ভোর ৪:০০ টা
ডিপার্টমেন্টের উত্তর দিকের দরজায়
জমাট কুয়াশা ভরা পাহাড়ী ক্যাম্পাসে আস্ত রাতটা যেনো অনেক নীচে নেমে বসেছে অতিকায় বুড়ো কোনো পাখির মত। শহরের মত আলোর অনেক উপর দিয়ে হালকা ইতস্তত ঘুরে বাড়েনোর দরকার নেই...যেনো গ্রামের লোকটা নিজের গ্রাম, দাওয়ায় বসে.
ল্যাম্প পোষ্টের হলুদ আলোয় কিনা, রাতটাও হলদেটে...
কুয়াশার মাঝে দুর থেকে দুরবর্তী ল্যাম্প পোস্টের আলোর ঝাপসা থেকে ঝাপসা হয়ে হয়ে যাওয়া প্রাচীন চলচিত্রের মত একই দৃশ্যের, দৃশ্য বদলের হিম হিম চেষ্টা।
পাহাড়ের উপর বিশালাকার বিল্ডিংটায় চার তলা কিংবা পাঁচ তলার একটা মাত্র রুমে একটা জানালা দিয়া একটা মাত্র আলো দূরবর্তী রহস্যময়ী হয়ে জেগে আছে, আর আমি...
ধুসর রংয়ের স্টেশন ওয়াগনটাকে যেনো কুয়াশা ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে...ঠিক সেইরকম কুয়াশা, প্যাট্রেসিয়া হ্যলম্যান রবার্ট লোকাম্পের কোটের হাত খামচে ধরে পার্কের বেঞ্চিতে বসে আঁকুতি জানায় : আমাকে খুব শক্ত করে ধরে রাখো রবি, নাইলে কুয়াশা আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে...
কোন আলোতে? রাতের না গোলাকার ল্যান্প পোষ্টের? পাতাছাড়া গাছ গুলার এমন কিম্ভুত আকৃতি? একটু বাম দিকের টা যেনো কোনো মিউজিয়ামে রাখা প্রাগৈতিহাসিক এক প্রানীর কংকাল...আর আমার বরাবর একটা আধাআধি গুড়ির উপর দু'ভাগ হয়ে যাওয়া কান্ড...ভাইকিংয়ের শিরোস্ত্রানের শিংয়ের মত ঠিক....
ডান পাশে খুব কাছের ল্যাম্পের আলো, আমার গায়ে না পরার ক্ষোভ ভুলে যায় সহজেই, আলো বাঁধা দিয়ে রাখা পাইনের পাতায় ভারী হয়ে ঝুলে থাকে শিশির কনায় প্রতিফলন দিয়ে....
এটা কি কোনো কুশলী ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন? ঘোলাটে চরাচরে প্রতিফলনের কন্ট্রাস্ট?
জমে বসে থাকা নীরবতা,,,,
জানি, মিনিট বিশেক হেঁটে গেলেই লোকালয়ের মিলিত কলোরব এখনো হয়তো পাওয়া যাবে, রাতের বারগুলোতে...নারী পুরুষের একান্ত সময় গুলো, লাল গোলাপী চুম্বন হয়ে ভেসে বেড়াবে ভিনদেশি মুখে...
ঐতো, ভিনদেশি সুখ!! তাই যাইনা আর ঐদিকে....তাছাড়া, তাড়াও তো কম না...সময় কোথায় বিষন্ন বিষন্ন বলগেমের?
এর চেয়ে বিল্ডিংয়ের সামনে বসে সিগেরেট ধোঁয়া করে উড়িয়ে দেই...কিছু ধোঁয়াই...
হলদে আলোতে সাদা রংয়ের ধোঁয়া, একটু ভেসে বেড়িয়েই মিলিয়ে যায়...ভিনদেশি ভাব নিয়ে, কাঁচুমাচু।
ভারী রাতের হলদে আলোয়, সিগেরেটের সাদা ধোঁয়া কেউ নয়..
আমার মতই ঠিক
আমি এইখানের কেউ নই, আমি এখানকার ছিলাম না কখনো...
ভোর ৭:০০ টা
ডিপার্টমেন্টের উত্তর দিকের দরজায়
কুয়াশাটা তুলে নিয়েছে কেউ, খুব অযত্নে..কুয়াশার রং এখনো লেগে আছে এখানে সেখানে অসাবধানী তুলির পোঁচের মত..
আরেকটা দিন শুরু হয়।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ১০:৫৮