somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শাওন আহমাদ
স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ

৩০ শে জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঝুম বৃষ্টি, টিনের চালে বৃষ্টির মহনীয় শব্দ, জানালার গ্রিল ধরে কিংবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপলক বৃষ্টি দেখা, ভরা বর্ষায় নদী-খালবিল পানিতে থৈথৈ, নদীর বুকে পালতোলা নৌকা এসব ভাবলেই আমরা অধিকমাত্রায় রোমান্টিক হয়ে যাই। কবি-লেখকরাও তাই হতেন হয়তো; আর তাইতো তারা ভরা বর্ষা আর বৃষ্টিতে মুগ্ধ হয়ে, অগণিত গল্প-কবিতা রচনাও করেছেন।

পৃথিবীতে এমন লোকের সংখ্যা খুবই কম যারা বৃষ্টি পছন্দ পছন্দ করেন না। আমি নিজেও বৃষ্টিতে আসক্ত। স্কুল-কলেজে থাকতে বৃষ্টি হলে অনেক ভিজতাম, কারণে-অকারণে ভিজতাম, সময়ে-অসময়ে ভিজতাম। এমন অনেক হয়েছে, বৃষ্টিতে বাড়ি ফেরার গাড়ি অথবা দাঁড়িয়ে থাকার জায়গা থাকা সত্বেও আমি ব্যাগ কাঁধে এবং চটি যুগল হাতে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ি ফিরতাম। চায়ের দোকান, শপিং কমপ্লেক্স কিংবা যানবাহনে থাকা উৎসুক জনতারা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ভেবে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতো; অবশ্য সেই সময় আমাকে নিয়ে কে কি ভাবছে তা নিয়ে ভাবার ফুরসত আমার ছিলো না। আমি তখন এক মনে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে আমার গন্তব্যের দিকে হাঁটতে থাকতাম। এসব নিয়ে কত যে আব্বা মা'র বকা খেয়েছি তার হিসেব নেই।

সময় টা ২০১৬ সালের জুন মাস, রোযার ঈদের পর আমাদের মা মারা গেলেন। জগতের সাধারণ নিয়মেই আমাদের পুরো পরিবার কালো মেঘের ন্যায় শোকের ছায়ায় আচ্ছাদিত হয়ে, দিনমান ঝরতে শুরু করলো শ্রাবণের ধারার মতো। আমাদের এভাবে ঝরতে দেখে, আমাদের সাথে দুঃখের শামিল হয়ে ঝরতে শুরু করলো আকাশ। দিনমান ঝরছে তো ঝরছেই থামবার কোন নাম-গন্ধ নেই। বৃষ্টিতে ঘরবন্দী মানুষ মুখরোচক খাবারের উৎসবে মেতো উঠলো। কারো বাড়িতে গরুর মাংস কষা আর ভুনাখিচুড়ি তো কারো বাড়িতে ধোঁয়া উঠা সাদা ভাতের সাথে গরম গরম ইলিশ ও বেগুন ভাজা; আবার হয়তো কোনো দিনমুজুরের বাড়িতে শাক-লতাপার অভাবেই চুলায়ই জ্বলেনি।

এভাবে কয়েকদিন চলার পরে, সকলে যারপরনাই বিরক্ত হয়ে বৃষ্টি কে উপেক্ষা করেই বেড়িয়ে পরলেন যে যার কাজে; এদিকে বৃষ্টি আর বানের পানি মিলে নদীর দুকূল ছাপিয়ে শুরু হলো বন্য। নতুন পানির আগমনে পাড়ায় মাছ ধরার ধুম পড়ে গেলো। একদিকে যখন বৃষ্টিবন্দী ঝিমিয়ে যাওয়া মানুষ গুলো মাছ ধরার নানা সরঞ্জাম নিয়ে এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করছিলো অন্যদিকে তখন নদী পাড়ার মানুষ গুলোর মুখে চিন্তার ভাঁজ। ঘর-বাড়ি ডুবে গেলে কোথায় গিয়ে উঠবেন! কিন্তু পানি কি আর এসব বুঝে? সে তারমতো ফুলে-ফেঁপে উঠতে থাকলো। যাদের টান পাড়ায় স্বজন আছেন তারা বাড়িঘর ছেড়ে সেখানে গিয়ে উঠলেন কিন্তু যাদের ঠাঁই দেবার কেউ নেই তাদের শেষ আশ্রয় হয় ইট দিয়ে উঁচু করা চৌকির উপড়।

