
ফেব্রুয়ারিতে আমার ছেলের বয়স ৩ হবে। দেখতে দেখতে বড় হয়ে গেলো। সঠিক উচ্চারণে কথা বলেছে শিখছে। আগে বলতো ডাইনোকন এখন সেটা ডাইনোসন কিছুদিন পর নিশ্চয় ডাইনোসর বলবে। মাশান থেকে মাস্টান এরপর নিশ্চয় মনস্টার ! প্রজালতি থেকে প্রজাপ্রতি।
ওর নিজের উচ্চারণে কথা , ভুলভাল উচ্চারণ গুলো মিস করবো খুব। তাই ওর উচ্চারণ গুলো সঠিক করে দিই না।
ইউটিউবে রাইম-টাইম দেখছে। শিখছে। সেদিন তিনটা রাইম শোনালো।
গরম মাম খেতে খেতে বললো , ইটস টু হট বাবা।
এইগুলো কিভাবে শিখলো জানিনা। তবে শিখে যাচ্ছে। এমন ইংরেজি অনেক বলে। মানে কি হতে পারে সেটাও বুঝতে পারে।
ওর বেশ কয়েকটা সফট টয় আছে। কয়েকমাস আগে কয়েকটা নিয়ে খেলতে ছিল। ওর মাকে বলল , মা ইটস মাই বেবি।
ওর মা বলল , একটা হলে বেবি হয় একটার বেশি হলে বেবিজ হয়।
ব্যাপারটা সে সম্ভবত ভালোভাবে মাথায় নিয়েছে। একদিন ওর খালা ভিডিও কল দিয়েছে। কি একটা এপসে জানি তিন চারটা ছবি দেখাচ্ছে। ওর মা ওকে বলল, নিহাল তোমার 'কিককি' ফোন দিয়েছে।
ও দেখে স্কিনে তিনচারটা কিককি ! দেখে বলে , মা , কিককি না 'কিককিস' ।
প্রথমে ব্যাপারটা কেউ বুঝতে পারেনি। 'এস' যুক্ত করার ব্যাপারটা ওর মাথায় গেথে আছে। পায়জামাস , গেঞ্জিস , খাতাস , কলস .... চলতেই থাকে।
বই আর ইউটিউবের সৌজন্যে পশুপাখি দেখতে দেখতে অনেক গুলোর নাম জানে , চিনতে পারে ।
কোকোমেলন আর মাশা এন্ড বিয়ার ভালো কিছুই শিখিয়েছে। তাই মাস ছয়েক আগে মিরপুর চিড়িয়াখানা চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলাম । ওখানে অনেক গুলো 'নো মাঙ্কি' আছে। মানে বানর। নো মাঙ্কি - ব্যাপারটা ক্লিয়ার করি।
"নো মোর মাঙ্কিস জাম্পিং অন দা বেড" --- রাইম থেকে সে মাঙ্কি কে বলে নো মাঙ্কি।
চিড়িয়াখানাতে ঢুকে খেয়াল করলাম, খুব একটা আনন্দ পাচ্ছে না। মন খারাপ করে খাঁচার কাছে দাঁড়িয়ে দেখছে। বাবা সিংহ মামা , মা সিংহ মামা দেখছে ঠিকই কিন্তু উৎফুল নয়। চিড়িয়াখানার ভেতর হাঁটলো দৌড়ালো কিন্তু যখনি খাচার সামনে আসে, বাবা বিয়ার আর হাতি রাজাদের দেখে তখন খাঁচার সামনে মন খারাপ দাঁড়িয়ে থাকে। এমন কি লম্বা গলার জিরাফও ওকে আনন্দ দিতে পারলো না। খাঁচায় ঝুলে থাকা নো মাঙ্কি ভেংচি কাটলো ঠিকই কিন্তু ওকে হাসতে পারলো না। হাতি রাজার সামনে এসে তো কেঁদেই ফেলে।
চিড়িয়াখানা থেকে বের হতে হতে ঠোঁট কাঁপিয়ে বললো , "আমান মন কালাপ হোসে। আমি হাতি রাজাকে ছারে দেবো, আমি ওরাকে ছারে দেবো।"
বাসায় এসে জানলাম , আমি নাকি খুব ছোটবেলায় চিড়িয়াখানায় এসেছিলাম আব্বা আম্মা আর ফুফুদের সাথে। চিড়িয়াখানা থেকে বের হয়ে আমি নাকি হুহু করে কাঁদতে ছিলাম। সকলে ভেবেছিলো আমার পেট ব্যাথা করছে। বড়দের ধারণা বাচ্চাদের পেট ব্যাথা এছাড়া আর কোন 'ব্যাথা' নাই। মন আর অনুভূতির সঠিক সমন্বয় যখন একটা শিশু করতে পারবে তখন তার মন খারাপ লাগবে।
বাচ্চারা বন্দি হতে চায়না। কাউকে বন্দি হতে দেখতেও পছন্দ করে না। বড় হবার সাথে সাথে মানুষ বন্দি হয়ে যায়। শিশু আর বড়দের মধ্যে বিশাল ফারাক। বয়সে কিংবা চিন্তাধারায়।

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




