১৯৮৩ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খান প্রণীত শিক্ষানীতি বাতিলের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলে। ১৪ ফেব্রুয়ারি সচিবালয় অভিমূখে বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ হামলা চালায়। নিহত হয় ঢাকায় ১০ জন। চলে ব্যাপক ধরপাকড়। পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রামে নিহত হয় পুলিশের গুলিতে মোজাম্মেল। ধারনা করা হয় অনেক লাশ সরকার গুম করে ফেলে। নিহতদের জানাযায়ও হামলা চালায় পুলিশ।
পরবর্তীতে স্বৈরাচার এরশাদ বাধ্য হয় এই শিক্ষানীতি স্থগিত করতে।
ছাত্রদের এই সংগ্রামী ইতিহাস নিয়ে প্রপদ এর লেখা
১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস অন্য কিছু নয়
লেখাটি স্টিকি করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
নিচে লেখার কিছু অংশ তুলে ধরছি-
১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস! বাংলাদেশের জন্যও তাই? বাংলাদেশে কি বিশ্বের বাইরের কোনো দেশ নাকি! ফলে মুদ্রণ ও সম্প্রচার মাধ্যমগুলোতে ভালোবাসা দিবস উপলক্ষ্যে রঙিন সব বিশেষ খবর, প্রতিবেদন, বিজ্ঞাপন, অনুষ্ঠান। মোবাইল অপারেটরগুলোতে দারুন সব অফার, কনসার্টের তোড়জোড়। ফুলের দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড় আর গিফটের দোকানগুলোতে রমরমা ব্যবসা। ভালোবাসার এমন বন্যায় প্লাবিত চারপাশ- এমন একটা আবহ তৈরি হয়েছে। এতসব উৎসবের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে আমাদের মহত্তর সংগ্রাম ও অর্জনের ইতিহাস। ১৯৮৩ সালে স্বৈরাচারী এরশাদের শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খানের বৈষম্যমূলক শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা মহানগর ব্যাপী এক ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে এবং ১৪ ফেব্রুয়ারি সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে পুলিশের নির্বিচার গুলিতে শুধু মহানগর ব্যাপী ১০ জন শহীদ হন ও শতাধিক আহত হন। মজিদ খানের শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার পঞ্চাশ ভাগ ব্যয় শিক্ষার্থীর পরিবারকে বহন করতে হতো। ফলে শিক্ষা একটি শ্রেণী হাতে আরো কুক্ষিগত হতো, শিক্ষার অধিকার হতে বঞ্চিত হতো অনেক মানুষ। শিক্ষা অর্জনের জন্য মাতৃভাষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কিন্তু এ নীতি অনুযায়ী শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকেই বাংলার সঙ্গে আরবি ও ইংরেজি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয় যা ছিল আমাদের ভাষা আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থি এবং পশ্চাৎপদ ও উপনিবেশিক সংস্কৃতির আগ্রাসনের বন্দোবস্ত। শিশুদের জন্য অবশ্যম্ভাবীভাবে তা হতো নিপীড়নমূলক। বুকের রক্ত ঢেলে জীবন দিয়ে সেদিন ছাত্র-জনতা শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে ভাষা সংস্কৃতি রক্ষার্থে রুখে দাঁড়িয়েছিল এবং স্বৈরাচারী সরকার ও প্রশাসনকে বাধ্য করেছিল এ বৈষম্যমূলক শিক্ষানীতি স্থগিত করতে। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, এ আন্দোলনই বলা যায় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রথম বিস্ফোরণ। এরপর গোটা আশির দশকজুড়ে প্রতি বছর এদিনটি স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হয় এবং এরশাদবিরোধী আন্দোলনের প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। তখন আওয়ামীলীগ, বিএনপি, ছাত্রদল, ছাত্রলীগ, বাম প্রগতিশীল ছাত্র ও রাজনৈতিক দলগুলো যার যার অবস্থান থেকে কর্মসূচি দিয়ে দিবসটি পালন করে এবং সংবাদ মাধ্যমগুলোও এর পক্ষে প্রচার চালায়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




