somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাইকেল কথন

২৬ শে জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব ছোট্টবেলায় একবার হঠাৎ আমার সাইকেল কেনার ইচ্ছা হলো। আমি গিয়ে আমার বাবাকে বললাম, আমাকে একটা সাইকেল কিনে দিতে হবে। আমি তখন কেবলমাত্র স্কুলে ভর্তি হয়েছি। মোটামুটি গ্রামের স্কুল। অবশ্য খুব বেশি দূর না আমার বাসা থেকে। আমার বাবা আমাকে বলে, সাইকেল দিয়ে কি করবো? আমি বললাম, স্কুলে যাব। আমার বাবা বলে, স্কুল তো এখান থেকে দেখা যায়। আমি তারপরও নাছোড় বান্দা, সাইকেল আমার চাই ই চাই। আমার বাবা আবার আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমি সাইকেল চালাতে পারি কিনা? আমি বললাম, সাইকেল না থাকলে সাইকেল চালানো শিখবো কিভাবে?

অতপরঃ বাবা আমাকে একটা ছোট সাইকেল কিনে দিলো। ছোট সাইকেল, কিন্তু আমার সাইজ হিসেবে ঠিকই আছে। পেছনের চাকার সাথে দুইটা এক্সট্রা ছোট ছোট চাকা, সেটার জন্য সাইকেল মাটিতে পড়ে না, দাড়িয়ে থাকে। এই সাইকেল নিয়ে আমি প্রতিদিন বিকেল বেলা বাসার পাশেই একটা পাকা মাঠে যাই। সাইকেল চালাই।

ক্লাস ফাইভ থেকে সিক্সে উঠার পর আমার স্কুল চেন্জ হয়ে গেল। এখনকার স্কুল আগেরটা থেকে দূরে। আমি ছোট সাইকেল নিয়ে স্কুলে গেলাম। স্কুলে গিয়ে দেখি আর সবার সাইকেল বড়, খালি আমারটা ছোট আর অনেক পুরানো। ছোট সাইকেল চালাতে আমার আর ইচ্ছা করে না। ইচ্ছা করে অন্য সবার মত বড় সাইকেল চালাই। কিন্তু সেই ছোট সাইকেল থাকার কারনে আমাকে তো আর নতুন করে সাইকেল কিনে দেওয়া হবে না। এখন কি করা যায়। আমার একটা নতুন বন্ধু হয়েছিল নতুন স্কুলে, তার সাথে আমি যাওয়া আসা করতাম। সে আমাকে বললো, তোর সাইকেল বেইচা দে। তারপর বাসায় গিয়া বলবি - সাইকেল হারাইয়া গেছে। বুদ্ধি আমার মনে ধরলো, বললাম, সাইকেল বেইচা দিমু। আমাদের বাসার পাশে একটা সাইকেল এর দোকান ছিল। আমি সেই দোকানে সাইকেল ঠিক করতাম মাঝে মাঝে। সেই দোকানে আমি বললাম, সাইকেল বেচতে চাই, কিনবো কিনা? দোকানদার আমাকে বলে, তোমার সাইকেল কে কিনবো, কটকটি ওয়ালা আসলে সাইকেল বেইচা কটকটি খাইয়ো।

