ছেলেরা ক্যালেন্ডার দেখলে ; কেবল শেষ পাতাটা বাকি।
তার মানে কাল নববর্ষ। কাল ফার গাছ সাজিয়ে উৎসব। তার সাজসজ্জা সবই তৈরী , কিন্তু গাছটি যে নেই। ছেলেমেয়েরা ঠিক করলে চিঠি পাঠাবে শীত দাদুর কাছে , বিজিবিজি বন থেকে ফার গাছ যেন পাতায় – সবচেয়ে ঝুমঝুমটি , সবচেয়ে সুন্দরটি।
“শীত দাদু, শীত দাদু,
নতুন বছরের জন্য
ফার গাছ পাঠিয়ো আমাদের জন্য
সাজাব গোছাব
আমরাই।
চিঠি তোমায় পৌঁছে দেবে এই বরফ পুতুলটি।’’
-- ছেলেমেয়েরা।
এই চিঠিটা লিখে ছেলেমেয়েরা আঙিনায় দৌড়ে গেল বরফ পুতুল বানাতে।
মিলেমিশে কাজ শুরু হয়ে গেল: কেউ বরফ
জোগাড় করে , কেউ গোলা পাকায়…
বরফ পুতুলের মাথায় পরানো হল পুরোনো বালতি ,
চোখ বানালে কয়লা দিয়ে , আর নাকের জায়গায় গুজে দিল লাল গাজর।
বেশ হল ডাক-হরকরা বরফ পুতুল।
চিঠি তাকে দিয়ে ছেলেমেয়েরা বললে:
‘বরফ পুতুল , বরফ পুতুল
ডাক-হরকরা গা তুল তুল ,
যা চলে যা গহন বনে
পত্রটা দিস যথাস্থানে।
শীত দাদুকে দিবি তারা,
বেছে দেবে ফারের চারা ,
সবুজ পাতার ঝালর ঘেরা,
বনের মধ্যে সবার সেরা।
ফার গাছটা আনিস বয়ে
ধন্যি দেবে ছেলেমেয়ে।’
সন্ধ্যে হলে, ঘরে চলে গেল ছেলেমেয়েরা। বরফ পুতুল মনে মনে ভাবে : কাজ তো চাপিয়ে গেল , কিন্তু যাই কোথায় ?
‘আমায় সঙ্গে নে , ’ হটাৎ বললে কুকুরছানা ববিক , ‘আমি রাস্তা দেখিয়ে দেব। '
‘ঠিক বলেছিস, দুয়ে মিলে যায় , ভয় ভাবনা নাই !’ খুশি হল বরফ পুতুল , ‘শত্রু তাড়াবি , পথ দেখাবে।'
বরফ পুতুল আর ববিক যায় যায় ,যেতে যেতে পৌঁছল এক মস্ত বড়ো গহীন বনে...
সামনে দেখে এক খরগোশ।
‘ বল তো , শীত দাদু থাকে কোথায় ?’ জিজ্ঞেস করলে বরফ পুতুল।
কিন্তু জবাব দেবার সময় কোথায় খরগোশের , পেছনে তার তাড়া করছে শেয়াল।
আর ববিকও 'ঘোঁৎঘোঁৎ' করে ছুটল খরগোশের পেছনে।
মন খারাপ হয়ে গেল বরফ পুতুলের।
‘দেখছি এবার একা একাই যেতে হবে। '
এমন সময় ফুঁসে উঠলো ঝড় , পাক দিয়ে ঝাপটা মারে কেবলি …
থরথরিয়ে কেঁপে উঠলো বরফ পুতুল.... সব বরফ তার খসে খসে পড়লো।
পড়ে রইল শুধু বালতিটা , চিঠিটা, আর গাজরটা।
শেয়াল ফিরে এল একেবারে রেগে কাঁই :
‘শিকারে আমায় বাধা দিয়েছিল কে ?’
দেখে কেউ নেই , শুধু বরফের ওপর পরে আছে চিঠিটা। চিঠিটা নিয়ে পালাল সে।
ফিরল ববিক :
‘কোথায় সে বরফ পুতুল?’
নেই সে।
এই সময় শেয়ালের সঙ্গে ধরল নেকড়ে।
‘কি নিয়ে চলেছিস রে ?’ গর্জন করলে নেকড়ে ,
‘ভাগ দে শিগগির!’
