somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বন্দী

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গোপাল গঞ্জ থানা চত্বর।শেখ মুজিবকে আজ আদালতে হাজির করা হবে।এর মধ্যেই নেতা কর্মী আর সাধারণ মানুষ সবাই ভিড় করে থানা কম্পাউন্ডে।অতিরিক্ত পুলিশ আনতে হয়েছে।এত ভিড় পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে সামলাতে।কর্মী আর সাধারণ মানুষ সবারই একটি ইচ্ছা,মুজিবকে তারা একনজর দেখবে।

মুজিবের বয়স তখন ৩২এর মত হবে।থানার ভেতর একটি কক্ষে বসে আছেন তিনি।পরনে ফুলহাতা শার্ট আর পায়জামা। হাসুকে হাতে ধরে আর কামালকে কোলে নিয়ে রেনু সেই ঘরে ঢুকেন।পুলিশ আর সাধারণ মানুষ তাদের এগিয়ে দেন।পিছনে পিছনে লম্বা ঘোমটা দিয়ে হাসুর দাদীও ঢুকলেন সেই ঘরে।সাথে ঢুকলেন হাসুর দাদা।হাতে দুইটা সল্টেস বিস্কুটের প্যাকেট।মুজিব যখন গোপালগঞ্জের মিশনারি স্কুলে পড়তো তখন সল্টেস বিস্কুট খুব পছন্দ করতো। তাই সাথে করে নিয়ে আসা। আসলে ছেলেমেয়েরা যতই বড় হোকনা কেনো বাবা মার কাছে তারা সবসময়ই ছোট থাকে।ছেলে মেয়েদের বড় হবার ব্যাপারটি যেন বাবা মারা বুঝতেই পারেননা।

রেনু বল্লেন,এইযে দেখ তোমার ছেলে কত বড় হয়ে গেছে।কত কথা বলে,নাও কোলে নাও। মুজিব ছোট্ট কামালকে কোলে নিয়ে তার ঘারে, গলায় চুমু খান।গালটা আদর করে টেনে দেন।ধরে আসা গলায় ছেলেকে বলেন,কেমন আছো বাবা?

ফুল তোলা ফ্রক পড়া ছোট্ট হাসু মায়ের আচল ধরে দাড়িয়ে ছিলো।থানার সামনে কত বড় মাঠ।মাঠের চারিপাশ কত বড় বড় গাছ।হাসু একটু অবাক হয়,তাদের বাড়ীর উঠানো অনেক বড়,সেখানেও বড় বড় গাছ আছে।তাদের গাছগুলো এই গাছগুলোর মত নিচে সাদা হয়না কেনো?

কতদিন পর বাবাকে দেখতে পেলো হাসু।কি বলবে সে যেন বুঝে উঠতে পারছেনা।হাসু একটু এগিয়ে এসে বাবাকে বল্লো - আব্বা,এখানকার গাছগুলোর নিচে সাদা কেনো?

মুজিব তখন হাসুর দিকে তাকান।আরে আমার হাসু মাও দেখি অনেক বড় হয়ে গেছে!
মুজিব অনেকদিন পর মেয়েকে দেখছেন।প্রায় দুই বছর।এর মধ্যেই যেন হাসুর বয়স ডাবল হয়ে গেছে।হাসু ফিক করে হেসে দিয়ে বল্লো,আব্বা আপনিওতো বড় হয়ে গেছেন।

মুজিব তার মাকে ডেকে বলেন,মা কাছে আসো।সায়রা খাতুন,মুজিবের মা।ঘুমটা ফেলে ছেলের কাছে আসেন।মুজিব তার মাকে জড়িয়ে ধরেন।ছেলেকে কাছে পেয়ে তার দুই চোখ জলে ভরে উঠে।মুখে কথা আটকে যায়।অস্ফুট কন্ঠে শুধু বলতে পারেন,খোকা আমার খোকা।তুই কেমন আছিস?তুই ভালো আছিস বাবা?

রেনু তখনো শক্ত আছে।তার চোখে জল নেই।মুজিবের সাথে তার চুক্তিই হয়েছে সেইরকম। মুজিব বলেছে,তুমি শুধু আমার কথা ভাববানা।তুমি সারা দেশের কথা ভাব্বা।অসহায় দুঃখী মানুষের কথা ভাব্বা।রেনু তাই চোখের জল ফেলে মুজিবকে তার ব্রত থেকে সরাবেননা।তিনি শক্ত হয়ে থাকেন।

