somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার মায়ের কান্নাসমগ্র...

০৮ ই মে, ২০১১ দুপুর ১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এইচ.এস.সি.'র টেস্টে ম্যাথ এ ফেল করেছিলাম [ক্যালকুলাস-বলবিদ্যা নামক জিনিসগুলোর সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল টেস্টের পর ;) ]- আরো অনেকের মতো আমার Guardian এরো ডাক পড়েছিল কলেজে----আম্মু স্যারদের রুমে ঢুকেই আর সামলাতে নাপেরে কেঁদেই দিলো এ বলে- ছেলের ছোটবেলা থেকে সঙ্গে আসছি শুধুমাত্র প্রাইজ নেবার জন্য আর আজকে আমাকে আসতে হলো এই কারণে....:( আম্মুর সেই ম্যারাথন কান্না চট্টগ্রাম কলেজ থেকে বাসায় আসার পথে রিকশাতেও পুরোদমে চলছিল~~~ আর আমি হয়তোবা নির্ল্লজ্জের মতো আম্মুর ছেলেমানুষী কান্না দেখে মনে মনে হাসছিলাম!

আম্মুর সেই কান্না আমার জন্য কোন সুফল বয়ে আনতে পারেনি- হয়তোবা দুবছরের চরম ফাঁকিবাজী মাত্র তিন মাসের পড়াশোনা দিয়ে পুষিয়ে দেবার মতো মেধাবী আমি কখনোই ছিলামনা~~~ সে যাই হোক কাছের বন্ধুবান্ধবরা যখন বুয়েট কিংবা IUTতে ভর্তি হয়ে চট্টগ্রাম ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল আমি তখন চবি'তে বিবিএ ভর্তিপরীক্ষা দিতে যাই।ভর্তিপরীক্ষা দিয়ে এসে আপুর কাছে শুনি আমি যাবার পর নাকি আব্বু হঠাৎ রান্নাঘরে গিয়ে দেখে আম্মু সবজী কাটছে আর চোখ দিয়ে ক্রমাগত পানি পড়ছে:(( । কারণ জিজ্ঞেস করতেই যা বললো তার সারমর্ম হলো, সবার ছেলেরা ভালো ভালো জায়গায় ভর্তি হয়ে গিয়েছে-তার ছেলের কি হবে/:)

চবি'র বিবিএতে ভর্তি হয়ে সাময়িক উদ্ধার পাবার কদিন পরই জাবি'র বিবিএতে হয়ে গেলে আমিও বাবা-মা'র সাথে থাকা অতি আরামের জীবন ত্যাগ করে ঢাকা চলে আসার সিদ্ধান্ত নেই...

ঢাকায় আমার সঙ্গে এসে সবকিছু গুছিয়ে দিয়ে আমাকে রেখে যাবার সময় আবার সেই ম্যারাথন কান্না যার কারণে হয়তোবা খোদাহাফেযটুকুও বলতে পারেনি...এবার বোনাস হিসেবে বাসে আপুর কান্নাও সঙ্গে ছিল।

জাবিতে ভর্তি হবার পর চান্স পেলেই চট্টগ্রাম ছুটতাম এবং প্রতিবারই বাস ছাড়ার সময় মা-জননী'র নিঃশব্দ অশ্রুধারা বাসভর্তি যাত্রীদের সামনে আমাকে যথেস্ট বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলতো, যদিও অদ্ভুত হলেও সত্য আমি এ বিব্রতকর সময়টুকুর জন্য প্রতিবার অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম:|

ভার্সিটি লাইফে একবার আমাকে ল্যাবএইডে ভর্তি হতে হয়েছিল-খবর পেয়ে আম্মু তখনই চিটাগাং থেকে রওনা দেবার পর রাতে আমার কেবিনে এসেই প্রথম যে কাজটি করেছিল তা বলাই বাহুল্য-আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটিB-) এম্‌নিতেই সকাল থেকে বন্ধুবান্ধবদের ভালোবাসা প্লাস ফ্রুট আর জুসের মধুর যন্ত্রণায় যে উপলব্ধি হচ্ছিল, আম্মুর কান্নার কারণে সে উপলব্ধি আরো জোড়ালো হলো, মাঝে মাঝে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া পৃথিবীর সুন্দর বিষয়গুলোর একটি;)


এরপর সময় ও নদীর স্রোত যথারীতি কারো জন্য অপেক্ষা না করে বয়ে চললো আর আমিও আল্লাহ্‌র রহমতে পাশ করার পূর্বেই চাকরী পেয়ে দীর্ঘদিনের প্রেমিকা ও সহপাঠিনীকে বিয়ে করার প্রস্তুতি নিতে থাকলামB-)

বিয়ের পূর্বে আব্বু-আম্মুকে চট্টগ্রাম থেকে উড়িয়ে এনে নতুন সংসারের জন্য প্রজেক্ট "বালতি টু পর্দা"র সফল বাস্তবায়ন করলাম-আব্বু কাজের জন্য দুদিন পরই চলে গেলেও আম্মু সবকিছু গুছিয়ে দেবার জন্য রয়ে গেল কিছুদিন। মা-ছেলের ছোট্ট সংসারে অদ্ভুত আনন্দে দশটা দিন বেশ ভালোভাবেই চোখের নিমিষে কেটে গেল--আমার অফিসের কারণে আম্মুকে একা একাই বাসে তুলে দিলাম---যথারীতি বাস ছাড়ার সময় আম্মুর ফুঁপিয়ে কান্না শুরু হলো--তখন আম্মুকে কান্নকাটির জন্য বকা দিলেও বাসায় আসার পর খালি বাসা দেখে আমারো মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল /:)

বিয়ের পর চিটাগাংয়ে বৌভাত শেষে প্রথমবারের মতো একমাত্র ছেলে আর ছেলের বৌকে বিদায় দিতে এসেও আম্মু বাস কাউন্টারে তার পূর্বের কান্নার ধারবাহিকতা বজায় রাখলো:((। আম্মুর কান্না দেখে পেছনের সীটের মহিলা ভাবলেন মা বুঝি তার একমাত্র মেয়ে আর মেয়েজামাইকে বিদায় দিতে এসেছেন----ছেলে আর ছেলের বৌকে বিদায় দিতে এসেছে বলায় মহিলা এমন অদ্ভুতভাবে তাকালেন যেন মেয়ে আর মেয়েজামাই এর জন্য কান্না আর ছেলে আর ছেলের বৌ এর জন্য কান্নার মাঝে বিশাল পার্থক্য;)

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমার মা অনেক ফর্সা হবার কারণে যখন কাদেঁ তখন সারা মুখ অদ্ভুত লালচে হয়ে যায় আর আমার তখন আম্মুকে পৃথিবীর সবচে সুন্দর মা মনে হয়~~~~

আসলে মা মানে শুধু ভালোবাসা নয় মা মানে ভালোবাসার চেয়েও অনেক বেশী কিছু যাকে ভালোবাসার চেয়েও বেশী কিছু দিয়ে ভালোবাসতে হয়।
______________________________________________

*** যেসব পাঠকরা কষ্ট করে আমার পুরো লেখাটা পড়েই ফেলেছেন তাদের জন্য আমার মায়ের লেখা অদ্ভুত সুন্দর একটি গল্পের লিংক দিলাম। গল্পটি মৌচাকে ঢিল এর চৈতালী সংখ্যায় ছাপা হয়েছিলো-
Click This Link



সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১১ দুপুর ২:১২
৭টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×