আমার মা তখন শয্যাশায়ী। অনেকদিন হয়েগেছে বিছানার সাথেই তার রাতদিন যাপন। রান্না থেকে শুরু করে বাসার সমস্ত কাজের দায়িত্ব থেকে অসুখ পোকা তাকে মুক্তি দিয়েছে।
বিছানায় তার দিনের পর দিন যাচ্ছে। অন্যদিকে অসুখ পোকা তীক্ষ্ণ দাঁতে কুট কুট করে খেয়ে নিচ্ছে তার শরীর।
মায়ের সুস্থতার প্রতীক্ষায় আমরা দিনের পর দিন গুনে যাচ্ছি। কিন্তু মা আর সুস্থ হচ্ছেন না! আমরা খুব আশা করে আছি কতদিন মায়ের হাতের রান্না খাইনা। মা সুস্থ হয়ে গেলেই আবার মায়ের হাতের রান্না খাব, বকা খাব,হৈ-হুল্লোড় করব,রাত জাগব, অহেতুক কথা বলব,হাসাহাসি করব। কিন্তু আমাদের আর কিছুই করা হয়নি। আমার মা আর রান্না করতে পারেন নি।শেষ কবে তিনি আমাদের ঠিক কি রেঁধে খাইয়েছিলেন আজ আর সেটাও মনে পড়েনা!
মা খুব রান্না করতে ভালোবাসতেন। যখন যা মাথায় আসতো রাত দুপুরের তোয়াক্কা না করেই রান্না করতে বসে যেতেন। তারপর খাবারের বাটি নিয়ে আমাদের পিছনে ঘুরে ঘুরে আমদের খাওয়ানোর পর্ব শেষ করে তবেই না শান্তি পেতেন। জগতের প্রত্যেকটা মায়েরই রান্নার আলাদা ধরণ , আলাদা স্বাদ এবং গন্ধ থাকে। আমার মায়ের রান্নাতেও এর ব্যতিক্রম কিছু ছিলোনা।আমি আমার মায়ের হাতের রান্নার রঙ দেখেই বলে দিতে পারতাম এটা আমার মায়ের হাতের রান্না। আমরা ভাইয়েরা খাবার খাওয়া নিয়ে অতিরক্ত ঝামেলা করতাম।খাবার খাওয়াটা আমাদের নিয়ম মেনে কাজ করার মতো মনে হতো, তাই অনীহা দেখাতাম খুব। যাও টুকটাক পাখির মতো খেতাম(আব্বা বলতেন পাখির মতো খুটে খাই আমরা) তাও অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো মাকে। যেমন ডিম রান্না করতে গেলে তিন পদ করতে হতো। কারো ভুনা পছন্দ, কারো ঝোল কারো বা আবার ভাজি। অন্যান্য রান্নার ক্ষেত্রেও সেইম কাজই তিনি করতেন। তার শুধু একটাই চাওয়া ছিলো তবুও যেনো বাচ্চারা খাবার খায়। বাচ্চাদের খাওয়াতেই তার চোখেমুখে তৃপ্তির রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠতো।কতগুলো বছর হয়েগেছে তৃপ্তি করে খাবার খাইনা! বাকি দিন গুলোও এভেবেই কেটে যাবে অতৃপ্তির বেড়াজালে...
প্রবাদে একটা কথা আছে, পৃথিবীতে যার মা-বাবা আছেন সে কখনো গরীব হতে পারেনা। সেইসব ধনী লোকদের বলছি, আপনাদের ধনসম্পদ গুলোকে বুক দিয়ে আগলে রাখুন যাতে করে অসময়ে দরিদ্র না হয়ে যান।
ছবিঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:৫৬