দীর্ঘ দিন ব্লগে নাই। ফেসবুক ডিয়েক্টিভ।কোন কিছুই ভালো লাগে না। মানসিকভাবে স্বস্তিবোধ করছি না। বাবুর অসুস্থতা , চাকুরীর পাশে রোজগারের আরেকটা রাস্তা বের করতে পারিনি, আব্বা বিছানায় উঠে বসার শক্তি নেই আর। সব মিলিয়ে ভীষণ মানসিক চাপে থাকি। ব্লগ ছেড়ে থাকতে কষ্ট হয় খুব। অনেক ব্লগার আমাকে খুঁজছেন। আমিও মিস করেছি। বাবা, ছেলে, শৈশব নিয়ে খুব লিখতে ইচ্ছা হলেও মাথায়
কিছুই আসে না আর।
ডাক্তার নুরুন্নাহার ফাতেমা গতমাসে বাবুর ইকো করলেন। রিপোর্ট গতবারের চেয়ে একটু ভালো। ওর ভাল্বের নালী সরু হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সার্জারী করতে হবে একসময়। ছয় মাস পর আবার টেস্ট করতে হবে।দেখা যাক ডাক্তার তখন কি বলেন।
বাচ্চার হার্টের সমস্যা ধরা পরার পর অতিরিক্ত দৌড়াদৌড়ি করতে দেয়ই না। শুধু মদিনায় গিয়ে কোন বাঁধা দেয়নি। সারা মসজিদে নববী চত্বর দৌড়ে বেড়িয়েছে। নিষেধ করিনি।
ডাক্তারকে বললাম , ওকে বেশি দৌড়াতে দেয় না। সিঁড়ি ভাঙতে দেয় না।
ডাক্তার বললেন, ওর সমস্যা না হলে অসুবিধা নাই। ওকে তো আর স্পোর্টসম্যান বানাবেন না। ফুটবল দিয়ে মাঠে নামানোর দরকার নাই। একটু খেয়াল রাখবেন বেশি হাঁফিয়ে না যায়।
নিহাল সাধারণত হাঁফায় না। মাঝে মাঝে দৌড়ে এসে বলে, বাবা দেখো তো বুকে কোন শব্দ হয় নাকি?
আমি বুকে কান পাতি , শব্দ শুনে। আমার বুকে মোচড় দেয়।
আমি ডাক্তার কে বললাম, ও কি সাইকেল চালাতে পারবে? ওর সাইকলের খুব শখ।
ডাক্তার বললেন, পারবে।
আমি নিহাল কে নিয়ে ডাক্তারের রুম থেকে বের হচ্ছি। বের হতে হতে ছেলেটা বলল, বাবা বাবা আমি কি সুস্থ হয়ে গেছি।
আমি বললাম, তুমি কখোনোই অসুস্থ ছিলা না।
কিন্ত বুকে ধকফক করে যে?
করুক সমস্যা নাই।
বাবা আমাকে কি সাইকেল কিনে দিবা।
হ্যাঁ দেবো।
আজ নিহালের জন্মদিন। চারাগাছ ক্রমশ বড় হচ্ছে। চার বছর কেটে গেল খুব দ্রুত। নিহাল কে এখনো সাইকেল কিনে দেয়া হয়নি। ভেবেছিলাম জন্মদিনেই কিনে দেবো। নিহাল সেই সাইকেলে চেপে বসবে আর আমি ধরে থাকবো। ঠ্যালবো।নিহাল বলবে বাবা আরো জোড়ে ঠ্যালো। আমি ঠ্যালতেই থাকবো আর নিহাল প্যাডেল হাঁকিয়ে এগোতে থাকবো। মাঝে মাঝে ছেড়ে দিয়ে আবার ধরতে যাবো। নিহাল তখন বলবে, বাবার তুমি এতো বোকা। দেখছো না দুই পাশে চাকা লাগানো। আমি তো পড়বোই না।
আমি কিছু বলি না। বারবার ধরতে যায়। নিহাল বলে, বাবা তোমার এতো ভয়।
ব্যস্ত শহরের ফাঁকা রাস্তায় নিহালের সাইকেল চলতে থাকে। মাঝে মাঝে ক্রিং ক্রিং বেল বাজে। আমি বারবার সাইকেল ধরতে যায়। ভুলে যায় যে চাকা লাগানো আছে। নিহাল হা হা করে হাসতে থাকে।
বাবারা ভীষণ বোকা হয় । ভীষণ ভীতু হয়।
হতে হয় হয়তো।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:৩৩