
মুহতাদী চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র। 'মন খারাপ' জনিত কারণে সে স্কুলে অনুপস্থিত ছিল । তাই ছুটির আবেদন করেছে। ফেসবুকে আবেদন পত্রটি শেয়ার হবার পর খেয়াল করে দেখলাম, হা হা রিয়েক্টে সয়লাব। সোজা সাপ্টা মন্তব্য হচ্ছে, " বাচ্চাদের আবার কিসের মন খারাপ? খলিল স্যারের মত বেত থেরাপী পিঠের উপর পড়লে সব মন খারাপ ঠিক হয়ে যাবে।" আমি জানি সব ঠিক হয় না। তবে আমিও মানি বেত থেরাপি হয়ত ছেলেটাকে নিয়মিত স্কুলে নেবে। পড়াশোনা করবে ।
পড়াশোনা শেষে পিঙ্ক ফ্লয়েডের Another Brick in the Wall গানের মত ইটের দেয়ালে সারি সারি ইটের সারিতে বসে যাবে।
আমার এই ছেলেটার সাথে দেখা করার খুব শখ। আমি আমার মন খারাপ টা ওর সাথে মিলিয়ে নিতে চাই। আমার মন খারাপ হতো, স্কুলে যেতাম না কিন্তু কারণ হিসেবে 'পেট কামড়ানো' টা সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য মনে হতো বলেই বলে ফেলতাম। দাদা পেট কামড়ানোর হোমিওপ্যাথি ঔষধ খাওয়াতেন ঠিকই কিন্তু মন খারাপ যেতো না। কারণ রোগের সঠিক চিকিৎসা হতো না। কখনোই বলতে পারিনি আমার 'মনের ভেতর খুব খারাপ' লাগছে।
ঘুম থেকে উঠে পূবের টকটকে লাল সূর্যটা দেখতে ভালো লাগত। সকালে পাখির ডাক। আলোয় আলোকিত গাছের পাতাগুলো ঝলমল করতো। কাঠবিড়ালীর লেজ নাড়ানো, পুকুরে জাম গাছের ছায়া ভীষণ দোলা দিত মনে।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সূর্য যখন আরো উপরে চলে আসতো তখন খুব খারাপ লাগা শুরু করতো। ভাবতাম এভাবেই দিনটা শেষ হয়ে যাবে। হুট করেই বিকেল নামবে । ফড়িংয়ের দল পাখা মেলে ছুটে পালাবে সূদুর প্রান্তরে। এরপর সন্ধ্যা। আরো একটা দিনের অবসান।
আমি যখন স্কুলে থাকবো তখন অনেককিছুই ঘাটে যাবে।
এতোদিন পরে ছোটবেলার সেই মন খারাপের কারণ গুলো নতুন করে ভাবাচ্ছে চতুর্থ শ্রেণীর ছেলেটার চিঠি পড়ে। যেই 'মন খারাপ 'ছোটবেলায় জড়িয়ে রাখতো সেটা বড় হয়েও ছাড়েনি বরং বেড়েই চলেছে। একটা দিন চলে যাওয়ার ভীষণ আক্ষেপ আর বিষন্নতা থেকে মুক্তি মিলবে সেদিন কিনা সত্যি সত্যিই ছুটিতে যাবো । কিন্তু ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে সেই 'ছুটি'কেই আমি সবচেয়ে ভয় পাই।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