আমিও চিন্তা করে দেখলাম, সাইকেল বেচা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। পরে যদি আরেকটা সাইকেল না কিনে দেয়। আমি সাইকেল এর একটা চাকার টিউব খুলে সেই দোকানে রেখে দিলাম। বললাম, টিউবটা রাখ, আমি পরে নিয়া যাব। বাসায় যাওয়ার পর দুপুরে বাবার কাছে বললাম, আমার সাইকেল এর টিউব নষ্ট হয়ে গেছে, দুইদিন পরপর নষ্ট হয়। এই সাইজের টিউব নাকি পাওয়া যায় না, দোকানে বলছে। তাই আমাকে নতুন সাইকেল কিনে দেওয়া হোক... ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার বাবা বললো - আচ্ছা দেখি কি করা যায়। দুইদিন পর আমাকে নতুন সাইকেল কিনে দিল - ফনিক্স সাইকেল। তখন বাজারে দুই জাতের সাইকেল পাওয়া যেত - ফনিক্স আর হিরো। ফনিক্সটা আরেকটার থেকে ভালো। আমার বাবা সাইকেল কিনে নিয়ে আসছে রাতের বেলা... সারারাত আমার ঘুম নাই। সকালে উঠে সাইকেল চালাতে যাব। বড় সাইকেল। সকালে কোন রকমে খাওয়া শেষ করে আমি বাইর হইতেছি, এমন সময় আমার মা বলে, পড়ালেখা বাদ দিয়া কোথায় যাও। আমি বললাম, পড়ালেখা বাদ মানে, আমি স্কুলে যাই। এই বলে আমি হাওয়া, আমার মা পিছন থেকে চিল্লাইয়া কি জানি বলতেছে। স্কুলে আইসা দেখি, স্কুল বন্ধ। আমার তো মাথাই নষ্ট। পরে মনে হইলো, আজকে তো শুক্রবার।

এখন বাসায় যাওয়া যাইবো না। গেলে মাইর খাওয়ার চান্স আছে। কি করা যায় ভাবতেছি। তারপর ভাবলাম, বাবার অফিসে চলে যাই। আমার বাবা তখন শুক্রবারেও অফিস করতো (এখনও মাঝে মাঝে করে)। আমি গিয়ে দেখি সত্যি সত্যি সে অফিসে কাজ করতেছে। আমি বললাম, আমারে বাসায় দিয়া আস। আমার বাবা একটু পর আমাকে বাসায় নিয়া আসলো। আমার মাকে এটা সেটা বুঝাইয়া ঠান্ডা করা হইলো। আমিও মাইর এর হাত খেকে বাচলাম।

সেইদিন বিকালে আবার সাইকেল নিয়া বের হইছি। এইবার ঘুরতে। বিভিন্ন যায়গায়, মাঠে ঘাটে সাইকেল চালাইতে চালাইতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। আমি বাসায় ফেরত আসবো। এর মাঝে মাগরিবের আযান। আমি তখন নামাজ পড়তাম নিয়মিত। সাইকেল রেখে ভালো করে তালা দিয়ে, মসজিদে গেছি নামাজ পড়ার জন্য। নামাজ এর পরে দেখি সাইকেল নাই। আমার তো মাথা খারাপ অবস্থা। অনেকক্ষণ এদিক সেদিক খুজাখুজি করলাম। চোরতো আর আমার জন্য সাইকেল রাইখা যায় নাই। এদিকে, বাসায় যাওয়া যাইবো না। মাইর এর ভয়, সকালে তো বাইচা গেছি। এখন আর বাচন নাই। আমি বাসার সামনে গিয়া অন্ধকারে লুকাইয়া আছি। একটু পরপর বাসার ভেতর থেকে কথাবার্তা শুনি। বিভিন্নজন আমারে খুজতে বের হইছে। আমি আবার আমার বাবার অফিসে গেলাম, জানালা দিয়া তাকাইয়া দেখি বাবা নাই। আমি মনে মনে চিন্তা করতে লাগলাম কি করা যায়। বাবারে খুইজা বাইর করতে হবে, নইলে কোনভাবেই বাসায় যাওয়া যাবে না।

আমার বাসায় আমার একটা লুকানোর জায়গা ছিল, সেটাতে ঢুকলে আমাকে কেউ দেখতো পেত না, কিন্তু অন্যদের দেখার জন্য আমি একটা ফুটা করে রাখছিলাম। আমি সেখানে লুকাইয়া আছি, আমার মাথায় চিন্তা, বাবা আসবো কখন। একবারও মনে হয় নাই, সে আমাকে খুজতে যাইতে পারে। এইভাবে বসে থাকতে থাকতে আমি একসময় ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি আমারে লাঠি দিয়া কে জানি খুচাইতেছে, আর ফুটা দিয়া চাইয়া দেখি আমার আম্মা হাতে মস্ত একটা বেত নিয়া নিচে দাড়াইয়া আছে।
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×