আমাদের এক প্রতিবেশীর বাড়ি ছিলো নদীর কাছের নিচু জায়গায়। তারা আগে আমাদের বাড়ির কাছেই থাকতেন, ভাইয়েদের মধ্যে জায়গাজমি ভাগবাটোয়ারা হওয়ায় তারা নদী পাড়ায় জায়গা পেয়ে সেখানেই কোনমতে ঘর তুলে থাকতে শুরু করলেন। এর দুই-এক মাসের মধ্যেই আমাদের সেই প্রতিবেশী বোউ বাচ্চা রেখে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে অনন্তকালের জগতে পাড়ি জমালেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির এভাবে আচানক চলে যাওয়ায় তার বোউ ছোট ছোট তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে পড়ে গেলেন অথৈজলে। আমরা এবং আমাদের আশেপাশের প্রতিবেশীরা তাদের যথাযথ সাহায্য সহযোগিতা করতাম, সেই মহিলাও এ বাড়ি ও বাড়ি কাজ করে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করতেন।

সেই ভরা বর্ষায় মহিলার বাড়িতে বন্যার পানি উঠোন এবং উঠোন থেকে ঘরে উঠে গেলো। দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হবার উপক্রম তখনও তার শ্বশুরবাড়ির কেউ তাদের খবর নিতে আসেনি অথচ তার শ্বশুরবাড়ির অঢেল অবস্থা তারা মাসের পর মাস সেখানে থাকলেও তাদের থাকা-খাওয়ার অভাব হবেনা; কিন্তু পাষাণ মানুষ গুলো তাদের খবরই নিতে আসেনি।

এই কথা গুলো যখন আমাদের কানে আসলো তখন আমরা বাড়ির সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, মা যেহেতু নেই তাহলে ওরা এসে আমাদের মায়ের রুমে থাকুক। যেই ভাবা সেই কাজ, আমরা সবাই মিলে তাদের বাড়ি গিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ও তাদের সঙ্গে করে আমাদের বাড়িতে নিয়ে এলাম। মহিলার চোখে তখন আনন্দ অশ্রু, বাচ্চা গুলোর চোখ থেকে ভয় উবে গেছে ততক্ষণে। তারা আমাদের মায়ের রুমে থাকতে শুরু করলেন। আমাদের একসঙ্গে রান্না হতো আমরা একসঙ্গে বসে খেতাম, গল্প করতাম। তারা আসার পর ধীর ধীরে মাতৃবিয়োগের শোক কাটিয়ে উঠে আমরা স্বাভাবিক জীবনের পথে হাঁটতে শুরু করলাম।

অনেক গুলো বছর হয়েগেছে আমারা সেই দিনগুলো ফেলে এসেছি, মহিলার দিন বদলেছে কিন্তু সেই মহিলা আজও তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে সেই দিনগুলো মনে করেন।

ছবিঃ গুগল
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০২৩ দুপুর ১:৫২
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড্রাকুলা

লিখেছেন সুদীপ কুমার, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২

কোন একদিন তাদের মুখোশ খুলে যায়
বেরিয়ে আসে দানবীয় কপোট মুখায়ব।

অতীতে তারা ছিল আমাদের স্বপ্ন পুরুষ
তাদের দেশ ছিল স্বপ্নের দেশ।
তাদেরকে দেখলেই আমরা ভক্তিতে নুয়ে পড়তাম
ঠিক যেন তাদের চাকর,
অবশ্য আমাদের মেরুদন্ড তখনও... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×