somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোডিয়াম ল্যাম্পপোস্টের আলোয় চিকচিক করে বৃষ্টিধারা ....

০৮ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হঠাৎ করেই মুঠো ফোনটা বেজে উঠলো।মুঠোফোনের প্রিয় রিংটিউনটা আর্তনাদের মত শোনায় আজকাল। মনে হয় কেউ যেন গলা টিপে ধরে আছে।আচমকা ঘুম ভেঙ্গে গেল।মুঠোফোনটা স্তব্ধ হয়ে পড়ে আছে, না কোন কল আসেনি।

রাত দুটা পয়ত্রিশ। অনেকরাত।তুমি হয়তো এখন ঘুমোচ্ছো। অনেকদিন হয়ে গেলো তোমার সাথে রাত জেগে কথা বলা হয়না। কিন্তু এমন একটা সময় ছিলো...
বলাবাহুল্য সেই সময়টা বড় বেশী 'ছেলেমানুষী' মনে হয়।

ড্রয়িং রুমের রং, বেডসীটের কালার,বাবুর নাম কত কিছুই না রাতের খোরাক হিসেবে কাজে লাগিয়েছি আমরা। তুমি অনেক বুঝতে শিখেছো আর আমি...আমি ক্রমশই বড় হচ্ছি। একটা রাত কথা না হলে আর আগের মতন বুকটা খাঁ খাঁ করে না, আচমকা মাঝরাতে আর ঘুম ভাঙ্গে না!

মিথ্যা বললাম কি? তবে আজ রাতে ঘুম ভাঙ্গলো কেন আমার!!
থাক্ সেই দ্বন্দে না-ই যায়। খুটিনাটি বিষয় নিয়ে রাত দুপুরে ঝগড়া করার কোন মানে হয় না।
তুমি বুঝতে শিখেছো আর আমি ক্রমশই বড় হচ্ছি। 'ছেলেমানুষী' সময় টা অন্যকারো জন্য পড়ে থাক।

মুঠোফোনে রিচার্জ করার জন্য এর ওর কাছে দেন দরবার করেছি.... একটা সময় ছিলো আসলে একটা সময় থাকে।
তোমাকে ভালবাসার সামান্য কথাটা বলতে গিয়ে দিস্তা দিস্তা কাগজ ক্ষয় করেছি....তুমি কপট রাগ দেখিয়েছো,
অভিমানের স্বরে বলেছো "সারারাত জেগে কি কর, পাগল নাকি?
আমি কিন্তু পাগলের সাথে থাকতে পারবো না! এতো বড় চিঠি কেউ লিখতে পারে!!"

তোমার কপট অভিমান চিঠির অক্ষরে প্রকাশ না পেলেও আমি ঠিকই বুঝতে পারতাম। ঐ ছেলেমানুষী সময়টা হয়তো অনেক কিছুই ধরতে পারতো।

মনে আছে তোমার এবং আমার কারোর ই কিন্তু ফোন ছিলো না। দুজনায় কথা বলতাম চুরি করে। ফোনের দোকান থেকে চুপিচুপি কথা বলা... বড় একটা এডভেঞ্জার। মনে হতো সবাই যেন বুঝতে পারছে।
হমম..অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। জাহাজবাড়ির পিছে , লেকের ধারে মুঠোফোনে এফএম রেডিও, BanQ মোবাইলটা বেশ কাজ দিতো আমাদের।যখন তখন ছবি তোলা আর বাংলা রক মিউজিক।

তুমি রাগ করে বলতে কি সব শোনো? আস্তে আস্তে তোমার সব সয়ে গেলো... হয়তো বয়সটাই ওমন, সয়ে নিতে হয়! এখন তুমি অর্থহীন, শিরোনামহীন আর ব্ল্যাকের চরম ভক্ত!
আমার জন্য নয়, তুমি বুঝতে শিখেছো।
না বোঝার বয়সটা অন্য রকম... অনেক বেশী ছেলেমানুষী।
এখন আর জাহাজবাড়ি নেই। সেখানে গড়ে উঠেছে আধুনিক অট্টলিকা। তবুও ক্লাস পালিয়ে লেকের ধারে ডানপিটেরা এখনো প্রেম করে।

