somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেই বছর চৈত্র এসেছিলো কিন্তু বসন্ত আসেনি ....

০৭ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সে বছরটা যেন চৈত্রে আটকে গেলো। চৈত্রের দহন তীব্র থেকে তীব্রতর হল। ভীষণ অস্থির সময়। রাত বিরেতে পুলিশের বাঁশি , সাইরেন , দৌঁড়ে পালানোর পদ শব্দ , গুলির শব্দ আর সকালবেলা এখানে ওখানে , গলির মুখে , ডাস্টবিনের পাশে পরে থাকা লাশ , গুলিবিদ্ধ লাশ , যারা পালাতে পারেনি তাদের লাশ, গোঙরানির শব্দ , আর্তনাদ । কতশত মায়ের বুক খালি হলো , কত কত লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে চুল্লিতে জ্বললো সেই খোঁজ নিশ্চয় চৈত্রের বিকেল রাখিনি। প্রশ্ন গুলো বেওয়ারিশ লাশের মত হয়তো পুড়েছে !

সেই বয়সে যাদের মায়ের আঁচলে , প্রেমিকা নামক মমতাময়ীর ওড়নায় মুখ মোছার কথা... তারা ছুটে বেড়ালো দিকবিদিক। পেছনে ধেয়ে আসা বুলেট থেকে অনেকেই নিস্তার পেলো না। বনবীথিতলে পড়ে রইলো বনের অন্তরালে।
সেই বছর চৈত্র এসেছিলো কিন্তু বসন্ত আসেনি। পুরো সময়টা মোড়ানো ছিল "চৈত্রের কাফনে"

আমি নকশাল আন্দোলনের কথা বলছি।
যে আন্দোলনে হাজার হাজার তাজা মেধাবী ছাত্র ছাত্রী অকালে ঝরে গিয়েছিলো। কেনইবা তারা এতো দ্রুত এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছিল সেটা আমার কাছে ধোঁয়াশার মত লাগে, অবাক লাগে । ছেলে হারা মায়ের চিৎকার , ছাত্রদের জীবন নিয়ে ছুতে বেড়ানো ,পুলিশের সাইরেন আর গুলির শব্দ ! দৃশ্যপট মনে হলেই বুকের ভেতর চিনচিন করে ।

কোলকাতার ব্যান্ড মহিনের ঘোড়াগুলি চৈত্রের কাফন শিরোনামে একটি গান প্রকাশ করে ১৯৭৯ সালে। প্রেক্ষাপট ছিল নকশালে প্রাণ হারানো তাজা প্রাণগুলো। মহীনের ঘোড়াগুলির গৌতম চট্টোপাধ্যায় নিজেও এই নকশাল আন্দোলনের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন। জেল খেটেছিলেন।



এই গানের শুরুতে এবং শেষে ফিউর‍াল (Funeral) সংগীতের সুর বাজানো হয়েছে। কেউ মারা গেলে চার্চের শোভসভায় এই সুর বাজানো হয়। এটা শোকের সুর। পুরো গানটার সাথে এই ফিউরালের সংযোজনটা বুকের শূন্যতা আরো বাড়িয়ে দেয়। মূলতঃ এটাই শিল্পের শৈল্পিকতা কিংবা নিদারুন সার্থকতা।


গান- চৈত্রের কাফন
কথা- রঞ্জন ঘোষাল
সুর- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

রেকর্ডিং
প্রথম প্রকাশ- ১৯৭৯
অ্যালবাম- দৃশ্যমান মহীনের ঘোড়াগুলি
শিল্পী- মহীনের ঘোড়াগুলি (তপেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জন ঘোষাল)


যে গেছে বনমাঝে চৈত্র বিকেলে
যে গেছে ছায়াপ্রাণ বনবীথিতলে,
যে গেছে ছায়াপ্রাণ বনবীথিতলে।

বন জানে অভিমানে গেছে সে অবহেলে
যে গেছে অশ্রুময়, বন-অন্তরালে
যে গেছে অশ্রুময়, বন-অন্তরালে।
আকাশে কেঁপেছে বাঁশিসুর
আঁচলে উড়েছে ময়ূর
চলে যাই, বলেছিলে চলে যাই
মহুল তরুর বাহু ছুঁয়ে
যে গেছে অশ্রুময়, বন-অন্তরালে

সে বুঝি শুয়ে আছে চৈত্রের হলুদ বিকেলে
সেখানে চূর্ণ ফুল ঝরে তার আঁচলে
সেখানে চূর্ণফুল ঝরে তার কাফনে।


ভিডিও: চৈত্রের কাফন গানের অফিসিয়াল কোন ভিডিও নেই, লিরিক ভিডিও পাওয়া যায়। ২০১৫ সালের নকশাল সিনেমার কিছু অংশের সাথে গান যুক্ত করে আড়াই মিনিটের একটা ভিডিও পাওয়া যায়। মূল গানটা ৪ মিনিটের।



আমি নকশাল আন্দোলনের পক্ষে বিপক্ষে বলবোনা। সেই ব্যাপারে কিছু বলার জন্য আমি পোষ্ট লিখছি না। কিশোর বয়সে খুব আগ্রহ ছিল। তবে জানার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য আমার কাছে ছিল না। পেপার পত্রিকা , আর্টিকেল পরে সে সময় হালকা ধারণা নিতে নিয়েছিলাম।
বছর দুয়েক আগে নকশাল আর চারু মজুমদার নিয়ে গুগলে সার্চ দিলাম। সামু ব্লগার রাইসুল জুহালা এর লেখায় চোখ আটকে গেলো। উনি এখন কি নিকে ব্লগিং করেন জানিনা। আদৌ করেন কিনা সেটাও জানি না। পোস্টটা উনাকে উৎসর্গ করলাম। তার সেই পোস্ট এবং প্রতিউত্তর গুলো পড়লে সেসময়কার ব্লগ এবং ব্লগিং সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।



পোষ্টটা আমি চারু মজুমদারের মৃত্যু দিয়েই শেষ করতে চাই। একজন বিদ্রোহীকে চিনে ছিলাম সেই কৈশোরে। যেই কৈশোরে দুরন্ত ছেলে গুলো বাঁচার আশায় ছুটে বেরিয়েছিল। চারু মজুমদারের সাথে সেই কৈশোরো হয়তো 'চৈত্রের কাফনে' মোড়ানো।


চারু মজুমদার গ্রেফতার হন ১৯৭২-এর ১৬ জুলাই । তার এক সহযোগী তার আত্মগোপনকারী বাসার ঠিকানা পুলিশ কে দেয়। কলকাতার এন্টালী রোডের এক বাড়িতে তিনি আত্মগোপন করেছিলেন। ২৮ জুলাই পুলিশ হেফাজতে হৃদরোগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ভারত সরকার প্রচার করে । নকশালপন্থী রাজনীতিবিদ ছাড়াও অনেকে মনে করেন, তাঁকে জেলে হত্যা করা হয়েছিল। সশস্ত্র পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর প্রহরায় চারু মজুমদারের মরদেহ কেওড়াতলা মহাশ্মশানে দাহ করা হ্য় , অগোচরে।



ছবিঃ ইন্টারনেট


সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:৪৫
৯টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×