মুজিব বলেন,রেনু তুমি কেমন আছো?
ভালো আছি আল্লাহর ইচ্ছায়।তোমার স্বাস্থ দেখি অনেক ভেঙ্গে গেছে।
মুজিব একটা কাশী দিয়ে হেসে বলেন,আরে নাহ একটু ঠান্ডা লেগেছে।মুজিব তার সত্য গোপন করেন স্ত্রীর কাছে।তার কাশিটা মারাত্বক।ব্রঙ্কাইটিস এর মত হয়েছে।শুকনো কাশির সাথে রক্তও পড়ছে ইদানিং।এইসব কথা এখন বলা যাবেনা, রেনু মন খারাপ করে ফেলবে।মা কান্নাকাটি করবেন।

হাসু আর কামাল থানার লাল বারান্দার মেঝেতে বসে খেলছে।তারা রান্নাবাটি খেলছে।নানান ধরনের ফুল-লতা পাতা,কলসির ভাঙ্গা টুকরো, ইটের গুড়া।হাসু বলে-যা কামাল তুই নদীতে ডুব দিয়ে আয়।ঐ সিঁড়িটা হলো নদী।ওইখানে গিয়া বল হাপুস।এক হাপুসে এক ডুব,দুই হাপুসে দুই ডুব।এইটা হইলো ভাত,এইটা হইলো মাছ।আর এইযে ইটের টুকরা এইটা হইলো গোস্ত।

অনেক্ষন খেলার পর হাসু বল্লো, চল কামাল আব্বাকে দেইখা আসি।
কামাল বলে হাসু আপা,তোমার আব্বাকে আমিও আব্বা বলে ডাকবো....
হাসু ছোট ভাইয়ের কথায় হেসে কুটি কুটি হয়।বলে,বোকা আমার আব্বাতো তোরও আব্বা।

মুজিব সবসময়ই জেলখানায়।দুই আড়াই বছরের কামাল তার আব্বাকে খুব কম সময়ই দেখেছে।আব্বা ডাকার সময়ইবা পেয়েছে কখন।তাই হাসু আপার আব্বাকে আব্বা ডাকতে তার খুব সঙ্কচ।হাসু ছোট ভাইয়ের কথা শুনে হাসতে হাসতে মরে।

তারা দৌড়ে যায় আব্বার কাছে।হাসু হাপাতে হাপাতে আব্বাকে বলে,জানো আব্বা কামাল কি বলে? কামাল বলে,হাসু আপা তোমার আব্বাকে আমিও আব্বা বলে ডাকবো।

মুজিব কামালকে ছো মেরে কোলে তুলে নেন।বলেন,কামাল আব্বা-তুমি আমারে দেখোনাই আব্বা।আমি বাড়ী আসিনা।আমিতো তোমারও আব্বা।

শেখমুজিবকে নুরুল আমিন সরকার কিছুতেই মুক্তি দেবেনা।এই লোক পাকিস্তানের জন্য খুবই বিপজ্জনক।তাই তাকে আবারো ছয় মাসের জেল দিয়ে ফরিদপুর হাজতে পাঠিয়ে দেয়া হল।সেখানে মুজিবের স্বাস্থের আরো অবনতি ঘটলো। মুজিবকে তখন নিয়ে আসা হলো ফরিদপুর থেকে ঢাকা কারাগারে।মরতে মুজিব ভয় পাননা।আল্লাহ যেদিন মরন লিখেছেন সেদিনই তার মরন হবে।কিন্তু তার ভয় হলো, তার অসমাপ্ত কাজ গুলো তখনো শেষ হয়নি।কাজ শেষ না করে তিনি মরতে পারেননা।এভাবেই দৃঢ় মনবল নিয়ে মুজিব তার আটক জীবনের মুহুর্তগুলো অতিক্রম করতে
থাকেন।

সময়টা ১৯৫০ এর দিকে।রাস্ট্র ভাষা বাংলার দাবীতে যখন সাধারণ ছাত্রদের মাঝে ক্ষোভ দানা বেধে উঠছিলো।১৯৪৮ সালে নুরুল আমিন বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার যে ওয়াদা করেছিলো তা বেমালুম ভুলে গেছে।শুধু তাই নয় নুরুল আমিন সরকার উর্দু দিয়ে বাংলা লেখার একটা অদ্ভুত নিয়মও চালু করার পায়তারা করছেন।বাংলা হইলো হিন্দু মালাউনগো ভাষা। নুরুল আমিনের পেয়ারা পাকিস্তানে মালাউনের বাচ্চাগো ভাষা চলতে পারেনা।উর্দুই হওয়া উচিৎ একটি মুসলমান রাষ্ট্রের রাষ্ট্র ভাষা। কিন্তু এই নাদান বাঙ্গালীরে কে বুঝাইবে এই কথা।নুরুল আমিনের তাই আজকাল সব কিছুতেই বিরক্ত ভাব ফুটে উঠে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×