আমার প্যান্ট আমার হেয়ার কাট আমার শার্টের রং সবকিছুতেই তোমার তদারকি ছিল ।
তুমি অবশ্য ইদানীং অতো কিছু নিয়ে মাথা ঘামাও না।আসলে সবারই একটা নিজস্ব জগৎ আছে,
আমার...তোমার আর মুঠো ফোনের প্রিয় রিংটিউনটির।

গলাটা শুকিয়ে আসছে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার অনেক সমস্যা।
তারপর তুমি পাশে নেই! বিছানার পাশে রাখা পানির বোতল টা খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। বড্ড অগোছালো হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। আগেও ছিলাম , তুমি এসে জাতে এনেছিলে।

টাটকা একটা প্যাকেট সিগারেট থাকার কথা, দুটো খেয়েছিলাম...তোমার দেয়া লাইটার টা কোথায় রেখেছি এখন
হয়তো খুঁজে পাবোনা।লাইটার টা দিয়ে ছিলে কোন এক জন্মদিনে, দিয়ে বলেছিলে 'অপব্যাবহার করতে পারবা না !'
আমি সুন্দর ভাবে পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরিয়ে বললাম, "আচ্ছা ঠিক আছে!
আমি সিগারেট ছাড়া কোন কিছুই ধরাবো না।"
তুমি ঠোঁট থেকে সিগারেট ফেলে দিয়ে বললে, না! সিগারেটও না। মোমবাতি, আগরবাতি,কয়েল জ্বালাবা।
আমি এখন পর্যন্ত লাইটারের অপব্যবহার করে যাচ্ছি ।

সিগারেট ধরাতে ধরাতে ভাবি সময় দ্রুত পাল্টিয়ে যায়। পৃথিবীর সস্তা ভাবনা গুলো সিগারেট ধরালেই হয়তমাথায় আসে।
এখন রাত তিনটা। অনেক রাত। এমন একটা সময় ছিলো,
তুমি আচমকা ফোন দিতে।
কান্না জড়ানো কন্ঠে বলতে, "আমার খুব ভয় লাগছে। খারাপ একটা স্বপ্ন দেখেছি।
তুমি এতো রাতে জেগে কেন?"

আমি বলতাম, 'ভয় পেয়োনা।দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।' আমার জেগে থাকার কারণটা তোমাকে কখনো বলেনি।
আমি বলিনি, মাঝরাতে দুঃস্বপ্ন দেখে আমিও অঘুমা।
অনেক কিছুই দাগ কেটে রাখে ছেলেমানুষী সময় টাকে।তোমার ঘন কালো ঢেউ খেলানো চুলে নিজেকে বিলীন করতে বাধ্য হয়েছি বহুবার। তোমার চিবুকের তিল, তোমার চোখ...খুন হই।তোমার হাতে স্পর্শ, মুঠোফোনে তোমার ঘুম ভাঙ্গানি আহবান...কতো কিছুই না অচেনা সময়ে পরে থাকে।



মুঠোফোনের আর্তনাদে ভাবনার ছেদ পড়ে। বেজে ওঠে আমার মুঠোফোনের প্রিয় রিংটিউনটি। ওপার থেকে সেই
চিরচেনা মানবীর মায়াবী কন্ঠস্বর,

"এতো রাতে কি কর? ঘুমাও নি?নিশ্চয় জেগে জেগে সিগারেট টানছো আর ধোঁয়ায়
ঘর অন্ধকার করে রাখছো? ঘর দোর নিশ্চয় অগোচালো?
জায়গার জিনিস জায়গায় রাখতে তো তোমার ধাঁতে সয় না।
রান্নাঘরের বাতিটা নিশ্চয় অফ করোনি?
তোমার কফি কালারের শার্ট কি ইস্ত্রি করা আছে? কাল
এসে আমাকে নিয়ে চলে যাও,
এখানে আমার একটুও ভালো লাগছে না।
স্বপ্ন দেখেছি বাবুর নাকটা বোঁচা হয়েছে!
খুব কান্না পাচ্ছে।"

লাইটার টা হাতড়ে খুঁজে আরেকটা সিগারেট জ্বালায়। বাইরে ঝিরিঝির বৃষ্টি পড়ছে। সোডিয়াম ল্যাম্পপোস্টের আলোয় চিকচিক করছে বৃষ্টিধারা। এই রাতের শহরে বৃষ্টির সাথে মাঝে মাঝে রূপকথা নেমে আসে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:৫০
৭টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×