভেতরটা কেমন হাহাকার করতে থাকে।রাগে ঘৃণায় সমস্ত শরীর মন কুঁকড়ে যায়।মনে হয় সব ভেঙে চুরমার করে ফেলি!সবকিছু ধ্বংস করে ফেলি।
উফ!অসহ্য সেই স্মৃতি!কেন আবার সেটা মনে করতে গেলাম?ধিক্ আমাকে শত ধিক্!
সৌভাগ্যবশত ওই অসহ্য যন্ত্রনাদায়ক অবস্থা থেকে আবার আমাকে উদ্ধার করল সেই মধুর স্বর।
কানে এল সেই মধুর স্বরের ফিসফিসানি।
স্যার কেমন লাগছে?
কোন উত্তর দিলাম না।
সে আবার বলে উঠল,
স্যার আপনার জন্যে কেউএকজন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
আপনি কি তার সাথে দেখা করতে আগ্রহী?
আমি হকচকিয়ে বললাম,
কে?
বলে চারিদিকে চোখ বুলালাম।সামনে,ডানে,বামে শুধু দিগন্ত বিস্তৃত সাগরের অথৈ পানি।
পেছনে ফিরলাম।তীরের আশেপাশে আগের মতই জনমানবশূন্য।
কোথাও কেউ নেই।
তবুও খুব কৌতুহল কাজ করছে।এমন নির্জন স্থানে কে অপেক্ষা করছে আমার জন্যে!
তীর ধরে সামনের দিকে ধ্রুতপায়ে এগোতে লাগলাম।দূরে কোথাও আলোর একটা ছোট্ট কিরণ দেখতে পেলাম।
উত্তেজনায়,উৎকণ্ঠায় শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে জোর কদমে দৌড়াতে লাগলাম।
বাতাসের সোঁ সোঁ শব্দ কানে আসছে।কেমন যেন শীত শীত করছে।
ঐ যে এখন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।একটা মাটির ছোট্ট গোদাম ঘর।কাঠের দরজা।দরজা ঠেলে ঢুকতেই দেখি আরে এ কি?
মা বিছানায় শুয়ে আছেন।তাঁর চোখ বন্ধ। পরনে সেই পুরনো জীর্ণ সাদা শাড়ী।পাশে একটা ছোট্ট তিনপেয়ে টেবিল। তার আরেক পায়ার জায়গায় কিছু আধভাঙা ইট দিয়ে তাকে কোনভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।রাখা হয়েছে বলতে আমিই রেখেছিলাম।একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বজলু চাচার দোকানের পাশ থেকে চুরি করে এনেছিলাম।বেচারার দোকান মেরামতের কাজ চলছিল।
সেই ভাঙা টেবিলের উপর সেই আমাদের পুরনো হারিকেন জ্বলছে।।
হারিকেনের আলোয় মায়ের সেই মায়াভরা চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আহা! কতদিন পর মায়ের সেই মায়ভরা মুখ আবার দেখলাম।
পৃথিবীর আর কারও চেহারায় এত মায়া আমি খুঁজে পাইনি।
মায়ের চেহারাটা দেখতেই চোখে পানি এসে গেল।সবকিছু কামঐ যে এখন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।একটা মাটির ছোট্ট গোদাম ঘর।কাঠের দরজা।দরজা ঠেলে ঢুকতেই দেখি আরে এ কি?
মা বিছানায় শুয়ে আছেন।তাঁর চোখ বন্ধ। পরনে সেই পুরনো জীর্ণ সাদ শাড়ী।পাশে একটা ছোট্ট তিনপেয়ে টেবিল। তার পায়ার জায়গায় কিছু আধভাঙা ইট দিয়ে তাকে কোনভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে।রাখা হয়েছে বলতে আমিই রেখেছিলাম।একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে বজলু চাচার দোকানের পাশ থেকে চুরি করে এনেছিলাম।বেচারার দোকান মেরামতের কাজ চলছিল।
সেই ভাঙা টেবিলের উপর সেই আমাদের পুরনো হারিকেন জ্বলছে।।
হারিকেনের আলোয় মায়ের সেই মায়াভরা চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আহা! কতদিন পর মায়ের সেই মায়ভরা মুখ আবার দেখলাম।
পৃথিবীর আর কারও চেহারায় এত মায়া আমি খুঁজে পাইনি।
মায়ের চেহারাটা দেখতেই চোখে পানি এসে গেল।সবকিছু কেমন যেন অস্পষ্ট লাগছে।আর ধৈর্য্য ধরতে পারলাম না
অধৈর্য্য হয়ে মা-কে ডাকলাম মা!
মা চোখ মেলে আমার দিকে তাকালেন।বিছানা থেকে অনেক কষ্টে ওঠে এলেন।
খোকন!বলে কাছে এসে আমার মাথায়, মুখে, গায়ে হাত বুলাতে লাগলেন।আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক্ষণ কাঁদলেন।আমিও তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।ছোট খোকার মত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলাম।মা তারপর মুখ তুলে আমাকে ভাল করে দেখতে লাগলেন।আবারো হাত বুলাতে বুলাতে আদর মাখা কণ্ঠে বললেন,
একদিনেই কেমন শুকিয়ে গেছিস রে? সারাদিন বুঝি কিছুই খাস নি?
বলে আলতো করে আমার গালে চড় মারলেন।
বোকা ছেলে!অমন করে কেউ মায়ের উপর রাগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়?
শাড়ীর আঁচল দিয়ে আমার মুখ মুছতে মুছতে বললেন,
যা!আর কোনদিন তোকে আর অমন করে বকব না।তুই ছাড়া আমার আর কে আছে বল?
আমি ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললাম,
না মা। তুমি আমাকে অবশ্যই বকবে।তোমার যখন মন চায় তখন বকবে।শুধু আমাকে ছেড়ে কোথাও যেও না প্লীজ!
মা হেসে বললেন,
পাগল ছেলে!তুই ইত আমাকে ছেড়ে রাগ করে চলে গিয়েছিলি।আমি কি তোর উপর রাগ করতে পারি?
আমি ক্লান্ত স্বরে বললাম,
মা!আমি অনেকদিন ভাল করে ঘুমায়নি,একটু ঘুম পাড়িয়ে দেবে?
বিছানা করে দিই?
না আমি তোমার কোলে মাথা রেখে ঘুমোব।
মা আবারও হাসলেন।কী আশ্চর্য সুন্দর পবিত্র সেই হাসি!
বিছানায় উঠে বসতে বসতে বললেন,
আয়,ঘুম পাড়িয়ে দিই।
আমি বিছানায় উঠে কাত হয়ে জড়োসড়ো হয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম।
আহা! মায়ের গায়ের সেই পরিচিত গন্ধ নাকে লাগল!সেই পরিচিত শ্যামলা চিকন হাত দিয়ে মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন।
চোখটা ধীরে ধীরে ভারী হয়ে আসছে।সব দূঃখ,সব চিন্তা, ক্লান্তি সব কোথায় যেন মিলিয়ে যাচ্ছে।প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে। চোখ আর মেলে রাখতে পারছি না।মায়ের সেই পবিত্র মায়াবী মুখটা তবুও দেখতে ইচ্ছে করছে।
কিন্তু শত চেষ্টা করেও চোখ আর মেলে রাখতে পারছি না।তাই বহুকষ্টে মনে মনে শুধু একবার বললাম,
ধন্যবাদ!মিস্ কল্পনা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৬
১৫টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×