somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানুষ উঠল আকাশে : গল্প সত্যি করার গল্প - ১ম পর্ব

০৬ ই জুন, ২০২২ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



'আমরা জন্মে গল্প কে করি সত্য...'

(গান থেকে )

মানুষ দৌঁড়াতে পারে হরিণের মতো , মাটি আঁকড়ে যেতে পারে সাপের মতো , মাছের মতো ভেসে যেতে পারে। শুধু পাখির মতো উড়তে পারে না। আকাশে উড্ডয়ন পাখিদের দেখে যুগের পর যুগ লোকে এই ভেবে হিংসে করেছে। ভেবেছে আর স্বপ্ন দেখেছে : 'নিঝুম বনের ওপর দিয়ে মেঘগুলোকে ছাড়িয়ে উড়ে যাব উড়ন্ত গালিচায় চেপে ! .... নাকি পালক দিয়ে পাখা বানিয়ে আকাশে উঠব!’ তবে পাখাওয়ালা মানুষ কি উড়ন্ত গালিচা বহুদিন ছিল কেবল গল্প।


শোনা যায় অবিশ্যি অনেক কাল আগে মস্কোয় এক চাষী পাখা বানিয়েছিল চামড়া দিয়ে। ময়দানে লোকজন ডেকে সে ঘোষণা করলে যে উড়ে যেতে পারে নাকি বলাকার মতো। কৌতূহলীরা জুটল সবাই, দেখতে চায় কি ঘটবে। চাষী তার কাফতান খুলে ফেলে কাঁধে বেঁধে নিলে দুই পাখা -- 'ওড় এমেলকা !' ‘ চেঁচায় লোকেরা।
কিন্তু যতই সে ছোটাছুটি করুক , যতই ডানা নাড়ুক , মাটি ছেড়ে ওঠা তার আর হলো না।
তা দেখে একদল হাসাহাসি করলে , টিটকারি দিলে , অন্যেরা গম্ভীরভাবে মাথা মাথা নাড়ল : ‘ বোঝা যাচ্ছে , মাটি ছেড়ে যাবার কপাল নেই মানুষের। '
কিন্তু ঘটলো অন্যরকম।

আর এই অন্য রকম ঘটনা নিয়েই আমার আরো একটি রাশিয়ান শৈশব : মানুষ উঠল আকাশে।

মানুষ উঠল আকাশে

অনেকদিনআগে দক্ষিণ ফ্রান্সের ছোট্ট এক শহরে থাকতো দুই ভাই --- জোসেফ আর এতে’ মঙ্গোলফিয়ের।
জানবার ইচ্ছে এদের ছিল প্রবল , বুদ্ধিমত্তাও প্রখর।
চিমনি থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখে দু’ভাই বহুবার ই নিজেদের জিজ্ঞেস করেছে – কেন ওঠে?
ঠিক করলে , গরম বাতাস ঠান্ডার চেয়ে হালকা , তাই ওপরে ভেসে উঠছে।
ভায়েরা তখন কাগজ দিয়ে মস্তো এক বেলুন বানালে , বেলুন ভরে তুলল অগ্নিকুন্ডের ধোঁয়ায়।
সঙ্গে সঙ্গে উঠে গেল আকাশে , দ্রুত বাড়তে থাকলো তার গতি ...



কাটল কয়েক মাস। মঙ্গোলফিয়ারদের বেলুনে প্রথম উঠলো মানুষ। নাম তার পিলাতর দ্যা রোজিএ।
শত শত কৌতূহলী প্যারিসবাসিতে ভরে গেল প্রশস্ত স্কয়ার , লোকে উঠলো বাড়ির চালে , চিমটিতে।


শোনা গেল উৎক্ষেপের সংকেত। ধোঁয়ায় ভরে বেলুন ধীরে ধীরে উঠতে লাগল স্কয়ারের ওপরে।
জনতা সোল্লাসে চিৎকার করে উঠল : ‘মানুষ উঠেছে আকাশে ! … সাবাস পিলাতর !
-- বাতাসের আচমকা ঝাপটায় বেলুন ভেসে গেল গাছে।
আর এক সেকেন্ড .. ডালের খোঁচায় বেলুনের খোল এই ছিঁড়ল বলে।
কিন্তু পিলাতর ঘাবড়াল না , বেলুনেই যে অগ্নিপাত্র বসানো ছিল , তাতে সে একমুঠো খড় ছুড়ে দিলে।
তপ্ত বাতাস ছুটল খোলের দিকে , বেলুন বাধ্যের মতো ওপরে উঠে ভেসে গাছের ওপর দিয়ে।
‘ কী , কেমন লাগল ?’ বেলুন মাটিতে নামলে জিজ্ঞেস করা হলো পিলাতর কে।
‘চমৎকার !’ উচ্ছাসিত হয়ে চেঁচিয়ে উঠল নির্ভিক বায়ুচর , ‘ একেবারে স্বপ্ন !’



