
১।
ছোটবেলায় সিঙ্গারা খুব পছন্দের ছিল। স্বপন হোটেলে গরম গরম সিঙ্গারা ভাজতো । সিঙ্গারা আমার এতোটাই পছন্দের ছিল যে দুইটা সিঙ্গারা খেয়ে ফেলতাম। সিঙ্গারা খেতাম মানে , সিঙ্গারার ভেতরকার আলুগুলো বাদে খোসা গুলো খেয়ে ফেলতাম। সবার আগে খেতাম সিঙ্গারার তিনকোণা। ইদানীং সিঙ্গারা খাই না। তিন কোণাও না। তাকিয়ে দেখি শুধু।
ছোটবেলায় আরেকটা প্রিয় খাবার ছিল রস কদম নামের মিষ্টি। মিষ্টির বাইরে হোমিওপ্যাথির সাদা সাদা দানা (গ্লোবিউলস) লাগানো থাকতো। আমার পছন্দ বলে আব্বা মাঝে মাঝেই রসকদম মিষ্টি নিয়ে আসতেন। তবে ঐ মিষ্টি খেতাম না। খেতাম হোমিওপ্যাথির দানা। আমার দাদা আর বড়ফুফু হোমিওপ্যাথির চিকিৎসা দিতেন, চাইলে মুঠ ভরে খেতে পারতাম । কিন্ত আমার কেন জানি রস কদমের দানা গুলো খেতেই বেশি ভালো লাগতো।
ছোটবেলায় রসকদম কে বলতাম 'কদম মিষ্টি'।
২।
ছোটবেলায় খুব কারেন্ট যেতো। সন্ধ্যায় গেলে দুই ঘন্টা মাস্ট।
তখন অতো আওয়াজ নয়েজ ছিলো না। বরং কিছুটা নিশ্চুপ থাকতো , অনেক দূরের শব্দ শোনা যেতো।
যেমন কারেন্ট চলে গেলে বাজার থেকে সমস্বরে 'হোওওই' করে শব্দ ভেসে আসতো। আবার কারেন্ট চলে আসলেও তাই! এই 'হোওওই' শব্দকে আমরা বলতাম 'হোলোই' মানে সবাই একসাথে চিৎকার করে ওঠা।
এখন কারেন্ট গেলে কিংবা আসলে হোলোই শোনা যায়? না যাওয়ারই কথা সিনেমার হল গুলো বন্ধ। হোওওই করে শব্দটা তো বেশি আসতো সিনেমার হল থেকে।
৩।
মাটির চাড়ির টুকরা বিশেষ কায়দায় পুকুরের পানিতে ছুঁড়ে মারতাম। চাড়ির টুকরা বেশ কয়েকটা লাফ দিতো ব্যাঙের মত। চাড়ির টুকরাকে আমরা বলতাম 'খোলা'। আর আমাদের খেলার নাম ছিল 'ব্যাঙখোলা'। যার খোলা বেশী লাফাবে সেই জয়ী। তবে জয়ী হবার চেয়ে ছুঁড়ে মারাতেই বেশি আনন্দ ছিল। আর সবচেয়ে বড় কথা এই খেলা খেলতে মোবাইল বা ইন্টারনেটের দরকার হতো না।
৪।
ভাবতাম মাঠেই ঐ পাড়েই আকাশের শেষ ! আরেকটু হেঁটে গেলেই ধরতে পারবো।
৫।
আকাশমুখী হয়ে হা করে বৃষ্টির ফোঁটা গুলো মুখের ভেতর নেয়া হয় না কতকাল !
৬।
আচ্ছা, বৃহস্পতিবার দপ্তরীচাচা কি বেশি জোড়ে ছুটির ঘন্টা বাজাতেন?
৭।
আমার ছেলেবেলার রঙ পেনসিল, আঁকার খাতা, হিজিবিজি আঁকিবুকি। ইচ্ছে মত রং। অনেক বেশী নীল আকাশ। আসলেই আমার ছেলেবেলার আকাশটা অনেক বেশী নীল ছিল। বড় হওয়ার সাথে সাথে কোথায় জানি হারিয়ে ফেল সব। আজ বড় হবার সাথে সাথে সব কিছু কেমন ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। সেই ছেলেবেলার মত ইচ্ছামত রং দিতে পারিনা আর ।
আমার ছেলেকে রঙ পেনসিল আর খাতা কিনে দিয়েছি। ও হিজিবিজি আঁকে।
আঁকতে আঁকতে বলে , বাবা ইটা কিইই?
আমি বলি, ওটা আকাশ?
ইটা কি কালান (কালার) ?
নীল কালার।
বাবা কালান না? বাবা কালান।
হমম। নীল হলো বাবা কালার।
ও রঙয়ের নাম বলে না। তার কাছে নীল হচ্ছে বাবা কালার, গোলাপী মা কালার, সবুজ দাদা কালার, কমলা দাদী কালার আর হলুদ সে নিজে মানে নিহান(নিহাল) কালার। ইসসস বাচ্ছারা কি অদ্ভুত করে ভাবতে পারে!
শিরোনামঃ অঞ্জন দত্তের গান- রং পেনসিল।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




