ইদানীং এই শহরে চোখ কুঁচকানো মানুষের সংখ্যা
ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে , তিতিবিরক্ত মানুষগুলো লোকাল বাসের ভীড়ে
গায়ে গা ঠেকলেই ছ্যাৎ করে জ্বলে ওঠে।
জানালার পাশে সিট ফাঁকা থাকলেও
কেউ আর সরে বসতে চায়না , বরঞ্চ বসতে চাইলে
এমন ভাবে তাকায় - ' আর কি সিট ছিল না ?'
কবিদের এসব নিয়ে মাথা ব্যাথা নেই।
পা আর সিটের সামান্য জায়গা গলিয়ে বসে জানালার ঠিক পাশে ,
দুপা জড়ো করে , নির্বিষ নিরীহের মত।
তবে বড্ড বেশি অভিমান হলে , তাকায় -
জানালার বাইরে , রাস্তায় - ফুটপাতের ধার ধরে
অযত্নে ঝরে পড়া অকাল প্রয়াত অক্ষরমালা গুলোকে
একের পর এক সাজাতে থাকে পুনরায়।
নিমেষেই দৃশ্যপট বদলায় -
রাস্তার ধার ঘেঁষে সারি সারি তরুণীরা জলকেলিরত হয়,
কিন্নরী কণ্ঠে গেয়ে ওঠে , ছিটিয়ে দেয় শীতল পানি
আর ছড়িয়ে দেয় থোকা থোকা বকুল।
কবিদের রান্না ঘরে খুব একটা ভাত চড়ে না
শুকনো আধখানা রুটিতে চলে যায় দিব্যি
তবে যখন খুব খিদে পায় তখন , ঘোর লাগা চোখে -
পূর্ণিমার চাঁদটাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারে।
এই শহরে গাছ কাটা হলে কবিরা মন খারাপ করে খুব
পুকুর বোঁজালে বুক ভারী করে কষ্টে
কবিরা কিছু বলে না , শুধু প্রার্থনারত হয় কবিতায়।
এই শহরে বৃষ্টি এলে
আকাশ থেকে ঝরঝর করে পংক্তিমালা গুলো নেমে আসে
তখন কবিরা মুঠোবন্দি করে , ছড়িয়ে দেয় বিরাণভূমিতে
অনাবাদি ভূমি উর্বর থেকে উর্বরতা বাড়ায় আর
মাটির বুক ফুঁড়ে মাথা তোলে নিপীড়িত মানুষ।
ধু ধু বালুচরে রোপিত হয় স্বপ্ন , বিস্তৃতি বাড়ায় সবুজ ঘাসের গালিচা
আর বৃষ্টি কিংবা স্বপ্ন জমা থাকে পংক্তিমালায় ।
তবে এই শহরে একদিন কবিরা থাকবে না।
এই শহরে একদিন কিন্তু সত্যিই আর বৃষ্টি হবে না ।
গাছ কাটা শহরে শীতল বাতাস বইবে না , পানির স্তর নেমে যাবে
গভীর থেকে গভীরে।
একফোঁটা পানির জন্য হাহাকার হবে আর প্রলয় দেবে ডাক।
পুকুর বোঁজানো শপিং কমপ্লেক্সে ফাঁটল ধরবে
তাপের তীব্রতায় , কর্পোরেট আর বহুতল আবাস ভবন গুলো হেলে পড়বে একদিকে ।
কংক্রিটে নতুন চারার অংকুরোদগম
ঘটবে না কোন ভাবেই।
দু'হাত আকাশে তুলে প্রার্থনারত হবে মানুষ
কাঁদবে , অশ্রু ঝরাবে , বুভুক্ষের মত বুকে চাপড় মারবে
প্রচন্ড চিৎকারে মাতম তুলবে বাতাসে -
'' আমাকে জল দাও , আমাকে সিক্ত করো''।
এই শহরে একদিন সত্যিই আর কবিরা থাকবে না
থাকবে না স্বপ্ন , ছন্দ , কাব্য , কলা
জলাভাবে মরা কবিরা ছটফট করতে থাকবে
পুনর্জন্মের আশায় আর ভীষণ কবিতা বিদ্বেষীরা কবিতা
লিখতে বসবে একদিন।
কারণ কবিদের সমস্ত প্রার্থনা তো কবিতায় !
এই কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছে ব্লগ ডে উপলক্ষে প্রকাশিত ম্যাগাজিন '' বাঁধ ভাঙার আওয়াজ '' এ। সূচিপত্রে নিজের নাম খুঁজে পাওয়ার অনুভূতি অদ্ভুত ছিল , অচেনা ছিল। সামুর পরিবারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৫০