আমাদের এখানে তখন বিয়ের ভিডিওর চল শুরু হয়েছে। দেখতে সিনেমার মত লাগতো। দৃশ্য অনুযায়ী গান সংযোজন করা থাকতো।
এই যেমন বৌকে যখন সাজানো হচ্ছে তখন আরতি মুখোপাধ্যায়ের ---
"তোমার মনের মত করে,
আমায় তুমি সাঁজিয়ে নাও।"
আবার যখন বরযাত্রী আসবে তখন কিশোর কুমার গেয়ে ওঠেন ---
"বহুদূর থেকে এ কথা,
দিতে এলাম উপহার।"
কিংবা ধরুন যখন মেয়ে কে বিদায় দিচ্ছে তখন বাবা মান্না দে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে গেয়ে উঠতেন ---
"তুই কি আমার পুতুল পুতুল সেই ছোট্ট মেয়ে
যাকে নিয়ে স্বপ্ন আমার ঝড়তো দু'চোখ বেয়ে।"
মনে আছে সেই মূহুর্তের ভিডিও দেখতে দেখতে সবাই কেঁদে ফেলতো । এখন সময় পাল্টে গেছে এইসব গান হয়ত আর চলে না। নব্বই দশকের আবেগটাই ছিল অন্যরকম ।
আমাদের সেই সময়কার ঈদ গানটাও অন্য রকম ছিল। ঈদের চাঁদ দেখা গেলে ফেরদৌসি রহমান গেয়ে উঠতেন,
'ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে।'
এখন নজরুল বাজলেও ফেরদৌসি রহমান বাজেন না। আর এখনকার গাওয়া ঈদের গান শুনতেও ইচ্ছা হয় না। কেমন যেন দরদ ছাড়া গেয়ে দেয়।
দিন কে দিন দরদটাও যেন কমে যাচ্ছে। শুধু ঈদের গানে নয় সবখানে।
"আজ ঈদ মদিনার ঘরে ঘরে আনন্দ। "
ছোটবেলায় পড়েছিলাম। ঈদে সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য ভেসে উঠে যেন। ঈদটা আসলে অনুভবের ব্যাপার ছিল। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন ঈদের নামাজের মোনাজাত শেষে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতাম , অনেক মানুষের সাথে কোলাকুলি করার জন্য। এখন সেই কোলাকুলির রীতি পাল্টে গেছে। নামাজ শেষে কেউ আর দাঁড়াতে চায় না। যে যার মত বাড়ি ফেরে।
নতুন লুঙ্গি পরে, সেই লুঙ্গির সিল ছাপ্পড় না তুলেই ঈদগাহ মাঠে ফরফর শব্দ হেঁটে আসা মানুষ গুলোকে মিস করি খুব। বড় হয়েছি তো কি হয়েছে। নতুন লুঙ্গি ব্যাপারটাই তাদের কাছে আলাদা ছিল।
আর বেশি কিছু লিখবো না। ছেলেটা পাশে ঘুমাচ্ছে। ঈদ বুঝতে শিখছে। বুঝতে শিখছে বলেই হয়ত রাত আড়াইটাই ঘুমালো। ছোটবেলায় আমরাও ঘুমাতাম না। আমাকে বললো, বাবা হাতে রঙ দিয়ে দাও।
আমি হাতে মেহেদী দিয়ে সূর্য এঁকে দিলাম। সকালবেলায় যখন জাগবে, তখন দেখবে ঐ সূর্য টা লাল টকটক করছে।
এই লাল টকটকে সূর্যের মানে একদিন বুঝবে ঠিকই। বুঝবে লাল টকটকে সূর্যটাই শৈশব।
বুঝবে ছোটবেলার লাল সূর্যটা বড় হলে কেমন ফিকে হয়ে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৩:৫১