আমার নানাবাড়ি যেতে হলে পদ্মা নদী পার হতে হয়। ঘাটে ফেরীর জন্য অপেক্ষা করতাম। ফেরী কিংবা ঘাট দুটাই ছিলো খুব মজার বিষয়। ঘাটের দোকান গুলোতে খাওয়া আবার ফেরী উঠে খাওয়া। কি মজা! ফেরীর দোকানে কেক গুলো খুব মজার ছিলো। আর চিনাবাদাম, ঝালমুড়ি তো আছেই। আব্বার হাত ধরে ফেরীতে ঘুরে বেড়াতাম। একসময় ভেড়ামারা ফেরী ঘাট থেকে ফেরী ছাড়তো, আমাদের গন্তব্য পাকশী ফেরী ঘাট। নদীর স্রোত ভেঙে এগিয়ে যেতো আমাদের ফেরীটি, আছড়ে পড়তো ঢেউ। আমি আব্বার হাত ধরে থাকতাম। এক সময় ফেরীটি হার্ডিঞ্জ ব্রীজের কাছাকাছি চলে আসতো। আব্বা বলতেন দেখো দেখো হার্ডিঞ্জ ব্রীজ... লাল ব্রীজটা যতবার দেখতাম ততোবার অবাক হতাম। আব্বা প্রতিবারই ব্রীজের ইতিহাস আর খুঁটিনাটি বলতেন। আমার মনে হতো, ইস্ এমন ব্রীজ আমি বানাতে পারতাম! ফেরী যখন ব্রীজের ঠিক নিচে চলে আসতো আব্বা আমাকে উঁচু করে ধরতেন, আমি ব্রীজের ছুঁতে হাত বাড়াতাম। কিন্তু ছুঁতে পারতাম না! ভাবতাম, যেদিন বড় হবো সেদিন ঠিক ছুঁয়ে ফেলবো!
সেসব পুরোনো কথা। এখন আর পদ্মা নদীতে ফেরী চলে না। কোন বাবা আর ছেলেকে উঁচু করে ধরেনা, ছেলেও হাত বাড়ায় না লাল ব্রীজটা ছোঁয়ার আশায়।
তাতে কি? আমাদের সেই লাল টকটকে ব্রীজটা মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, একশো বছর হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে!
তথ্য : নির্মাণকাল ১৯০৯-১৯১৫। জন্মঃ ৪-মার্চ-১৯১৫। হার্ডিঞ্জ ব্রিজ বাংলাদেশের পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার পাকশী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন একটি রেলসেতু। পদ্মা নদীর উপর অবস্থিত এই সেতুটি ভেড়ামারার সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ রেলসেতু হিসেবে পরিচিত।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:১০