** এরপর , জানুয়ারী ১৯ , ১৭৮৪ - মঙ্গোলফিয়ের এর বিশাল এক বেলুন সাতজন যাত্রী নিয়ে লিয়নস শহর জুড়ে ৩০০০ ফুট উচ্চতায় উড্ডয়ন করে । (সূত্র: ফুটনোট)

আকাশে ভাসে মাছ



বেলুনে প্রথম ওরা হয় প্রায় দুশ বছর আগে। তারপর থেকে লোকে অনেকবার আকাশে উঠেছে বেলুনে , যাকে বলা হয় এয়ারস্ট্যাট। শুধু তা ভর্তি করা হত ধোঁয়ায় নয় , হালকা গ্যাসে। পরে এয়ারস্ট্যাটে বসানো হল প্রপেলার সমেত ইঞ্জিন --- দাঁড়াল **ডিরিজাবল – যা চলবে হুকুম মেনে। বাতাসে ভাসলে তাকে দেখায় প্রকাণ্ড এক মাছের মতো। পেছনে লেজ , পেটের ভেতর ঝুলন্ত গন্ডোলা , যেন পাখনা। গন্ডোলা চেপে ইঞ্জিন চালিয়ে দিয়ে যাও না যেখানে খুশি। এটা বেলুনের মতো নয়। তাতে সবকিছু নির্ভর করত বাতাসের ওপর। সেদিকে বাতাস বইবে সেইদিকেই যাবে বেলুন।
আকাশে ভাসছে ডিরিজাবল, আর তার ওপরে ডানা মেলা প্রতিযোগী রুপোলি পাখি – বিমান , আগে যাকে বলা হত এরোপ্লেন।
তবে তার কাহিনিটা ভিন্ন।







--------------------------------------------------------------------------------------------------------
পিলাতর দ্যা রোজিএ আর পিয়ের রোমেন নতুন হাইব্রিড বেলুন উড্ডয়ন করেছিলেন ইংলিশ চ্যানেলটি অতিক্রম করার প্রবল ইচ্ছে নিয়ে। কিন্তু উড্ডয়নের কিছুক্ষন পরেই বেলুনটি মাটিতে আছড়ে পড়ে। ১৭৮৫ সালের ১৫ জুন পিলাতর দ্যা রোজিএ আর পিয়ের রোমেন এই বেলুন ক্রাশে মারা যান। তবে গল্প এখানেই থেমে যায়নি.....কারণ মানুষের জন্ম তো গল্প কে সত্যি করার জন্যই। ওই গানটার মত... 'আমরা জন্মে গল্প কে করি সত্য...'


সেই দুর্ঘটনায় পিলাতর দ্যা রোজিএ মারা যাওয়ার পর অনেক গবেষণা হয়েছে। অনেক আবিষ্কার হয়েছে। মানুষ বেলুন কে নিয়ে গেছে আবিষ্কারের অন্য মাত্রায়। সেই গল্প ধীরে ধীরে হবে।

**ফুটনোট : আরো জেনে নিন
এয়ারশিপ এবং বেলুনের ইতিহাস
ডিরিজাবল
মঙ্গোলফিয়ের ভ্রাতৃদ্বয়






রাশিয়ান শৈশবে আমার কোন কৃতিত্ব নেই। আমি শুধু টাইপ করি আর ছবি সম্পাদনা করি। তবে এখানে একটু ব্যতিক্রম রাখার ইচ্ছা আছে ।
এই লেখাটা আমি একটু ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলাম। লেখা আর হয় না। বন্ধ হয়ে আছে। মুল গল্পের পাশাপাশি নিজের বক্তব্য আর তথ্য দিয়ে ভিন্ন অন্য মাত্রা দিতে চেয়েছিলাম যেটা নিজের মনেই গেঁথে থাকে।

পরের পর্বের জন্য খাটাখাটনি চলেছে। ভালো থাকবেন।


-------------------------------------------------------
বইঃ মানুষ উঠল আকাশে
লেখকঃ কার্ল অরোন
ছবিঃ এরিক বেনিয়ামিনসন আর বরিস কিশতিমভ
ছোট্ট শিশুদের জন্য অনুবাদ করেছেনঃ ননী ভৌমিক
রাদুগা প্রকাশন। মস্কো। ১৯৮৪ ।

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুন, ২০২২ দুপুর ২:২৩
৭টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×