somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেই একরুটের বাসটা...

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিঃ ইন্টারনেট


উত্তরা থেকে ফেরার পথে প্রায়ই আন্তঃজেলা বাস গুলোতে উঠি। এই বাসে উঠলে একটা জিনিস লক্ষ্য করি। এয়ারপোর্ট থেকে কয়েকজন যুবক ওঠে। ওরা মৃত মানুষের দাফনের জন্য সাহায্য চায়। আপনি যদি এই রুটে ৭ দিন চলাচল করেন তবে অন্তত ২ দিন এইসব স্বেচ্ছাসেবী , দরদীদের সাক্ষাৎ পাবেন।

লোকাল বাসে এরা সচরাচর উঠে না। দেখেই বোঝা যায় নেশাখোর , তারপরেও কিছু মানুষ ১০ টাকা ২০ টাকা দিয়ে লাশ দাফনে সামিল হয়। মোটামুটি ৮০-১০০ টাকা গুছিয়ে ওরা বাস থেকে নেমে যায়।
আমি একদিন বললাম , লাশ কি প্রতিদিনই দাফন করেন ?
একজন উদাস হয়ে বললো , মানুষের মরনের কি কোন ঠিক আছে ?
আমি তেমন কথা বাড়ালাম না। এই এলাকায় এদের ভয়ংকর চক্র।

আব্দুল্লাপুর থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত প্রতিদিনই ৩ /৪ মোবাইল জানাল দিয়ে টেনে নিয়ে যায়। লোকজন তাকিয়ে দেখে। লাফ দিয়ে নিতে না পারলে দাঁড়িয়ে থাকে। কোন ভয় ডর নাই।
আব্দুল্লাপুর আর এয়ারপোর্টের মাঝে আজমপুরে উত্তরা পূর্ব থানা। ওদের কাছে কেউ হয়তো অভিযোগ করে না। তাই ওরাও নিশ্চুপ।

উত্তরা আজমপুর ব্রিজে এক মহিলা একটা ছোট্ট বাচ্চা কোলে নিয়ে বসে থাকে ওজন মাপার মেশিন নিয়ে। পাশে লেখা - "এক ছেলে কওমী মাদ্রাসায় পড়ে"। ওজন মাপার টাকায় সম্ভব উনি সংসার চালান , মাদ্রাসার খরচ দেন।
মাদ্রাসার পোশাক পরা একটা ছেলে পাশেই মাস্ক বিক্রি করে। ১০ টাকায় এক প্যাকেট। এই ছেলেটাই হয়তো ওই মহিলার ছেলে। এরা কেউই এমনি এমনি টাকা নিতে চায় না। আমি একদিন কলা , কেক আর বনরুটি কিনে দিয়েছিলাম।
বেশ কিছুদিন আগে এই ব্রীজের উপর এক 'দুই পা নষ্ট' এক ভিক্ষুক বসতো। ইদানিং আর দেখি না। শুনলাম লোকজন নাকি কয়েক দিন আগে 'দুই পা নষ্ট' ভিক্ষুক কে ব্রিজ থেকে হাঁটিয়ে নিচে নামিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছে। 'দুই পা নষ্ট' ভিক্ষুক এখন সম্ভবত অন্য জায়গাতে ভিক্ষা করে।

এই রুটে হিজড়ার দল বেশ ঝামেলা করে । এরা আন্তঃজেলা বাসে উঠে না। আজিমপুরগামী ভিআইপি , বিকাশ পরিবহনে উঠলেই এদের দেখা পাওয়া যায়। বাসের গেট না খুললে গালিগালাজ করে। দুইতিনজনের দল বাসে উঠে মোটামুটি জোর করেই টাকা আদায় করে। গায়ে হাত রাখে অশালীন ভাবে , কোলের উপর বসে , কথা বার্তা কুরুচিপূর্ণ , টাকা না দিলে আরো বাজে আচরণ করে। আমি সাধারণত ঘাঁটাই না। টাকা দিয়ে দিই নিরুপায় হয়ে। আতংকে থাকি। কে কি বলবে ? কেউ কিছু বলেও না।
হিজড়াদের ভয়াবহ চক্র আছে। চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। শোনা যায় এদের অনেকেই নাকি হিজড়া না।

