somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে কারণে শিবির কর্মী...

০৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৯২/৯৩ সাল। জয়পাড়া পাইলট হাইস্কুলে পড়ছি। গ্রাম দেশে ভালো ছাত্র হতে পারার সুবিধা অনেক। আর যদি স্বভাব কিছুটা নম্র হয় তবে অবলিলায় ভালো ছেলে খেতাবটিও জুটে যায়। সৌভাগ্যবশত দুটোই আমার ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে পড়বার কারণে ধর্মভীরুর সুনামটাও জুটেছিল। কিন্তু কোত্থেকে আমার চেয়েও বেশি ভালো এক ছেলের আমদানি হোল জয়পাড়া কাজী বাড়িতে।

নাম মামুন। মামুনের একটা সাইকেল রয়েছে। তার মুখ থেকেই জেনেছি সাইকেলটি তার নিজের কেনা নয়, পার্টির কাজের জন্য তাকে ওই সাইকেলটি দেয়া হয়েছে। ফজর নামাজ শেষে আমি যখন পড়তে বসি তখন সেই মামুন ভাই সাইকেল নিয়ে বের হয়। কোথায় কোথায় যায় আর আমাদের বয়সী ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করার আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। কিশোর কন্ঠ বিক্রি করে টাকা না দিলেও দিয়ে যায় (ফুলকুঁড়ি, হিল্লোল, কিশোর কলম, জুভিনাইল ভয়েস... পরে এসব ভার্সানও দেখেছি) ওই পত্রিকার জন্য লেখা দিতে বলে। বাসায় আসে...দেখা হলে মিষ্টি হাসি আর প্রশংসায় মাতিয়ে তোলে আমাদের। সেই মামুন ভাই জায়গির থাকতেন আবুল কাজীর বাসায়। আবুল কাজী জামায়াতের সমর্থক। তার ভাগ্নে আমার জীবনের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আমরা অনেক অনেক রাত একঘরে শুয়ে বসে রাত জেগে গান শুনে কাটিয়ে দিয়েছি। আমাদের ছিল ট্রাঙ্ক ভর্তি বিভিন্ন ব্যান্ডের ক্যাসেট। সেই মামুন ভাইয়ের থাকার জায়গা হোল তার ঘরেই। আমাদের সেই সুখের আড্ডায় ছেদ পড়তে থাকলো। ওই বন্ধূর একটি খালা ছিল। যার অকৃত্রিম আদর এখনো ভুলতে পারিনি। কতদিন মুখে তুলে খাইয়ে দিয়েছে তা মনে নেই। একদিন হঠাৎ দেখলাম ওই মামুন ভাই একটি মোটর সাইকেল চালাচ্ছে। পার্টির আনুগত্য তাকে একটি মোটরসাইকেলের মালিক বানিয়ে দিয়েছে। তার দাপটে আমাদের দুজনের সেই ঘরে রাত কাটানোর দিন কমতে থাকলো। দুর দুরান্ত থেকে নেতারা আসতেন ওই বাসায়। তখন আমাদের এমনভাবে অনুরোধ করা হোত যা ওই বয়সে আমাদের পক্ষে ফেলা কঠিন হয়ে যেত। যুক্তিতেও হারতে হোত।

একদিন জানলাম, ওই খালার সাথে রাতে গোপন অভিসারে গিয়ে মামুন ভাই ধরা পড়েছে। একদিন জানলাম ওই মামুন ভাই অবশেষে খালাকে বিয়ে করে নিয়ে গেছে। কোথায় আছে সেই খালা তার খবর আর পাইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে জানলাম সাংগঠনিকভাবে শিবির একটি করে গ্রাম বাছাই করে আর সেই গ্রামের মেয়েদের বিয়ে করে পার্টির কাজ করে। দেশে চলমান সহিংসতার প্রতিবেদন করতে গিয়ে একদিন দেখলাম ফকিরাপুলের কাছে ককটেল ফুটিয়ে দুর্বার একটি মিছিল এগিয়ে আসছে। পুলিশ টিয়ার শেল মারতে থাকলে একটি ছেলে পালাতে গিয়ে আমার গাড়ির সামনে উপুড় হয়ে পড়ে গেল। থরথর থরথর করে কাঁপছিল ছেলেটি। দাড়ি গোফের রেখা সদ্য গজিয়েছে। আমার ড্রাইভারের পা ধরে ফেললো সে। ড্রাইভার তাকে গাড়িতে তুলে নিলো। জিজ্ঞেস করলাম কিসে পড়ো তুমি। উত্তর দিলো এবার ক্লাস টেইনে। আমার ছেলেবেলার কথা মনে পড়লো। জিজ্ঞেস করলাম কিভাবে এখানে এলে? বাড়ি কোথায়? বললো...পঞ্চগড়...জানলাম, পার্টির কাজে তাকে ঢাকায় আসতে হয়েছে। ঢাকার অলিগলি খুব ভালো চেনা নাই তার। জানলাম, তার বড় ভাইকে পার্টি বিদেশে পাঠিয়েছে লেখাপড়া করতে। সংসার চলে পার্টির টাকায়। ফলে পার্টির সকল দায়িত্ব পালনের দায় কাধেঁ নিতে হয়েছে তাকে।

