somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নববর্ষের রাশিয়ান শৈশব : ফার গাছ

০১ লা জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ছেলেরা ক্যালেন্ডার দেখলে ; কেবল শেষ পাতাটা বাকি।
তার মানে কাল নববর্ষ। কাল ফার গাছ সাজিয়ে উৎসব। তার সাজসজ্জা সবই তৈরী , কিন্তু গাছটি যে নেই। ছেলেমেয়েরা ঠিক করলে চিঠি পাঠাবে শীত দাদুর কাছে , বিজিবিজি বন থেকে ফার গাছ যেন পাতায় – সবচেয়ে ঝুমঝুমটি , সবচেয়ে সুন্দরটি।

“শীত দাদু, শীত দাদু,
নতুন বছরের জন্য
ফার গাছ পাঠিয়ো আমাদের জন্য
সাজাব গোছাব
আমরাই।
চিঠি তোমায় পৌঁছে দেবে এই বরফ পুতুলটি।’’

-- ছেলেমেয়েরা।



এই চিঠিটা লিখে ছেলেমেয়েরা আঙিনায় দৌড়ে গেল বরফ পুতুল বানাতে।

মিলেমিশে কাজ শুরু হয়ে গেল: কেউ বরফ
জোগাড় করে , কেউ গোলা পাকায়…
বরফ পুতুলের মাথায় পরানো হল পুরোনো বালতি ,
চোখ বানালে কয়লা দিয়ে , আর নাকের জায়গায় গুজে দিল লাল গাজর।
বেশ হল ডাক-হরকরা বরফ পুতুল।


চিঠি তাকে দিয়ে ছেলেমেয়েরা বললে:

‘বরফ পুতুল , বরফ পুতুল
ডাক-হরকরা গা তুল তুল ,
যা চলে যা গহন বনে
পত্রটা দিস যথাস্থানে।
শীত দাদুকে দিবি তারা,
বেছে দেবে ফারের চারা ,
সবুজ পাতার ঝালর ঘেরা,
বনের মধ্যে সবার সেরা।

ফার গাছটা আনিস বয়ে
ধন্যি দেবে ছেলেমেয়ে।’



সন্ধ্যে হলে, ঘরে চলে গেল ছেলেমেয়েরা। বরফ পুতুল মনে মনে ভাবে : কাজ তো চাপিয়ে গেল , কিন্তু যাই কোথায় ?
‘আমায় সঙ্গে নে , ’ হটাৎ বললে কুকুরছানা ববিক , ‘আমি রাস্তা দেখিয়ে দেব। '


‘ঠিক বলেছিস, দুয়ে মিলে যায় , ভয় ভাবনা নাই !’ খুশি হল বরফ পুতুল , ‘শত্রু তাড়াবি , পথ দেখাবে।'
বরফ পুতুল আর ববিক যায় যায় ,যেতে যেতে পৌঁছল এক মস্ত বড়ো গহীন বনে...



সামনে দেখে এক খরগোশ।
‘ বল তো , শীত দাদু থাকে কোথায় ?’ জিজ্ঞেস করলে বরফ পুতুল।
কিন্তু জবাব দেবার সময় কোথায় খরগোশের , পেছনে তার তাড়া করছে শেয়াল।


আর ববিকও 'ঘোঁৎঘোঁৎ' করে ছুটল খরগোশের পেছনে।
মন খারাপ হয়ে গেল বরফ পুতুলের।
‘দেখছি এবার একা একাই যেতে হবে। '


এমন সময় ফুঁসে উঠলো ঝড় , পাক দিয়ে ঝাপটা মারে কেবলি …
থরথরিয়ে কেঁপে উঠলো বরফ পুতুল.... সব বরফ তার খসে খসে পড়লো।
পড়ে রইল শুধু বালতিটা , চিঠিটা, আর গাজরটা।

শেয়াল ফিরে এল একেবারে রেগে কাঁই :
‘শিকারে আমায় বাধা দিয়েছিল কে ?’
দেখে কেউ নেই , শুধু বরফের ওপর পরে আছে চিঠিটা। চিঠিটা নিয়ে পালাল সে।


ফিরল ববিক :
‘কোথায় সে বরফ পুতুল?’
নেই সে।
এই সময় শেয়ালের সঙ্গে ধরল নেকড়ে।

‘কি নিয়ে চলেছিস রে ?’ গর্জন করলে নেকড়ে ,
‘ভাগ দে শিগগির!’
‘আমি পেয়েছি, আমার ! ভাগ নেই তোমার ,’ বলেই পালালো শেয়াল।
তার পেছনে নেকড়ে।
কী হচ্ছে দেখি বলে হাঁড়িচাঁচাও উড়ল পেছন পেছন।



ববিক কাঁদে , আর খরগোশরা বলে :
‘ ঠিকই হয়েছে তোর , কেন তারা করিস আমাদের , কেন ভয় দেখাস ?'

