somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাওন আহমাদ
স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

মায়া

১৮ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে একসাথে চলা কিংবা রক্তের সম্পর্ক থাকাটা খুব বেশী জরুরি ভূমিকা পালন করে বলে আমি মনে করিনা।
এসবকিছুর বাইরে গিয়েও সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে এবং গড়ে উঠে।

বাসা থেকে এক কিলোমিটারের দূরত্বে একটা টঙ দোকান আছে। আমি নিয়ম করে প্রতিদিন বাসায় ফেরার পথে সেখান থেকে টুকটাক কিছু খাবার খেয়ে বাসায় ফিরতাম।

দোকানী প্রত্যেক দিন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করতেন কেমন আছেন ভাই? বলেই আমাকে চা দিতেন। চা-টা খেতে খেতে উনার সাথে টুকটাক কথা হতো আমার।

কখনো নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে একটু দেরি হলেই বলতেন ভাই আজ এতো দেরী করলেন যে! আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। শুনে ভেতরটা নাড়া দিয়ে উঠতো।

একজন অপরিচিত মানুষ একজন কাস্টমারের জন্য অপেক্ষা করছে! আমি যে খুব বড় মাপের কাস্টমার ছিলাম তাও না। টুকটাক খাবারে আর কয় টাকাই বা বিক্রি হতো! আর তাছাড়া আমি একাই তো তার কাস্টমার না। তার আরও অনেক কাস্টমার আছে তবে আমার জন্যই কেনো তার এতো মায়া!

বেশকিছু দিন হয়ে গেছে ব্যস্ততার কারণে তার দোকানে যাওয়া হয় না। আজ হঠাৎ ওদিকে গিয়েছিলাম তো ভাবলাম তার সাথে দেখা করে যাই। দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তার চোখে মুখে আনন্দের প্রতিচ্ছবি। না না প্রশ্ন কেমন আছি, দোকানে কেনো যাই না ইত্যাদি ইত্যাদি।

কথা প্রসঙ্গে বললেন, ভাই আমি মালোশিয়া চলে যাচ্ছি। সমস্তকিছু রেডি হয়ে গেছে। কয়েকদিনের ভেতরেই চলে যাব। আপনাকে খুব মিস করছিলাম আর ভাবছিলাম যাবার আগে যদি আপনার সাথে একবার দেখা হতো। যাক আপনার সাথে আমার দেখা হয়ে গেলো। যখন মানুষ টি কথা বলছিলো তখন তার পুরো মুখ জুড়ে আনন্দের স্রোত বয়ে যাচ্ছিলো।

আমার হাত ধরে বলছিলো ভাইজান কোনো ভুল হলে মাফ করে দিয়েন আর আমার জন্য দোয়া কইরেন। আমি জাস্ট প্যারালাইজড হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু কিছু বলতে পারছিনা। শুধু মনে মনে মনে ভাবছিলাম কিছু মানুষের দোয়া চেয়ে নিতে হয় না তারা তাদের কর্মের মাধ্যমে দোয়া আদায় করে নেয়।

তার হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পকেট থেকে বিলটা বের করে তার ডেস্কের উপর রাখলাম। দেখি উনি টাকাটা আমার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কেনো? সে বলছে ভাই আজ বিল নিবো না। বারবার জোর করছিলাম টাকাটা রেখে দিতে কিন্তু সে নাছোড়বান্দা টাকা নিবেনা তো নিবেই না তার একটাই কথা টাকাটা না দিলে উনি খুশি হবেন। দোকানের অন্যান্য কাস্টমাররা উৎসুক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তার হাত থেকে টাকাটা নিয়ে, তাকে বিদায় বলে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলাম।

খুব ইচ্ছে করছিলো পিছনে ফিরে শেষ বারের মতো মানুষ টিকে একটু দেখি কিন্তু তাকালাম না। মায়া বড় অদ্ভুত জিনিস। আমি পিছন ফিরে না তাকিয়ে মায়া টাকে অতৃপ্ত করে রাখলাম যাতে করে একে আমি আমার নিজস্ব স্মৃতির বয়ামে ভরে রাখতে পারি।

কি অদ্ভুত আমরা মানুষেরা! কেউ কেউ তোষামোদি করে টাকা লুটিয়েও এমন সলিড ভালোবাসা পায় না। আবার কেউ কেউ মূল্যের বাইরে গিয়েও স্বার্থহীন ভালোবাসার অংশ হয়ে যায়।

আমাদের জীবনের এগুলোই আমাদের অর্জন। আমার ঝুলি মানুষের ভালোবাসায় পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে দিন থেকে দিন আর আমিও ঋণী হয়ে যাচ্ছি দিন থেকে দিন। যে ঋণ শোধ করার কোনো উপায় নেই কারণ কিছু ঋণের কোনো শোধ হয় না। ভালো থাকুক পৃথিবীর ভালো মানুষ গুলো...


ছবি গুগল
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:০২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×