‘আমি পেয়েছি, আমার ! ভাগ নেই তোমার ,’ বলেই পালালো শেয়াল।
তার পেছনে নেকড়ে।
কী হচ্ছে দেখি বলে হাঁড়িচাঁচাও উড়ল পেছন পেছন।
ববিক কাঁদে , আর খরগোশরা বলে :
‘ ঠিকই হয়েছে তোর , কেন তারা করিস আমাদের , কেন ভয় দেখাস ?'
‘ভয় দেখাবেন , তাড়া করব না, ' বলে ববিক আরো জোরে কেঁদে উঠলো।
'কাঁদিস না , আমরা তোকে সাহায্য করব , বললে খরগোসরা।
‘ আর খরগোশদের সাহায্য করব আমরা , ‘ বললে কাঠবেড়ালীরা।
বরফ পুতুল তৈরি করতে লাগল খরগোসরা , কাঠবেড়ালীরা সাহায্য করে তাদের , ছোটো ছোটো থাবা দিয়ে থাবড়ায় , লেজ দিয়ে মুছে।
ফের তার মাথায় উঠল বালতি , চোখে জুটল কয়লা , আর নাকের জায়গায় গাজরটি।
‘ধন্যি তোরা , ‘ বললে বরফ পুতুল , ‘ আমায় ফের গড়ে তুললি , এবার শীত দাদুকে খুঁজে দে। '
তাকে তারা নিয়ে গেল ভালুকের কাছে। গুহার মধ্যে ঘুমিয়ে ছিল ভালুক , বহু কষ্টে জাগানো হল তাকে।
ছেলেরা তাকে শীত দাদুর কাছে চিঠি দিতে পাঠিয়েছে সে সব কথা তাকে বললে বরফ পুতুল।
‘চিঠি ?’ গর্জন করে উঠল ভালুক , ‘কোথায় চিঠি ?’
হাতড়িয়ে দেখে চিঠি নেই।
‘ চিঠি ছাড়া ফার গাছ দেবে না শীত দাদু , ‘ বললে ভালুক
‘ভালোয় ভালোয় বাড়ি ফিরে যাও , আমি বন পর্যন্ত পৌঁছে দেব। '
হঠাৎ কোথা থেকে যেন উড়ে এল হাঁড়িচাঁচা , কিচিরমিচির করে বলে :
‘এই নাও চিঠি !’
বললে কি করে সে চিঠি পেলে।
ব্যাপারটা হয়েছিল এই।
চিঠিটা নিয়ে সবাই গেল শীত দাদুর কাছে।
বরফ পুতুলের ভারি তাড়া , কখনো গড়িয়ে পড়ে ঢিবি থেকে কখনো উলটে পড়ে খানাখন্দে, কখনো হোঁচট খায় গাছের গুঁড়িতে।
ভাগ্যি ভালো ভালুক তাকে বাঁচায় , নয়তো ফের আবার গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যেত ।
শেষ পর্যন্ত পৌছলো শীত দাদুর কাছে।
চিঠি পরে শীতদাদু বলল :
‘এত দেরী হল যে ? সময়মতো ফার গাছ নিয়ে তো তুই পৌঁছতে পারবো না।
সবাই তখন বরফ পুতুলের পক্ষ নিলে , বললে কি হয়েছিল। শীত দাদু তখন তার নিজের স্লেজগাড়িটা দিয়ে দিলে তাকে , বরফ পুতুলও ফার গাছ নিয়ে ফিরে চলল ছেলেমেয়েদের কাছে।
ভালুকও ফিরল তার গুহায় --- বসন্ত পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকবে।
আর সকালবেলায় দেখা গেল একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে বরফ পুতুল। হাতে তার চিঠির বদলে ফার গাছ।
---------------------------------
শুভ নববর্ষ। খুব ছোটবেলায় আব্বা একদিন হলুদ খাম এনে দিয়েছিলেন। ফার গাছ চেয়ে শীত দাদুর কাছে চিঠিও লিখেছিলাম। কিন্তু চিঠি পৌঁছে দেয়ার জন্য আমার কোন ডাক-হরকরা বরফ পুতুল ছিল না। ছোটবেলায় ভাবতাম , কোনোদিন যদি সোভিয়েতের দেশে যাই তবে এমন একটা বরফ পুতুল বানাবো।
ছোটবেলার ভাবনায় ভালো ছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৪৩