বয়স কাছাকাছি হওয়ায় আমরা দুই ভাই ছোটবেলা থেকেই সবসময় একসঙ্গে থাকতাম। যেমন বন্ধুর মতো মধুর সম্পর্ক নিয়ে আমরা রাস্তায় গলাগলি ধরে ঘুরে বেড়াতাম ঠিক তেমনই মাঝে মাঝে দা-কুমড়ো হয়ে রাস্তার মধ্যে মারামারি করে একে অন্যের কাপড় খুলে নিতাম। সেই সময় আমাদের স্থানীয় বাজারে একটা ভিডিও গেইমসের দোকান খোলা হয়। স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের কাছে গেইমসের গল্প শুনে যন্ত্রটা দেখার আগ্রহ বেড়ে যায়। তো একদিন বিকেলবেলা বন্ধুদের সঙ্গে আমি ও আমার ছোট ভাই গেইমসের দোকানে হাজির হলাম।
গিয়ে দেখি, পুরো দোকান কানায় কানায় পূর্ণ। দু-একজন করে খেলছে আর বাকিরা সব হাঁ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। সেখানে গিয়ে জানতে পারলাম, গেইমসের নাম মোস্তফা। যা হোক, পকেটে টাকা না থাকায় সেদিন বুকের ভেতর একটা চাপা উত্তেজনা নিয়ে বাসায় ফিরে এলাম। পরদিন সকালে বাবা অফিসে যাওয়ার পর আমরা দুই ভাই টাকা নিয়ে যথারীতি হাজির হলাম গেইমসের দোকানে। যারা মোটামুটি খেলা পারে, তাদের কাছ থেকে টুকটাক কিছু কৌশল শিখে নিয়ে আমরা দুজন খেলা শুরু করে দিলাম। আর এভাবেই শুরু হলো আমাদের গেইমস খেলার যাত্রা। ভালো খেলার সুবাদে কিছুদিনের মধ্যেই আমরা দুই ভাই গেইমসের দোকানের পরিচিত মুখ হয়ে উঠলাম। গেইমসের নেশা আমাদের উপড় অশরীরির মতো ভড় করে বসল। হাতে টাকা পেলেই আমরা চলে যেতাম গেইমসের দোকানে।
যথারীতি একদিন পড়ার টেবিলে বসে বই নাড়াচাড়া করছি আর অপেক্ষায় আছি বাবা কখন অফিসে যায়। বাবা অফিসে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা দুই ভাই গেইমসের দোকানে হাজির। সকালবেলা হওয়ায় দোকানে লোক তেমন একটা ছিল না। তাই দেরি না করে আমরা খেলা শুরু করে দিলাম। খেলায় টানটান উত্তেজনা। ৩ কি ৪ নম্বর ‘বস’, মানে ভিলেনকে প্রায় কুপোকাত করে ফেলেছি। এমন সময় মনে হলো, কেউ আমার পেছনের চুল ধরে টানছে। খেলায় এত ব্যস্ত ছিলাম যে তাকিয়ে দেখার সময় নেই। আমরা আমাদের মতো খেলেই যাচ্ছি। যখন চুল টানার মাত্রা বেড়ে গেল, চিৎকার দিয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি বাবা দাঁড়িয়ে। তারপর কী হয়েছিল, সেটা আর নাই-বা বললাম।
লেখাটি ২০১৪ তে প্রথম আলোর ছুটির দিনে ছাপা হয়েছিল, আজ আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম।
ছবিঃ প্রথম আলো
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:৩৩