এমইএস বনানী কাকলির থেকে মাঝে মাঝে একজন হিজড়া ওঠে। কয়েক বছর ধরে দেখি। ভালো ব্যবহার , জোর করে না , কথা বার্তা পোশাক শালীন। দেখতে দেখতে পরিচিত হয়ে গেছে। আমাকে দেখলে সালাম দেয় , কুশলাদি বিনিময় করে। এক ঈদে উনাকে ১০০ টাকা বকশিশ দিয়েছিলাম। উনাকে অনেকেই দেন , মন থেকেই দেন।
ভালো খারাপ সবখানেই আছে।
উত্তরাতে যেদিন এক মহিলা বাস এক্সিডেন্ট করলো। রক্তাক্ত দেহটাকে টেনে তুললো দুজন হিজড়া। পাঁজাকোলা করে তুলে ছুটতে ছুটতে বলতে থাকলো - '' মা কে বাঁচাও , আমার মা কে বাঁচাও।"
২০১৫ সালের ৩০ মার্চ ব্লগার ওয়াশিকুরকে হত্যার পর পালাতে থাকা দুই জঙ্গি আরিফুল ইসলাম ও জিকরুল্লাহকে আটকে দিয়েছিলেন লাবণ্য হিজড়া। কোন পুরুষ সাহস করে নি। সাহস করেছিল একজন হিজড়া। শোনা যায় নিরাপত্তাজনিত কারণে তিনি এলাকা ছেড়ে ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি দেশ ছাড়তেই বাধ্য হয়েছেন।



আমার একরুটের বাসটা চলতেই থাকে। সবুজ সিগন্যালে থামে। আবার চলতে থাকে। চলতে চলতে জীবনকে দেখায় , জীবনের গল্প বলে। গন্তব্যে পৌঁছনোর আগে আরো একটি গল্প তৈরী করে হয় ।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৪৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবিতে গণতন্ত্রের নামে মবতন্ত্র

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১০



তথাকথিত গণতন্ত্রকামীদের পীর আল্লামা পিনাকী এবং ছোট হুজুর ইলিয়াস মোল্লার উস্কানীতে দেশজুড়ে চলছে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নামে মবতন্ত্র। আল্লামা পিংকুর যুক্তি হচ্ছে- যে বা যারাই তাদের (গণতন্ত্রকামীদের) সূরে কথা না... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় আগ্রাসনবিরোধী বিপ্লবীর মৃত্যু নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৭



শরিফ ওসমান হাদি। তার হাদির অবশ্য মৃত্যুভয় ছিল না। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, আলোচনা ও সাক্ষাৎকারে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি অনেকবার তার অস্বাভাবিক মৃত্যুর কথা বলেছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ ও ভারতবিরোধী... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৭৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪



গত কয়েকদিন আমি চিনি ছাড়া চা খাচ্ছি।
সারাদিনে মাত্র দুই কাপ চা। আগে চা খেতাম কমপক্ষে ৮ থেকে দশ কাপ। সবচেয়ে বড় কথা চা যেমন-তেমন, সিগারেট খাচ্ছি না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাকিস্তান ও চীন কি ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধ বাধাতে চায়?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩১



ভারত-বাংলাদেশ যুদ্ধে পাকিস্তান ও চীনের লাভ আছে। যুদ্ধে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ্য হলে ভারত বিরোধীতায় তারা সহজে বাংলাদেশীদের তাদের পাশে পাবে। বাংলাদেশের নিরাপত্তার অযুহাতে এখানে তারা সামরিক ঘাটি স্থাপনের সুবিধার... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রচুর ব্লগিং করুন, কিন্তু......

লিখেছেন জটিল ভাই, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৯

♦أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشِّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ্'র নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি)
♦بِسْمِ ٱللَّٰهِ ٱلرَّحْمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ (পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্'র নামে)
♦ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক)


(ছবি নেট হতে)

তা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×