‘ভয় দেখাবেন , তাড়া করব না, ' বলে ববিক আরো জোরে কেঁদে উঠলো।

'কাঁদিস না , আমরা তোকে সাহায্য করব , বললে খরগোসরা।
‘ আর খরগোশদের সাহায্য করব আমরা , ‘ বললে কাঠবেড়ালীরা।


বরফ পুতুল তৈরি করতে লাগল খরগোসরা , কাঠবেড়ালীরা সাহায্য করে তাদের , ছোটো ছোটো থাবা দিয়ে থাবড়ায় , লেজ দিয়ে মুছে।
ফের তার মাথায় উঠল বালতি , চোখে জুটল কয়লা , আর নাকের জায়গায় গাজরটি।
‘ধন্যি তোরা , ‘ বললে বরফ পুতুল , ‘ আমায় ফের গড়ে তুললি , এবার শীত দাদুকে খুঁজে দে। '


তাকে তারা নিয়ে গেল ভালুকের কাছে। গুহার মধ্যে ঘুমিয়ে ছিল ভালুক , বহু কষ্টে জাগানো হল তাকে।
ছেলেরা তাকে শীত দাদুর কাছে চিঠি দিতে পাঠিয়েছে সে সব কথা তাকে বললে বরফ পুতুল।
‘চিঠি ?’ গর্জন করে উঠল ভালুক , ‘কোথায় চিঠি ?’
হাতড়িয়ে দেখে চিঠি নেই।

‘ চিঠি ছাড়া ফার গাছ দেবে না শীত দাদু , ‘ বললে ভালুক
‘ভালোয় ভালোয় বাড়ি ফিরে যাও , আমি বন পর্যন্ত পৌঁছে দেব। '
হঠাৎ কোথা থেকে যেন উড়ে এল হাঁড়িচাঁচা , কিচিরমিচির করে বলে :
‘এই নাও চিঠি !’
বললে কি করে সে চিঠি পেলে।



ব্যাপারটা হয়েছিল এই।




চিঠিটা নিয়ে সবাই গেল শীত দাদুর কাছে।
বরফ পুতুলের ভারি তাড়া , কখনো গড়িয়ে পড়ে ঢিবি থেকে কখনো উলটে পড়ে খানাখন্দে, কখনো হোঁচট খায় গাছের গুঁড়িতে।
ভাগ্যি ভালো ভালুক তাকে বাঁচায় , নয়তো ফের আবার গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যেত ।
শেষ পর্যন্ত পৌছলো শীত দাদুর কাছে।


চিঠি পরে শীতদাদু বলল :
‘এত দেরী হল যে ? সময়মতো ফার গাছ নিয়ে তো তুই পৌঁছতে পারবো না।


সবাই তখন বরফ পুতুলের পক্ষ নিলে , বললে কি হয়েছিল। শীত দাদু তখন তার নিজের স্লেজগাড়িটা দিয়ে দিলে তাকে , বরফ পুতুলও ফার গাছ নিয়ে ফিরে চলল ছেলেমেয়েদের কাছে।


ভালুকও ফিরল তার গুহায় --- বসন্ত পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকবে।


আর সকালবেলায় দেখা গেল একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে বরফ পুতুল। হাতে তার চিঠির বদলে ফার গাছ।

---------------------------------
শুভ নববর্ষ। খুব ছোটবেলায় আব্বা একদিন হলুদ খাম এনে দিয়েছিলেন। ফার গাছ চেয়ে শীত দাদুর কাছে চিঠিও লিখেছিলাম। কিন্তু চিঠি পৌঁছে দেয়ার জন্য আমার কোন ডাক-হরকরা বরফ পুতুল ছিল না। ছোটবেলায় ভাবতাম , কোনোদিন যদি সোভিয়েতের দেশে যাই তবে এমন একটা বরফ পুতুল বানাবো।
ছোটবেলার ভাবনায় ভালো ছিল।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৪৩
২০টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিছু হিন্দু অখন্ড ভারত চায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৮




মুসলিম অখন্ড ভারত শাসন করেছে তখন তারা ছিলো সংখ্যা লঘু। খ্রিস্টান অখন্ড ভারত শাসন করেছে, তারা তখন সংখ্যা লঘু মুসলিম থেকেও সংখ্যা লঘু ছিলো। তারপর মুসলিমদেরকে সাথে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। টাইম ম্যাগাজিনের আগামীর ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় বাংলাদেশের নাহিদ ইসলাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:১২




নাহিদের ভাষ্য, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মের পালস বুঝতে হবে। বাংলাদশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতার যে পালাক্রম– অবশ্যই তার অবসান হতে হবে। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’ ... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গল্প প্রকাশিত হবার পর নিষিদ্ধ হয়

লিখেছেন জাহিদ শাওন, ০৩ রা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:৫০


এক কাপ চা, শীতের সন্ধ্যায় বেশি ঝালের ভর্তায় মাখানো চিতই পিঠার অজুহাতে বুকপকেটে কতবার প্রেম নিয়ে তোমার কাছে গিয়েছিলাম সে গল্প কেউ জানে না।
আজকাল অবশ্য আক্ষেপ নেই।
যে গল্প... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধী চেষ্টা করেছিলেন বাংলাদেশের মিলিটারীকে ক্ষমতা থেকে দুরে রাখতে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৩:২৪



১৯৭১ সালের জেনারেশন'এর কাছে ইন্দিরা (১৯১৭ - ১৯৮৪ ) ছিলেন ১ জন বিশাল ব্যক্তিত্ব; যু্দ্ধ লেগে যাওয়ার পর, উনি বলেছিলেন যে, বাংগালীরা ভালো ও নীরিহ জাতি, তিনি এই জাতিকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন - পর্ব ৩

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৮:২৩

জুলাই ১৮: ছাত্রলীগের হামলা, সাধারণ শিক্ষার্থীদের হত্যা এবং ঢাবি প্রশাসনের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে ১৭ই জুলাই কমপ্লিট শাট ডাউন কর্সুচী ঘোষনা করে বৈষম্যিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×