যখন একেবারেই কাজ থাকে না। কিছুতে মন বসে না তখন সোভিয়েত বই , প্রগতি প্রকাশন কিংবা ননী ভৌমিক দিয়ে গুগলকে সার্চ দেয়। অনেক কিছুই চলে আসে। স্ক্রীনে ভেসে আসা প্রিয় শব্দ গুলো দেখতেও ভালো লাগে।
আজ একটা লেখায় চোখ আটকে গেলো। সেইসাথে শরীরের রোমকূপে শিহরন জাগলো। লাল বইয়ের দুনিয়া নাম একটা ফিচারে লেখা ---
"ছোটোবেলায় দুপুরের খাওয়ার পর রাশিয়ান বই পড়তে পড়তেই ঘুমিয়ে পড়তেন হাসান সৌরভ। বাবার মুখেই রুশ গল্পের সঙ্গে তার হাতেখড়ি। একদম ছোটোবেলায় যখন নিজে বানান করে পড়তেও পারতেন না, তখন বাবাই তাকে পড়ে শোনাতেন বইয়ের গল্পগুলো। তখন থেকেই রুশ বইয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বইয়ের প্রকাশনাগুলো বন্ধ হয়ে গেলেও শৈশবের সেই মহামূল্যবান সম্পদ গুলো আজও আগলে রেখেছেন সৌরভ। বইয়ের তাকে রাখা শৈশবের সেই বইগুলোর পৃষ্ঠা ওল্টালে আজও যেন হারিয়ে যান সেই বরফের দেশে…"
আচ্ছা , হাসান সৌরভ কি স্বপ্নবাজ সৌরভ নয় কি ? আমিও তো রাশিয়ান বই পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যেতাম। আব্বার মুখ থেকে রাশিয়ান বইগুলোর পরিচিত শব্দ গুলো শুনতাম। গল্প শুনতাম। বেঁচে থাকা বেশ কিছু বই বুক শেলফে সাজিয়ে রেখেছি আমিও , হাত বুলায় , পাতা উল্টায়... সময় ফিরে যায় যেন ঝলমলে এক দুপুরে।
প্রগতির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেছে বহুকাল আগে । ৫০টির বেশি ভাষায় সোভিয়েত সাহিত্য অনুবাদ প্রগতি থেকে। রুশ সাহিত্য সবার দরোজায় পৌঁছে দেওয়াই ছিল যাদের প্রধান উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্যের প্রেক্ষিতে আমার মত অনেকেই আজ সেই বইয়ের পাতা উল্টায়। প্রগতি দরোজায় নয় সাহিত্য পৌঁছে দিয়েছিলো মূলত মননে , মস্তিষ্কে।
নাহ, অতীতে ফেরা যায়না। মুছে ফেলাও যায় না। আমার সামনে সেই দৃশ্যপট যেন বার বার ভেসে আসে.....
২৫ ডিসেম্বর ১৯৯১ মস্কোর ক্রেমলিন শহর। শেষবারের মতো উড্ডীয়মান সোভিয়েত পতাকা। ঠিক সন্ধ্যা ৭:০২ মিনিটে সোভিয়েত পতাকা নামিয়ে সেখানে রাশিয়ার পতাকা উত্তোলন করা করা হলো। সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ নেতা মিখাইল গর্বাচেভ পদত্যাগ করলেন। পদত্যাগ করার পর বললেন , "আমরা বাস করছি এক নতুন পৃথিবীতে!"
পরদিন সকালে আব্বা বললেন , "তোমার সোভিয়েত ভেঙে গেছে। "
সকালবেলা উঠে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমি কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললাম , আর আমার সোভিয়েত বই ? প্রগতি প্রকাশনী !
আব্বা বললেন , "ওগুলো আর কোনদিনই ছাপা হবে না !"
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৫:১৩