৭ এলিফ্যান্ট রোডের মেয়ে,
মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে তোমাকে খুব মনে হলো। এমন হুটহাট ঘুম সেই সময়ও খুব ভাঙ্গতো। তখন ঘুম ভেঙে গেলে ইচ্ছে হলেও মোবাইলে কল দেয়া যেতো না। যদিও নোকিয়া ১১০০ আমার মাথার কাছেই থাকতো। হঠাৎ করে তোমার ফোনে জেগে উঠতাম । তাই ভীষণ আশা নিয়েই সারারাত ফোনটা আমার মাথার কাছেই রেখে দিতাম।
দেখো সময় গুলো ভীষণ অদ্ভুত ছিল। এমনও রাত গেছে , সারারাত জেগে আছি নির্ঘুম। রাতের পর রাত কেটেছে কত। রাত জেগে সিগারেট খেতে ইচ্ছা হতো। অস্থির লাগতো । কিন্তু বাড়িতে ঘরে বসে সিগারেট খাওয়ার কোন উপায় ছিলো না। খাইয়ো নি কখনো।
আমাদের দেখা করার কোন উপায় ছিল না। হুট করে ঢাকা চলে যাওয়ার কোন উপায় ছিল না। তবুও মাঝে মাঝে ঢাকা যেতাম তোমার সাথে দেখা করতে। ঢাকা গিয়ে অগ্রণী স্কুলের গেটের আশেপাশে ঘুরঘুর করতাম। অপেক্ষা করতাম। আমার হাতে থাকতো সিগারেট। একটার পর একটা সিগারেট চলতো, অপেক্ষা দীর্ঘ থেকে যেন দীর্ঘতর হতো ।
না, সে সময় তোমাকে রিক্সা নিয়ে ঘোরার কোন সাহস পাইনি। এক পলক চোখের দেখার জন্য ঢাকা ছুটে গিয়েছি। নীলক্ষেত, টিএসসি, পলাশী, নিউমার্কেট ফুট ওভার ব্রিজ, মিরপুরগামী সিটিং সার্ভিস গুলো আমার গল্প জানে। যে গল্প গুলো আমি কাউকে বলিনি।
আমি ২০০৬ সালের কথা বলছি। মোটামুটি ১ বছর হলো ভালোবাসা নামক চরম ব্যাপারটা তোমাকে জানিয়ে দিয়েছি। এই ভালোবাসি বলতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল আমার । আমি বরাবরই ভীতু। তবে ভীষণ আবেগী। টুকটাক লিখা লিখি করি। গান শুনি। কল্পনা করি।
মনে আছে সেই সময় বাংলা মিউজিকের জোয়ার চলছে। আমি ঢাকা যেতাম আর নতুন নতুন বাংলা গান খুঁজে বেড়াতাম। কনসার্টের খবর নিতাম।
জানো,
এই মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে একটা গান মনে হয়ে গেল। মাথা থেকে কিছুতেই যাচ্ছে না। তুমি যেভাবে সেই সময় আমার মগজে আটকে থাকতে ঠিক সেভাবে। আমার ইয়ার ফোন নষ্ট। গান প্লে করলেই ঘুমিয়ে থাকা বাচ্চাটা জেগে যাবে। হয়তো জেখে যাবে তুমিও। হয়তো আর ঘুম হবে না। ছটফট করবে। আগে যেমন করতে। কিন্তু কারণটা কখনোই জানতে না। একদিন জানবে।
গানটা তোমাকে ভেবেই লেখা হয়েছিল। আমি মনে করি আমারই লেখার কথা ছিল। কেনো যে লেখা হলো না!
জীবনে তোমার জন্য অনেক কিছুই করার কথা ছিল। কোন কিছুই হয়নি আদতে। খুব মন খারাপ হলে। ৭ এলিফ্যান্ট রোডের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করি। নিউমার্কেট ওভার ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে থাকি। আর ভীষণ ভাবে ফেলে আসা দিন গুলো অনুভব করি। খারাপ লাগে না। এই শহর আমার গল্পটা জানে।
ভালো থেকো তুমি। জানো, মাঝরাতে তোমার ফোন আর আসে না। যদিও ফোনটা আমার মাথার কাছেই থাকে।
ইতি,
আমি। অঘুমা রাজপুত্র।
২০০৬ সালে ফুয়াদ আল মুক্তাদীর নামে একজন মিউজিশিয়ান একটা অ্যালবাম রিলিজ করে। অ্যালবামটা দারুণ সাড়া ফেলে ভিন্ন রুচির শ্রোতাদের মধ্যে। সেই ভিন্ন রুচির শ্রোতাদের মধ্যে আমিও ছিলাম। এই অ্যালবামের একটা ট্র্যাক ছিল - তোমাকে ভেবে লেখা। গেয়েছিল শান্ত। প্রথম শোনায় বেসবাবা সুমন ভেবে ভুল করেছিলাম। গানটা আমার ভীষণই প্রিয়। লিরিক এতোটাই পছন্দের ছিল যে আমি পরিচিতদের মধ্যে মজা করে বলতাম গানটা আমারই লেখা। অনেকে আবার বিশ্বাস করতো। সাউন্ডক্লাউডে আমার পছন্দের কিছু ট্র্যাক আছে। সেখান থেকে শুনতে পারেন। ১৭ বছর পরেও গানটা নতুন লাগে।
ছবিঃ ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:১০