একদিন ভোরে আমার কাছে একটি কল এলো। আমার গ্রামের এক পরিচিত বড় ভাই, সে জানালো তার পাশের বাড়িতে একজন শিবির কর্মী রয়েছে। প্রতিদিন রাতে ১০/১২ জন লোক থাকতে আসে ওই শিবির কর্মীর বাসায়। সবাই ওই গ্রামের আগুন্তক। ঢাকার রাজপথে ১০/১২ জনের এক একটি দল নামে। তারা ককটেল ফোটায়...খুবই দুর্বল টাইপের ককটেল। এরপর পালিয়ে যাবার পথে অনেকেই ধরা খায়, আজ ছাদ থেকে পালিয়ে যাবার সময় এক কিশোর মাটিতে পড়ে থেতলে গেল। বিশ্ব রাজনীতির মারপ্যাচ বোঝার কতটুকো বয়সইবা তার হয়েছে? কিন্তু জীবন দিয়ে গেল পুরোটাই।। পারিবারিক আর ধর্মীয় মুল্যবোধের শিক্ষাটা পেয়েছে পরিবার থেকেই। হয়তো এটাকেই কাজে লাগাচ্ছে জামায়াত শিবিরের বুইড়া নীতি নির্ধারকরা।

জয়পাড়ার অনেক ছেলে পেলে চাকুরি পেয়েছে জামায়াতের রিয়েল এস্টেট ও ল্যান্ড ডেভেলপার কোম্পানিসহ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। তানসির গ্রুপতো গত কয়েক বছরে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। কিনে নিয়েছে শত শত বিঘা জমি। যাদের বড়কর্তা যখন শিবিরের কর্মী ছিল তখন তাকে দেখতাম সাইকেল চালাতো। এখন তার প্রতিষ্ঠানে যেসব আন্ডা বাচ্চা চাকুরি করেন তারা নিয়মিত গাড়ি হাঁকান। এতো যখন প্রসপেক্ট তখন শিবির না করলে আপনাকে বেয়াকুব বলতে পারে যে কেউ।


এখন কথা হোল তবে কি এই দেশ একদিন শিবিরে ছেঁয়ে যাবে? টাকার ব্যাবহারিক দিক বিবেচনায় বলা যায় ধর্মের সাথে টাকার একটা সুক্ষ্ণ দ্বন্ধ আছে। যেকারনে যারা জায়ামাতে যোগ দিয়ে টাকার মালিক বনে যাচ্ছে তাদের ধর্ম বিশ্বাসও দিন দিন দূর্বল হবে এটাও অস্বাভাবিক নয়। বাংলাদেশে যারা চাকুরীজীবী তাদের সময় এম্নিতেই খুব কম তার ওপর আবার আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলির মুখে নামা। মোদ্দা কথা হোল, দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে ধর্ম যতটা প্রভাব বিস্তার করে ধনীক শ্রেনীতে তার সিকিভাগও নেই। আর্থিক সঙ্গতির অভাবে দরিদ্র মানুষের উচ্চ শিক্ষার সুযোগও কম। তাই মাদ্রাসা-ই তাদের ভরসা। অনেক পরিবার আছে যারা তাদের একটি সন্তানকে কোরআন হাফেজ করতে চান কারণ ওই হাফেজ সন্তান নিজে বেহেশতবাসী হবার পাশাপাশি পরিবারের ১২ জন সদস্যকে বেহেশতের জন্য রেফার করতে পারবেন। তাই পাঠিয়ে দেন মাদ্রাসায়। সমাজের সেই দরিদ্র মানুষদেরকে হয়তো খুব দ্রুত ধর্মের কথা বলে, অলৌকিকতার (চাদেঁ সাঈদীর মুখ) কথা বলে দলে টানতে পারবে কিন্তু দিনের শেষে ফাঁদ ঠিকই চিনে নেবে তারা। জামায়াতের নেতারাও যে নিজের সন্তানকে কখনোই মাদ্রাসায় পড়াননা তা সকলেই জানবে। আর ১৯৪৭ সালে যে ধর্মের দোহায় দিয়ে ভারত পাকিস্তানকে (হাজার হাজার মাইল দুরে পূর্ব পাকিস্তানকে রাখা হয়েছিল পাকিস্তানের পক্ষে) আলাদা করা হয়েছিল তা কিন্তু টিকে নাই, ভেঙ্গে গেছে। মাত্র দুই যুগের ব্যবধানে সেই ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তিতে গড়া রাজনীতির ফাঁকি ধরা খেয়ে গেছে। জামায়াত বলে ভারতের চালে দুই ভাই ( পূর্ব আর পশ্চিম) আলাদা হয়ে গেছে। ১৯৭১ সালে এই জামায়াত দলীয়ভাবে তখন পাকিস্তানী হানাদারদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই দেশের মানুষ হত্যা করেছিল। বাঙ্গালী মেয়েদের তুলে দিয়েছিল পাকিস্তানী সৈন্যদের ভোগের জন্য। দলীয়ভাবেই ঘোষণা দিয়ে বিরোধীতা করেছিল স্বাধীনতা যুদ্ধের। শেষরক্ষা হয়নি। আমরা পেয়েছিলাম লাল সবুজের পতাকা।

আমাদের এই জেনারেশন অনেক উদার। পাকিস্তানকে শত্রু নয় বরং একটি স্বাধীন দেশ হিসেবেই মূল্যায়ন করে এখনো। ক্রিকেট বিশ্বকাপে অনেক বাঙ্গালী পাকিস্তানের সাপোর্টার হয়ে পতাকা ওড়ায়। কিন্তু বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলার সময় ওই পাকিস্তানী সমর্থকও কিন্তু দেশের পক্ষ নিয়ে নেয়। ২০১৩ সালে যারা ১৯৭১ সালের সেই যুদ্ধাপরাধী সংগঠনের পক্ষ নিয়ে রাজপথে নেমেছেন সুতোয় যখন টান পড়ে যাবে তখন আর তাদের পক্ষে থাকবেন বলে মনে হয়না। আর যারা চাকুরী করেন অর্থাৎ অর্থ খান জামায়াতের, উপায় থাকলে দলীয় ওই ঘোষণাও উপেক্ষা করতে তাদের খুব বেশি দেরি হবেনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৫২
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×