somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নরসুন্দর মদন দাসের মেয়ে

২০ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভোরের আলো এখনও ফোটেনি । চারিদিক অন্ধকার,
আযান দিচ্ছে মাত্র। আস্তে আস্তে চারিদিক
পরিষ্কার হতে শুরু করেছে । নিশিতপুরে এখনও
একটা বাড়ির লোকজনের চোখে ঘুম নাই । লোকজন
বলতে মাত্র দুজন , একজন নরসুন্দর মদন দাস আর
অন্য জন তার স্ত্রী । মদন দাস মাটির উপর
বারান্দায় বসে আর তার স্ত্রী একটা খুটিতে হেলান
দিয়ে দাড়িয়ে । তার হাতে একটা লম্পো টিমটিম
করে জ্বলছে , চোখ দুটা উদাস হয়ে রাস্তার
দিকে তাকিয়ে আছে । এই আলো আধারি বেলা সে যেন
কিছু খুজে চলছে । তাদের মেয়ে মিতা এখনও
বাড়ি ফেরেনি ।
সকাল থেকে নিশিতপুর চেয়ারম্যানের লোকজন
সারা গ্রাম চষে ফেলেছে । চেয়ারম্যানের
ছেলেকে নাকি খুজে পাওয়া যাচ্ছে না ।
অনেক খুজাখুজির দুইদিন পর গ্রামে ফিরল
চেয়ারম্যান সামচু রাজাকারের ছেলে সাব্বির।
#
মদন দাসের বাড়িতে পুলিশ এসেছে ।মদন দাসের
মেয়েকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না , একদিন
ফাড়িতে মামলা করতে গেলে , পুলিশ সাধারণ
ডায়রি করে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে । আজ পুলিশ
মদন দাসের বাড়ি এসেছে ইনভেস্টিগেশনে ।
তাকে এবং তার স্ত্রীকে বিভিন্ন প্রশ্ন
করা হচ্ছে তাদের মেয়ে সম্পর্কে । তাদের
মেয়ে দুশ্চরিত্রা কিনা , কারো সাথে সম্পর্ক
ছিলো কিনা , মাঝে মাঝে শহরের
হোটেলে যেতো কিনা ইত্যাদি নোংরা প্রশ্ন ।
দাড়িয়ে কেঁদে চলেছে মদন দাসের স্ত্রী এই প্রশ্ন
উত্তর দিতে গিয়ে চোয়াল শক্ত হয়ে যাচ্ছে মদন
দাসের । ছিঃ পুলিশ ।
#
মদন দাস শিশুগাছটির নিচে তার
দোকানে চেয়ারে বসে ঝিমুচ্ছিলো । এমন সময়
হাপাতে হাপাতে মঈন জেলে এসে খবর
দিলো গাঙে নাকি মদন দাসের মেয়ের লাশ
পাওয়া গেছে । এটা কি শোনে মদন দাশ ? মিতার
লাশ ? কে খুন করলো মিতাকে ?
ওরতো কারো সাথে শত্রুতা ছিলো না ।
পুলিশ এসে মিতার লাশ নিয়ে গেছে ময়নাতদন্তের
জন্য ।
ভোরের আলো এখনও ফোটেনি । চারিদিক অন্ধকার ,
আযান দিচ্ছে মাত্র । আস্তে আস্তে চারিদিক
পরিষ্কার হতে শুরু করেছে । নিশিতপুরে এখনও
একটা বাড়ির লোকজনের চোখে ঘুম নাই । লোকজন
বলতে মাত্র দুজন , একজন নরসুন্দর মদন দাস আর
অন্য জন তার স্ত্রী । মদন দাস মাটির উপর
বারান্দায় বসে আর তার স্ত্রী একটা খুটিতে হেলান
দিয়ে দাড়িয়ে । তবে আজ তার
হাতে একটা লম্পো টিমটিম করে জ্বলছে না, কিন্তু
চোখ দুটা উদাস হয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছে ।
যেন কাউকে খুজে চলছে ।
#
মিতা মারা গেছে দশ বারো দিন হলো এর
মাঝে হাসপাতাল থেকে মিতার লাশ নিয়ে এসে দাহ্
করা হয়ে গেছে । পুলিশ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট
এখনও জানাতে পারে নাই , হাসপাতাল থেকে নাকি এ
রিপোর্ট এতো সহজে দেয় না । এজন্য টাকা লাগে ,
তাই তার মদন দাসের কাছ থেকে টাকা নিয়ে গেছে ।
আর ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়ায় পুলিশ
এখনও কাজ শুরু করতে পারছে না ।
হঠাত্ একদিন বাড়ি পুলিশ উপস্থিত । ময়নাতদন্তের
রিপোর্ট পাওয়া গেছে । এখন তাদের তদন্ত শুরু
হবে তাই কিছু টাকা পয়সা দিতে হবে ।
"ময়নাতদন্তে কি রিপোর্ট এসেছে ?" এই ধরণের
প্রশ্নে উত্তর আসলো "ধর্ষণ"।
ধর্ষণ ! এটা কি করে হয় ? কে করল এ কাজ ?
নরপশুর মন বলে কি কিছু নাই ? গরিবের মেয়ের
দিকে চোখ দিবে ?
সেদিন বিকালে মদন দাসের বাড়িতে মিতার এক
বান্ধবী রুমা এসেছিল ।
"মা , তুমি আমার মেয়ে । মা তুমি কও কে আমার এই
সর্বনাশ করলো ?" মদন দাসের চোখের
দিকে তাকিয়ে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি রুমা ।
সে বলতে শুরু করল কি ঘটেছিলো ।
"মিতাকে যেদিন থেকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না , ঐদিন
সে মিতা আরও কিছু বান্ধবী পড়তে যাচ্ছিল ।
যাওয়ার পথে বাবুর চায়ের দোকান পড়ত ,
ঐখানে চেয়ারম্যানের ছেলে আড্ডা দিতো , তাদের
দেখলেই বিভিন্ন বাজে মন্তব্য করতো , খারাপ
খারাপ অঙ্গভঙ্গি দেখাতো । তারা এতোদিন কোন
পাত্তা দেয়নি ঐ ফালতু ছেলেগুলোকে কিন্তু সেদিন
পড়তে যাওয়ার সময় চেয়ারম্যানের ছেলে মিতার হাত
টেনে তাকে জড়িয়ে ধরে ,
মিতা নিজেকে ছাড়িয়ে আমাদের সাথে পড়তে চলে যায়
।তারপর ফেরবার পথে সেদিন তখনও ঐ
শয়তনগুলো দাড়ায়ে ছিলো ,ওরা জোর
করে টেনে হিচড়ে মিতাকে আমাদের কাছ
থেকে নিয়ে যায় , আমরা বাধা দেই কিন্তু কোন কাজ
হয় না । ওরা টানতে টানতে মিতাকে বাস স্টান্ডের
দিকে নিয়ে যায় । তারপর শহরের
বাসে উঠে চেয়ারম্যানের
ছেলে ওকে নিয়ে শহরে চলে যায় , তারপর তো....."
কথাগুলো বলতে বলতে হাওমাও করে কেঁদে ওঠে রুমা ।
মদন দাসের গায়ে যেন কোন শক্তি নাই ।
তাকে এখনই কেউ ধাক্কা দিলে সে মরে যাবে । মদন
দাসের বউ এর মুখে কোন কথা নেই , শুধু চোখে দুঃখ
অশ্রু আর চোখে ভয় । চেয়ারম্যানের ছেলে এই
কান্ড করেছে ! এখন কি হবে ? এখন কি উপায় ?
পরদিন রুমার খোজে রুমাদের বাড়ি গেলো মদন দাস
কিন্তু তাকে বাড়ি পাওয়াগেল না ,
সে নাকি মামা বাড়ি গেছে । মদন দাস ফাড়িতে গেল
চেয়ারম্যানের ছেলের নামে অভিযোগ দিতে কিন্তু
থানা থেকে তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেওয়া হলো ।
উল্টা তার মেয়ে সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য
করা হলো । তার মেয়েরই নাকি চরিত্র খারাপ
ছিলো ।
মদন দাস এগুলো আর সহ্য করতে পারে না । একজন
অসহায় বাবার মতো বাড়ি ফিরে আসে মদন দাস ।
সে '৭১ সোনার বাংলার জন্য জীবন
বাজি রেখে লড়েছে । আজ তার সোনার
বাংলা তাকে কি দিলো ? তার
ছেলে মেয়ে সবাইকে কেড়ো নিলো তার বীরত্বের
সাথে অর্জন করা সোনার বাংলা । কাদের জন্য যুদ্ধ
করেছিলো মদন দাস ?
রাতে না খেয়ে স্বামী স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়লো ।
নিশিতপুর গ্রামবাসীর সকালে ঘুম ভাঙল মদন দাসের
স্ত্রীর বিলাপে । আর মদন দাসের
দেহটা ঝুলছে ঘরের আড়া থেকে । মদন দাস আর তার
অর্জন করা সোনার বাংলায় থাকতে চায় না । তাই
সে তার সোনার বাংলা থেকে বিদায় নিলো ।
#
বোনের বাড়ি থেকে ফিরছে সেই এভোন পাইলট
সাইকেল চালাতো যে ছেলেটি সে । স্টেশনে বাস
থেকে নেমেছে এমন সময় তার সামনে এক
মহিলা ভিক্ষারী এসে দাড়ালো -"বাবা দুটো টাকা দিয়ে যা ,
খাবো ।"
শুনেই ভিক্ষারীটার দিকে তাকালো ছেলেটি এ আবার
কে বাবা? নতুন আমদানী হলো নাকি? কিন্তু
তাকিয়েই তার চোখ স্থির হয়ে গেলো । এতো তার
মদন কার বউ। উনার এই অবস্থা কেনো?
বাড়ি এসে এভোন পাইলট সাইকেল চালানো ছেলেটি সব
ঘটনা জানতে পারে। তখন তার মনে আজ প্রশ্ন
"কেনো এই বাংলাদেশ? যারা এই দেশটাকে স্বাধীন
করেছে তারা কেনো নির্যাতিত?"
গল্পটি এখানেই শেষ করলাম। তিনটা পার্ট
তিনটা বিষয় তুলে ধরতে চেয়েছি। সঙ্গে থাকার জন্য
ধন্যবাদ :)
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪১

সাম্প্রতিক দুইটা বিষয় ভাইরাল হতে দেখলাম।
১. এফডিসিতে মারামারি
২. ঘরোয়া ক্রিকেটে নারী আম্পায়ারের আম্পায়ারিং নিয়ে বিতর্ক

১. বাংলা সিনেমাকে আমরা সাধারণ দর্শকরা এখন কার্টুনের মতন ট্রিট করি। মাহিয়া মাহির... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×